ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনের সঙ্গে সংহতি জ্ঞাপন করে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে মিছিলে মিছিলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হতে শুরু করেছেন নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ।

আজ শনিবার সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, মৎস্যভবন এলাকা থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের গেট দিয়ে উদ্যানে প্রবেশ করতে শুরু করেন জনতা। এ সময় প্রায় সবার হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা, গায়ে ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে নানা রকমের প্ল্যাকার্ড দেখা যায়।

উদ্যানের লেকের পাশে সাজানো হয়েছে প্রধানমঞ্চ। এছাড়া কয়েকটি পয়েন্টে মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। টিএসসি শাহবাগসহ নানা প্রাঙ্গণে ফ্রিতে পানি, শুকনা খাবার সরবরাহ করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া মোড়ে মোড়ে স্বেচ্ছাসেবকরা শৃঙ্খলার কাজ করছিলেন।

‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট’ বাংলাদেশ আয়োজিত এই কর্মসূচিতে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ প্রায় সব রাজনৈতিক দল, আলেম-ওলামা সমাজসহ সব অঙ্গনের মানুষ সংহতি জানিয়েছেন। ফলে সকাল থেকে জনতার স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহণে লোকারণ্য হয়ে ওঠে উদ্যান।

জমায়েত ঘিরে উদ্যানের আশপাশে জমে উঠেছে ফিলিস্তিনের পতাকা, মাথার ব্যাজ ও টি-শার্ট বিক্রি। আর আগ্রহ নিয়েই সেসব কিনছেন আগত অনেকেই।

পিরোজপুর বেসরকারি একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে আসা তামান্না ইয়াসমিন রাজু ভাস্কর্যে পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি সমকালকে বলেন, ইসরায়েল যেভাবে নির্বিচারের শিশু নারীদের হত্যা করছে, গণহত্যা চালাচ্ছে। ফিলিস্তিনের মত পবিত্র স্থানকে তারা ধ্বংস করে দিতে চায়, এ জন্য আমরা রাজপথে এসেছি।

পুরান ঢাকার সূত্রাপুর থেকে আসা ঝর্না আক্তার নামে একজন বলেন, প্যালেস্টাইনের প্রতি সংহতি জ্ঞাপন করে এখানে এসেছি। ইসরায়েলের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জায়গা থেকে এসেছি। আরব বিশ্ব তো তেমন প্রতিবাদ করছে না। বাংলাদেশ যদি তাদের জন্য কিছু করতে পারে।

নিজের রিকশার ওপরে ফিলিস্তিনের পতাকা উঁচু করে নাড়ছিলেন একজন। তিনি নিজেকে আনোয়ার পাগলা পরিচয় দেন। জিজ্ঞেস করতে বললেন, নেতানিয়াহু তুমি আলোচনায় বসো। তুমি মুসলমানদের ধ্বংসের পায়তারা নিয়ে নেমেছো, এটা তো পারবাই না। তুমি নিজে ধ্বংস হয়ে যাবা।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাইব্যুনালে ৩৩৯ অভিযোগ, ২২ মামলায় গ্রেপ্তার ৫৪

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ৩৩৯টি অভিযোগ জমা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে ২২ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ১৪১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তাদের মধ্যে ৭০ বেসামরিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৬২ ও ৯ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আছেন। ইতোমধ্যে ৫৪ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যা, আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো, চানখাঁরপুলে হত্যাকাণ্ড ও রামপুরায় ভবনের কার্নিশে ঝুলে থাকা ব্যক্তিকে গুলি করা মামলায় তদন্ত শেষ পর্যায়ে। শিগগির এগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হবে।

তাজুল ইসলাম বলেন, মামলা তদন্তের স্বার্থে এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট এক হাজারের বেশি মানুষের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। পরোয়ানা জারির পরও ৮৭ আসামি পলাতক।

তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড, সুপিরিয়র কমান্ড, সরাসরি সম্পৃক্ত এবং যাদের কারণে রাষ্ট্র এমন হয়েছে, তাদের আগে বিচার করতে চাই। আমরা ভুক্তভোগীদের প্রতি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চাই।

এক প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, বিচার কার্যক্রমে গতি আনতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের বেশ কিছু ধারা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে এটি হতে পারে। যাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। কবে নাগাদ বিচার শুরু করা যাবে– প্রশ্নে তিনি বলেন, সময় বেঁধে দিয়ে বিচার করা যাবে না। সেটি যুক্তিযুক্তও নয়।

মতবিনিময়ের শুরুতে তাজুল ইসলাম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেড়-দুই হাজারের বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন। ২৫ হাজারের মতো ছাত্র-জনতা আহত হয়েছেন। সব ঘটনার জলজ্যান্ত প্রমাণ রয়েছে। ট্রাইব্যুনালে আমরা সেটি প্রমাণ করতে সক্ষম হবো এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোপন বন্দিশালা থেকে টাইম বোমা উদ্ধার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আমিসহ গুমের মামলার তদন্তে যাওয়া দলের সদস্যদের হত্যার উদ্দেশ্যে টাইমার বোমা রাখা হয়েছিল। তবে ট্রাইব্যুনালের বিচার নিয়ে কোনো তথ্য-উপাত্ত যেন ফাঁস না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কাজ করছি।

তিনি আরও বলেন, গুমের বিষয়ে আমরা উত্তরায় একটা বড় বন্দিশালায় তদন্ত করতে গিয়েছিলাম। সেখানে অনেক কিছু আমরা আবিষ্কার করেছি। টাইমার বোমা দেখেছি। হয়তো এ বোমা রাখা হয়েছিল তদন্তকারী দলকে হত্যার পরিকল্পনা থেকে। আমাদের পরিদর্শনের ঠিক দু’দিন পর সেখানে প্রধান উপদেষ্টার পরিদর্শন করার কথা ছিল। তিনি অন্য জায়গায় গোপন বন্দিশালা পরিদর্শন করেন।

মতবিনিময় সভায় প্রসিকিউটর আবদুস সোবহান তরফদার, মিজানুল ইসলাম, গাজী এম এইচ তামিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গণহত্যা বন্ধ ও স্বাধীন ফিলিস্তিন দাবি
  • ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে বরিশালে বিক্ষোভ 
  • গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশ জাসদের বিক্ষোভ
  • ইসলামী আন্দোলনকে বাইপাস করে সংসদে যাওয়ার সুযোগ নেই: চরমোনাই পীর
  • গাজায় গণহত‌্যা: জিএম কা‌দে‌রের নেতৃ‌ত্বে রাজধানী‌তে বি‌ক্ষোভ
  • ‘ইসরায়েলের পণ্য বর্জনের জিহাদ শুরু করতে হবে’
  • জুলাই হত্যাযজ্ঞকে ‘জেনোসাইড’ বলা কেন বিভ্রান্তিকর
  • ট্রাইব্যুনালে ৩৩৯ অভিযোগ, ২২ মামলায় গ্রেপ্তার ৫৪
  • ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের ডাক কুবি শিক্ষার্থীদের