তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুত ও স্বচ্ছ বিচার নিশ্চিত করতে ‘ই-জুডিশিয়ারি’ বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৫ সালে। সারাদেশে দুই হাজার ১০০ ই-আদালত কক্ষ প্রতিষ্ঠাই এর লক্ষ্য। এ জন্য দফায় দফায় প্রকল্পের সমীক্ষাসহ অনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করে আইন মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশন। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায়ও কয়েক দফা প্রকল্পটি উত্থাপিত হয়। তবে এটি আলোর মুখ দেখেনি এক দশকেও। এবার সেই প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। 

ই-জুডিশিয়ারি সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজ ব্যবস্থা। এর অধীনে উচ্চ এবং অধস্তন আদালত অর্থাৎ নিম্ন আদালতের বিচারপ্রার্থীরা ঘরে বসেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাঁর মামলার গতি-প্রকৃতি ও রায় জানতে পারবেন। যাদের মোবাইল ফোন নেই, তারা নিকটবর্তী যে কোনো মোবাইল ফোন বা কম্পিউটার সেবাকেন্দ্র থেকে এ সুবিধা নিতে পারবেন। মামলার তথ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে খুবই কম সময়ের মধ্যে উচ্চ আদালত ও অধস্তন আদালতের মধ্যে বিচার-সংশ্লিষ্টরা পারস্পরিক কার্যক্রমও সম্পাদন করতে পারবেন। প্রকল্পের আওতায় পুরোনো মামলার রেকর্ড এবং সংশ্লিষ্ট রায়গুলো ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হবে। ২০২৯ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ২০৯ কোটি টাকা।

আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ গত বছরের জুনে প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য আইন মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু পরে পর্যবেক্ষণসহ ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) পুনর্গঠনের জন্য ফাইলটি ফেরত দেয় পরিকল্পনা কমিশন। এর আলোকে ডিপিপি পুনর্গঠন চূড়ান্ত করার কাজ শেষ হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে আইন মস্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ মেহেদী হাসান সমকালকে বলেন, ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় উত্থাপনের যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। একনেক অনুমোদন দিলে আগামী অর্থবছরেই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আদালতগুলোর কার্যক্রমে গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য সরকার ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্প নিয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে আদালতগুলো ডিজিটালাইজ হবে এবং বিচার প্রক্রিয়া আরও সহজ, স্বচ্ছ ও গতিশীল হবে।’
জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রকল্পটি পাঁচবার প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় উত্থাপন করা হয়েছে। তবে ‘আমলাতান্ত্রিক’ জটিলতাসহ পরিকল্পনা কমিশনের নানা প্রশ্নের কারণে এটি বাস্তবায়ন হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক প্রকল্পের জন্য ৫টি পিইসি সভার ঘটনা বিরল।  

আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির মূল কার্যক্রমে ১৪টি বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে– বিচার ব্যবস্থার জন্য এন্টারপ্রাইজ আর্কিটেকচার উন্নয়ন, এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং (ইআরপি) সফটওয়্যার উন্নয়ন, বিচার ব্যবস্থাধীন সব অফিসের জন্য ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) স্থাপন, ৬৪ জেলায় মোট দুই হাজার আদালত কক্ষকে ই-আদালত কক্ষে রূপান্তর, সুপ্রিম কোর্টে ১০০ আদালত কক্ষকে ই-আদালত কক্ষে রূপান্তর, বিচারকদের জন্য দুই হাজার ট্যাব/ল্যাপটপ কম্পিউটার সরবরাহ, আগের মামলার রেকর্ড ও রায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ,  কর্মকর্তাদের ডেস্কটপ কম্পিউটার সরবরাহ এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৩৮৯ জন বিভিন্ন স্তরের জনবল (আইটি পারসন) নিয়োগ করা হবে বলেও প্রকল্পের কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে। 

সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা যায়, দেশের উচ্চ ও অধস্তন আদালতে বর্তমানে প্রায় ৪৫ লাখ মামলা বিচারাধীন। অথচ মামলা নিষ্পত্তির জন্য উচ্চ আদালতে ৯৬ জন এবং অধস্তন আদালতে প্রায় দুই হাজার ২৫০ বিচারক কর্মরত। নিষ্পত্তির তুলনায় প্রতিদিন নতুন মামলার সংখ্যা বাড়ছে। এ প্রেক্ষাপটে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শে মামলাজট নিরসনে সরকার ও আইন মন্ত্রণালয় দীর্ঘ মেয়াদে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে ‘ই-জুডিশিয়ারি’ ব্যবস্থা চালুর বিষয়টি উল্লেখযোগ্য।
এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত জেলা জজ) মোয়াজ্জেম হোছাইন বলেন,  এ ব্যবস্থা কার্যকর হলে ই-ফাইলিং 
অর্থাৎ ডিজিটাল পদ্ধতিতে মামলা দায়ের, মামলা-সংক্রান্ত নথিপত্র (রেকর্ড) এবং রায় ও আদেশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। এর ফলে উচ্চ আদালত ও অধস্তন আদালতের মধ্যে দৈনন্দিন কার্যক্রম সম্পাদন আরও সহজতর হবে। কমবে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ। 

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সমকালকে বলেন, ‘ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিগত সরকারের আমলে অজ্ঞাত কারণে উদাসীনতা দেখা গেছে। অন্তর্বর্তী সরকার বিচার বিভাগ সংস্কারে উদ্যোগ নিয়েছে। সরকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারলে তা বিচার বিভাগের জন্য অবশ্যই ইতিবাচক হবে।’  

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব চ র ব যবস থ প রকল প র র ব যবস থ র জন য সরক র একন ক

এছাড়াও পড়ুন:

আজ চৈত্র সংক্রান্তি

চৈত্র সংক্রান্তি বা চৈত্র মাসের শেষদিন আজ। বাংলা মাসের সর্বশেষ দিনটিকে সংক্রান্তির দিন বলা হয়। এছাড়াও আগামীকাল সোমবার পহেলা বৈশাখ, নতুন বাংলা বর্ষ ১৪৩২।

আবহমান বাংলার চিরায়িত বিভিন্ন ঐতিহ্যকে ধারণ করে আসছে এই চৈত্র সংক্রান্তি। বছরের শেষ দিন হিসেবে পুরাতনকে বিদায় ও নতুন বর্ষকে বরণ করার জন্য প্রতিবছর চৈত্র সংক্রান্তিকে ঘিরে থাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠান-উৎসবের আয়োজন। মনে করা হয়, চৈত্র সংক্রান্তিকে অনুসরণ করেই পহেলা বৈশাখ উদযাপনের এত আয়োজন। তাই চৈত্র সংক্রান্তি হচ্ছে বাঙালির আরেক বড় অসাম্প্রদায়িক উৎসব।

চৈত্র সংক্রান্তির দিন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শাস্ত্র মেনে স্নান, দান, ব্রত, উপবাস করে থাকেন। নিজ নিজ বিশ্বাস অনুযায়ী অন্য ধর্মাবলম্বীরাও নানা আচার-অনুষ্ঠান পালন করেন।

এছাড়াও চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন গ্রামগঞ্জে নানা ধরনের মেলা ও উৎসব হয়। হালখাতার জন্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সাজানো, লাঠিখেলা, গান, সংযাত্রা, রায়বেশে নৃত্য, শোভাযাত্রাসহ নানা অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে উদযাপিত হয় চৈত্র সংক্রান্তি।

চৈত্র সংক্রান্তির প্রধান উৎসব চড়ক। চড়ক গাজন উৎসবের একটি প্রধান অঙ্গ। এ উপলক্ষে গ্রামের শিবতলা থেকে শোভাযাত্রা শুরু করে অন্য গ্রামের শিবতলায় নিয়ে যাওয়া হয়। একজন শিব ও একজন গৌরী সেজে নৃত্য করে এবং অন্য ভক্তরা নন্দি, ভৃঙ্গী, ভূত-প্রেত, দৈত্য-দানব সেজে শিব-গৌরীর সঙ্গে নেচে চলে।

চৈত্র সংক্রান্তির মাধ্যমে পুরনো বছরকে বিদায় জানিয়ে সোমবার সফলতা ও সমৃদ্ধির প্রত্যাশায় দেখা দেবে নতুন ভোর। পুরনো বছরের সব জরাজীর্ণতা মুছে ফেলে বাঙালি মিলিত হবে পহেলা বৈশাখের সর্বজনীন উৎসবে। জরাজীর্ণতা, ক্লেশ ও বেদনার সব কিছুকে বিদায় জানানোর পাশাপাশি সব অন্ধকারকে বিদায় জানিয়ে আলোর পথে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার থাকবে গোটা জাতির।

সম্পর্কিত নিবন্ধ