ওয়াক্ফ আইন বাতিলের দাবিতে আবারো রণক্ষেত্র মুর্শিদাবাদ
Published: 12th, April 2025 GMT
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলা মুর্শিদাবাদ রাজ্যে ওয়াক্ফ (সংশোধনী) আইন বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদ–বিক্ষোভ হয়েছে। আইন বাতিলের দাবিকে কেন্দ্র করে আবারো রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে রাজ্যেটি। এক সপ্তাহের ব্যবধানে দ্বিতীয়বারের মতো বিক্ষোভ আরও কঠোর রূপ নিয়েছে।
শুক্রবার জুমার নামাজের পর জাতীয় সড়ক ১২ অবরোধ করে বিক্ষোভে অংশ নেয় শতাধিক মানুষ। পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং শুরু হয় সংঘর্ষ।
বিক্ষোভকারীদের ইট-পাটকেলে আহত হন একাধিক পুলিশ কর্মী। অগ্নিসংযোগ করা হয় পুলিশের গাড়ি, যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক ও অ্যাম্বুলেন্সে। এছাড়া ঘটনাস্থলে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। ট্রাফিক কিয়স্ক, সরকারি বাস এবং রেল অফিসেও হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে।সংঘর্ষ চলাকালীন গুলিবিদ্ধ হয় সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্র। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সুতির সাজুরমোড়, সামশেরগঞ্জ, ধুলিয়ান সহ একাধিক এলাকায় বিক্ষোভ দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি মোতায়েন করা হয় কেন্দ্রীয় বাহিনী বিএসএফ।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে এবং সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিক্ষোভের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ইতোমধ্যে ১১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পূর্ব রেল সূত্রে আরও জানা যায়, ধুলিয়ানগঙ্গা ও নিমতিতা স্টেশনের মাঝে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয় এবং অন্তত পাঁচটি ট্রেন আটকে পড়ে।
রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “আইনশৃঙ্খলা নিজেদের হাতে তুলে নেওয়ার প্রচেষ্টা কোনওভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। সরকার এই বিষয়ে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।” একইসঙ্গে, গুজব ছড়ানো রুখতে সতর্কবার্তা দিয়েছে রাজ্য পুলিশ।
পুরো ঘটনায় ১০ জনের বেশি পুলিশ সদস্য এবং একাধিক আন্দোলনকারী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আহত পুলিশ সদস্য এবং আন্দোলনকারীদের মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এর আগে তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে ওয়াক্ফ সম্পত্তি ব্যক্তিগত স্বার্থে জবরদখলে রাখার অভিযোগ উঠেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইবি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর কাছে এক প্রতিবেদনে বলেছে, পশ্চিমবঙ্গের শাসকদলের কিছু নেতা এই রাজ্যে ওয়াক্ফ সম্পত্তি ব্যক্তিগত স্বার্থে দখল করে রেখেছেন।
ওয়াক্ফ সংশোধনী আইন বাতিলের দাবিতে গত কয়েকদিন ধরেই কলকাতাসহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।
গত ৩ এপ্রিল গভীর রাতে ওয়াক্ফ সংশোধনী বিল পাস হয় দেশটির সংসদে। এই বিলের পক্ষে ভোট পড়ে ১২৮টি, আর বিপক্ষে ৯৫টি। রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষরের পর তা আইনে পরিণত হয়। তারপর থেকেই ভারতের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ জানাচ্ছে দেশটির বিভিন্ন গণসংগঠন।
.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কলক ত আইন ব ত ল র দ ব পর স থ ত
এছাড়াও পড়ুন:
‘মানবিক হতে পারাটাও জীবনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ’
