বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেহে কিছু পরিবর্তন ঘটেই থাকে। অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মতো কিছু পরিবর্তন ঘটে মস্তিষ্কেও। ভুলে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। স্ট্রোকের ঝুঁকিও বাড়ে। তবে স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গড়ে তুললে এসব ঝুঁকি কমে আসে অনেকটাই। যত কম বয়সে আপনি সুস্বাস্থ্যের চর্চা শুরু করবেন, ততই স্বাস্থ্যকর হবে আপনার প্রৌঢ়ত্ব ও বার্ধক্যের দিনগুলো।

বয়স ৩০ বছর পেরোলেই নিজের প্রতি বিশেষ যত্নশীল হতে হবে আপনাকে। সুষম খাদ্যাভ্যাস ও শরীরচর্চার বিকল্প নেই। নানামুখী চাপ সামলে মনের যত্নও নিতে হবে। আরও জেনে রাখতে হবে, কোন কোন খাবার এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। কিছু খাবার ও পানীয় আপনার মস্তিষ্কের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ সম্পর্কে জেনে নিন আজ।

যেসব স্নেহজাতীয় পদার্থ কক্ষ তাপমাত্রায় জমাট বেঁধে থাকে, সেসব সুস্বাদু হলেও আদতে স্বাস্থ্যকর নয়.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

অবিরাম কাজ করেও যারা কোনো নাম-দাম পান না

সুখী ও সুন্দর পরিবার গড়তে নারী-পুরুষ উভয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আগে ধরে নেওয়া হতো নারী করবেন শুধু ঘরের কাজ। সে সময় এখন বদলেছে। গ্রাম হোক কিংবা শহর, নারী এখন অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের চালিকাশক্তি। পরিতাপের বিষয় হলো– যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে পরিবার টিকে থাকে, সমাজ এগিয়ে যায়; তারা বরাবরই পরিবার, কর্মক্ষেত্র, সমাজ– সর্বত্র অবহেলার শিকার। ভোরের কুয়াশা জড়িয়ে শহর যখন থাকে গভীর ঘুমে, ঠিক তখন থেকে শুরু হয় কর্মজীবী নারীর জীবন-সংগ্রাম। সবার জন্য খাবার তৈরি, সন্তানের যত্ন নেওয়া, নিজের কাজের জন্য তৈরি হওয়া– সব সামলে ঠিক সময়ে কর্মক্ষেত্রে পৌঁছানো। অফিসের চাপে ক্লান্ত মা। ঘরে ফিরেও তাঁর শান্তি নেই। সন্তানের পড়াশোনা, সংসারের খুঁটিনাটি, সবার যত্নআত্তি তাঁকেই করতে হয়। এ যেন এক চক্রাকার দায়িত্বের অমোঘ নিয়ম। ক্লান্ত হলেও মায়ের মুখে কোনো অভিযোগ নেই। সন্তান ও পরিবারে হাসিই যেন তার একমাত্র প্রাপ্তি। এখনও লিঙ্গবৈষম্য পরিবার, সমাজ ও কর্মক্ষেত্রে বিরাজমান। কর্মজীবী নারীর শারীরবৃত্তীয় চাহিদা বা অসুবিধাগুলো নিয়ে এখনও বেশির ভাগ জায়গায় কোনো মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নেই। ঋতুকালীন, মাতৃত্বকালীন বা মাতৃত্ব-পরবর্তী সময়ে তাদের জন্য সুযোগ-সুবিধা অপ্রতুল। বেতনবৈষম্যও প্রবল।
এ তো গেল শহুরে কর্মজীবী নারীর গল্প। গ্রামীণ বা নিম্নবিত্ত পরিবারের নারীর সংগ্রাম আরও তীব্র। দিনমজুরের কাজ, গৃহস্থালি, সন্তান লালনপালন– সবকিছু একাই সামলে নিতে হয় তাদের। অন্যদিকে, যারা কর্মজীবী নন, তাদের জীবন-সংগ্রাম আরও বেশি জটিল। কর্মজীবী নারীর যেমন কাজের ক্ষেত্র ধরে একটা পরিচয় থাকে, গৃহিণী নারীর ক্ষেত্রে তেমন থাকে না এবং তাদের কাজের কোনো নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টাও নেই, নেই কোনো ছুটি। অথচ গৃহস্থালি কাজের বিনিময়ে কোনো পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না বলে এগুলোকে মূল্যহীন বা অদৃশ্য কাজ হিসেবে গণ্য করা হয় সমাজে। অথচ তাদের অমূল্য শ্রমের বিনিময়ে যুগ যুগ ধরে টিকে রয়েছে পরিবার বা সামাজিক কাঠামো। নারীর গৃহস্থালি কাজের আর্থিক মূল্যায়ন না হলেও কিছু গবেষণায় এটি জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে বলে প্রমাণিত হয়েছে।
ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের (২০১৩) এক গবেষণায় দেখা গেছে, গৃহিণী নারী বিনা মূল্যে যেসব গৃহস্থালি কাজ করেন, সেগুলোর আনুমানিক মূল্য বছরে ২২৭.৯৩ থেকে ২৫৮.৮২ বিলিয়ন ডলার হতে পারে। এ অবদান জাতীয় আয়ের সঙ্গে যোগ করলে নারীর অবদান ২৫ শতাংশ থেকে ৪১ শতাংশে উন্নীত হয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে উঠে এসেছে, কর্মজীবী নারী ঘরের কাজসহ পুরুষের তুলনায় তিনগুণ বেশি পরিশ্রম করেন। এ কাজের বেশির ভাগই থেকে যায় অদৃশ্য। এই গৃহস্থালি শ্রমের কোনো আর্থিক মূল্যায়ন নেই, নেই সামাজিক স্বীকৃতি। সামাজিক রীতিনীতি, পরিবারের শর্ত, কর্মক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জ– সবকিছুর মাঝে তাকে টিকে থাকতে হয়। তবু নারীরা কাজ থামান না। কারণ তাদের কাজ বন্ধ হয়ে গেলে থমকে যাবে ঘরের, এমনকি সমাজেরও চাকা। এই সময়ে এসে যেহেতু আমরা একটি সুন্দর ও বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন দেখছি; তাই নারীর সমতা, মর্যাদা এবং অধিকার নিশ্চিত করা এখন সময়ের অপরিহার্য দাবি। নারীর প্রকৃত অংশগ্রহণ এবং ক্ষমতায়ন ত্বরান্বিত করতে হলে তাঁকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। সর্বোপরি ব্যক্তিগত সচেতনতা ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের মাধ্যমে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করে একটি সুষম ও মানবিক সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব। v

সম্পর্কিত নিবন্ধ