সম্প্রতি আমি কন্যাসন্তানের বাবা হয়েছি। দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর এতই অবিশ্বাস জন্মেছে যে, কোন ডাক্তারের অধীনে কোন হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া যায়, তা যেন এক বিস্তৃত মাঠ পর্যায়ের গবেষণায় হাজির হয়েছিল। অন্তঃসত্ত্বাকালে ৯ মাস আমার স্ত্রী এ ব্যাপারে বহু পড়াশোনা করেছেন। বিদেশ থেকে পরিচালিত দুই মাসের কোর্সেও ভর্তি হয়ে আনুষ্ঠানিক পড়াশোনা সেরে নেন। এসবের প্রধান দুটি উদ্দেশ্য ছিল। প্রথমত, সি-সেকশনে না যাওয়া; দ্বিতীয়ত, সুস্থ সন্তান জন্ম দেওয়া।
অপারেশন প্রক্রিয়ায় না যাওয়ার জন্য আমরা চেষ্টার কোনো কমতি রাখিনি। এমনকি বিপুল খরচ হওয়া সত্ত্বেও ঢাকার নামকরা একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম, যেখানে বিল এসেছে লাখ খানেক টাকা। ডাক্তারের অনুরোধে এই খরচ আশির কোঠায় নেমে আসে। তবুও দুঃখের ব্যাপার হলো, আমরা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সন্তান জন্ম দিতে পারিনি, তবে একজন সুস্থ কন্যাসন্তান পেয়েছি। আলহামদুলিল্লাহ।
সি-সেকশনে যেতে বাধ্য হওয়ার ক্ষেত্রে ডাক্তারকে দোষারোপ করার সুযোগ নেই। তিনি বেশ চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু এই ডাক্তার খুঁজে পেতেও আমাদের বহু বেগ পেতে হয়েছে। তিনজন ডাক্তারের পরামর্শের পরও আমরা আস্থা রাখতে পারিনি। এতে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপরেই আমাদের অনাস্থা প্রকাশ পায়।
সন্তান প্রসবের ৭২ ঘণ্টা পর সদ্যোজাত সন্তানকে একই হাসপাতালে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলাম। ভিজিট ১৫০০ টাকা! কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার, পুরো ফ্লোরে সন্তানকে দুগ্ধপানের কোনো ব্যবস্থা নেই। বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় নারী-পুরুষ পর্দাকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে। অথচ হাসপাতাল, পার্ক, স্কুল-কলেজ, অফিসের মতো প্রতিষ্ঠানে দুগ্ধপানের মতো জরুরি বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়া হয়। এতে নারীরা অত্যন্ত অস্বস্তির মুখোমুখি হন। কিন্তু নিরুপায় হয়ে তারা এই উন্মুক্ত জায়গায় কোনোমতে সন্তানকে দুগ্ধ পান করাতে বাধ্য হন। নারী ও শিশুদের প্রতি আমরা যে উদাসীন এবং যথেষ্ট সদয় নই– এটি তারই প্রমাণ।
শুধু তাই নয়; এই মানসিকতার মধ্যেই বহু কিছু লুকিয়ে আছে। এটি স্রেফ নীতিগত সিদ্ধান্তে খেয়াল না করার বিষয়ও নয়। বরং সমাজ ও সংস্কৃতির ব্যাপারে আমাদের বোঝাপড়ার মামলাও বটে।
বাংলাদেশের শিক্ষিত মধ্যবিত্তরা প্রধানত পাশ্চাত্য সংস্কৃতি দিয়ে নিজেদের সমাজ ও সংস্কৃতির বিচার করে। সেখানে নারীর পর্দার বিষয়টি তার কাছে পশ্চাৎমুখী পরিচয়ের বাহন। তাদের মতে, পাশ্চাত্যের আদলে নারীদের যত উন্মুক্ত করা যায় ততই মঙ্গল। এই বোঝাপড়ায় যতটা পোশাকি ব্যাপার গুরুত্ব পায়, ততটা দার্শনিক চিন্তাভাবনার জায়গা নেই। ফলে আমাদের শিক্ষিত সমাজ সংস্কৃতির ব্যাপারে যে ‘প্রগতিশীল’ ও ‘আধুনিক’ ভাষ্য নির্মাণ করতে চায়, তা এই মাটি ও মানুষের বিরুদ্ধে গিয়ে দাঁড়ায়। এটি স্রেফ গুটিকয়েক তথাকথিত উচ্চ-মধ্যবিত্তের মনের খায়েশ পূরণ করে মাত্র।
