গজনী অবকাশের মিনি চিড়িয়াখানায় অভিযান, ১৭ বন্য প্রাণী জব্দ
Published: 12th, April 2025 GMT
শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গারো পাহাড়ের গজনী অবকাশকেন্দ্রের মিনি চিড়িয়াখানায় অভিযান চালিয়ে সাত প্রজাতির ১৭টি বন্য প্রাণী জব্দ করেছে বন অধিদপ্তরের বন্য প্রাণী অপরাধ দমন টিম। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত এ অভিযান চালানো হয়। নেতৃত্ব দেন টিমের বন্য প্রাণী পরিদর্শক নার্গিস সুলতানা।
জেলা বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ কর্মকর্তা কার্যালয় এবং জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের বিনোদনের জন্য গজনী অবকাশকেন্দ্রে মিনি চিড়িয়াখানাটি স্থাপন করা হয়। এটি পরিচালনা করেন অবকাশকেন্দ্রের ইজারাদার ফরিদ আহমেদ। চিড়িয়াখানায় প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা।
বন্য প্রাণী পরিদর্শক নার্গিস সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী দেশীয় কোনো বন্য প্রাণী কেউ চিড়িয়াখানায় আবদ্ধ করে রাখতে, প্রদর্শন বা পরিবহন করতে পারেন না। কিন্তু এ চিড়িয়াখানায় ওই আইন লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে কয়েকটি প্রাণী আটকে রাখা হচ্ছিল। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ৭ প্রজাতির ১৭টি প্রাণী জব্দ করা হয়েছে। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ এবং পরিবেশ ও বন উপদেষ্টার নির্দেশে এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
জব্দকৃত প্রাণীগুলোর মধ্যে রয়েছে একটি অজগর, চারটি বনবিড়াল, একটি গন্ধগোকুল, একটি শিয়াল, একটি বাজপাখি, পাঁচটি বানর ও চারটি হরিণ। এদের মধ্যে শিয়াল ও বানরগুলো গারো পাহাড়ের বনে রাতেই অবমুক্ত করা হয়। চারটি হরিণ ইজারাদারের জিম্মায় রাখা হয়েছে। বাকি ১০টি প্রাণী বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে রেখে চিকিৎসা ও ১৪ দিন কোয়ারেন্টিন শেষে সুস্থ হলে প্রকৃতিতে অবমুক্ত করা হবে।
গতকাল রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে খাঁচায় আবদ্ধ অজগর ও কয়েকটি বনবিড়াল প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হরিণ, শিয়ালসহ অন্যান্য প্রাণী খাঁচার ভেতর ছুটোছুটি করছে। ময়মনসিংহ থেকে আসা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন র্যাপিড রেসপন্স বিডির সদস্যদের সহায়তায় বন্য প্রাণী অপরাধ দমন টিম প্রাণীগুলো খাঁচা থেকে বের করে আনে।
চিড়িয়াখানার ইজারাদার ফরিদ আহমেদ বলেন, জেলা প্রশাসনের ইজারা নিয়ে তিনি চিড়িয়াখানাটি পরিচালনা করছিলেন। বন বিভাগ তাঁকে জানিয়েছে, লাইসেন্স ছাড়া দেশীয় বন্য প্রাণী চিড়িয়াখানায় রাখা যাবে না। গত বুধবার বন বিভাগের লোকজন প্রাণীগুলোর তালিকা তৈরি করে। এরপর গতকাল রাতে অভিযান চালিয়ে লাইসেন্সবিহীন প্রাণীগুলো জব্দ করা হয়। এ বিষয়ে তাঁর কোনো আপত্তি নেই।
জেলা প্রশাসক ও গজনী অবকাশকেন্দ্র পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি তরফদার মাহমুদুর রহমান বলেন, চিড়িয়াখানায় লাইসেন্সবিহীন প্রাণী থাকার বিষয়ে বন বিভাগ তাঁকে জানালে তিনি অভিযানের অনুমতি দেন। অবৈধভাবে কোনো প্রাণী চিড়িয়াখানায় রাখার দায় তিনি নেবেন না।
অভিযানকালে ঝিনাইগাতীর রাংটিয়া রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক তানভীর আহমেদ, জেলা বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুমন সরকার, ওয়াইল্ডলাইফ রেঞ্জার মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন য প র ণ বন ব ভ গ অবক শ
এছাড়াও পড়ুন:
সাত বছর ধরে হেলিকপ্টার বানাচ্ছেন রাজমিস্ত্রী আরিফুল, তিন সপ্তাহের মধ্যে আকাশে ওড়ানোর স্বপ্ন
শিবগঞ্জ উপজেলার কিচক ইউনিয়নের মাটিয়ান গ্রামের রাজমিস্ত্রী আরিফুল ইসলাম হেলিকপ্টার তৈরি করছেন। সাত বছর ধরে একটি হেলিকপ্টার তৈরি করায় এ নিয়ে এলাকায় তাঁকে নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে হেলিকপ্টার তৈরির কাজ শেষ করে তা আকাশে ওড়াতে পারবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করছেন।
আরিফুল মাটিয়ান গ্রামের কৃষক মকবুল হোসেনের ছেলে। বাড়িতে ছোট্ট একটি ঘরের মধ্যে তৈরি হচ্ছে হেলিকপ্টার। আশেপাশে পড়ে রয়েছে নানা সরঞ্জাম। হেলিকপ্টার তৈরির স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে ২০১৮ সাল থেকে সাত বছর ধরে দৈনিক আয়ের কিছু অংশ থেকে সরঞ্জাম কিনে হেলিকপ্টার তৈরি করছেন তিনি। এ পর্যন্ত তাঁর প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। বাঁকি কাজ সম্পূর্ণ করতে আরও ৫০ হাজার টাকার দরকার বলে জানান তিনি। টাকার ব্যবস্থা হলে আগামী ২০ দিনের মধ্যে অবশিষ্ট কাজ শেষ করে হেলিকপ্টারটি আকাশে উড়াতে সক্ষম হবেন বলে জানান তিনি।
মাটিয়ান গ্রামের জাকারিয়া জুয়েল বলেন, ছোটবেলা থেকে আরিফুল অনেক কিছু তৈরি করতেন। দরিদ্র আরিফুল তাঁর উপার্জনের টাকা দিয়ে সরঞ্জাম কিনে হেলিকপ্টার তৈরি করছেন। সরকারিভাবে কোনো সহায়তা পেলে ভবিষ্যতে আরও ভালো কিছু তৈরি করতে পারবেন।
আরিফুলের স্ত্রী সালমা বেগম বলেন, এক মেয়েকে নিয়ে অতি কষ্টে আমরা জীবনযাপন করি। আমার স্বামী তাঁর স্বপ্ন পূরণ করতে উপার্জনের টাকা ব্যয় করে হেলিকপ্টার তৈরি করছেন। এতে আমাদের কষ্ট হলেও আমরা খুশি।
কিচক ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন বলেন, হেলিকপ্টার তৈরির বিষয়টি আমি জেনেছি। আমরা তাঁর উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, হেলিকপ্টার তৈরি করায় আমরা তাঁকে সাধুবাদ জানাই। এ কাজে উৎসাহ যোগাতে প্রয়োজনে তাঁকে সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হবে। হেলিকপ্টার দেখার জন্য প্রতিদিন তাঁর বাড়িতে শতশত মানুষ ভিড় জমাচ্ছে।