ওয়াকফ আইনবিরোধী আন্দোলনে ফের রণক্ষেত্র পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ
Published: 12th, April 2025 GMT
ওয়াকফ আইনের বিরোধীতা করে কলকাতায় অবরোধ ও বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। গত কয়েক দিন ওয়াকফ আইনের বিরোধিতায় কলকাতায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে মুসলিম সমাজ। গতকাল শুক্রবার ফের রণক্ষেত্র হয়ে উঠে সীমান্ত জেলা মুর্শিদাবাদ।
বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়েছে জেলাটির বিভিন্ন এলাকায়। আগুনে পোড়ানো হয়েছে একাধিক প্রাইভেট গাড়ি, যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাক এবং পুলিশের গাড়িও। জঙ্গিপুরের পর সুতিতেও আক্রান্ত হয়েছে পুলিশ। ইট ছোড়া হয় পুলিশকে। ট্রাফিক কিয়স্ক, বাস, ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষোভ চলাকালীন গুলিবিদ্ধ হয়েছে এক কিশোর।
এদিন মুসলিম নেতাদের তরফ থেকে স্পষ্ট বলা হয়, আমরা এ আইন মানি না, এ আইন মুসলিমবিরোধী। এ আইনে আমাদের মসজিদ, কবরস্থান, দরগা নিয়ে নেওয়া হবে।
আরো পড়ুন:
ছয়জন ভারতে ঢুকে ফিরলেন ৫ জন, কুটি মিয়ার কী হলো
ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল: বেনাপোল বন্দর থেকে ফেরত গেছে ৪ ট্রাক
শুক্রবার জুমার নামাজের পর জাতীয় সড়ক ১২ অবরোধ করে শতাধিক মানুষ বিক্ষোভে সামিল হন। পুলিশ অবরোধ সরাতে গেলে বিক্ষোভকারীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। বেলা বাড়তেই অশান্তি চরমে পৌঁছায়। মুর্শিদাবাদের পরিস্থিতি ক্রমেই হাতের বাইরে চলে যায়। বিক্ষোভ ক্রমশ শাজুরমোড় ও ধুলিয়ান, সুতি সংলগ্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
তবে শনিবার সকালে পুলিশের দাবি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে। শান্তি ফেরাতে টহল দিচ্ছে বিএসএফ।
শুক্রবার অশান্তির মধ্যে পড়ে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্র গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি। আক্রান্ত যুবকের নাম মোশারফ হোসেন। তার বাবা জানান, গোলমালের সময় ছেলে রাস্তায় জিনিস কিনতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়। তার বুকে গুলি লাগে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় শনিবার সকালে তাকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
ঘটনার পর মুর্শিদাবাদ জেলার বিভিন্ন অংশে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবাও। মুর্শিদাবাদের জেলা শাসক রাজর্ষি মিত্র সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “অঞ্চলে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হচ্ছে।”
শুক্রবারের বিক্ষোভের ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে পুলিশ এখনও পর্যন্ত ১১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
পূর্ব রেল সূত্রে জানা গেছে, ধুলিয়ানগঙ্গা ও নিমতিতা স্টেশনের মাঝে ট্র্যাক অবরোধের জেরে এদিন অন্তত পাঁচটি ট্রেন আটকে পড়েছে। এর আগে, ৮ এপ্রিল একই ইস্যুতে জঙ্গিপুরের উমরপুরে জাতীয় সড়ক অবরোধ ও পুলিশের গাড়ি পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছিল।
পরিস্থিতির মোকাবিলায় রাজ্য পুলিশের পাশাপাশি ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত বাহিনী পাঠিয়েছে বিএসএফও। বিএসএফের দাবি, রাজ্যের আবেদনেই তারা অতিরিক্ত ফোর্স পাঠিয়েছে। অন্যদিকে পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে বলে জানিয়েছে পুলিশ। গুজব ছড়ালে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের পক্ষ থেকে।
মুর্শিদাবাদের ঘটনায় কড়া বার্তা দিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও। ভিডিও বার্তায় রাজ্যপাল বলেন, “কিছু লোক আইনশৃঙ্খলা নিজেদের হাতে তুলে নিচ্ছে, এটা খুবই উদ্বেগের। তবে অশান্তি বরদাস্ত করা হবে না। সরকার দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে।”
শনিবার সকাল থেকে একাধিক জায়গায় মোতায়েন করা হয়ছে বিশাল পুলিশ বাহিনী। সামশেরগঞ্জের ধুলিয়ান মোড়ে পুলিশের সঙ্গে মোয়াতেন রয়েছেন বিএসএফও।
গতকালের সংঘর্ষের পরে আজ সামশেরগঞ্জে বন্ধ প্রায় সব দোকান বাজার বন্ধ। পুলিশের সঙ্গে জায়গায় জায়গায় মোতায়েন রয়েছে র্যাফ। একই অবস্থা সুতির সাজুরমোড়েও।
এদিকে, প্রতিবাদকারীদের অভিযোগ, কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদি যে সরকার চালাচ্ছে, সে সরকার শুধু মুসলমানদের খারাপ চাইছে। সরকার যে ওয়াকফ বিল নিয়ে এসেছে সেই বিলের কোনো দরকার ছিল না। স্বাধীনতার আগে থেকেই ভারতে ওয়াকফ বিল ছিল।
