ইউক্রেন শান্তি চুক্তি নিয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ। শুক্রবার ( ১১ এপ্রিল) সেন্ট পিটার্সবার্গে বৈঠক করেন দুই নেতা।

ট্রাম্প রাশিয়াকে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতিতে ‘দ্রুত পদক্ষেপ’ নেয়ার আহ্বান জানানোর মধ্যে এই আলোচনা করলেন তারা। খবর বিবিসির।

ক্রেমলিন জানিয়েছে, বৈঠকটি চার ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয় এবং মূলত ‘ইউক্রেন সংকট সমাধানের বিভিন্ন দিক’ নিয়ে আলোচনা হয়। এটি ছিল চলতি বছরে পুতিনের সঙ্গে উইটকফের তৃতীয় বৈঠক। রুশ বিশেষ দূত কিরিল দিমিত্রিয়েভ এই আলোচনাকে ‘গঠনমূলক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

আরো পড়ুন:

গ্যাগারিন বিজ্ঞান উৎসবে রকেট মডেল তৈরি প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

বৃহস্পতিবার তুরস্কে আবারো বৈঠকে বসছে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র

এর আগে আলোচনা নিয়ে রাশিয়ার প্রতি হতাশা প্রকাশ করেন ট্রাম্প। শুক্রবার, তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, ‘রাশিয়াকে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। ভয়াবহ এবং অর্থহীন যুদ্ধে প্রতি সপ্তাহে হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে।’

এছাড়া ট্রাম্প হুমকি দিয়েছেন যে, রাশিয়া যদি ইউক্রেনীয় চুক্তি থেকে সরে যায় তাহলে রাশিয়ার তেল কিনছে এমন দেশগুলোর উপর দ্বিতীয় পর্যায়ের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।

এদিকে ট্রাম্পের ইউক্রেনবিষয়ক দূত কিথ কেলগ ইউক্রেন বিভক্ত করার প্রস্তাব দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য টাইমস-এর খবরে বলা হয়, এক সাক্ষাৎকারে কেলগ পশ্চিম ইউক্রেনে 'নিরাপত্তা বাহিনী’ হিসেবে ব্রিটিশ ও ফরাসি সেনা মোতায়েনের কথা বলেছিলেন। একইসঙ্গে রাশিয়ার সেনারা পূর্ব ইউক্রেনে থাকত।

পত্রিকাটির উদ্ধৃতি অনুযায়ী, কেলগ বলেছিলেন, ‘আপনি একে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বার্লিন ভাগ হওয়ার মতো করে দেখতে পারেন।’

তবে কেলগ পরে এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লেখেন, “এই প্রতিবেদনে আমার বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।” তিনি বলেন, “আমি যুদ্ধবিরতির পর একটি ‘স্থিতিশীলতা বজায় রাখা বাহিনী’ নিয়ে বলেছি যারা ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কাজ করবে। আমি কখনো ইউক্রেনকে বিভক্ত করার কথা বলিনি।”

হোয়াইট হাউজ ও কিয়েভ এখনো কেলগের মন্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানায়নি। বিবিসি দ্য টাইমসের কাছে এ বিষয়ে মন্তব্য চেয়েছে।

পুতিন-উইটকফ বৈঠকের আগে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, “উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি আশা করার প্রয়োজন নেই, কারণ সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া চলছে।”

পুতিন-ট্রাম্প বৈঠকের সম্ভাব্য তারিখ নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে পেসকভ বলেন, “দেখা যাক, উইটকফ কী বার্তা নিয়ে এসেছেন তার ওপর নির্ভর করছে।”

এদিকে, শুক্রবার ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেনকে ২ হাজার ১০০ কোটি ইউরোর সামরিক সহায়তা ঘোষণা দিয়েছে। ইউরোপের প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা জানিয়েছেন, যুদ্ধ শেষ হওয়ার কোনো আভাস তারা দেখছেন না।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র ইউক র ন

এছাড়াও পড়ুন:

রাশিয়া সফরে ট্রাম্পের দূত, ইউরোপের উদ্বেগ

ইউক্রেন সংকট ঘিরে বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক ও সামরিক তৎপরতা আরও জোরদার হয়েছে। যুক্তরাজ্য ও জার্মানির উদ্যোগে শুক্রবার ব্রাসেলসে ৫০টি দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ইউক্রেন প্রতিরক্ষা যোগাযোগ গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ এক বৈঠক। ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি জানিয়েছেন, এ বৈঠকের মূল লক্ষ্য ছিল রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ওপর চাপ আরও বাড়ানো।

