কলকাতা, লন্ডন ও নিউইয়র্কে আওয়ামী লীগের নেতাদের বিলাসী জীবন
Published: 12th, April 2025 GMT
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা আর প্রচণ্ড দাপট হারালেও বিদেশে বসে বিলাসী জীবন যাপন করছেন আওয়ামী লীগের পলাতক সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় অনেক নেতা। প্রথম আলোর অনুসন্ধানে এসব নেতার জৌলুশময় জীবনযাপনের খবর পাওয়া গেছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের থাকছেন কলকাতার অভিজাত রাজারহাট নিউটাউন এলাকায়। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও কলকাতা নিউটাউন এলাকায় আয়েশি জীবন যাপন করছেন। আর সাবেক সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম কলকাতার অভিজাত এলাকা টাটা হাউজিং অ্যাভিনিডাতে বড় আকারের দুটি ফ্ল্যাট নিয়ে থাকছেন।
কলকাতা থেকে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা জানিয়েছেন, ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের সময় বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের মামলার আসামি এসব পলাতক নেতা বিদেশে আয়েশিভাবে থাকছেন। কোনো কিছুরই অভাব নেই সেখানে। গাড়ি–বাড়ি, ব্যক্তিগত কর্মী, ব্যক্তিগত চিকিৎসক থেকে শুরু করে নিরাপত্তারক্ষী নিয়ে থাকছেন তাঁরা। কেউ কেউ ভারতে তাঁদের সন্তানদের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছেন। তাঁদের অনেকেরই ভারতে ব্যবসা-বাণিজ্য আর সম্পদ আছে। তাই ফেরারি থেকেও অর্থসম্পদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না।
আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, যুব মহিলা লীগ ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সাবেক একাধিক নেতা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী অঙ্গসংগঠনের অনেক নেতা-কর্মী কলকাতায় পালিয়ে আছেন। সাবেক কিছু মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
উত্তর কলকাতার ভীষণ নিরিবিলি এলাকা রাজারহাট নিউটাউন। এখানকার ‘ডিএলএফ নিউটাউন হাইটস প্লাজা’য় থাকেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী খলিলকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়ন করা যেতে পারে বলে বিচারকের মত
যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার হওয়া ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলকে বিতাড়িত করা যেতে পারে বলে মত দিয়েছেন মার্কিন অভিবাসন আদালতের এক বিচারক। এর মধ্য দিয়ে এক মাস আগে নিউইয়র্ক নগর থেকে গ্রেপ্তার হওয়া কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীকে বিতাড়িত করতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন তাদের তৎপরতা চালিয়ে যেতে পারবে।
লুইজিয়ানার লাসাল অভিবাসন আদালতের বিচারক জেমি কোমান্স গতকাল শুক্রবার এ মত দিয়েছেন। তাঁর এ সিদ্ধান্তই যে খলিলের চূড়ান্ত পরিণতি নির্ধারণ করে দিচ্ছে, তা নয়। তবে এটিকে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্য উল্লেখযোগ্য বিজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। কারণ, তিনি খলিলের মতো বৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী ফিলিস্তিনিপন্থী বিদেশি শিক্ষার্থীদের বিতাড়িত করার জন্য তৎপরতা চালাচ্ছেন।
১৯৫২ সালের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড ন্যাশনালিটি অ্যাক্টকে উদ্ধৃত করে গত মাসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্ক রুবিও বলেছিলেন, খলিল মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি–সংক্রান্ত স্বার্থের ক্ষতি করতে পারেন এবং তাঁর বক্তব্য ও কর্মকাণ্ডের জন্য তাঁকে বিতাড়িত করা উচিত।
কোমান্স বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যকে অগ্রাহ্য করার এখতিয়ার তাঁর নেই। খলিলের আইনজীবীদের পক্ষ থেকে রুবিওকে তলব করার এবং ১৯৫২ সালের আইনের অধীন তাঁর নেওয়া সিদ্ধান্তের ‘যুক্তিসংগত কারণ’ সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতে বিচারকের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। তবে বিচারক তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
লুইজিয়ানার গ্রামীণ এলাকায় কাঁটাতারে ঘেরা একটি অভিবাসী আটককেন্দ্রের ভেতর বসা আদালতে ৯০ মিনিটের শুনানির পর বিচারক এমন সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউইয়র্ক নগর ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন খলিল। সিরিয়ার একটি ফিলিস্তিনি শরণার্থীশিবিরে জন্মগ্রহণকারী খলিল আলজেরিয়ার নাগরিক। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা হন তিনি। খলিলের স্ত্রী একজন মার্কিন নাগরিক।
গত ৮ মার্চ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ভবন থেকে খলিলকে গ্রেপ্তার করেন যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) কর্মকর্তারা। এরপর কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে লুইজিয়ানার কারাগারে পাঠান। তখন থেকে তিনি সেখানেই আছেন।
বিচারক কোমান্স ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী খলিলের আইনজীবীদের ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দিয়েছেন।
আরও পড়ুনফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনের সংগঠক গ্রিনকার্ডধারী খলিলকে কি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়ন করতে পারবেন ট্রাম্প১৩ মার্চ ২০২৫খলিলকে বিতাড়িত করার আদেশ দেবেন কি না, তা এখন বিবেচনা করবেন কোমান্স। তার আগে বিতাড়ন থেকে রেহাই পেতে আবেদন করার জন্য খলিলের আইনজীবীদের ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন তিনি। একজন অভিবাসীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর পর তিনি নিপীড়নের শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কা করলে অভিবাসন আদালতের বিচারক তাঁকে বিতাড়িত না করার জন্য আদেশ দিতে পারেন।
নিউ জার্সিতে আলাদা এক মামলায় স্থানীয় আদালতের বিচারপতি মাইকেল ফারবিয়ার্জ শিক্ষার্থী খলিলকে বিতাড়নের চেষ্টা আটকে দিয়েছেন। খলিলকে গ্রেপ্তারের ঘটনাটি মার্কিন সংবিধানের প্রথম সংশোধনীর আওতায় দেওয়া বাক্স্বাধীনতার সুরক্ষাকে লঙ্ঘন করছে কি না, তা বিবেচনা করছেন তিনি।