পঞ্চগড়ের পাঁচ উপজেলা নিয়ে সংসদীয় আসন আছে দুটি। এর মধ্যে পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া ও আটোয়ারী উপজেলা নিয়ে পঞ্চগড়-১ আসন।

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও গণ–অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এই জেলায় আওয়ামী লীগের কোনো তৎপরতা নেই। নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে নানা কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি ও জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। এ ছাড়া নতুন গঠিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কর্মসূচি।

চলমান পরিস্থিতিতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নানা বিষয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে রাজনৈতিক দলগুলো। তবে গত রমজান মাসে ইফতার মাহফিলসহ ঈদের আগে-পরে বিভিন্ন কর্মসূচিতে তাদের বেশ সরব দেখা গেছে।

জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছে নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি। এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের বাড়ি পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলায়। নতুন দলের দায়িত্ব পাওয়ার পর তিনি গত ২৪ মার্চ প্রথমবারের মতো এসেছিলেন নিজ জেলায়। ঢাকা থেকে উড়োজাহাজে করে সৈয়দপুরে আসার পর তিনি সড়কপথে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলায় আসেন। সেখান থেকে শতাধিক গাড়িবহর (কার-মাইক্রোবাস) নিয়ে পঞ্চগড় পাঁচ উপজেলায় ‘শোডাউন’ করেছিলেন তিনি। তাঁর এই গাড়িবহর নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে তৈরি হয়েছিল নানা আলোচনা-সমালোচনা। সারজিস আলম ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে জেলাজুড়ে পোস্টার ও ফেস্টুন সাঁটিয়েছেন। ইফতার মাহফিল করার পাশাপাশি ঈদের আগে ও পরে গ্রামে এবং বিভিন্ন হাটবাজারে গিয়ে করেছেন জনসংযোগ।

গত ৩০ মার্চ এনসিপি পঞ্চগড় জেলা শাখার ব্যানারে পঞ্চগড় চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সম্মেলনকক্ষে সারজিস আলম আয়োজন করেছিলেন ইফতার মাহফিলের। বিএনপি-জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা এতে অংশ নেন। সেখানে সাংবাদিকদের উদ্দেশে নির্বাচন বিষয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘কোন জেলার কোন আসনে কে নির্বাচন করবে, এটা নির্বাচনের পূর্বে আমাদের দলীয় যে ফোরাম, সেই ফোরাম নির্ধারণ করবে। সেই ফোরাম যদি আমাকে পঞ্চগড়-১–এর (পঞ্চগড়-১ আসন) জন্য নির্ধারণ করে, তাহলে সেটা; যদি অন্য কোথাও নির্ধারণ করে, তাহলে সেটা।’

এদিকে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে পঞ্চগড়-১ আসনে দল গোছানোর পাশাপাশি জনসংযোগসহ সাধারণ মানুষকে নিয়ে নানা কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। পৌরসভার ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠনসহ উপজেলা ও জেলা সম্মেলনেরও প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। গত রমজানে দলটির পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকায় কর্মিসভাসহ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছিল। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক–বিষয়ক সম্পাদক নওশাদ জমির ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ে এসে পঞ্চগড়-১ আসনের তিনটি উপজেলায় (সদর, তেঁতুলিয়া ও আটোয়ারী) নানা আয়োজনে অংশ নিয়েছেন।

তবে পঞ্চগড় পৌর বিএনপির ব্যানারে দুটি ইফতার মাহফিল ঘিরে বিএনপির দুটি পক্ষের মধ্যে ‘বিরোধ’ দেখা গেছে। গত ২১ মার্চ পঞ্চগড় জেলা শহরের ধাক্কামারা এলাকায় পঞ্চগড় পৌর বিএনপি ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে। সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিক–বিষয়ক সম্পাদক নওশাদ জমির। তবে পৌর বিএনপির আহ্বায়ক ও পঞ্চগড় পৌরসভার সাবেক মেয়র তৌহিদুল ইসলামসহ তাঁর অনুসারীরা ওই ইফতার মাহফিলে যাননি।

এরপর গত ২৯ মার্চ পঞ্চগড় পৌর বিএনপির ব্যানারে পঞ্চগড় সরকারি অডিটরিয়াম চত্বরে আরেকটি ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। পৌর বিএনপির আহ্বায়ক তৌহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ওই ইফতার মাহফিলে বিএনপি ছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন। তবে সেখানে নওশাদ জমিরের অনুসারী নেতাদের দেখা যায়নি।

নির্বাচনকে সামনে রেখে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও। ইতিমধ্যে দলটির পক্ষ থেকে গত ৫ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড়-১ আসনের জন্য জেলা জামায়াতের আমির ইকবাল হোসাইনকে আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পঞ্চগড় চিনিকল মাঠে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পঞ্চগড় জেলা শাখা আয়োজিত এক জনসভায় বক্তব্য দিয়েছেন দলের আমির শফিকুর রহমান।

