প্রতিদিনই শুল্কযুদ্ধের তীব্রতা বাড়ছে। গত বুধবার অন্যান্য দেশের বাড়তি শুল্ক স্থগিত রাখলেও চীনের ওপর শুল্ক অব্যাহত রাখেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনের প্রতিশোধমূলক শুল্কের জবাবে সেদিন শুল্কের হার আরও বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার তিনি শুল্ক আরও বাড়িয়ে ১৪৫ শতাংশ করেন। এর জবাবে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে শুল্ক ৮৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করেছে চীন।

এর মধ্যে আবার যৌক্তিক সমাধান বের করার চেষ্টা করছেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। চেষ্টা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের এই অযৌক্তিক প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে অন্য দেশগুলোকে কাছে টানার। বাণিজ্যযুদ্ধের আবহে প্রথমবার মুখ খুলে চীনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, ‘শুল্কযুদ্ধে কেউ জেতে না। বিশ্বের বিরুদ্ধে গেলে তা নিজেকেই একঘরে করে রাখার শামিল।’ যুক্তরাষ্ট্রের এই ‘পীড়নের’ মোকাবিলা করতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও ভারতের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়াই করার বার্তা দিয়েছেন তিনি। খবর ইকোনমিক টাইমসের।

এদিকে দ্য গার্ডিয়ানের সংবাদে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আরও পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তারই অংশ হিসেবে হলিউডের চলচ্চিত্র আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ১৮টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানকে চীনের বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক বৃদ্ধির বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার বিশ্ববাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) নালিশ করেছে বেইজিং।

এরই মধ্যে শুক্রবার বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্কের মুখে নিজেদের বাণিজ্য সামাল দিতে আগামী সপ্তাহে ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ সফরের পরিকল্পনা রয়েছে চীনের প্রেসিডেন্টের। স্পেনের প্রধানমন্ত্রীকে সি চিন পিং বলেন, এই বাণিজ্যযুদ্ধে কেউ জিতবে না। বিশ্বায়ন প্রক্রিয়া রক্ষা করতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ‘একতরফা নিপীড়ন’রুখে দিতে চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) হাত মেলাতে হবে। শুধু নিজ স্বার্থ নয়, আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য এটা করতে হবে।

চীন বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র যে হারে তাদের পণ্যে শুল্ক আরোপ করেছে, তাতে এমনিতেই চীনের কোম্পানিগুলোর পক্ষে বাণিজ্য করা সম্ভব নয়। এরপর আরও শুল্ক আরোপিত হলেও অগ্রাহ্য করবে তারা। ট্রাম্প সেই সিদ্ধান্ত নিলে বিশ্ব অর্থনীতির ইতিহাসে তা ‘প্রহসন’ হিসেবেই থেকে যাবে। পাশাপাশি আলোচনার টেবিলে আসতে পরস্পরের প্রতি সম্মান বজায় রাখতে হবে বলে বার্তা দিয়েছে বেইজিং। সেই সঙ্গে তাদের হুঁশিয়ারি, ওয়াশিংটন চীনের স্বার্থে আঘাত হানলে পাল্টা জবাব দিতে তৈরি চীন।

এদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির মোকাবিলায় ভারত ও চীনের আরও কাছাকাছি আসা উচিত। এই ঘোরতর সংকটের সময় দুই দেশের উচিত হবে, একে অপরের পাশে দাঁড়ানো—এমনটাই মনে করেন ভারতের চীন দূতাবাসের মুখপাত্র ইউ জিং।

ইকোনমিক টাইমসের সংবাদে বলা হয়েছে, এক্স হ্যান্ডলের পোস্টে ইউ জিং ভারত ও চীনের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কে জোর দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, এ সম্পর্কই সব বাধা কাটিয়ে উঠতে পারবে। তাঁর কথায়, ‘দুই বৃহত্তম উন্নয়নশীল দেশের (ভারত ও চীন) উচিত সমস্যা (ট্রাম্পের আরোপিত শুল্ক) কাটিয়ে ওঠার জন্য একত্রে দাঁড়ানো উচিত।’ ইউ জিংয়ের দাবি, চীনের অর্থনৈতিক কাঠামো কেবল নিজের দেশের নয়, বরং একই সঙ্গে বিশ্ববাণিজ্যের স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধিও নিশ্চিত করে।

অতীতেও ট্রাম্পের শুল্কনীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নয়াদিল্লিকে পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে বেইজিং। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের মতে, গত বছর রাশিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের পর থেকে ভারত ও চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি হয়েছে।

ভারত ও চীনের শক্তির কথা বলতে গিয়ে ‘হাতি’ ও ‘ড্রাগন’-এর উপমা ব্যবহার করেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘ড্রাগন ও হাতির মধ্যে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক দুই দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। ড্রাগন ও হাতিকে একসঙ্গে নাচাতে হবে।’ অর্থাৎ দুই দেশ এক হলে শেষমেশ দুজনেরই লাভ। চীন প্রশাসনের প্রস্তাব নিয়ে যদিও এখন পর্যন্ত মোদি সরকার আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

গাজার হাসপাতালে মিসাইল হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল

ফিলিস্তিনের গাজা সিটির প্রধান আল-আহলি ব্যাপটিস্ট হাসপাতালে মিসাইল হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরায়েল। অনলাইনে প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা গেছে, হাসপাতালের দোতলা ভবনে মিসাইল ছোড়ার পর সেখান থেকে আগুনের বিশাল কুণ্ডলি ছড়িয়ে পড়ছে।

এতে হাসপাতালটির আইসিইউ এবং অস্ত্রোপচার বিভাগ ধ্বংস হয়ে গেছে। ওই সময় হাসপাতালের বিছানায় থাকা বেশ কয়েকজন রোগী দ্রুত সরে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। সূত্র: বিবিসি

হামাস এই হামলাকে ‘ভয়াবহ অপরাধ’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় এক সাংবাদিক জানিয়েছেন, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এক চিকিৎসকে ফোন করে জানায়, তারা হাসপাতালে হামলা চালাবে। তাই দ্রুত হাসপাতালের সবাইকে সরিয়ে নিতে হবে।

স্থানীয় ওই সাংবাদিক আরও জানিয়েছেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের কাছে ফোন করেন, হুমকি দিয়ে বলেন, সব রোগী এবং বাস্তুচ্যুত মানুষকে অবশ্যই নিরাপদ স্থানে সরে যেতে হবে। আপনাদের হাতে আছে মাত্র ২০ মিনিট।

সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, রাতের বেলা রোগীরাও হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া হাসপাতালের সামনে যেসব নারী ও শিশু আশ্রয় নিয়েছিলেন তারাও সরে যান।

দখলদার ইসরায়েল গাজা সিটির সবচেয়ে বড় হাসপাতাল আল-শিফাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে। এরপর আল-আহলি হাসপাতালটি সেখানকার প্রধান হাসপাতালে পরিণত হয়। রোববার রাতে এই হাসপাতালটিতেও হামলা চালিয়েছে তারা। এর আগে ২০২৩ সালের অক্টোবরে একই হাসপাতালে হামলা চালিয়ে কয়েকশ মানুষকে হত্যা করেছিল দখলদার ইসরায়েল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