নববর্ষ উপলক্ষে গুলশানে থাকছে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান
Published: 11th, April 2025 GMT
গুলশান সোসাইটির উদ্যোগে এবং ‘অলিগলি বর্ষবরণ বন্ধুগণ’–এর আয়োজনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় উদ্যাপিত হতে যাচ্ছে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উৎসব ‘অলিগলি হালখাতা’। এবার উৎসব হবে দুই দিনব্যাপী; এর মধ্যে ১৩ এপ্রিল হবে চৈত্রসংক্রান্তি এবং এর পরদিন অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল বাংলা বর্ষের প্রথম দিন হবে বর্ষবরণ উৎসব। এবারের আয়োজনে চারু কারু প্রদর্শনী, পালা গান, আলপনা, নৃত্য অনুষ্ঠান এবং গল্প–আলাপসহ নানা আয়োজন থাকবে।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্কে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন আয়োজকেরা। গুলশান সোসাইটির উদ্যোগে এবং ‘অলিগলি বর্ষবরণ বন্ধুগণ’ এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন গুলশান সোসাইটির সভাপতি ব্যারিস্টার ওমর সাদাত, মহাসচিব সৈয়দ আহসান হাবীব, সদস্য শ্রাবন্তী দত্তসহ কমিটির অন্য সদস্যরা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারের দুই দিনব্যাপী বর্ষবরণ ১৪৩২ ‘অলিগলি হালখাতা’ অনুষ্ঠিত হবে গুলশানের বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্কে। আয়োজনের প্রথম দিন থাকবে চৈত্রসংক্রান্তির আয়োজন। এদিন বিকেল ৪টা থেকে চারু কারু প্রদর্শনী, রাত ৮টায় ইসলাম উদ্দিন পালাকারের পালা গান, রাত ৯টায় আলপনা আলাপ, রাত ১০টায় পার্কের সামনে থেকে গুলশান–২ মোড় পর্যন্ত রাস্তাজুড়ে আলপনা অঙ্কন করা হবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ ও বিশিষ্ট নাগরিকেরা এতে অংশগ্রহণ করবেন।
বাংলা নতুন বছরের দিন, অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখের দিনব্যাপী উৎসব শুরু হবে সকাল থেকেই। এদিন সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে থাকবে রেচেল প্রিয়াঙ্কা ও তাঁর দলের বর্ষবরণ নৃত্য। এরপর অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাবেন অন্তর্বর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদ, অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ এবং গুলশান সোসাইটি ও অলিগলি-বর্ষবরণ বন্ধুরা। এরপর সকাল ১০টায় ব্যান্ডদল জলের গানের পরিবেশনায় থাকবে ‘গানালাপ’।
এবারের বর্ষবরণ উৎসবে আরও থাকবে চিত্রশিল্পীদের অংশগ্রহণে ‘আর্ট ক্যাম্প’। এতে থাকবেন চিত্রশিল্পী ফরিদা জামান, কনকচাঁপা চাকমা, শিশির ভট্টাচার্য, জামাল আহমেদ, মোহাম্মদ ইউনুস, আহম্মেদ শামসুদ্দোহা, শেখ আফজাল, মোহাম্মদ ইকবাল, বীরেন সোম, আনিসুজ্জামান, বিশ্বজিৎ গোস্বামী। এ আয়োজনও হবে সকাল ১০টায়। এরপর সকাল ১১টায় ‘সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ’ শীর্ষক ‘ভাবালাপ’–এর প্রথম পর্বে কথা বলবেন সাংবাদিক নূরুল কবীর, সংস্কৃতিজন সারা যাকের, নাট্য ব্যক্তিত্ব আফজাল হোসেন এবং অধ্যাপক প্রশান্ত ত্রিপুরা। এ পর্বে সঞ্চালনা করবেন সাঈদ ফিরদৌস।
এরপর বেলা ১২টায় শুরু হবে ‘ভরদুপুরের গল্পসল্প’। ‘ভাবালাপ’–এর দ্বিতীয় পর্বে ‘জনপরিসরে নারীর উপস্থিতি’ নিয়ে আলাপ করবেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ব্যারিস্টার শুক্লা সিরাজ, শিক্ষক মিথিলা মাহফুজ, আদিবাসী অ্যাকটিভিস্ট ডালিয়া চাকমা। বিকেল ৪টায় পাড়ার বাচ্চাদের সমবেত নৃত্যে অংশ নেবে গুলশান-বনানী-বারিধারা-উত্তরা অঞ্চলের শিশু–কিশোরেরা। ‘সব সখি মিলি গাই মঙ্গলগান’–শীর্ষক আয়োজনটি শুরু হবে বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে; এলকেজি স্টুডিওর পরিচালনায় এতে গাইবেন সভ্যতা, সুমেল, আনান, জয়িতা, নাভিন, লাবিক।
দিনব্যাপী আয়োজনে সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে সমগীত গানের দলের পরিবেশনা, সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে বাপ্পা মজুমদার ও দলছুটের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে পর্দা নামবে আয়োজনের।
আয়োজকেরা বলছেন, একটি প্রগতিশীল সমাজ গড়তে প্রয়োজন শিল্প-সংস্কৃতি-শিল্পীর নিরাপদ মর্যাদাপূর্ণ কদর, শুধু ভালোবাসা তার জন্য যথেষ্ট নয়। এমন একটা সংস্কৃতি গড়ে তোলা তাঁদের এই উদ্যোগের অন্যতম উদ্দেশ্য। যখন সমাজে নানামুখী বিদ্বেষ-ঘৃণা-ভয়-উগ্রতা, নারীর প্রতি সহিংসতা দেখা যায়, এ সময় সেই সংকট অতিক্রম করতে উদারনৈতিক মানবতাবাদী ধারার সংস্কৃতিই হতে পারে পাথেয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অনেক আয়োজন বন্ধে ম্লান বর্ষবরণ উৎসব
