ইসলামী আন্দোলনকে বাইপাস করে সংসদে যাওয়ার সুযোগ নেই: চরমোনাই পীর
Published: 11th, April 2025 GMT
স্বার্থান্বেষী মহল বিগত ৫৩ বছরে আলেম ও ইসলামী দলগুলোকে মুখরোচক বক্তব্যের মাধ্যমে বারবার প্রতারিত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। তিনি বলেছেন, যারা এখন ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে, তাদেরকে বলতে চাই, ইসলামী আন্দোলনকে বাইপাস করে সংসদে যাওয়ার সুযোগ নেই। ৫৩ বছর অনেক নিষ্পেষিত হয়েছি, আর হতে চায় না।
জুলাই-আগস্টে গণহত্যার বিচার, দুর্নীতিবাজদের গ্রেপ্তার, ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসন ও গণহত্যার প্রতিবাদে শুক্রবার যশোর ঈদগা মাঠে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য এসব কথা বলেন রেজাউল করীম।
তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে স্বার্থান্বেষী মহল আমাদের আলমদের, ইসলামী নামের দলকে বিভিন্ন সময় মুখরোচক বক্তব্যের মাধ্যমে বোকা পেয়ে ধোকা দিয়ে সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করেছে। তারা ক্ষমতার মসনদে যেয়ে আমাদের বারবার প্রতারিত করেছে। দেশের টাকা পাচার করেছে, আমাদের মায়েদের বুক খালি হয়েছে। আমাদেরকে গুম, খুন করা হয়েছে। এর পরিবর্তন আমাদের করতে হবে।
রেজাউল করীম আরও বলেন, দল প্রতিষ্ঠার পর থেকে একজনও আমরা সংসদে যাইনি। তার মানে কি আমাদের শক্তি নেই? আমাদের দল দুর্বল? কোনো ধান্ধাবাজের সংসদের যাওয়ার সিঁড়ি হয়নি ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, আর হবেও না। আমরা আওয়ামী লীগের শাসন দেখেছি, বিএনপির শাসন দেখেছি, জাতীয় পার্টিকেও দেখেছি। এখন ইসলামের শাসন দেখার বাকি।
ইসলামী আন্দোলন যশোরের সভাপতি আব্দুল আলিম মিয়া অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংগঠনটির নায়েবে আমীর আব্দুল আউয়াল, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ শোয়াইব হোসেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাইব্যুনালে ৩৩৯ অভিযোগ, ২২ মামলায় গ্রেপ্তার ৫৪
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ৩৩৯টি অভিযোগ জমা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে ২২ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ১৪১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তাদের মধ্যে ৭০ বেসামরিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৬২ ও ৯ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আছেন। ইতোমধ্যে ৫৪ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যা, আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো, চানখাঁরপুলে হত্যাকাণ্ড ও রামপুরায় ভবনের কার্নিশে ঝুলে থাকা ব্যক্তিকে গুলি করা মামলায় তদন্ত শেষ পর্যায়ে। শিগগির এগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হবে।
তাজুল ইসলাম বলেন, মামলা তদন্তের স্বার্থে এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট এক হাজারের বেশি মানুষের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। পরোয়ানা জারির পরও ৮৭ আসামি পলাতক।
তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড, সুপিরিয়র কমান্ড, সরাসরি সম্পৃক্ত এবং যাদের কারণে রাষ্ট্র এমন হয়েছে, তাদের আগে বিচার করতে চাই। আমরা ভুক্তভোগীদের প্রতি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চাই।
এক প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, বিচার কার্যক্রমে গতি আনতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের বেশ কিছু ধারা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে এটি হতে পারে। যাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। কবে নাগাদ বিচার শুরু করা যাবে– প্রশ্নে তিনি বলেন, সময় বেঁধে দিয়ে বিচার করা যাবে না। সেটি যুক্তিযুক্তও নয়।
মতবিনিময়ের শুরুতে তাজুল ইসলাম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেড়-দুই হাজারের বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন। ২৫ হাজারের মতো ছাত্র-জনতা আহত হয়েছেন। সব ঘটনার জলজ্যান্ত প্রমাণ রয়েছে। ট্রাইব্যুনালে আমরা সেটি প্রমাণ করতে সক্ষম হবো এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোপন বন্দিশালা থেকে টাইম বোমা উদ্ধার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আমিসহ গুমের মামলার তদন্তে যাওয়া দলের সদস্যদের হত্যার উদ্দেশ্যে টাইমার বোমা রাখা হয়েছিল। তবে ট্রাইব্যুনালের বিচার নিয়ে কোনো তথ্য-উপাত্ত যেন ফাঁস না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, গুমের বিষয়ে আমরা উত্তরায় একটা বড় বন্দিশালায় তদন্ত করতে গিয়েছিলাম। সেখানে অনেক কিছু আমরা আবিষ্কার করেছি। টাইমার বোমা দেখেছি। হয়তো এ বোমা রাখা হয়েছিল তদন্তকারী দলকে হত্যার পরিকল্পনা থেকে। আমাদের পরিদর্শনের ঠিক দু’দিন পর সেখানে প্রধান উপদেষ্টার পরিদর্শন করার কথা ছিল। তিনি অন্য জায়গায় গোপন বন্দিশালা পরিদর্শন করেন।
মতবিনিময় সভায় প্রসিকিউটর আবদুস সোবহান তরফদার, মিজানুল ইসলাম, গাজী এম এইচ তামিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।