মডেল মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে কারাগারে পাঠানোয় অ্যামনেস্টির উদ্বেগ
Published: 12th, April 2025 GMT
মডেল মেঘনা আলমকে বিশেষ ক্ষমতা আইন ব্যবহার করে আটকের পর কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। শুক্রবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে এ উদ্বেগ প্রকাশ করে।
পোস্টে বলা হয়েছে, এ কালো আইন ঐতিহাসিকভাবে দীর্ঘদিন ধরে মানুষকে অভিযোগ ও বিচারিক তত্ত্বাবধান ছাড়াই নির্বিচার আটকের জন্য ব্যবহার করা হয়ে আসছে। এসব কাজের মধ্য দিয়ে প্রক্রিয়াগত সুরক্ষা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের মান ও প্রয়োগ গুরুতরভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাটির পোস্টে আরও বলা হয়েছে, সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মেঘনা আলমকে গোপনীয়তার সঙ্গে আটক করা হয়েছে। তাকে আটক করার পরোয়ানা ছিল না বলেও অভিযোগ রয়েছে। এটা পদ্ধতিগত সুরক্ষার উদ্বেগজনক লঙ্ঘন।
অ্যামনেস্টি বলছে, ‘সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের আহ্বান, হয় মেঘনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অপরাধের অভিযোগ আনুন অথবা তাকে মুক্তি দিন।’ সেই সঙ্গে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ব্যবহার বন্ধ এবং আইনটি বাতিলের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মেঘনা আলমকে ৩০ দিনের আটকাদেশ দিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এর আগে বুধবার রাতে মেঘনা আলমকে রাজধানীর বসুন্ধরার বাসা থেকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) আটক করে। মেঘনা তখন ফেসবুক লাইভ এসে দাবি করেন, তিনি নিরপরাধ।
১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইন অনুযায়ী, ক্ষতিকর কাজ থেকে নিবৃত্ত রাখার জন্য সরকার যেকোনো ব্যক্তিকে আটক রাখার আদেশ দিতে পারে।
বিশেষ ক্ষমতা আইনের যেসব ক্ষতিকর কাজে যুক্ত ব্যক্তিকে আটক আদেশ দেওয়া যায়, সেগুলো হলো দেশের সার্বভৌমত্ব বা প্রতিরক্ষার ক্ষতি, বাংলাদেশের সঙ্গে বিদেশি রাষ্ট্রের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সংরক্ষণের ক্ষতি, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বা জননিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলার ক্ষতি, বিভিন্ন সম্প্রদায়, শ্রেণি বা গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণাবোধ বা উত্তেজনা সৃষ্টি, আইনের শাসন বা আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ বা উৎসাহ প্রদান বা উত্তেজিত করা।
ক্ষতিকর কাজের মধ্যে আরও রয়েছে জনসাধারণের জন্য অত্যাবশ্যক সেবা বা অত্যাবশ্যক দ্রব্যাদি সরবরাহে বাধা সৃষ্টি, জনসাধারণ বা কোনো সম্প্রদায়ের মধ্যে ভীতি বা আতঙ্ক সৃষ্টি এবং রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক বা আর্থিক ক্ষতি করা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উদ ব গ ব শ ষ ক ষমত অ য মন স ট
এছাড়াও পড়ুন:
মেঘনা আলমকে আটকের ঘটনা ফ্যাসিবাদী ও স্বৈরাচারী আচরণের প্রকাশ: গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি
বিশেষ ক্ষমতা আইনে মডেল মেঘনা আলমের আটকাদেশকে ফ্যাসিবাদী তৎপরতা ও স্বৈরাচারী আচরণের প্রকাশ বলে মনে করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। মেঘনা আলমের মুক্তি চেয়ে তারা বলেছে, গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী রাষ্ট্রে ‘বিশেষ ক্ষমতা আইন’সহ নিপীড়নমূলক কোনো আইন থাকতে পারে না।
আজ শনিবার গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়। গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ গণমাধ্যমে ওই বিবৃতি পাঠিয়েছেন।
গত বুধবার রাতে মেঘনা আলমকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) আটক করে। পরদিন বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আদেশ অনুযায়ী আদালত তাঁকে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিন আটক রাখার আদেশ দেন। তিনি এখন কারাগারে আছেন।
বিবৃতিতে এ ঘটনাকে আইনশৃঙ্খলা ও বিচার বিভাগের স্বৈরাচারী আচরণের প্রকাশ উল্লেখ করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি রাষ্ট্রের এরূপ ‘আইনি’ স্বৈরাচারী তৎপরতার নিন্দা জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, মেঘনা আলমকে দরজা ভেঙে আটক করতে অভিযান চালাচ্ছিল, তখন তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভ করছিলেন। ভিডিওতে তিনি ভাটারা থানা ও ৯৯৯ হটলাইনে সহায়তা চেয়ে পাননি। তিনি পুলিশের পরিচয় নিশ্চিত করা ও আটকের কারণ জানতে কাগজ চেয়েছেন, কিন্তু কিছুই মানা হয়নি। তাঁকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর এক দিন গুম করে রাখা হয়। এ সময়ে ফেসবুকে তাঁর লাইভ ভিডিও ডিলিট করা হয় এবং পুলিশ ও ডিবি তাঁকে আটকের কথা অস্বীকার করে। ফেসবুকে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হলে পরদিন আটকের কথা স্বীকার করে পুলিশ।
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি বলেছে, বিশেষ ক্ষমতা আইন (১৯৭৪) একটি ফ্যাসিবাদী আইন। জুলাইয়ে ছাত্র–জনতার বিপুল রক্তক্ষয়ী অভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর যখন জনগণের আকাঙ্ক্ষা হয়ে উঠেছে, তখন এ রকম আইনের ব্যবহার আবার ফ্যাসিবাদী তৎপরতার প্রকাশ ঘটিয়েছে।
মেঘনা আলমের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক নষ্ট করার’ যে অভিযোগ দিয়েছে, তা বিভ্রান্তিকর ও অগ্রহণযোগ্য উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে। এতে আরও বলা হয়, রাষ্ট্র যদি একজন কূটনীতিকের ব্যক্তিগত বিদ্বেষের জেরে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ব্যবহারের মাধ্যমে নাগরিকের অধিকার হরণ করে, তাহলে রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয় এবং কূটনৈতিক প্রশ্নে দ্ব্যর্থহীন নতজানুতা প্রকাশ পায়।
আরও পড়ুনমডেল মেঘনা আলমকে ‘নিরাপত্তা হেফাজতে’ রাখার কারণ হিসেবে যা বলল পুলিশ১১ এপ্রিল ২০২৫বিবৃতিতে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি মেঘনা আলমের মুক্তি ও বিশেষ ক্ষমতা আইন (১৯৭৪) বাতিলের দাবি জানায়। পাশাপাশি যে রাষ্ট্রীয় বাহিনী বিদেশি রাষ্ট্রদূতের ব্যক্তিগত বাহিনী হিসেবে একজন নাগরিকের অধিকারকে হরণ করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনার দাবিও তুলেছে তারা। এ ছাড়া ঘটনার সঙ্গে যুক্ত বিদেশি রাষ্ট্রদূতের ভূমিকাও তদন্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে যথাযথ কূটনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে।
আরও পড়ুনবিশেষ ক্ষমতা আইনে ৩০ দিনের আটকাদেশ, মডেল মেঘনা কারাগারে১১ এপ্রিল ২০২৫