শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহ রোধ করতেই হবে
Published: 12th, April 2025 GMT
১০ এপ্রিল শুরু হওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় গত বছরের চেয়ে প্রায় এক লাখ পরীক্ষার্থী কমে যাওয়া মোটেই স্বাভাবিক ঘটনা নয়। এসএসসি পরীক্ষায় এবার পরীক্ষার্থী ১৯ লাখ ২৮ হাজার ৯৭০ জন; যা ২০২৪ সালের তুলনায় এবার প্রায় এক লাখ কম। গতবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থী ছিল ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন। গতবারও তার আগের বছরের চেয়ে প্রায় ৪৮ হাজার পরীক্ষার্থী কমেছিল। কমার এই ধারা অশনিসংকেত বৈকি।
আরও উদ্বেগের খবর হলো পরীক্ষার ফরম পূরণ করেও ২৭ হাজার পরীক্ষার্থী পরীক্ষার হলে অনুপস্থিত ছিল; যারা ১০ বছর পড়াশোনা করে বাছাই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। তারপরও তারা অনুপস্থিতি থেকেছে। দৈবদুর্বিপাকের কারণে কিছুসংখ্যক পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকতে পারে। তাই বলে ২৭ হাজার!
রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোহাম্মাদ ফেরদাউস বলেন, নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করা সব শিক্ষার্থীই বোর্ড পরীক্ষায় অংশ নেবে, এমনটা কখনো হয় না। দুই বছরে দারিদ্র্য, বাল্যবিবাহ, অসুস্থতা অথবা টেস্ট পরীক্ষায় ভালো করতে না পারা অনেক পরীক্ষার্থীই শেষ পর্যন্ত বোর্ড পরীক্ষায় বসে না। তারা অনিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসেবে পরে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করে।
বিগত বছরগুলোতে আমরা দেখেছি, পাবলিক পরীক্ষা মানে প্রশ্নপত্র ফাঁস, নকল ও অনিয়মের ছড়াছড়ি। অনেক কেন্দ্রে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিও তৈরি হতো। এবার এসএসসি পরীক্ষার ভালো দিক হলো এখন পর্যন্ত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার কথা শোনা যায়নি। বাকি পরীক্ষাগুলোর বিষয়েও আশা করি তারা সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবেন। বাংলাদেশ আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির পক্ষ থেকে পরীক্ষা সুষ্ঠু, সুন্দর ও সম্পূর্ণ নকলমুক্ত পরিবেশে অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হলেও কোথাও কোথাও অঘটন ঘটেছে। কয়েকটি কেন্দ্রে অসাধু উপায় অবলম্বনের জন্য কিছু পরীক্ষার্থী বহিষ্কৃত হয়েছে। দু–একটি কেন্দ্রে পরীক্ষককে বের করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
দিনাজপুরের একটি কেন্দ্রে বিদ্যুৎ না থাকায় ও বারবার বিদ্যুৎ–বিভ্রাটের কারণে পরীক্ষার্থীদের মোমবাতি জ্বালিয়ে পরীক্ষা দিতে হয়েছে। শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, তাঁরা চার্জার লাইট ও মোমবাতির ব্যবস্থা করেছেন। পরীক্ষা গ্রহণে কোনো সমস্যা হয়নি। ভবিষ্যতে কোনো কেন্দ্রে যাতে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সে জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। প্রতিকূল পরিবেশে শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি মানসিক চাপ তৈরি করে।
শিক্ষাবিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রধানত আর্থসামাজিক কারণে এসএসসি পরীক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। অভিভাবকেরা মেয়েশিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত থাকেন এবং পরীক্ষার আগেই বিয়ে দেন। পারিবারিক দুর্যোগের কারণে ছেলেশিক্ষার্থীরা অনেক সময় কাজ করতে বাধ্য হয়। তাদের কাছে পড়াশোনার চেয়ে সংসার চালানোই জরুরি হয়ে পড়ে। এটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা। এর সমাধান করতে হলে স্থানীয় প্রশাসন এগিয়ে আসতে পারে।
শিশুশ্রম রোধ করতে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে তৎপর হতে হবে। আর বাল্যবিবাহ রোধে মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। শুধু প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নিলেই হবে না, সামাজিকভাবেও বাল্যবিবাহ রোধে এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে। প্রত্যেক মা–বাবাকেও বাল্যবয়সে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার পরিণাম সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে।
যেখানে দেশে জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে, সেখানে এসএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ার প্রবণতা ভালো লক্ষণ নয়। যোগ্য ও দক্ষ নাগরিক গড়ে তুলতে শিক্ষার বিকল্প নেই। এর ব্যত্যয় হলে বর্ধিত জনসংখ্যা সম্পদ না হয়ে বোঝায় পরিণত হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র পর ক ষ র থ পর ক ষ য়
এছাড়াও পড়ুন:
এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে কেন্দ্রে বিএনপি নেতার ঘোরাঘুরির ভিডিও
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি জাফতনগর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নুর উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের অভিযোগ উঠেছে। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটের দিকে উপজেলার জাহানপুর আমজাদ আলী আবদুল হাদি ইনস্টিটিউশন কেন্দ্র থেকে তিনি বের হচ্ছেন।
আজ বাংলা প্রথম পত্র দিয়ে এবারের এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের বাধ্যবাধকতার বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান ইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদ প্রথম আলোকে জানান, পরীক্ষা চলাকালে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি ছাড়া কেউই পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ম্যাজিস্ট্রেট, শিক্ষা বোর্ডের ভিজিল্যান্স দলের সদস্যরা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন।
পরীক্ষা চলাকালে কেন্দ্রে প্রবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে নুর উদ্দিন খান বলেন, ‘আমার ভাতিজি ওই কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে। তাকে পৌঁছে দিতে পরীক্ষা শুরুর আগে কেন্দ্রে গিয়েছিলাম। আমি সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গিয়েছিলাম।’
ভিডিওতে ১২টা ১৫ মিনিটের দিকে বের হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমি ১২টার দিকে কেন্দ্রের বাইরে ছিলাম। ভেতরে ঢুকিনি। বাইরে থেকে কুশল বিনিময় করেছি। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে।’
প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিএনপি নেতা নুর উদ্দিন খান পরীক্ষা শুরুর পর থেকে অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করেন। কেন্দ্র সচিবের কক্ষেও যান।
এ বিষয়ে কেন্দ্র সচিব মফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নুর উদ্দিন খান পরীক্ষা শুরুর আগে কেন্দ্রে ঢুকেছিলেন। পরে আমি বুঝিয়ে–শুনিয়ে বের করে দিয়েছি।’ কেন কেন্দ্রে প্রবেশ করেছেন—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কথা তো এইটাই…। আজকে প্রথম দিন তো এমনি গার্ডিয়ান (অভিভাবক) কিছু তো ঢুকছে। ওদের সঙ্গে তাঁকেও (নুর উদ্দিন খান) দেখলাম। পরে আমি বুঝিয়ে বের করে দিয়েছি।’ তাঁর কোনো আত্মীয় পরীক্ষা দিচ্ছেন কি না, এমন প্রশ্নে কেন্দ্র সচিব জানান, তাঁর জানামতে নুর উদ্দিন খানের কোনো ছেলে–মেয়ে, ভাতিজা, ভাতিজি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না।
তবে পরীক্ষা চলাকালে নুর উদ্দিন খান কেন্দ্রে ছিলেন বলে নিশ্চিত হয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে নুর উদ্দিন খানের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গেছে। পরীক্ষা চলাকালে তিনি কোনোভাবেই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেন না। এ জন্য তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসককেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।