ভোট দিয়ে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হয় না, আসে লুটেরা শ্রেণি: ফরহাদ মজহার
Published: 12th, April 2025 GMT
কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, কমিউনিটি যখন দাঁড়িয়ে যায়, এলাকা যখন দাঁড়িয়ে যায়, তখনই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের উন্মেষ ঘটে। ভোট দিয়ে হয় না, ভোটে লুটেরা-মাফিয়া শ্রেণি আসে।
শুক্রবার রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত শাহ আলী মাজারে ‘জুলাই কমিউনিটি অ্যালায়েন্স মিরপুর’ আয়োজিত ‘গণমানুষের জাগ্রত জুলাই’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ফরহাদ মজহার বলেন, গণতন্ত্র কায়েম হয় তখনই, যখন আমরা বুঝবো এই কমিউনিটি সবচেয়ে শক্তিশালী। কমিউনিটির সিদ্ধান্তে এই এলাকায় উন্নয়ন হবে, কমিউনিটি যেমনি করে চায়, তেমনি করে হবে। কমিউনিটি খুব ভালো করে বোঝে কোনটা তার ভালো, কোনটা তার খারাপ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, কিছুদিন আগে শিল্পকলা একাডেমিতে আমরা চাঁদ রাতের উৎসব করেছি। এদেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে শিল্পকলা একাডেমি আগে এ কাজ করেনি। তারা মনে করেছেন যে, ঈদ নিয়ে উৎসব করার কোনো প্রয়োজন নেই। আমাদের কাজ হচ্ছে, যে যেই উৎসব পালন করতে চায়, আমরা সেই উৎসবগুলো উদযাপন করব। কারণ, ধর্ম সংস্কৃতির একটা বড় উপাদান। আমাদের ধর্মীয় আচার, বিশ্বাস, রীতিনীতি– এসব মিলেই আমাদের সংস্কৃতি হয়ে ওঠে। কিন্তু যেকোনো কারণেই হোক, ৫৪ বছর ধরে আমরা সংস্কৃতিকে বিভিন্ন ‘কম্পার্টমেন্টে’ ভাগ করেছি। কোথাও ইসলামের গন্ধ পাওয়া গেলে সেই বিষয়টি সংস্কৃতির অংশ করা হয়নি। এই কম্পার্টমেন্টালাইজেশনটা আমরা ভেঙে দিচ্ছি। এবারের নববর্ষের উৎসবকে আমরা সবার উৎসবে পরিণত করেছি।
মিরপুর ‘জুলাই কমিউনিটি অ্যালায়েন্সের আহ্বায়ক মো.
আলোচনা শেষে ভাব গানের আসরের আয়োজন করা হয়। এর আগে, সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এছাড়া সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে দুস্থদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয়। শনিবার সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত শিশুদের রঙিন কাগজ দিয়ে ঝালর বানানো শেখানো হবে। বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বক্তৃতা, স্মৃতিচারণ ও কবিতা পাঠ করা হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, লেখক–অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান, তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ প্রমুখ। সন্ধ্যা ৭টা থেকে ১০ পর্যন্ত চলবে মেয়েদের ভাবগানের আসর।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফরহ দ মজহ র
এছাড়াও পড়ুন:
সন্তানদের ফিরিয়ে দিন হাত জোড় করছি
‘কোনো মায়ের বুক যেন খালি না হয়। দোষ থাকলে, অন্যায় করলে উপযুক্ত শাস্তি দিন। তবু সন্তান হারানোর বেদনা যেন কারও বুকে না লাগে।
আমি হাত জোড় করছি, আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দিন।’
বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে এমন আকুতিই জানান অপহৃত দিব্যি চাকমার মা ভারতী দেওয়ান। বিজু উৎসব শেষে খাগড়াছড়ির কুকিছড়া থেকে ফেরার পথে গত বুধবার ভোর ৬টার দিকে পাহাড়ি পাঁচ শিক্ষার্থী অপহৃত হন। এ অপহরণের জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) সশস্ত্র গোষ্ঠী ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট- ইউপিডিএফকে (প্রসীত) দায়ী করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অপহৃতদের উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে।
পিসিপির কেন্দ্রীয় শাখার সভাপতি নিপন ত্রিপুরা বৃহস্পতিবার সমকালকে বলেন, ‘আমরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছি, ইউপিডিএফ অপহৃতদের অভিভাবকদের একটি স্থানে ডেকেছে। বিকেলে অভিভাবকরা সেখানকার উদ্দেশে রওনা হন। পরে আর তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়নি।’ তিনি অবিলম্বে অপহৃতদের সুস্থ শরীরে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি অন্বেষ চাকমা বলেন, অপহরণকারীরা সকালে একটি স্থানের নাম বলেছিল অভিভাবকদের। পরে পরিবর্তন করে আরেকটি স্থানে ডাকে। বিকেল থেকে আর যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
অপহৃতরা হলেন– চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী ও পিসিপির চবি শাখার সদস্য রিশন চাকমা, চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী অলড্রিন ত্রিপুরা, একই বিভাগের মৈত্রীময় চাকমা, নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যি চাকমা ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী লংঙি ম্রো। তাদের মধ্যে রিশন চাকমার বাড়ি রাঙামাটির জুরাছড়ির মৈদং ইউনিয়নের জামেরছড়িতে। লংঙি ম্রোর বাড়ি বান্দরবানের আলীকদমের কুরুকপাতা ইউনিয়নে; একই জেলায় বাড় অলড্রিন ত্রিপুরার; রাঙামাটির বরকল সদরের চাইল্যাতুলিতে দিব্যি চাকমা ও একই জেলার বাঘাইছড়ির বটতলায় মৈত্রীময় চাকমার।
এর আগে অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থী বিজু উৎসব উপলক্ষে রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে বেড়াতে যান। উৎসব শেষে গত মঙ্গলবার তারা চট্টগ্রামে ফেরার উদ্দেশ্যে বাঘাইছড়ি থেকে দীঘিনালা হয়ে খাগড়াছড়ি সদরে আসেন। সেখানে বাসের টিকিট না পাওয়ায় খাগড়াছড়ি শহর থেকে কিছুদূরে পানছড়ি সড়কের কুকিছড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে রাতযাপন করেন। গত বুধবার ভোরে অটোরিকশায় খাগড়াছড়ি সদরে আসার পথে গিরিফুল নামক জায়গায় দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে তাদের অপহরণ করে।
এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও অপহৃতদের দ্রুত মুক্তির দাবি জানিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে অধ্যয়নরত ১৮৩ আদিবাসী শিক্ষার্থী যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এমন অপহরণের ঘটনা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মানবাধিকারবিরোধী ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার পরিপন্থি। অপহৃতদের উদ্ধারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।
ইতোমধ্যে অপহৃতদের উদ্ধারে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন নিরাপত্তা বাহিনী। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদর মিলিটারি অপারেশনস ডাইরেক্টরেটের স্টাফ কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, খাগড়াছড়ি থেকে অপহরণের শিকার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীকে উদ্ধারে বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। তাদের অবস্থান কিছুটা শনাক্ত করা গেছে।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, বিভিন্নভাবে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে আসলে ঘটনাটি কী, কাদের হেফাজতে তারা রয়েছে। যৌথ অভিযানে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।