এক সপ্তাহ ধরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও নিজের অবস্থানে অনড় ছিলেন। তাঁর চাপিয়ে দেওয়া শুল্কনীতি বিশ্ববাজারে তোলপাড় সৃষ্টি করলেও তিনি ছিলেন নির্বিকার। শেয়ারবাজার রক্তাক্ত হলেও বলেছেন, সমস্যা হলে ওষুধ দিতে হয়। সেই ওষুধ দেওয়া হয়েছে। ওষুধ কাজ শুরু করেছে।

শুল্ক নিয়ে সমঝোতা করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রেসিডেন্টরা ফোন করেছেন। সেটিও তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করেছেন তিনি। বলা বাহুল্য, তিনি সেটাই চাচ্ছিলেন। সেই সঙ্গে বাজারের অমোঘ বাস্তবতার কারণেও তিনি আপাতত ৯০ দিনের জন্য শুল্ক বাস্তবায়ন স্থগিত করলেন বলে নিউইয়র্ক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে। এ ঘোষণার পর অবশ্য বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরেছে।

বিশেষ করে সরকারি বন্ডের সুদের হার হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় আর্থিক ব্যবস্থায় অস্থিরতা শুরু হয়। অনিশ্চয়তার মধ্যে সাধারণত বন্ডের সুদহার বেড়ে যায়। মার্কিন বন্ডের সুদহার গতকাল ৪ দশমিক ৫ শতাংশে উঠে যায়। সেই সঙ্গে বিক্রির চাপ ফেড ও নীতিপ্রণেতাদের চিন্তায় ফেলে দেয়। যদিও সাধারণত শেয়ারবাজার ধসের সময় মানুষ বন্ড কেনে। এবার তার উল্টো দেখা যায়। এমনকি অর্ধশত বিলিয়ন ডলারের বন্ডের নিলামের নোটিশ পর্যন্ত দেওয়া হয়। সেটা হলে দেউলিয়া হওয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকবে না। সম্ভবত এই চাপেই ট্রাম্প শেষমেশ নতি স্বীকার করেন। সেই সঙ্গে তারঁ যা লক্ষ্য ছিল, সেটা তো হাসিল হয়েছে—৭৫টির বেশি দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপ।

মূলত এই দুটি কারণে ট্রাম্প বেশির ভাগ দেশের ক্ষেত্রে ৯০ দিনের জন্য ‘পারস্পরিক শুল্ক’ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন। প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ চারটি সূত্র নিউইয়র্ক টাইমসকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সাংবাদিকদের কাছে সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘ভাবলাম, মানুষ একটু বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়ছে। সবাই একটু ঘাবড়ে গিয়েছিল, একটু বেশি অস্থির হয়ে উঠেছিল, তাই এ সিদ্ধান্ত।’

ট্রাম্প তিন মাসের জন্য অতিরিক্ত বা পাল্টা শুল্ক স্থগিত করায় যেটা ঘটল, তা হলো বিশ্ববাজারে একধরনের স্বস্তি এল। এশিয়ার শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ইউরোপের বাজারও ঘুরে দাঁড়িয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে। সেই সঙ্গে তারা প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপের জায়গা থেকে সরে এসেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল থেকে শুরু করে বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ ঘটনায় একধরনের স্বস্তি এসেছে। অর্থাৎ সবাই আপাতত নির্ভার হয়েছে। কিন্তু এখনই উদ্‌যাপন করার কিছু নেই।

বিবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, বিভিন্ন দেশের পণ্যে যে পৃথকভাবে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, সেই শুল্ক স্থগিত হয়েছে ঠিক। কিন্তু এখনো ন্যূনতম শুল্ক রয়ে গেছে। তার সঙ্গে আছে আগের শুল্ক। সবচেয়ে বড় কথা, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের পণ্যে শুল্ক এখনো রয়ে গেছে। ফলে চীনের ব্যবসা-বাণিজ্য এখনই স্বাভাবিক হচ্ছে না।

এশিয়া অঞ্চলের অনেক দেশের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার চীন। এই দেশগুলো চীনের রপ্তানিমুখী শিল্পের সংযোগ শিল্প হিসেবে কাজ করে। এখন যুক্তরাষ্ট্রে চীনের রপ্তানি কমে গেলে এসব দেশের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সেই সঙ্গে চীন বিশ্বের বৃহত্তম জ্বালানি আমদানিকারক। চীনের অর্থনীতিতে গতি না এলে জ্বালানি তেলের দাম আরও কমতে পারে। তাতে অবশ্য বাংলাদেশসহ বিশ্বের জ্বালানি আমদানিকারক দেশগুলোর জন্য সুবিধা।

বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান পেডেন অ্যান্ড রাইগেলের প্রধান অর্থনীতিবিদ জেফরি ক্লিভল্যান্ড বিবিসিকে বলেন, পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আমরা যে চরম পরিণতির দিকে যেতে পারতাম, সেখান থেকে ফেরা গেছে ঠিক। তবে বাস্তবতা হলো, বিপদ এখনো পুরোপুরি কাটেনি। এই অনিশ্চয়তার কারণে আগামী তিন মাস বিশ্ব অর্থনীতিতে বিনিয়োগ কমে যাবে।

