রাজশাহীর টালি, ঘড়ি ও চশমা মিস্ত্রি এবং দিনমজুররা পেশা পাল্টে অটোরিকশা চালক হয়েছেন। কারণ, আগের পেশায় বেতন কম, অনিশ্চয়তা এবং কাজ ছিল অনিয়মিত। এখন তাদের সেই সংকট কেটে গেছে। শহরে এত বেশি অটোরিকশা চলছে, যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। বেপরোয়া গতির কারণে ঘটছে দুর্ঘটনা। হচ্ছে শব্দদূষণ ও যানজট।
বেকারত্বের মুক্তি অটোরিকশায়
ডাসমারির মিজানের মোড়ের বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহিন ছিলেন টালি মিস্ত্রি। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিন টালির কাজ হতো না। বেকার থাকতে হতো। তাই পেশা বদল করে অটোরিকশা চালাচ্ছি। এখন এক দিনও বেকার থাকতে হয় না। পরিবার নিয়ে ভালো আছি।’
নগরীর হাদির মোড়ের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আগে চশমার কাচের পাওয়ার মিস্ত্রি ছিলাম। মাসে ৬ হাজার টাকা বেতন ছিল। পরিবার বড় হওয়ায় ওই টাকায় সংসার চলত না। তাই পাঁচ বছর আগে অটোরিকশা চালানো শুরু করি। প্রতিদিন ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা আয় হয়।’
হাদির মোড়ের মোহাম্মদ রতন বলেন, ‘আগে বড় গাড়ি চালাতাম। সারা দেশ ঘুরতে হতো, টাকা পাওয়া যেত কম। ট্রিপ না থাকলে, বেকার বসে থাকতে হতো। এখন অটো চালিয়ে ভালো আয় করতে পারছি।’

সক্ষমতার চার গুণ অটোরিকশা
রাজশাহীতে অটোরিকশার সংখ্যা শহরের সক্ষমতার তুলনায় চার গুণ। এগুলোর বেশির ভাগের নেই রেজিস্ট্রেশন। সিটি করপোরেশন ১৫ হাজার ৬০০ অটোরিকশা ও ইজিবাইকের রেজিস্ট্রেশন দিয়েছে। নতুন করে রেজিস্ট্রেশন দিচ্ছে না। তবে এলাকার প্রভাবশালীদের ধরে কেউ কেউ রেজিস্ট্রেশন পাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
হাদীর মোড়ের রতন আলী বলেন, তিনি ৯ বছর ধরে ব্যাটারিচালিত দুই আসনের অটোরিকশা চালান। কিন্তু তাঁর রেজিস্ট্রেশন নেই। গতবছর রেজিস্ট্রেশন পেতে এক পরিচিতজনকে ৩০ হাজার টাকা দিয়েও তা পাননি। তবে তিনি আশা ছাড়েননি। গত রোজায় ট্রাফিক পুলিশ আটক করে তাঁকে ২ হাজার ৬০০ টাকা জরিমানা করেছিল।
তিনি বলেন, ‘আমার পরিচিত সবুর নামে এক বড় ভাইকে ৫ আগস্টের আগে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছি লাইসেন্স করে দিতে। এখনও হয়নি।’
এদিকে ৪০ থেকে ৫০ হাজার অটোরিকশা চলাচলের ফলে পরিচ্ছন্ন শহর যানজটে রূপ নিয়েছে। নগরীর সাহেববাজার, রেলগেট, লক্ষ্মীপুর, তালাইমারি, বিনোদপুর ও কাটাখালী এলাকায় সড়ক ও মহাসড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।

দুর্ঘটনার কারণ গতি
রতন আলী বলেন, ‘অটোরিকশা অনেকে ৫০ কিলোমিটার গতিতেও চালান। আমি ২০ কিলোমিটার গতির উপরে চালাই না, কারণ গতি বাড়ালে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, দুর্ঘটনা ঘটে।’
এ কথার সত্যতা পাওয়া গেল গত ৩ ফেব্রুয়ারির এক সড়ক দুর্ঘটনায়। ওইদিন ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যাচ্ছিল গ্রামীণ ট্রাভেলসের বাস। দামকুড়ার কসবায় দ্রুত গতিতে আসা ছয় আসনের একটি অটোরিকশা বাঁ পাশ থেকে হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডান পাশের গ্রামীণ ট্রাভেলসের সামনে ঢুকে যায়। বাসের ধাক্কায় অটোরিকশায় থাকা দুই যাত্রী ঘটনাস্থলে মারা যান। গুরুতর আহত হন আরও পাঁচজন। রাজশাহী শহর ও এর আশপাশে প্রায়ই ঘটছে এমন দুর্ঘটনা।
আলুপট্টির ভাদু শেখ (৬০) গত বছর অটোরিকশায় চড়ে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হন। এতে তাঁর একটি পা ভেঙে যায়। কানের একাংশ কেটে আলাদা হয়ে যায়। তিনি বলেন, অটোরিকশায় শহর থেকে কাঁকনহাট যাচ্ছিলাম। সড়কে দ্রুত গতিতে চলছিল। হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে খাদে পড়ে যায়। আঘাত পেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।

সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা সভাপতি আহমেদ শফিউদ্দিন বলেন, ‘রাজশাহী অঞ্চলে কর্মসংস্থান কম। এ কারণে বেকারত্ব ঘোচাতে সবাই অটোরিকশা চালান।’
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আবু সালেহ মো.

নূর ই সাঈদ জানান, ২০১০ সালে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের বিকল্প হিসেবে এই অটোরিকশা চালু করা হয়েছিল। এখন সক্ষমতার বেশি চলাচল করায় নতুন করে রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হচ্ছে না। এগুলোর লাইসেন্সে গতিসীমা উল্লেখ নেই। তবে ৩০ কিলোমিটার গতির বেশি চলার কথা নয়।
নগর পুলিশের উপকমিশনার (ডিসি-ট্রাফিক) নূরে আলম সিদ্দিকী বলেন, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়ার এখতিয়ার সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)। কিন্তু বিআরটিএর তালিকায় এসব অটোরিকশা যানবাহন নয়। সিটি করপোরেশন ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে পারে না। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা দিন-রাত চেষ্টা করছেন এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে। কিন্তু তাদের ঠেকানো যাচ্ছে না।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দ নমজ র দ র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

কৃষ্ণাকে ছাড়াই ভুটান গেলেন ৫ নারী ফুটবলার

সাবিনা খাতুন, ঋতুপর্ণা চাকমা, মনিকা চাকমা ও মাতসুশিমা সুমাইয়ার পর ভুটানের ফুটবল লিগে খেলতে গেলেন আরও পাঁচ নারী ফুটবলার। আজ সকালে তাঁরা থিম্পুর উদ্দেশে দেশ ছেড়েছেন।

এই পাঁচজন হলেন সানজিদা আক্তার, মারিয়া মান্দা, শামসুন্নাহার সিনিয়র, মাসুরা পারভীন ও রুপনা চাকমা। তাঁদের সঙ্গে ভুটান যাওয়ার কথা থাকলেও ওয়ার্ক পারমিট হাতে না পাওয়ায় অপেক্ষা বাড়ল কৃষ্ণা রানীর। বাফুফে সূত্রে আজ এমনটাই জানা গেছে।

আরও পড়ুনভুটানের লিগে খেলতে যাচ্ছেন কৃষ্ণা–সানজিদাসহ আরও চার ফুটবলার০৮ এপ্রিল ২০২৫

৬ এপ্রিল ভুটান যাওয়া সাবিনা, ঋতুপর্ণা, সুমাইয়া ও মনিকা খেলবেন ভুটানের ক্লাব পারো এফসির হয়ে। ট্রান্সপোর্ট ইউনাইটেডের জার্সিতে মাঠে দেখা যাবে ডিফেন্ডার মাসুরা ও গোলকিপার রুপনাকে। ফরোয়ার্ড কৃষ্ণার একই দলের হয়ে খেলার কথা রয়েছে। আর থিম্পু সিটির হয়ে খেলবেন সানজিদা, মারিয়া ও শামসুন্নাহার।

বিদেশি ক্লাবের হয়ে খেলার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের নতুন নয়। এর আগে মালদ্বীপ ও ভারতের ঘরোয়া নারী লিগে খেলেছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। কলকাতা ইস্ট বেঙ্গলের জার্সিতে মাঠে নামার সুযোগ হয়েছে সানজিদা আক্তারের।

আরও পড়ুনঅনুশীলনে ফিরেও দুশ্চিন্তায় বিদ্রোহীরা০৮ এপ্রিল ২০২৫

এরপর গত বছরের আগস্টে ভুটানের ক্লাব রয়্যাল থিম্পু কলেজ এফসির হয়ে খেলতে যান বাংলাদেশের চার ফুটবলার সাবিনা, ঋতুপর্ণা, মারিয়া মান্দা ও মনিকা। তখন এএফসি উইমেন্স চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলার জন্য তাঁদের নিয়েছিল ভুটানের ক্লাবটি।

১৫ এপ্রিল ভুটানের নারী লিগ শুরু হওয়ার কথা। এই লিগ প্রায় ছয় মাস চলে। ভুটানের লিগ চলাকালে এই খেলোয়াড়েরা জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পেলে তাঁরা ঢাকায় ফিরে আসবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