২ এপ্রিল প্রথম আলো অনলাইনে ‘জুলাই হত্যাকাণ্ড কি জেনোসাইডের সংজ্ঞার মধ্যে পড়ে’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। লেখক আরিফ রহমান প্রবন্ধটিতে দাবি করছেন, ‘বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট সময়ে সংঘটিত সহিংস নিধনযজ্ঞকে রাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত গণহত্যা বলাই অধিক যুক্তিযুক্ত’...বা ‘একাডেমিক ও নৈতিক যুক্তিতে এ ঘটনা যে গণহত্যা, সে বিষয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই।’

লেখক জেনোসাইড কনভেনশনের সংজ্ঞার কথা উল্লেখ করলেও নামজাদা কয়েকজন গবেষকের সংজ্ঞা ও মডেল ব্যবহার করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন। আরিফের লেখার মূল যে স্পিরিট—‘রাষ্ট্র পরিচালিত নিষ্ঠুর বলপ্রয়োগ যে কতটা ভয়ংকর রূপ নিতে পারে, বাংলাদেশে ২০২৪ সালের ঘটনাই তার এক গভীর শিক্ষা’-এর সঙ্গে পরিপূর্ণ একমত হয়েও তাঁর অবস্থানের আইনি/যৌক্তিক দুর্বলতা ও এর সম্ভাব্য পরিণতির আশঙ্কা থেকে এই লেখার অবতারণা।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক পরিসরে ‘গণহত্যা’ শব্দের দুই ধরনের ব্যবহার রয়েছে। প্রথমত, রাজনৈতিক রেটরিক অর্থে ‘গণহত্যা’ দিয়ে আসলে বোঝানো হয়ে থাকে একসঙ্গে একের অধিক মানুষকে হত্যা করা; সেখানে ইংরেজি ‘ম্যাসাকার’ বা ‘মাসকিলিং’ অর্থে এটা ব্যবহৃত হয়।

ষাটের দশক থেকে আজতক এ ভূখণ্ডে যেকোনো ধরনের রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, যেখানে একের অধিক লোক মারা গেছেন, সব কটাকেই রাজনৈতিক পরিসরের জনপ্রিয় বুলিতে ‘গণহত্যা’ বলা হয়ে থাকে। মুক্তিযুদ্ধকালীন গণহত্যা সংঘটনের বহু আগেও যেমন রাষ্ট্রীয় সহিংসতা/হত্যাযজ্ঞ বোঝাতে ‘গণহত্যা’ শব্দের ব্যবহার পাওয়া যায়, তেমনি বর্তমানে পিলখানা বা শাপলার রাষ্ট্রীয় হত্যাযজ্ঞের ক্ষেত্রে ‘গণহত্যা’ সম্বোধনও বহুল প্রচলিত। এখানে গণহত্যা ও মাসকিলিং আসলে সমার্থক।

 এর বাইরে দ্বিতীয় আরেক ধরনের ব্যবহার রয়েছে: ‘জেনোসাইড’ অর্থে। ‘জেনোসাইড’–এর অর্থ ও সংজ্ঞা আন্তর্জাতিক আইন বা জেনোসাইড কনভেনশনে খুবই নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের অভিধান থেকে শুরু করে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চায় ‘জেনোসাইড’–এর পরিভাষা হিসেবেও ‘গণহত্যা’ ব্যবহারের চল রয়েছে।

কিন্তু আইনে জেনোসাইডের সংজ্ঞায় যে কয়েকটা অপরাধমূলক কাজ বা অ্যাক্টকে জেনোসাইড হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে, তাতে হত্যা বা মাসকিলিং আরও অনেকগুলো অপরাধের একটি। সেখানে দেখা যায়, কাউকে ‘হত্যা’ না করেও আসলে ‘জেনোসাইড’ চালানো সম্ভব, কেননা সেখানে হত্যার বাইরে আরও কিছু অপরাধমূলক কাজের উল্লেখ রয়েছে, যেমন, শারীরিক ও মানসিক ক্ষতিসাধন বা জোরপূর্বক জন্মদানে বাধা প্রদান বা এক গোষ্ঠীর শিশুদের অন্য গোষ্ঠীতে স্থানান্তর।

কিন্তু ‘গণহত্যা’ ব্যবহার করলে কেবল ‘হত্যা’কেই প্রাধান্য দেওয়া হয়, ফলে বাংলাদেশের অনেকেই জেনোসাইডের পরিভাষা হিসেবে গণহত্যা ব্যবহার না করে সরাসরি জেনোসাইড বা গোষ্ঠীনিধন/বা জাতিনিধন বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

আরিফ রহমান তাঁর কলামে চব্বিশের হত্যাকাণ্ডকে যে ‘গণহত্যা’ বলতে চান, সেটা আসলে ‘জেনোসাইড’ অর্থে। রাজনৈতিক রেটরিক অর্থে ইতিমধ্যে এটা ‘গণহত্যা’ হিসেবে বহুল প্রচলিত হয়ে গেছে। কিন্তু ‘জেনোসাইড’ অর্থে একে ‘গণহত্যা’ বলাটা বিভ্রান্তিকর। কেন, সেটা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করা যাক।

প্রথমত, ‘জেনোসাইড’ হচ্ছে গোষ্ঠীকেন্দ্রিক অপরাধ। আরিফ রহমানও বলছেন, ‘একটি গোষ্ঠীর অস্তিত্ব নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পিত অভিযান’। ‘জেনোসাইড’ শব্দের প্রবর্তক রাফায়েল লেমকিন থেকে শুরু করে জেনোসাইড কনভেনশন হয়ে প্রায় প্রত্যেক গবেষক পর্যন্ত এ বিষয়ে একমত।

১৯৪৮ সালে জেনোসাইড কনভেনশনে যখন এই আইন চূড়ান্ত হচ্ছে, তখন বহু বাহাসের পর গোষ্ঠীর চারটি বর্গকে ‘সুরক্ষিত গোষ্ঠী’ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে: জাতীয়, নৃগোষ্ঠী, জাতিগত ও ধর্মীয় গোষ্ঠী; অর্থাৎ, এই চার বর্গের কোনো গোষ্ঠীকে আংশিক বা পূর্ণ ধ্বংস করার নিয়তে (ইনটেনশন) যদি কিছু নির্দিষ্ট অপরাধমূলক কাজ করা হয়, তাহলে সেটা জেনোসাইড হবে।

এই ‘গোষ্ঠী পরিচয়’–এর নির্দিষ্টতাই অপরাপর অপরাধ থেকে একে পৃথক করে। আন্তর্জাতিক আইনে কেন ‘রাজনৈতিক’ বর্গ নেই, সেটা নিয়ে পরবর্তীকালে বহু গবেষক প্রশ্ন তুলেছেন, সমালোচনা করেছেন। কিন্তু, লিও কুপারসহ সবাই বাস্তবিক কারণেই এই আইনকে আলাপের রেফারেন্স পয়েন্ট হিসেবে নিয়ে থাকেন।

এখন চব্বিশের ঘটনায় ভিকটিমরা (ভুক্তভোগী) আন্তর্জাতিক আইনের সংজ্ঞার আওতায় পড়েন না। অর্থাৎ, কেবল জাতীয়, নৃগোষ্ঠী, জাতিগত বা ধর্মীয় গোষ্ঠীর সদস্য হওয়ার কারণে কেউ হত্যাযজ্ঞ বা ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হননি। আরিফ রহমান সে কারণে আন্তর্জাতিক আইন ধরে আলাপ না করে বিভিন্ন গবেষকের মারফতে আলোচনা করেছেন, যাঁরা ‘রাজনৈতিক’ বর্গের অনুপস্থিতির কারণে জেনোসাইডের সংজ্ঞার সমালোচনাও করেছেন বা তাদের আলোচনার সুবিধার্থে সংজ্ঞাকে খুবই শিথিল আকারে ব্যবহার করেছেন।

