বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করে কর্মমুখর গোপালগঞ্জের মৃৎ শিল্পীরা
Published: 11th, April 2025 GMT
বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখের বাকি আর মাত্র কয়েক দিন। বাঙালির এ প্রাণের উৎসবের প্রস্তুতি ও চলছে বেশ জোরেশোরে। এ উপলক্ষে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে বসবে বৈশাখী মেলা। এ মেলাকে কেন্দ্র করে মাটির বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র, খেলনাসহ নানান তৈজসপত্র তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার মৃৎ শিল্পীরা। তবে প্লাস্টিকের যুগে লোকসান আর সারা বছরের ব্যবসায়ীক মন্দা কাটিয়ে পহেলা বৈশাখের মেলাকে সামনে রেখে লাভের আশা করছেন তারা।
এদিকে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জেলা শহরের লেকপাড়ে পহেলা বৈশাখের আয়োজন করা হয়েছে। রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠাসহ আনন্দ শোভাযাত্রা। আউটার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে বৈশাখী মেলা।
জানাগেছে, এক সময়ের আবহমান গ্রাম বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য শিল্প ছিল মৃৎ শিল্প। ফলে এ শিল্পকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে কুটির শিল্প। আর এ শিল্পের সাথে জড়িত রয়েছে জেলার কয়েক হাজার মানুষ। তাই বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করে মৃৎ পল্লীগুলো এখন কর্মমুখর।
বাংলা নববর্ষকে বরণের প্রধান অনুষ্ঠান বৈশাখী মেলা বসবে গোপালগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে। আর এসব মেলাকে কেন্দ্র করে বৈশাখী মেলায় বাহারী খেলা ও পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসতে মৃৎ শিল্পীদের প্রস্তুতি এখন শেষ মুহূর্তে। বৈশাখী মেলায় আসবাবপত্র, খেলনাসহ নানান তৈজসপত্রের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসতে মৃৎ শিল্পীদের প্রস্তুতি এখন শেষ মুহুর্তে। পহেলা বৈশাখকে সামনে রেখে পাল সম্পদায়ের নারী–পুরুষের
দক্ষ হাতে সুনিপুণ নৈপুণ্যে তৈরি হচ্ছে ঐতিহ্যের নানা সামগ্রী। বৈশাখী মেলায় ব্যবসা করতে মাটির তৈরি সামগ্রী আর খেলনা তৈরিতে রাত দিন কাজ করে চলেছেন তারা। পুরুষের পাশাপাশি বাড়ির মহিলারাও এসব জিনিস তৈরিতে সাহায্য করছেন। এমনকি স্কুল ও কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও একাজে তাদের বাবা-মাকে সাহায্য করে থাকে। তাদের তৈরি এসব জিনিসপত্র পহেলা বৈশাখের মেলাসহ বিভিন্ন এলাকার বাজারে বিক্রি করা হবে।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারাতে বসেছে এই মৃৎ শিল্পজাত নানা পণ্যের কদর। প্লাস্টিক পণ্য বাজার দখল করে নেওয়ায় চাহিদা কমে গেছে মাটির তৈরি খেলনা ও জিনিসপত্রের। ফলে লাভ কম হওয়ায় এসব পণ্য তৈরিতে আগ্রহ হারিয়ে অনেকেই বেছে নিয়েছেন অন্য পেশা। যারাও করছেন বাপ-দাদার এ পেশাকে এখনো ধরে রেখেছেন তারা। সারা বছর তারা বৈশাখী মেলাকে সামনে রেখে মালামাল তৈরি করে থাকেন। অপেক্ষা করেন পহেলা বৈশাখের মেলার জন্য।
এদিকে, জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে নানা আয়োজন করা হয়েছে। সকাল ৬টায় লেকপাড়ে পহেলা বৈশাখের আয়োজন করা হয়েছে। রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠাসহ শোভাযাত্রা। আউটার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে ৮ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলা। এ মেলায় ঐতিহ্যবাহী বাঁশ, বেত ও মৃৎশিল্পের পণ্য থাকবে।
কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ গ্রামের এসএসসি পরীক্ষার্থী অনামিকা পাল বলেন, “বৈশাখী মেলাকে কেন্দ্র করে মাটির তৈরি বিভিন্ন খেলা ও তৈজসপত্র তৈরি করা হচ্ছে আমাদের বাড়িতে। পড়ালেখার পাশাপাশি আমি আমার মা বাবাকে সাহায্য করি।”
ষাটোর্ধ্ব পদ্মা রানি পাল বলেন, “মাটির জিনিসপত্র তৈরি না করলে আমাদের সংসার চলবে কীভাবে। তাই আমরা মাটির বিভিন্ন জিনিস তৈরি করে থাকি। এসব জিনিসপত্র বিভিন্ন মেলায় নিয়ে বিক্রি করা হয়।”
কোটালীপাড়া উপজেলার হিরণ গ্রামের মিলন পাল বলেন, “আমরা মাটি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র তৈরি করে থাকি। তবে প্লাস্টিকের পণ্য বাজার দখল করায় এখন আর মাটির তৈরি জিনিস পত্র তেমন একটা বিক্রি হয় না। ফলে অনেকে এ পেশা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। এ শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে সল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে।”