বৈঠকে ইউক্রেনকে অতিরিক্ত ৫৮ কোটি ডলারের সামরিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। এই প্যাকেজের আওতায় রাডার সিস্টেম, অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মাইন এবং বিপুল পরিমাণ ড্রোন সরবরাহ করা হবে। এ ছাড়া ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে থাকা সামরিক যান ও সরঞ্জাম মেরামতেও ব্যয় করা হবে এ অর্থের একটি অংশ।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ শুক্রবার রাশিয়ায় পৌঁছেছেন। ক্রেমলিন জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হতে পারে। এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হলে তা হবে উইটকফ ও পুতিনের মধ্যে তৃতীয় বৈঠক। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে উইটকফ পুতিনের সঙ্গে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় বৈঠক করে আমেরিকান শিক্ষক মার্ক ফোগেলকে মুক্ত করিয়েছিলেন। রাশিয়া সফরের আগে তিনি ওয়াশিংটনে রুশ আলোচক কিরিল দিমিত্রিয়েভের সঙ্গে বৈঠক করেন। দু’পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ‘একটি সমঝোতা’ হয়েছে বলে জানা গেছে।

তবে এই আলোচনার মধ্যেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ এনেছে ইউক্রেন। ইউক্রেনের মানবাধিকার কমিশনার দিমিত্র লুবিনেৎস জানিয়েছেন, রুশ সেনারা ১৩ মার্চ জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের পিয়াতিখাতকি গ্রামে চারজন নিরস্ত্র ইউক্রেনীয় যুদ্ধবন্দিকে গুলি করে হত্যা করেছে। ইউক্রেন ও রাশিয়ার ড্রোন ফুটেজ বিশ্লেষণ করে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে। লুবিনেৎস আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও জাতিসংঘের কাছে বিষয়টি তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, বরং রাশিয়ার একটি প্রাতিষ্ঠানিক নীতি, যা সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে উৎসাহিত হচ্ছে।’ এ ঘটনায় যুদ্ধাপরাধের তদন্ত শুরু হয়েছে।

এরই মধ্যে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচিত একটি বন্দিবিনিময় হয়েছে। বিশ্বাসঘাতকতার মামলায় রাশিয়ায় কারাবন্দি আমেরিকান নাগরিক ক্সেনিয়া কারেলিনাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তাঁর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র আর্থার পেত্রভ নামে এক রুশ-জার্মান নাগরিককে রাশিয়ার হাতে তুলে দিয়েছে। এই বিনিময় প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতা করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। কারেলিনার বাগদত্তা ক্রিস ভ্যান হেরডেন এই মুক্তির জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। তবে আরও কয়েকজন মার্কিন নাগরিক এখনও রাশিয়ার হেফাজতে আছেন, যাদের মুক্তির জন্য চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের অংশ হিসেবে সম্প্রতি তুরস্ক ও ইস্তাম্বুলে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় কূটনৈতিক সম্পত্তি ফেরত দেওয়া, নিষেধাজ্ঞা শিথিলকরণ ও সরাসরি বিমান চলাচল শুরু করার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল। বিশ্লেষকদের মতে, যুদ্ধক্ষেত্র ও কূটনৈতিক পরিসরে এই নতুন আলোচনাপ্রবাহ ইউক্রেন সংকটের সমাধানের পথ তৈরি করতে পারে, তবে এখনও বড় ধরনের অগ্রগতি অনিশ্চিত।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পুতিনকে ইউক্রেন নিয়ে দ্রুত এগোতে বললেন ট্রাম্প
  • ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল রাশিয়ার মালিকানায় দিয়ে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার পক্ষে মত ট্রাম্পের দূতের, দুশ্চিন্তায় মার্কিন মিত্ররা
  • রাশিয়া সফরে ট্রাম্পের দূত, ইউরোপের উদ্বেগ
  • ২১ বিলিয়ন ইউরোর অস্ত্র সহায়তা পাচ্ছে ইউক্রেন