শুল্ক স্থগিতের কারণে মন্দা এড়ানো যাবে, জে পি মর্গ্যানও সে কথা বলেছে। ক্লিভল্যান্ড বলেন, এ পরিস্থিতিতে মন্দা এড়ানো গেলেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কমে যাবে। তবে স্বল্প মেয়াদে বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমে যাবে। এ পরিস্থিতিতে বন্ড বাজার পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এ ছাড়া হঠাৎ মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যেতে পারে। এ পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা বেশি লভ্যাংশ চাইতে পারেন।

সারা দিন নানা ঘটনায় বিশ্ব অর্থনীতি টালমাটাল হলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে নির্বিকারভাবে ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, দারুণ একটা দিন গেল। এ রকম আরও দারুণ দিন আসছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন ড র স দ পর স থ ত র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী খলিলকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়ন করা যেতে পারে বলে বিচারকের মত

যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার হওয়া ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলকে বিতাড়িত করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছেন মার্কিন অভিবাসন আদালতের এক বিচারক। এর মধ্য দিয়ে এক মাস আগে নিউইয়র্ক নগর থেকে গ্রেপ্তার হওয়া কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীকে বিতাড়িত করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন তাদের তৎপরতা চালিয়ে যেতে পারবে।

লুইজিয়ানার লাসাল অভিবাসন আদালতের বিচারক জেমি কোমান্স গতকাল শুক্রবার এ মত দিয়েছেন। তাঁর এ সিদ্ধান্তই যে খলিলের চূড়ান্ত পরিণতি নির্ধারণ করে দিচ্ছে, তা নয়। তবে এটিকে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য উল্লেখযোগ্য বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, তিনি খলিলের মতো বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিপন্থী বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিতাড়িত করার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছেন।

১৯৫২ সালের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টকে উদ্ধৃত করে গত মাসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্ক রুবিও বলেছিলেন, খলিল মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি–সংক্রান্ত স্বার্থের ক্ষতি করতে পারেন এবং তাঁর বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডের জন্য তাঁকে বিতাড়িত করা উচিত।

কোমান্স বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যকে অগ্রাহ্য করার এখতিয়ার তাঁর নেই। খলিলের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে রুবিওকে তলব করার এবং ১৯৫২ সালের আইনের অধীন তাঁর নেওয়া সিদ্ধান্তের ‘যুক্তিসংগত কারণ’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে বিচারকের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। তবে বিচারক তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

লুইজিয়ানার গ্রামীণ এলাকায় কাঁটাতারে ঘেরা একটি অভিবাসী আটককেন্দ্রের ভেতর বসা আদালতে ৯০ মিনিটের শুনানির পর বিচারক এমন সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউইয়র্ক নগর ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন খলিল। সিরিয়ার একটি ফিলিস্তিনি শরণার্থীশিবিরে জন্মগ্রহণকারী খলিল আলজেরিয়ার নাগরিক। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা হন তিনি। খলিলের স্ত্রী একজন মার্কিন নাগরিক।

গত ৮ মার্চ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবন থেকে খলিলকে গ্রেপ্তার করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) কর্মকর্তারা। এরপর কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে লুইজিয়ানার কারাগারে পাঠান। তখন থেকে তিনি সেখানেই আছেন।

বিচারক কোমান্স ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী খলিলের আইনজীবীদের ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দিয়েছেন।

আরও পড়ুনফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনের সংগঠক গ্রিনকার্ডধারী খলিলকে কি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়ন করতে পারবেন ট্রাম্প১৩ মার্চ ২০২৫

খলিলকে বিতাড়িত করার আদেশ দেবেন কি না, তা এখন বিবেচনা করবেন কোমান্স। তার আগে বিতাড়ন থেকে রেহাই পেতে আবেদন করার জন্য খলিলের আইনজীবীদের ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন তিনি। একজন অভিবাসীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর পর তিনি নিপীড়নের শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কা করলে অভিবাসন আদালতের বিচারক তাঁকে বিতাড়িত না করার জন্য আদেশ দিতে পারেন।

নিউ জার্সিতে আলাদা এক মামলায় স্থানীয় আদালতের বিচারপতি মাইকেল ফারবিয়ার্জ শিক্ষার্থী খলিলকে বিতাড়নের চেষ্টা আটকে দিয়েছেন। খলিলকে গ্রেপ্তারের ঘটনাটি মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর আওতায় দেওয়া বাক্‌স্বাধীনতার সুরক্ষাকে লঙ্ঘন করছে কি না, তা বিবেচনা করছেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্ট ও করিডর সুবিধা কী
  • ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী খলিলকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়ন করা যেতে পারে বলে বিচারকের মত
  • কলকাতা, লন্ডন ও নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগের নেতাদের বিলাসী জীবন
  • নিউইয়র্কের হাডসন নদীতে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত ৬
  • নিউইয়র্কে হাডসন নদীতে পড়ল হেলিকপ্টার, ছয়জন নিহত
  • তুরস্কে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার প্রতিনিধি, লক্ষ্য সম্পর্ক জোরদার
  • ট্রাম্পের শুল্ক স্থগিতে বিশ্ব বাজারে স্বস্তি, অস্বস্তি চীন নিয়ে