ক্লাউডিয়া শিফার। জার্মান সুপারমডেল। কিংবদন্তি এই মডেলের বিভিন্ন সাক্ষাৎকার থেকে অনুপ্রেরণামূলক কথা তুলে এনেছেন ইমাম হোসেন মানিক
দীর্ঘদিন ধরে আমার মনে হয়ে আসছে, কোনো একটা ভুল করে ফেলেছি জীবনে! মনে পড়ে, ১৯৯৯ সালের কথা। আমেরিকান ফিল্মমেকার জেমস টোব্যাক তখন তাঁর ‘ব্ল্যাক অ্যান্ড হোয়াইট’ সিনেমাটিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই প্রস্তাব পেয়ে বেশ অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিলাম। তার জন্য তো কিছুই করতে পারব না আমি। অভিনয় তো আমার লক্ষ্য ছিল না। রাজনীতিও আমার লক্ষ্য নয়। ফলে এ দুটি মাধ্যমে নিজের ভবিষ্যতের কথা ভাবতে পারি না কখনোই।
অজান্তে রাজনীতিতে
তবু মাঝে মধ্যে ভাবি, এই যে এত এত শিশু মরে যাচ্ছে আফ্রিকায়; আমার নিশ্চয়ই কিছু করার আছে। নিজেকে সান্ত্বনা দিই: না, এটি অত বেশি রাজনৈতিক বিষয় নয়; বরং একটু আন্তরিক প্রচেষ্টা এমন মানবসৃষ্ট বিপর্যয় থেকে বাঁচাতে পারবে পৃথিবীকে। ফলে অজান্তে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে গেলাম আমি! সরাসরি নয় যদিও। বরং আফ্রিকার শিশুদের নিজের সন্তান মনে হওয়ায়, এমন কাজে নিয়োজিত জার্মান রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে করতে শুরু করলাম আলোচনা। কেননা, মানুষ হিসেবে এতটুকু দায়িত্ব আমাকে নিতে হতো।
বড় করে শ্বাস নিই
ছোটবেলায় খুব লাজুক ছিলাম আমি। যেখানে যেতাম, সঙ্গে থাকত প্রিয় বান্ধবীর দল। ফটো স্টুডিওতে গিয়ে মুখ ফুটে একটা শব্দও বলতাম না আমি। যখন কেউ কথা বলতে আসত, লজ্জায় চোখ-মুখ লাল হয়ে যেত। তবে এক্ষেত্রে মেকআপ আমাকে অনেক বাঁচিয়েছে বলা যায়! ফলে চোখ-মুখের এ পরিবর্তন ঠিকঠাক নজরে পড়েনি কারও। এখনও, যখন কোথাও যাই, নজরে পড়ে ফটোগ্রাফারদের ব্যস্ততা। তখন খুব বড় করে শ্বাস নিই; তাতে এক ধরনের স্বস্তি অনুভব হয় আমার। তখন বলি, তাড়াতাড়ি ছবি তুলুন; আমার তাড়া আছে!
নিজেকে প্রস্তুত করতে...
ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে মডেলিং সম্পর্কে খুব বেশি ধারণা ছিল না। এ মাধ্যমে যে ক্যারিয়ার গড়া সম্ভব ভাবিনি এমনটাও। প্রথম দিকে স্রেফ পরিকল্পনা ছিল, নিজেকে আরেকটু ঝালিয়ে নেওয়ার জন্য প্যারিসে পাড়ি জমানো। মডেলিংয়ের দুনিয়ায় নিজেকে জড়িয়ে নেওয়া আমি কোনোদিনই এমন পোশাক পরিনি, যেটি আমাকে অস্বস্তি দিতে পারে। ব্যক্তিজীবনে সাধারণত মেকআপ এড়িয়ে যেতে ভালোবাসি। দীর্ঘ একটি সময় এ পেশায় থেকে দেখেছি, মডেলিংয়ের বাজারটি প্রতিনিয়ত বড় হয়ে উঠছে। অনেক ধরনের ক্যারিয়ার গড়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে এ মাধ্যমে। তাতে আমার নিজেরও, সামান্য হলেও অবদান রয়েছে ভাবতে আনন্দ হয়।
যার মাধ্যমে বদলে যেতে পারে ভাগ্য
মডেলিং দুনিয়ায় যারা কাজ করতে আগ্রহী, অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, একটি ভালো ফটোগ্রাফই খুলে দিতে পারে আপনার ভাগ্য। মনে রাখুন, ছবিতে যথাযোগ্য আবেগ ফুটিয়ে তুলতে পারা এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় গুণ। যে ছবি দেখে যে কারও মনে ভালো, খুব ভালো একটি অনুভূতি তৈরি হবে সেটিকে আমি সে ছবির মডেলের সেরা অর্জন বলে মনে করি। এ ক্ষেত্রে দক্ষ কোনো ফটোগ্রাফারের ক্যামেরায় সঁপে দিন নিজেকে। রাখুন আস্থা। করুন পরিশ্রম। দেখবেন, তার তোলা ছবিগুলো আপনাকে একটি নতুন দুনিয়ার সন্ধান দেবে। সেই ফটোগ্রাফার সিলেকশনটাও হতে হবে যথাযোগ্য। এই ক্ষেত্রে কেউ এসে আপনাকে বলে দেবে না। নিজের মেধা দিয়ে সেরা ফটোগ্রাফারকে খুঁজে বের করতে হবে। কিংবা আপনার জন্য যে ফটোগ্রাফার সেরা তাকে বের করে আনতে হবে। তবেই দুনিয়া আপনাকে চিনবে নতুন করে। আপনিও উড়ে বেড়াতে পারবেন স্বপ্নের আকাশে!