চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তিন দেশে সফর শুরু করবেন। এ বছর এটাই তাঁর প্রথম বিদেশ সফর। তাঁর লক্ষ্য চীনের নিকটতম প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক সুসংহত করা। সি এমন এক সময় তাঁর এ সফর শুরু করছেন যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাঁর দেশের বাণিজ্য উত্তেজনা চলছে।
সি তাঁর সফরে ১৪ থেকে ১৫ এপ্রিল ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ায় যাবেন এবং ১৫ থেকে ১৮ এপ্রিল কম্বোডিয়ায় যাবেন। গতকাল শুক্রবার চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া এ তথ্য জানায়। সিনহুয়া জানায়, এ সপ্তাহে চীনের প্রেসিডেন্ট প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সর্বব্যাপী সহযোগিতা আরও গভীর করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর ১৪৫ শতাংশ মার্কিন শুল্ক আরোপের শিকার চীন। ওয়াশিংটনের ক্ষতিকর বাণিজ্য শুল্কের ছায়ায় থাকা অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছে বেইজিং।
সি ব্যক্তিগত কূটনৈতিক প্রচেষ্টা হিসেবে তিন দেশ সফর করছেন। এর আগে সর্বশেষ ৯ বছর আগে তিনি কম্বোডিয়া এবং ১২ বছর আগে মালয়েশিয়া সফর করেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
'গরিবের ছাওয়াক যে সম্মান কইরলেন, মনটা ভরি গেইল'
‘বাহে, শনিবার রাইত ১০টার সময় ছাওয়াটার ব্যথা ওঠে। সে কি ব্যথা, আতালি পাতালি। গ্রামের দাই আসি অনেক চেষ্টা করিল। কই, কিছুই তো হইল না। এলা কি করং, অতো রাইতত হাসপাতাল যাইম কেমন করি! গাড়ি, ঘোড়া, রিকশা-কিছুই নাই। তারপর একখান অটোরিকশা জোগাড় করি ভোর ৫টার সময় ফুলবাড়ি থাকি লালমনিরহাট রওনা হইনো। শহরের সাপটানা বাজারের ক্লিনিকে হাজির হই হামরাগুলা। ক্লিনিকের লোকজন অপারেশন করি মোর ছোট নাতনিক দুনিয়ার মুখ দেখায়ছে।'
নববর্ষের প্রথম প্রহরে জন্ম নেওয়া নাতনির সম্পর্কে বলতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন জমিলা বেগম। বলতে থাকেন, ''বাহে, হামরা গরিব মানুষ, অতো কিছু বুঝি না, তোমরাগুলা এই গরিবের ছাওয়াক যে সম্মান কইরলেন, তাতে মনটা ভরি গেইল। হাউস করি নাতনির নাম রাখমো ‘বৈশাখি’।’’
লালমনিরহাট শহরের খোদেজা ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সোমবার সকাল ৬টায় শাহ আলম ও হামিদা দম্পতির কোলজুড়ে আসে কন্যাশিশু। বাংলা বছরের প্রথম দিনে সন্তান উপহার পেয়ে তাদের পরিবারে বইছে খুশির বন্যা। এটি তাদের দ্বিতীয় কন্যাসন্তান। বড় মেয়ে শিমু নার্সারি শ্রেণিতে পড়াশোনা করছে।
পার্শ্ববর্তী কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার নাওডাঙ্গা কুমারপাড়া গ্রামের শাহ আলম মিয়া বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পুরোনো খাতাপত্র, পত্রিকা, ভাঙ্গা টিন কিনে শহরে তা বিক্রি করেন। দিনে তিন থেকে চারশ টাকা আয় হয়। তা দিয়েই চলে সংসার। পাঁচ শতকের বসতভিটায় তিন ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে তিনি বসবাস করেন। বসতভিটার ওইটুকু জায়গা ছাড়া আর কিছুই নেই তার। তাই সন্তানকে ক্লিনিকে রেখে টাকার সন্ধানে ছুটছেন। কারো কাছ থেকে টাকা নিয়ে ক্লিনিকের বিল পরিশোধ করতে হবে। শাহ আলম বলেন, ‘মুই বাহে হকার, দিন আনি দিন খাই। হামার নববর্ষ বলি কিছু নাই। দোয়া কইরবেন ছাওয়াক মুই নেখাপড়া শিখাইম। দুই বেটি নিয়া হামার কোনো কষ্ট নাই। আল্লাহ সুস্থ রাখছে, তাতে হামরা খুশি।'
শাহ আলমের এসব কথা শুনে ক্লিনিকের বিছানায় শুয়ে থাকা নবজাতকের মা হামিদা বেগম বলেন, ‘আমি অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত করেছি। বাবা অটোরিকশা চালান। অভাবের সংসারে ইচ্ছা থাকার পরও লেখাপড়া করতে পারিনি। ২০১৪ বিয়ে হয়। পরের বছর প্রথম সন্তানের জন্ম হয়।' দুই মেয়েকে লেখাপড়া শেখানোর ইচ্ছা রয়েছে বলে জানান তিনি।
ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশ্বজিৎ জানান, বাড়িতে অনেক চেষ্টা করেও হামিদার নরমাল ডেলিভারি করাতে পারেনি পরিবার। সময় ক্ষেপণ করায় বেশ সমস্যা হয়েছিল। পরে অস্ত্রোপচার করেন বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রাক্তন প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. ভোলানাথ ভট্টাচার্য্য। তাকে সহায়তা করেন ডা. হাবিব। ডা. ভোলানাথ ভট্টাচার্য্য জানান, মা ও শিশু এখন সুস্থ রয়েছে।