যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার হওয়া ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলকে বিতাড়িত করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছেন মার্কিন অভিবাসন আদালতের এক বিচারক। এর মধ্য দিয়ে এক মাস আগে নিউইয়র্ক নগর থেকে গ্রেপ্তার হওয়া কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীকে বিতাড়িত করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন তাদের তৎপরতা চালিয়ে যেতে পারবে।

লুইজিয়ানার লাসাল অভিবাসন আদালতের বিচারক জেমি কোমান্স গতকাল শুক্রবার এ মত দিয়েছেন। তাঁর এ সিদ্ধান্তই যে খলিলের চূড়ান্ত পরিণতি নির্ধারণ করে দিচ্ছে, তা নয়। তবে এটিকে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য উল্লেখযোগ্য বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, তিনি খলিলের মতো বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিপন্থী বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিতাড়িত করার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছেন।

১৯৫২ সালের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টকে উদ্ধৃত করে গত মাসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্ক রুবিও বলেছিলেন, খলিল মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি–সংক্রান্ত স্বার্থের ক্ষতি করতে পারেন এবং তাঁর বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডের জন্য তাঁকে বিতাড়িত করা উচিত।

কোমান্স বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যকে অগ্রাহ্য করার এখতিয়ার তাঁর নেই। খলিলের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে রুবিওকে তলব করার এবং ১৯৫২ সালের আইনের অধীন তাঁর নেওয়া সিদ্ধান্তের ‘যুক্তিসংগত কারণ’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে বিচারকের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। তবে বিচারক তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।

লুইজিয়ানার গ্রামীণ এলাকায় কাঁটাতারে ঘেরা একটি অভিবাসী আটককেন্দ্রের ভেতর বসা আদালতে ৯০ মিনিটের শুনানির পর বিচারক এমন সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউইয়র্ক নগর ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন খলিল। সিরিয়ার একটি ফিলিস্তিনি শরণার্থীশিবিরে জন্মগ্রহণকারী খলিল আলজেরিয়ার নাগরিক। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা হন তিনি। খলিলের স্ত্রী একজন মার্কিন নাগরিক।

গত ৮ মার্চ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবন থেকে খলিলকে গ্রেপ্তার করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) কর্মকর্তারা। এরপর কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে লুইজিয়ানার কারাগারে পাঠান। তখন থেকে তিনি সেখানেই আছেন।

বিচারক কোমান্স ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী খলিলের আইনজীবীদের ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দিয়েছেন।

আরও পড়ুনফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনের সংগঠক গ্রিনকার্ডধারী খলিলকে কি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়ন করতে পারবেন ট্রাম্প১৩ মার্চ ২০২৫

খলিলকে বিতাড়িত করার আদেশ দেবেন কি না, তা এখন বিবেচনা করবেন কোমান্স। তার আগে বিতাড়ন থেকে রেহাই পেতে আবেদন করার জন্য খলিলের আইনজীবীদের ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন তিনি। একজন অভিবাসীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর পর তিনি নিপীড়নের শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কা করলে অভিবাসন আদালতের বিচারক তাঁকে বিতাড়িত না করার জন্য আদেশ দিতে পারেন।

নিউ জার্সিতে আলাদা এক মামলায় স্থানীয় আদালতের বিচারপতি মাইকেল ফারবিয়ার্জ শিক্ষার্থী খলিলকে বিতাড়নের চেষ্টা আটকে দিয়েছেন। খলিলকে গ্রেপ্তারের ঘটনাটি মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর আওতায় দেওয়া বাক্‌স্বাধীনতার সুরক্ষাকে লঙ্ঘন করছে কি না, তা বিবেচনা করছেন তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব ত ড় ত কর র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

পয়লা বৈশাখের আয়োজন বাধাগ্রস্ত করার কোনো অধিকার নেই

পয়লা বৈশাখ পালনের ঐতিহ্যগত নানা আয়োজন ও অনুষ্ঠান নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি ও উসকানি দেওয়ার অপপ্রয়াসের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন ১৮ বিশিষ্ট নাগরিক। আজ শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তাঁরা বলেন, ‘পয়লা বৈশাখ ঘিরে যেসব সাংস্কৃতিক ও সামাজিক উৎসব হয়, তা আমাদের জাতীয় ঐক্য ও সংহতি প্রকাশের এক মহা আয়োজনও বটে। এই আয়োজনকে কলঙ্কিত বা বাধাগ্রস্ত করার কোনো অধিকার কারও নেই।’

বিবৃতিতে বলা হয়, স্বাধীন ও সুশৃঙ্খলভাবে পয়লা বৈশাখ পালনে বাধা কিংবা উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তি, মহল ও সংগঠনগুলোকে যেকোনো ধরনের অপতৎপরতা থেকে বিরত রাখতে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে। এ জন্য অন্তর্বর্তী সরকার, বিশেষ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সব প্রতিষ্ঠানের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

বিবৃতিতে বলা হয়, মনে রাখতে হবে, পয়লা বৈশাখ পালন যেমন কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, তেমনি তার সঙ্গে ধর্মবিশ্বাসের সংঘাতও নেই। মোগল সম্রাট আকবরের শাসনামল থেকে এই জনপদের ধর্ম-বর্ণ-জাতিগোষ্ঠীনির্বিশেষে সব মানুষ এই উৎসব পালন করে এসেছেন। একে বিতর্কিত করার কোনো অবকাশ নেই।

বিবৃতিদাতারা বলেছেন, ‘আমরা তীব্র ক্ষোভ ও গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করেছি, কয়েক দিন ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সামাজিক মিডিয়ায় কিছু উগ্র সাম্প্রদায়িক মহল আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ পয়লা বৈশাখ নববর্ষ পালন ও এর নানা অনুষ্ঠান নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টির অসিলা খুঁজে বেড়াচ্ছে। বর্ষবরণের শোভাযাত্রায় কী ধরনের পোশাক পরা যাবে, কী ধরনের প্ল্যাকার্ড বহন করা যাবে অথবা যাবে না—এসব অযাচিত অনধিকার চর্চার ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তৃতা–বিবৃতি দিয়ে চলেছে। তাদের এই সকল বিবৃতি এবং উগ্র আচরণের হুংকার আমাদের পঞ্চাশ ষাটের দশকে তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর সেবাদাস উগ্র সাম্প্রদায়িক মহলের সন্ত্রাসী আচরণের কথা মনে করিয়ে দেয়।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই দেশের মানুষ সংগ্রাম ও ’৭১ সালের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ওই সব ধর্ম ব্যবসায়ী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর সব অপচেষ্টা পরাজিত করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে। ২০২৪ সালের জুলাই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে নিষ্ঠুর কর্তৃত্ববাদী, গণহত্যাকারী লুটেরা সরকারকেও উৎখাত করে জবাবদিহিমূলক সুশাসন, বৈষম্যহীন রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং অসাম্প্রদায়িক ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার কাজে স্ব–স্ব অবস্থান থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই সময় পয়লা বৈশাখ পালনের অনুষ্ঠান নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি কিংবা তার কোনো অনুষ্ঠানের ওপর অযাচিত বিধিনিষেধ আরোপের অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচেষ্টা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ওই মহলের উগ্র সাম্প্রদায়িক বিবৃতি এবং উসকানিমূলক বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে।

‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামের মধ্যে ধর্মীয় বিদ্বেষ খুঁজার চেষ্টা করা সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপচেষ্টারই নামান্তর বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, তাদের প্রশ্রয় দিয়ে সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে উদাহরণ সৃষ্টি  করলেন, তা প্রশ্নবিদ্ধ ও নিন্দনীয়। ‘আদিবাসী’দের উপস্থিতি যেমন অন্তর্ভুক্তিমূলক কাজের অংশ, তেমনি তাদের ‘আদিবাসী’ পরিচয়ের অস্বীকৃতি তাদের প্রতি সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অবহেলারই নজিরমাত্র।

গণমাধ্যমে বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন বাংলাদেশের বেসরকারি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম ইন বাংলাদেশের (এএলআরডি) নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা। এতে সই করেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল, সেন্ট্রাল উইমেন ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর পারভীন হাসান, আসকের চেয়ারপারসন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না, নিজেরা করির সমন্বয়কারী খুশী কবির, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, অধ্যাপক জোবাইদা নাসরীন, অধ্যাপক খাইরুল চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক তাসনীম সিরাজ মাহবুব, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী, আইনজীবী তবারক হোসেইন, লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, কোস্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম চৌধুরী, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মণীন্দ্র কুমার নাথ, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মিনহাজুল হক চৌধুরী, মানবাধিকারকর্মী সাঈদ আহমেদ ও আদিবাসী অধিকারকর্মী হানা শামস আহমেদ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পয়লা বৈশাখের আয়োজন বাধাগ্রস্ত করার কোনো অধিকার নেই
  • মেঘনা আলমকে আটকের ঘটনা ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী আচরণের প্রকাশ: গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি
  • বন্ডের সুদহার বৃদ্ধির কারণেই সরে এলেন ট্রাম্প
  • পঞ্চগড়ে বিএনপি–জামায়াতসহ সবার তৎপরতা নির্বাচনমুখী
  • কলকাতা, লন্ডন ও নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগের নেতাদের বিলাসী জীবন
  • আ’লীগ নেতাকর্মীর ওপর ‘বাড়তি নজর’ গোয়েন্দাদের
  • নিউইয়র্কের হাডসন নদীতে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় নিহত ৬
  • নিউইয়র্কে হাডসন নদীতে পড়ল হেলিকপ্টার, ছয়জন নিহত
  • তুরস্কে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার প্রতিনিধি, লক্ষ্য সম্পর্ক জোরদার