এ ছাড়া গত রমজানে পঞ্চগড়ের মকবুলার রহমান সরকারি কলেজ মাঠে সাত দিনব্যাপী গণ ইফতারের আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। গত ঈদুল ফিতরের আগে ও পরে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে ইফতার মাহফিল ও ঈদ পুনর্মিলনীর আয়োজন করা হয়েছিল। নিয়মিত বিভিন্ন এলাকায় কর্মিসভা ও জনসংযোগ করছেন দলটির নেতারা।

সম্প্রতি পঞ্চগড়ের বিভিন্ন এলাকায় দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য লেখাসংবলিত পোস্টার সাঁটিয়েছেন বাংলাদেশ জাসদের (আম্বিয়া-নাজমুল) সাধারণ সম্পাদক ও পঞ্চগড়-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধান। ঈদের আগে ও পরে তিনিও জেলার বিভিন্ন এলাকায় ইফতার মাহফিলে অংশ নিয়েছেন এবং জনসংযোগ করেছেন।

এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টিকেও (জাগপা) দেশের ও আন্তর্জাতিক নানা ইস্যুতে জেলায় বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ভ ন ন র জন ত ক ব ভ ন ন এল ক য় প র ব এনপ র জনস য গ উপজ ল য় ইসল ম এনস প

এছাড়াও পড়ুন:

ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী খলিলকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়ন করা যেতে পারে বলে বিচারকের মত

যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার হওয়া ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলকে বিতাড়িত করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছেন মার্কিন অভিবাসন আদালতের এক বিচারক। এর মধ্য দিয়ে এক মাস আগে নিউইয়র্ক নগর থেকে গ্রেপ্তার হওয়া কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীকে বিতাড়িত করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন তাদের তৎপরতা চালিয়ে যেতে পারবে।

লুইজিয়ানার লাসাল অভিবাসন আদালতের বিচারক জেমি কোমান্স গতকাল শুক্রবার এ মত দিয়েছেন। তাঁর এ সিদ্ধান্তই যে খলিলের চূড়ান্ত পরিণতি নির্ধারণ করে দিচ্ছে, তা নয়। তবে এটিকে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য উল্লেখযোগ্য বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, তিনি খলিলের মতো বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিপন্থী বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিতাড়িত করার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছেন।

১৯৫২ সালের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টকে উদ্ধৃত করে গত মাসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্ক রুবিও বলেছিলেন, খলিল মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি–সংক্রান্ত স্বার্থের ক্ষতি করতে পারেন এবং তাঁর বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডের জন্য তাঁকে বিতাড়িত করা উচিত।

কোমান্স বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যকে অগ্রাহ্য করার এখতিয়ার তাঁর নেই। খলিলের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে রুবিওকে তলব করার এবং ১৯৫২ সালের আইনের অধীন তাঁর নেওয়া সিদ্ধান্তের ‘যুক্তিসংগত কারণ’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে বিচারকের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। তবে বিচারক তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

লুইজিয়ানার গ্রামীণ এলাকায় কাঁটাতারে ঘেরা একটি অভিবাসী আটককেন্দ্রের ভেতর বসা আদালতে ৯০ মিনিটের শুনানির পর বিচারক এমন সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউইয়র্ক নগর ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন খলিল। সিরিয়ার একটি ফিলিস্তিনি শরণার্থীশিবিরে জন্মগ্রহণকারী খলিল আলজেরিয়ার নাগরিক। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা হন তিনি। খলিলের স্ত্রী একজন মার্কিন নাগরিক।

গত ৮ মার্চ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবন থেকে খলিলকে গ্রেপ্তার করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) কর্মকর্তারা। এরপর কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে লুইজিয়ানার কারাগারে পাঠান। তখন থেকে তিনি সেখানেই আছেন।

বিচারক কোমান্স ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী খলিলের আইনজীবীদের ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দিয়েছেন।

আরও পড়ুনফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনের সংগঠক গ্রিনকার্ডধারী খলিলকে কি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়ন করতে পারবেন ট্রাম্প১৩ মার্চ ২০২৫

খলিলকে বিতাড়িত করার আদেশ দেবেন কি না, তা এখন বিবেচনা করবেন কোমান্স। তার আগে বিতাড়ন থেকে রেহাই পেতে আবেদন করার জন্য খলিলের আইনজীবীদের ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন তিনি। একজন অভিবাসীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর পর তিনি নিপীড়নের শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কা করলে অভিবাসন আদালতের বিচারক তাঁকে বিতাড়িত না করার জন্য আদেশ দিতে পারেন।

নিউ জার্সিতে আলাদা এক মামলায় স্থানীয় আদালতের বিচারপতি মাইকেল ফারবিয়ার্জ শিক্ষার্থী খলিলকে বিতাড়নের চেষ্টা আটকে দিয়েছেন। খলিলকে গ্রেপ্তারের ঘটনাটি মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর আওতায় দেওয়া বাক্‌স্বাধীনতার সুরক্ষাকে লঙ্ঘন করছে কি না, তা বিবেচনা করছেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মেঘনা আলমকে আটকের ঘটনা ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী আচরণের প্রকাশ: গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি
  • ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী খলিলকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়ন করা যেতে পারে বলে বিচারকের মত
  • আ’লীগ নেতাকর্মীর ওপর ‘বাড়তি নজর’ গোয়েন্দাদের