খাবার শুধু আমাদের শরীরের প্রাত্যহিক শক্তির উৎস নয়, আমাদের সংস্কৃতির অংশও বটে। চৈত্রসংক্রান্তিতে তেতো খাবারের সংস্কৃতি আমাদের শত বছরের ঐতিহ্য। এর পেছনে রয়েছে বহু বছরের প্রচলিত স্বাস্থ্যভাবনাও।
করলা
করলায় মোমোর্ডিসিন নামক জৈব রাসায়নিক যৌগ থাকে। মোমোর্ডিসিন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান। এটি যেমন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, তেমনি করলাকেও বিভিন্ন কীটপতঙ্গ ও প্রাণীর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
করলার তেতো স্বাদ হওয়ার কারণ এতে থাকে টেট্রাসাইক্লিক ট্রাইটারপেনয়েড নামের একটি রাসায়নিক যৌগ। এটা করলাকে তিতকুটে স্বাদের করে তোলে ও রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। করলার অন্যতম উপাদান এডিনোসিন মনোফসফেট অ্যাকটিভেটেড প্রোটিন কাইনেজ। এটি রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।
নিমপাতা
ঔষধি গুণের জন্য নিমপাতা বিশেষভাবে সমাদৃত। আয়ুর্বেদশাস্ত্রে নিমপাতাকে বলা হয় ‘ম্যাজিক পাতা’। নিমপাতায় থাকে নিম্বিন, নিম্বিডিন, টাপ্রিনিয়েড, গ্লাইকোসাইড, অ্যালকালয়েড ও ট্যানিন নামক উপাদান। এসব উপাদানের জন্যই নিমপাতার স্বাদ তেতো। নিমপাতা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়, কৃমিনাশক ও রক্ত পরিষ্কারে সাহায্য করে।
শুক্তা
তিক্ত রসের একধরনের বাঙালি খাবার শুক্তা। আহারের শুরুতে মুখশুদ্ধি হিসেবে এটি খাওয়া হয়ে থাকে। তেতো রসে রুচি বাড়ে। পলতা, নালতে, উচ্ছে, করলা, কচি নিমপাতা ইত্যাদি শুক্তার তিক্ত রসের প্রধান উপাদান। রুচি বাড়ানো ও হজমশক্তি বৃদ্ধিতে শুক্তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পাটশাক
কচি পাটশাক ভিটামিন ও মিনারেলের পাশাপাশি ক্যালসিয়ামের খুব ভালো উৎস। এ ছাড়া অ্যালকালয়েড, ফলিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ পাটশাক শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে। পাটশাকে ক্যারোটিনের পরিমাণও থাকে অনেক বেশি। রুচি বাড়াতে ও মুখের স্বাদ ফেরাতে পাটশাক উপকারী।
শজনে ডাঁটা
শজনে ডাঁটা ও পাতার স্বাদ কিছুটা তেতো হলেও স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। প্রস্রাবের সংক্রমণ দূর করতে শজনে ফুল খুব উপকারী। চিকেন পক্স হলে শজনে পাতার ভর্তা, ভাজি বা ফুল ভাজি উপকারী পথ্য। শজনে ডাঁটায় পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাসিয়াম ও ক্যালসিয়াম থাকে।
কালিজিরা
কালিজিরায় থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও মিনারেল শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিত কালিজিরা খেলে ঠান্ডা, কাশি, জ্বর ইত্যাদি থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়। এ ছাড়া কালিজিরা হজমশক্তি বাড়ায় ও লিভারের জন্য উপকারী।
সতর্কতা
করলায় কীটনাশক প্রয়োগের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ওই করলার জুস খাওয়া নিরাপদ নয়। সে ক্ষেত্রে করলা ঝোল করে রান্না করে খাওয়া উত্তম।
কালিজিরা প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২ গ্রামের বেশি খাওয়া উচিত নয়।
গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অতিরিক্ত কালিজিরা বা কালিজিরার তেল খাওয়া উচিত নয়। তাতে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে।
নিমপাতা গর্ভবতী নারী ও শিশুদের খাওয়ানো উচিত নয়। এতে থাকা এলকালয়েড তাদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
মো.
ইকবাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উপ দ ন আম দ র র জন য উপক র
এছাড়াও পড়ুন:
তেতো খাবারের যত গুণ
খাবার শুধু আমাদের শরীরের প্রাত্যহিক শক্তির উৎস নয়, আমাদের সংস্কৃতির অংশও বটে। চৈত্রসংক্রান্তিতে তেতো খাবারের সংস্কৃতি আমাদের শত বছরের ঐতিহ্য। এর পেছনে রয়েছে বহু বছরের প্রচলিত স্বাস্থ্যভাবনাও।
করলা
করলায় মোমোর্ডিসিন নামক জৈব রাসায়নিক যৌগ থাকে। মোমোর্ডিসিন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক উপাদান। এটি যেমন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো, তেমনি করলাকেও বিভিন্ন কীটপতঙ্গ ও প্রাণীর আক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
করলার তেতো স্বাদ হওয়ার কারণ এতে থাকে টেট্রাসাইক্লিক ট্রাইটারপেনয়েড নামের একটি রাসায়নিক যৌগ। এটা করলাকে তিতকুটে স্বাদের করে তোলে ও রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। করলার অন্যতম উপাদান এডিনোসিন মনোফসফেট অ্যাকটিভেটেড প্রোটিন কাইনেজ। এটি রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।
নিমপাতা
ঔষধি গুণের জন্য নিমপাতা বিশেষভাবে সমাদৃত। আয়ুর্বেদশাস্ত্রে নিমপাতাকে বলা হয় ‘ম্যাজিক পাতা’। নিমপাতায় থাকে নিম্বিন, নিম্বিডিন, টাপ্রিনিয়েড, গ্লাইকোসাইড, অ্যালকালয়েড ও ট্যানিন নামক উপাদান। এসব উপাদানের জন্যই নিমপাতার স্বাদ তেতো। নিমপাতা রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়, কৃমিনাশক ও রক্ত পরিষ্কারে সাহায্য করে।
শুক্তা
তিক্ত রসের একধরনের বাঙালি খাবার শুক্তা। আহারের শুরুতে মুখশুদ্ধি হিসেবে এটি খাওয়া হয়ে থাকে। তেতো রসে রুচি বাড়ে। পলতা, নালতে, উচ্ছে, করলা, কচি নিমপাতা ইত্যাদি শুক্তার তিক্ত রসের প্রধান উপাদান। রুচি বাড়ানো ও হজমশক্তি বৃদ্ধিতে শুক্তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
পাটশাক
কচি পাটশাক ভিটামিন ও মিনারেলের পাশাপাশি ক্যালসিয়ামের খুব ভালো উৎস। এ ছাড়া অ্যালকালয়েড, ফলিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ পাটশাক শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে। পাটশাকে ক্যারোটিনের পরিমাণও থাকে অনেক বেশি। রুচি বাড়াতে ও মুখের স্বাদ ফেরাতে পাটশাক উপকারী।
শজনে ডাঁটা
শজনে ডাঁটা ও পাতার স্বাদ কিছুটা তেতো হলেও স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। প্রস্রাবের সংক্রমণ দূর করতে শজনে ফুল খুব উপকারী। চিকেন পক্স হলে শজনে পাতার ভর্তা, ভাজি বা ফুল ভাজি উপকারী পথ্য। শজনে ডাঁটায় পর্যাপ্ত পরিমাণে পটাসিয়াম ও ক্যালসিয়াম থাকে।
কালিজিরা
কালিজিরায় থাকা অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও মিনারেল শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিত কালিজিরা খেলে ঠান্ডা, কাশি, জ্বর ইত্যাদি থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়। এ ছাড়া কালিজিরা হজমশক্তি বাড়ায় ও লিভারের জন্য উপকারী।
সতর্কতা
করলায় কীটনাশক প্রয়োগের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ওই করলার জুস খাওয়া নিরাপদ নয়। সে ক্ষেত্রে করলা ঝোল করে রান্না করে খাওয়া উত্তম।
কালিজিরা প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২ গ্রামের বেশি খাওয়া উচিত নয়।
গর্ভাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অতিরিক্ত কালিজিরা বা কালিজিরার তেল খাওয়া উচিত নয়। তাতে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে।
নিমপাতা গর্ভবতী নারী ও শিশুদের খাওয়ানো উচিত নয়। এতে থাকা এলকালয়েড তাদের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে।
মো. ইকবাল হোসেন, জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা, চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল