ট্রাম্পের শুল্কে সি’র খেলা: পূর্ব এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কি ক্ষয়িষ্ণু?
Published: 12th, April 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ফিরে এসে আবারও তাঁর পুরোনো অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছেন—ট্যারিফ বা শুল্কের বেড়া। ২ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে তিনি ‘জাতীয় অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছেন। নতুন শুল্ক আরোপ করেছেন আন্তর্জাতিক জরুরি অর্থনৈতিক ক্ষমতা আইনের আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের সব বাণিজ্য অংশীদারের ওপর।
৫ এপ্রিল থেকে কার্যকর হওয়া এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব দেশের ওপর ১০ শতাংশ ‘বেজলাইন’ শুল্ক বসানো হয়েছে। তবে যেসব দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য–ঘাটতি বেশি, তাদের ওপর বাড়তি শুল্কও রয়েছে। চীনের জন্য সেটা গিয়ে ঠেকেছে ৩৪ শতাংশে, জাপানের ২৪, দক্ষিণ কোরিয়ার ২৫ আর তাইওয়ানের জন্য ৩২ শতাংশ।
ট্রাম্প যেটা ভাবছেন সেটা হলো, এই শুল্ক দিয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প ও কর্মসংস্থানের স্বার্থ রক্ষা করবেন, বাণিজ্যে ‘অন্যায্যতা’ দূর করবেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তাঁর এই একতরফা কৌশল হয়তো উল্টো ফল দেবে। বিশেষ করে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো এখন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকিয়ে থাকার বদলে ঝুঁকছে একে অপরের দিকে এবং অবশ্যই চীনের দিকেও।
যুক্তরাষ্ট্রের একঘরে হওয়ার সম্ভাবনাপূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক কাঠামো দিন দিন একে অপরের ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ানের মতো মিত্র দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা চাপের মুখে নত হয়নি। তারা বরং নিজেদের মধ্যে ও চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করতে মনোযোগ দিচ্ছে।
এ পরিস্থিতিতে অঞ্চলটির ভেতরে আঞ্চলিক বাণিজ্য জোটগুলো আঞ্চলিক বিস্তৃত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব (আরসিইপি), ট্রান্স-প্যাসিফিক অংশীদারত্ব চুক্তির পরিমার্জিত রূপ (সিপিটিপিপি) এবং বহুদিন ধরে স্থগিত থাকা চীন-জাপান-কোরিয়া মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (সিজেকেএফটিএ) গতি বাড়তে পারে।
ট্রাম্প হয়তো ভাবছেন, এতে যুক্তরাষ্ট্র শক্তিশালী হবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তিনি হয়তো নিজেই নিজের দেশকে বাকি পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছেন।
সি চিন পিংয়ের লম্বা দৌড়ের খেলাএমন পরিস্থিতিতেই আসে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের নাম। তিনি এই মুহূর্তে কেবল চীনের নেতা নন, বরং ঠান্ডা মাথার হিসেবি কৌশলবিদ। তিনি পরিস্থিতি বুঝে ধৈর্য ধরার পক্ষপাতী। ট্রাম্পের আগ্রাসী বাণিজ্যনীতির জবাবে চীন এখনো তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ নেয়নি।চীনা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা ‘জাতীয় স্বার্থ রক্ষায়’ ব্যবস্থা নেবে, তবে তা এখনই নয়। এই সিদ্ধান্তের পেছনে কৌশল রয়েছে। সি হয়তো পরিস্থিতিকে নিজের পক্ষেই ঘুরিয়ে নিতে চাইছেন।
২০২৫ সালের জুনে ট্রাম্প-সি সম্মেলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তার আগে সি চাপ না বাড়িয়ে বরং হিসাব করে খেলছেন। তাঁর লক্ষ্য পরিষ্কার। যুক্তরাষ্ট্র নিজেই নিজেদের শুল্কের ফাঁদে পড়ছে। সময়টাকে কাজে লাগিয়ে চীন যদি পূর্ব এশিয়ায় নিজের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারে, তবে সেটাই হবে আসল জয়।
এই লক্ষ্যে চীন এখন কূটনৈতিকভাবে খুবই সক্রিয়। চীন-জাপান-কোরিয়া মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা আবার জোরদার হচ্ছে। ট্রান্স-প্যাসিফিক অংশীদারত্ব চুক্তির পরিমার্জিত রূপে প্রবেশের ব্যাপারেও চীন একধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। এখানে আগে যুক্তরাষ্ট্রই নেতৃত্ব দিচ্ছিল।
ক্যালিফোর্নিয়ার লং বিচে চীনা পণ্যভর্তি জাহাজ, ৩ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পাশ্চাত্য পোশাকের দাপট দেখা গেল ল্যাকমে ফ্যাশন উইক ২০২৫–এ
ছবি: ইনস্টাগ্রাম থেকে