বাংলাদেশের সমাজ কাঠামোতে পর্দা স্রেফ ইসলাম কিংবা বিশেষ কোনো ধর্মের ব্যাপার বলেও ভাবার সুযোগ নেই। বরং এটি সমাজ ও সংস্কৃতির প্রশ্ন। বিশেষ কোনো ধর্ম ও রীতিনীতি আশ্রয় করে দীর্ঘদিন ধরে কোনো কিছু সমাজে প্রতিষ্ঠা পেলে তা শুধু ধর্মীয় আচারে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যাপারে হাজির হয়। পর্দাও আমাদের এখন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাহনে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে হাসপাতালসহ অন্যান্য জায়গায় শিশুর দুগ্ধপানের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকা জরুরি। এটি শুধু কর্তৃপক্ষের সচেতনতার বিষয় নয়; ঔপনিবেশিত সমাজের পরিপ্রেক্ষিতে সাংস্কৃতিক লড়াইয়েরও ব্যাপার।
আপাতদৃষ্টিতে ব্যক্তিজীবন থেকে দেখলে অনেক কিছু অত্যন্ত নগণ্য মনে হতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্র ও জাতিগত দিক থেকে ভাবলে ক্ষুদ্র বিষয়ও মহিরুহ ব্যাপারে হাজির হয়। দুগ্ধপানের ব্যবস্থার প্রশ্নটিও নারী-শিশু এবং সমাজ ও সংস্কৃতি প্রশ্নে আমরা কতটা শ্রদ্ধাশীল ও কীভাবে ব্যাপারগুলো অধ্যয়ন করি, তারই ইঙ্গিতবহ।
ইফতেখারুল ইসলাম: সহসম্পাদক, সমকাল
Iftekarulbd@gmail.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সাড়ে ৩ কোটি টাকার মালামাল লুট: ডাকাত গ্রেপ্তার
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ উপজেলায় এক ব্যবসায়ীর ৩ কোটি ৩৪ লাখ ৩১ হাজার ৯৫০ টাকার মালামাল ডাকাতির ঘটনায় ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) সকালে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করেন র্যাব-১১ এর উপপরিচালক মেজর অনাবিল ইমাম। গ্রেপ্তার ডাকাতের নাম পায়েল হোসেন (৩২)। তিনি সিদ্ধিরগঞ্জের জহির মিয়ার ছেলে।
র্যাব সূত্রে জানা যায়, সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন এভেস্টা এ্যালুমিনিয়াম ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড প্রতিষ্ঠানে ৫০-৬০ জন দুষ্কৃতকারী কর্মীদের মারধর করে একটি কক্ষে আটকে রেখে ৩ কোটি ৩৪ লাখ ৩১ হাজার ৯৫০ টাকার মালামাল লুট করে ট্রাক যোগে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে এই ঘটনায় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যানেজার বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা করেন।
আরো পড়ুন:
সিরাজগঞ্জে জমি দখল নিয়ে সংঘর্ষে নিহত ১, বিএনপির ২ নেতার পদ স্থগিত
মাগুরার সেই শিশু ধর্ষণ মামলার চার্জশিট দিল পুলিশ
সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে এবং তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে ডাকাত পায়েলকে (৩২) সাইনবোর্ড এলাকা থেকে শুক্রবার (১১ এপ্রিল) গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিকে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রমের জন্য সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলেও জানায় র্যাব।
ঢাকা/অনিক/বকুল