খোরশেদ আলম নয়ন
প্রিয় বৈশাখ
শুকনো পাতায় ছাওয়া-আমাদের ঘর
এই গড়ে-এই ভাঙে-বৈশাখী ঝড়
মেঘনার কালো জল ঢেউ ওঠে কূলে
ঘাটে বাঁধা ডিঙি নাও কেঁপে ওঠে দুলে।
আমের বনের ছায়ে-জাগে কোলাহল
হঠাৎ বৃষ্টি এসে এক হাঁটু জল
বৈশাখে ছিলো ঝড়-বোশেখ মেলা
ছিলো আরো দুরন্ত কিশোর বেলা।
দিদির আঁচলে ঘেরা-নিবিড় মায়া
ছিলো মেঘনার তীর-বটের ছায়া,
ভাটির দেশের নাও-মাটির পুতুল
বারোয়ারি মেলা জুড়ে-কাগজের ফুল।
হাতের রঙিন চুড়ি-পায়ের নূপুর
‘বউ কথা কও’ ডাকা উদাস দুপুর
বোশেখ দিনের সেই-স্বপ্নমধুর-
মেলায় কেনা বাঁশি-খুঁজে আজো সুর।
নাগরদোলায় দোলা-স্বপ্নিল দিন
ছিলো চির মধুময় স্মৃতি অমলিন।
সবুজ প্রান্ত ছুঁয়ে যতো দূর যাই
শ্যামল এ বাংলার রূপ খুঁজে পাই।
পুরাতন গ্লানি মুছে-নতুনের ডাক
নিয়ে আসে বার বার প্রিয় বৈশাখ।
উৎপলকান্তি বড়ুয়া
বোশেখের পয়লা
রাত শেষে ভোর হলো
জেগে ওঠো সকলে
আসলের মাঝে ঠাঁই
পাবে না তো নকলে।
দীদা হেসে কাছে আসে
মুখে সুর শোলক
তাক ডুম তাক বাজে
নতুনের ঢোলক।
পাক ঘরে মা রাঁধেন
কী স্বাদের পাঁচন!
চিড়া মুড়ি নাড়ু ক্ষির
আনন্দ নাচন।
মুছে যাক ঘুচে যাক
যত ভুল ময়লা
নব রূপে এলো আজ
বোশেখের পয়লা।
আলমগীর কবির
ঝিলমিল ঘুড়ি
বোন চায় মেলা থেকে
লাল নীল চুড়ি
ভাই বলে কিনে দাও
ঝিলমিল ঘুড়ি।
কাগজের ফুল আর
রাঙা বাঁশি কিনি
বোনের জন্য মুখে
মিঠা হাসি কিনি!
সারা মেলা ঘুরে ঘুরে
ফিরি হাতে নিয়ে
মিঠাই শখের হাঁড়ি
খুশি সাথে নিয়ে!
বটতলা জমে গেছে
বৈশাখী মেলা
আনন্দ সুরে যায়
কেটে বাকি মেলা!
মোকাদ্দেস-এ-রাব্বী
নববর্ষের আনন্দে
রঙ লেগেছে চারিদিকে
সাজাও রঙের ডালা
ঢোল-তবলা বাজাও সবাই
আজকে খুশির পালা।
ঝুন ঝুন শব্দ তুলে
ঝুমঝুমিটা বাজছে
শব্দ শুনে খোকাখুকি
হেলে দুলে নাঁচছে।
টম টম শব্দ করে
চলছেরে টম গাড়ি
উৎসবের আনন্দ আজ
সবার বাড়ি বাড়ি।
এই আনন্দ ঘরে ঘরে
চলুক বছর জুড়ে
নববর্ষের গানে থাকুক
দুঃখ অনেক দূরে!
আবেদীন জনী
বাজায় বাঁশি
বোশেখ এলো রোদ ছড়ালো
হলদে রোদের ডানা
বোশেখ যেন স্বপ্ন আঁকার
রংতুলি একখানা।
কালি-ধুলো দুঃখগুলো
যায় বাতাসে উড়ে
বোশেখ যেন বাজায় বাঁশি
নতুন ছন্দ-সুরে।
বোশেখ এলো রং ছড়ালো
পড়লো মেলার ধুম
মনটা খুকির প্রজাপতি
দুই চোখে নেই ঘুম।
মেলা থেকে কিনবে খুকি
খেলনা রাশি রাশি
শখের হাঁড়ি, ঘোড়ার গাড়ি
পুতুল-বেলুন-বাঁশি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আনন দ
এছাড়াও পড়ুন:
চারুকলায় আগুনে পুড়ল ‘ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতি`
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদ থেকে পয়রা বৈশাখ উপলক্ষে আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য নির্মাণাধীন ‘ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতি’ আগুনে পুড়ে গেছে।
শনিবার (১২ এপ্রিল) ভোর পৌনে ৫টার দিকে আগুন লাগে। আগুনে শান্তির পায়রা মোটিফেরও কিছু অংশ পুড়ে গেছে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত চারুকলার এক শিক্ষার্থী বলেন, “এটার (‘ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতির’) নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ হয়ে গেছিল। আজকের মধ্যে সব কাজ শেষ হয়ে যেত। এটা নিঃসন্দেহে ষড়যন্ত্র।”
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর মো. ইসরাফিল বলেন, “ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতির টার্গেট করে আগুন লাগানো হয়েছে। ওই আকৃতি পুরোটাই পুড়ে গেছে। একইসাথে পায়রার অবয়বটাও পুড়ে গেছে।”
তিনি আরো বলেন, “আগুনটা ফজরের নামাজের সময় লাগানো হয়েছে। আমরা এর পরেই খবর পাই। কিন্তু ফায়ার সার্ভিস আসতে আসতে ওটা পুড়ে যায়। আগুনটা ইচ্ছে করেই লাগানো হয়েছে। তবে কে বা কারা করেছে তা জানা যায়নি৷ তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. আজহারুল শেখ রাইজিংবিডিকে বলেন, “আমাদের ১০টায় একটা মিটিং আছে। আমরা একটা বিজ্ঞপ্তিও রেডি করেছি। মিটিংয়ের পরে আমরা অফিসিয়ালি বিবৃতিতে জানিয়ে দেব। মিটিংয়ে আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করব।”
জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে সামনে রেখে এবার নববর্ষের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবারকার প্রধান মোটিফ ছিল ‘ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতি’। এটিকে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি ধারণা করে কিছু দিন ধরেই সামাজিক মাধ্যমে চলছিলো আলোচনা-সমালোচনা। বর্ষবরণের ঠিক দুদিন আগেই যা আগুনে পুড়ল।
ঢাকা/সৌরভ/ইভা