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামুরজ্জামান বলেন, “পহেলা বৈশাখ পালনের জন্য নানা আয়োজন করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনে উদ্যোগে বর্ষবরণ, সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান ও আনন্দ শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া ৮ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে।”
ঢাকা/এস
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ প লগঞ জ র ক ন দ র কর জ ন সপত র সপত র ত র অন ষ ঠ করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা
মুরাদনগরে বৈশাখী মেলা ঘিরে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মৃৎশিল্পীরা। সারা বছর এই কাজের কদর না থাকলেও বৈশাখ রাঙাতে এই সময়টাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় আগের মতো চাহিদা নেই মৃৎশিল্পের। এই পেশায় নেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। তাই প্রায় সারাবছরই অধিকাংশ নারী মৃৎশিল্পীকে অবসর সময় কাটাতে হয়। পুরুষ মৃৎশিল্পীদের অধিকাংশ চলে গেছেন অন্য পেশায়। তবে নববর্ষের আগে সব কাজ ফেলে তারা ছুটে আসেন পুরোনো এই পেশায়। মৃৎশিল্প থেকে সারা বছর কারিগররা আয়ের মুখ না দেখলেও বৈশাখী মেলা ঘিরে থাকে বাড়তি উপার্জনের সম্ভাবনা। এবারও মাসজুড়ে প্রতিটি কুমারপাড়ায় ছিল ব্যস্ততা।
কামাল্লা ও রামচন্দ্রপুর গ্রামের পালপাড়ায় দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। জরাজীর্ণ আবাসগুলোতে কেউ মাটি ঘুটছেন, কেউ সেই মাটি ছাঁচে দিয়ে তৈজসপত্র তৈরি করছেন। কেউবা খেলনা শুকানোর পর রংতুলির আঁচড় দিচ্ছেন। বিশেষ করে শিশুদের চাহিদা মাথায় রেখে তৈরি করা হচ্ছে ছোট ছোট মাটির হাঁড়িপাতিল, মাটির চুলা, শিলপাটা, কড়াই, কলস, কুলা, পুতুল, হাতি, ঘোড়া, নৌকা, টিয়া, সিংহ, দোয়েল, কচ্ছপ, মাছ, হাঁসসহ নানা রকম ফল, ফুল আর বাহারি মাটির ব্যাংক, প্লেট, মগ, গ্লাস, চায়ের কাপ। এ ছাড়া রয়েছে মাটির তৈরি গৃহস্থালি জিনিসপত্র।
কামাল্লা গ্রামের সন্ধ্যা রানী পাল ও শিখা রানী পাল জানান, এখন মাটির জিনিসের তেমন কদর না থাকায় সারাবছর টানাপোড়েনের মধ্যে চলে তাদের সংসার। পূর্বপুরুষের পেশা হওয়ায় ইচ্ছা হলেও ছাড়তে পারছেন না। সারাবছর অবসর সময় পার করলেও বৈশাখী মেলায় মাটির তৈরি খেলনা ও জিনিসপত্রের চাহিদা থাকায় এই সময়ে ব্যস্ততা থাকে তাদের।
কথা হয় মৃৎশিল্পী হরি ভূষণ পালের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, বছরের এই একটি উৎসব ঘিরে তাদের অনেক আশা থাকে। বৈশাখ মাস এলে মেলায় মাটির খেলনা সামগ্রীর চাহিদা বাড়ে। তাই এ সময় কিছু আয় হয়। তিনি হতাশার সুরে বলেন, ‘সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করত, তাহলে ব্যবসাটা ভালোভাবে করতে পারতাম।’
মৃৎশিল্পী কানন বালা জানান, পহেলা বৈশাখে বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে। এই মেলা থেকে শখের বসে অনেকে মাটির সামগ্রী, বিশেষ করে মাটির খেলনা কেনেন। তাই এই সময়ে কর্মব্যস্ততা বাড়ে তাদের।
রামচন্দ্রপুর গ্রামের খুশি পাল বলেন, ‘আমার বয়স ৫০ ছুঁই ছুঁই। বিয়ের পর থেকেই এই পেশার সঙ্গে জড়িত। আগে মাটির সামগ্রীর প্রচুর চাহিদা থাকলেও এখন আর তেমন নেই। এই শিল্পের সঙ্গে আমাদের জীবনজীবিকা নির্ভরশীল।’
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুর রহমানের ভাষ্য, আধুনিকতার ছোঁয়ায় মৃৎশিল্প যে হারিয়ে গেছে, বিষয়টি তা নয়। বরং আধুনিকতার ছোঁয়ায় শিল্পকারখানার মাধ্যমে তৈরি হওয়া মাটির তৈজসপত্রর চাহিদা এখন প্রচুর। মুরাদনগরে যদি বেসরকারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এসব মৃৎশিল্পীকে কাজে লাগানো যায়, তাহলে অবশ্যই এই শিল্প থেকে ভালো সুফল পাওয়া সম্ভব। পাশাপাশি মৃৎশিল্প বাঁচিয়ে রাখতে বিআরডিবি ও সমবায় কার্যালয় থেকে যেন সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়। যেহেতু মুরাদনগরে কোনো মৃৎশিল্পের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নেই, তাই মৃৎশিল্পীদের এই পেশাকে বাঁচিয়ে রাখতে সহজে সরকারি সহায়তা দিতে উপজেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।