বরিশালে বাংলা বর্ষবরণের সবচেয়ে বড় আয়োজন হতো নগরে কালীবাড়ি সড়কে বিএম স্কুল মাঠে। প্রতিবছর পহেলা বৈশাখের সকালে সেখানে প্রভাতি অনুষ্ঠান শেষে বের হতো বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা। মাঠে তিন দিনব্যাপী হতো বৈশাখী মেলা ও লোকজ সংস্কৃতি উৎসব। উৎসবপ্রিয় মানুষের স্রোত যেতে বিএম স্কুলের দিকে। চার দশকের সেই উৎসব রেওয়াজ এবারের বর্ষবরণে ম্লান হয়ে গেছে। শোভাযাত্রা ও বৈশাখী মেলা দুটিই অনিশ্চিত। মেলা ও শোভাযাত্রা হবে কিনা, তা আয়োজকরা গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সমকালকে নিশ্চিত করতে পারেননি। যদিওবা হয়, সেটা হবে অনেকটা প্রতীকী আয়োজনের মতো।
এ দুটি আয়োজনের ক্ষেত্রে প্রশাসন নিরাপত্তার অজুহাত দেখাচ্ছে। তা ছাড়া কয়েক দশক ধরে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান করা আরও কয়েকটি সংগঠন এ বছরের আয়োজন থেকে বিরত রয়েছে। তবে জেলা প্রশাসন বেলস পার্ক মাঠে সাত দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করছে।
৪৩ বছর ধরে মেলা ও লোকজ সংস্কৃতি উৎসবের আয়োজন করে আসছে উদীচী বরিশাল শাখা। চারুকলার উদ্যোগে হতো মঙ্গল শোভাযাত্রা। তাদের এ আয়োজন শুরু হয় ৩৩ বছর আগে। সকালে বিএম স্কুল প্রাঙ্গণে প্রভাতী অনুষ্ঠান শেষে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা নগর প্রদক্ষিণ করত। নারী-পুরুষ-শিশুরা বর্ণিল সাজে এতে অংশ নিত।
উদীচী বরিশাল শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট বিশ্বনাথ মুন্সী। তিনি জানান, সংগঠনের বৈশাখী মেলা ৪৩ বছর আগে প্রথম শুরু হয়েছিল কালীবাড়ি সড়কের জগদীশ সারস্বত বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে। পরে সেটি একই সড়কের বিএম স্কুলের বড় মাঠে স্থানান্তর হয়। প্রতিবছরই পরিসর বড় হতে থাকে। এক দিনের মেলা উন্নীত হয় তিন দিনে। এটি নগরীতে বর্ষবরণের প্রধান উৎসব কেন্দ্রে পরিণত হয়। মেলা শুরুর ১০ বছর পর চারুকলা একই স্থান থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু করে। উদীচীও যার অংশীদার হয়।
এবারের আয়োজনের বিষয়ে অ্যাডভোকেট মুন্সী বলেন, প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে অনুমতি নেওয়ার জন্য। যেহেতু ৪৩ বছর ধরে উদীচী লিখিত অনুমতি নেয়নি, এবারও নেবে না। মেলা হবে কিনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সকালে প্রভাতী অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়েছেন। তখন কেউ পসরা নিয়ে বসে পড়লে সেটাই মেলায় পরিণত হবে।
শোভাযাত্রা করার জন্য ছোট পরিসরে আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে চারুকলার সংগঠক সুশান্ত চক্রবর্তী বলেন, তবে শোভাযাত্রা হবে কিনা সেটা পহেলা বৈশাখ সকালে পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করছে।
চারুকলা বরিশালের সভাপতি দীপংকর চক্রবর্তী বলেন, ‘প্রশাসন যদি করতে না দেয়, তাহলে কিছু করার নেই।’
প্রতিবছর ৩০ চৈত্র বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নগরের প্রাণকেন্দ্র অশ্বিনী কুমার হল চত্বরে লোকজ সংগীত পরিবেশন করত গণশিল্পী সংস্থা। সংগঠনটির জেলা সাধারণ সম্পাদক সাঈদ পান্থ জানান, তারা ২৫ বছর ধরে এ অনুষ্ঠান করছেন। আজ ৩০ চৈত্র তাদের এ আয়োজন নেই। কেন করেননি– এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।
৪০ বছর ধরে পহেলা বৈশাখ সকালে অশ্বিনী কুমার হল চত্বরে প্রভাতী অনুষ্ঠান করে আসছে শিশু সংগঠন খেলাঘর। এ বছর এ অনুষ্ঠান হবে না। এ বিষয়ে খেলাঘরের সংগঠক শুভংকর চক্রবর্তী বলেন, অশ্বিনী কুমার হলে জেলা প্রশাসনের অনুষ্ঠান থাকায় তারা স্থান বরাদ্দ পাননি। তবে ২ মে সংগঠনের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান একসঙ্গে হবে।
নগরের আমানতগঞ্জে তিন দিনব্যাপী আরেকটি বৈশাখী মেলার আয়োজন করত চাঁদের হাট। সংগঠনের জেলা সদস্য আরিফুর রহমান বাবু বলেন, মেট্রোপলিটন পুলিশের অনুমতি না পাওয়ায় এ বছর মেলা হবে না।
নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে কাউকে মেলার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না জানিয়ে এ বিষয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সফিকুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসনের বৈশাখী শোভাযাত্রায় সবাইকে অংশগ্রহণ করতে হবে।
জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন বলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বেলস পার্কে সাত দিনব্যাপী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। সার্কিট হাউস থেকে বের হবে জেলা প্রশাসনের শোভাযাত্রা।