তাদের দাবি, এই ওয়াকফ সম্পত্তি মুসলমানদের সম্পত্তি ছিল, আছে এবং আগামী দিনেও থাকবে।
ভারতে মুসলমানদের দান করা শত শত কোটি ডলার মূল্যের ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা ও বহু বছরের পুরনো পরিচালনা পদ্ধতি সংশোধন করে গত সপ্তাহে দেশটির পার্লামেন্টে বিল পাস হয়।
বিজেপি নেতৃত্বাধীন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বলছে, ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনার জন্য এই বিল আনা হয়।
কিন্তু বিরোধী দল এবং প্রায় সব মুসলিম সংগঠনই বলছে, এই বিলটি আনাই হয়েছে ভারতের সর্ববৃহৎ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাংবিধানিক অধিকার খর্ব করতে।
বিলটি পাস হওয়ার দিন থেকেই ভারতজুড়ে এর প্রতিবাদ চলছে, যার প্রভাবে শুরু থেকেই উত্তপ্ত ছিল কলকাতা। শুক্রবারও সেই প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দেখা যায়।
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ ক রব র পর স থ ত অবর ধ সরক র কলক ত
এছাড়াও পড়ুন:
আইন ভেঙে বেড়া নির্মাণচেষ্টা, বাধায় পিছু হটল বিএসএফ
বিএসএফের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সীমানা আইন লঙ্ঘন করে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। তবে বিজিবির বাধায় কাজ বন্ধ করে পিছু হটে বিএসএফ।
গতকাল বুধবার দুপুরে নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর সীমান্তে এই ঘটনা ঘটে। ভবানীপুর বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা দেশের মাটি রক্ষায় এলাকায় নজরদারি বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন নেত্রকোনা-৩১ বিজিবি অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এএসএম কামরুজ্জামান (পিবিজিএম)।
জানা গেছে, বুধবার দুপুরে সীমান্তবর্তী ১১৫৬ নম্বর পিলারের কাছে সীমানা আইন লঙ্ঘন করে কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের জন্য কাজ শুরু করেন বিএসএফ সদস্যরা। খবর পেয়ে বিজিবি সদস্যরা ওই স্থানে অবস্থান নিয়ে তাদের নিষেধ করেন। বিএসএফ ফের নিষেধ উপেক্ষা করে বেড়া নির্মাণের চেষ্টা করলে বিজিবির সঙ্গে এলাকাবাসীও যোগ দিয়ে প্রতিবাদ জানান। প্রতিবাদের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হন বিএসএফ সদস্যরা।
স্থানীয় কৃষক তোতা মিয়া বলেন, ‘এই পরিস্থিতির জন্য সীমান্তবর্তী রাস্তা ও ব্রিজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান কিছুটা দায়ী। প্রায় এক বছর ধরে রাস্তা নির্মাণকাজ নিয়ে গড়িমসি করছেন ঠিকাদার। আমাদের দেশের রাস্তায় ও ব্রিজের কাজ চলমান থাকায় ভারতের একটু রাস্তা ব্যবস্থার করতে হয় আমাদের। ওই চলাচল দেখে বিএসএফ প্রায় সময়ই গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে আসে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজিবি সদস্য জানান, বর্তমানে রাস্তার নির্মাণকাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। বুধবার সকালে হঠাৎ বিএসএফের একটি দল ওই সীমান্ত এলাকায় কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের জন্য আসে। আইন অনুযায়ী দুই দেশের সীমান্ত পিলার থেকে দেড়শ গজের মধ্যে ফসল চাষ ছাড়া স্থায়ী কোনো স্থাপনা কিংবা বেড়া দেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু বিএসএফ সদস্যরা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বেড়া নির্মাণ করতে আসে। জানতে পেরে বাধা দেওয়া হয়। বাধার মুখে কাজ না করেই ফিরে যান বিএসএফ সদস্যরা।
দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাভিদ রেজওয়ানুল কবীর বলেন, বাংলাদেশ সীমান্তে রাস্তা নির্মাণ না হলে সহজে সমস্যার সমাধান হবে না। ওই এলাকায় রাস্তা ও ব্রিজ নির্মাণকাজে নদী থেকে বালু ব্যবহার নিয়ে একটু জটিলতা রয়েছে। সামনে বর্ষা মৌসুম, ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলে বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে মানুষের চলাচলের বিকল্প রাস্তা নির্মাণ করে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নেত্রকোনা-৩১ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এএসএম কামরুজ্জামানের ভাষ্য, বিষয়টি নিয়ে তাৎক্ষণিক বিজিবির সদস্যদের প্রতিবাদের ফলে বেড়া স্থাপনের কাজ বন্ধ করেছে বিএসএফ। বাংলাদেশ সীমান্তে রাস্তা ও ব্রিজ নির্মাণকাজ বন্ধ থাকায় এখানকার মানুষ ভারত সীমান্ত দিয়ে চলাচল করে। দ্রুত রাস্তা নির্মাণকাজ শেষ না করা হলে এই সমস্যা থেকেই যাবে।