আরিফ যে গ্রেগরি স্ট্যান্টনের ৮টি (পরে স্ট্যান্টন আরও দুটো ধাপ বাড়িয়েছিলেন) ধাপের মডেল ব্যবহার করেছেন, সেই গ্রেগরি স্ট্যান্টনও কিন্তু কনভেনশনের সংজ্ঞা ও পরিচয়ের ওই চারটি বর্গকে কবুল করেই আলোচনা করেছেন। তিনি কেবল জেনোসাইডকে একটা প্রক্রিয়া হিসেবে কিছু ধাপে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন, যেন এটা আগে থেকে মোকাবিলা করা যায়।

অন্যদিকে, আরিফ যদি গবেষকদের বরাত দিয়ে ‘রাজনৈতিক’ বর্গকে অন্তর্ভুক্ত করতেও চান, তাহলেও চব্বিশের সহিংসতাকে এটাতে আটানো সম্ভব হবে না। কারণ, কোনো নির্দিষ্ট ‘রাজনৈতিক’ দল বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় সহিংসতা ছিল না।

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্যই ছিল, কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল বা ব্যানারের বাইরে গিয়ে এটা সংঘটিত হয়েছে। তাদের নানা ধরনের রাজনৈতিক মতামত থাকলেও, বা একটা বিশেষ মুহূর্তে একটা নির্দিষ্ট রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার ভিত্তিতে সমাবেশ তৈরি হলেও, এটাকে নির্দিষ্ট ‘রাজনৈতিক’ গোষ্ঠী বলা সম্ভব হবে না।

প্রথমত, এখানে যেকোনো সুরক্ষিত গ্রুপ বা গোষ্ঠী হওয়ার জন্য সেটাকে স্থায়ী (পারমানেন্ট) ও স্থিতিশীল (স্টেবল) হতে হবে; রুয়ান্ডা ও যুগোস্লাভিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মামলাগুলোয় গোষ্ঠী প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছিল। অর্থাৎ, এই গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিরা সাধারণত জন্মসূত্রে নির্ধারিত হবেন যা সহজে পরিবর্তনযোগ্য নয়।

দ্বিতীয়ত, আরিফ যেভাবে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে জনতাকে ‘রাজনৈতিক’ গোষ্ঠী হিসেবে তুলে ধরতে চান, সেটা করতে গেলে ‘রাজনৈতিক’ বর্গ এতই শিথিল হয়ে পড়ে যে আইনের দিক থেকে এটা আর অর্থবহ থাকে না। যেকোনো দলবদ্ধ গোষ্ঠীকে আসলে সে অর্থে ‘রাজনৈতিক’ বলা সম্ভব, এমনকি অনেক জাতীয় বা নৃগোষ্ঠীকেও কেউ কেউ রাজনৈতিক নির্মাণ বলেও সাব্যস্ত করতে পারবেন।

এটাও উল্লেখ করা জরুরি যে ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সংজ্ঞায় পূর্বে ‘রাজনৈতিক’ বর্গ অন্তর্ভুক্ত ছিল, সেটা অভ্যুত্থানের পর আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে সংশোধনীর মাধ্যমে বাদ দেওয়া হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই বলার চেষ্টা করেছেন, এটা বাদ না দিলে আমাদের আইন অনুযায়ী চব্বিশের সহিংসতাকে ‘জেনোসাইড’ বলা যেতে পারত! কিন্তু, ওপরে এটাই বলার চেষ্টা করা হলো যে ‘রাজনৈতিক’ বর্গ থাকলেও চব্বিশের সহিংসতাকে ‘জেনোসাইড’ বা জেনোসাইড অর্থে গণহত্যা বলা সম্ভব নয়।

তৃতীয়ত, চব্বিশের সহিংসতাকে ‘জেনোসাইড’ না বললে কি অপরাধকে লঘু করা হয়? আমাদের উত্তর হচ্ছে, না। জেনোসাইডকে ‘ক্রাইম অব অল ক্রাইমস’ বলে সাব্যস্ত করার যে বহুল রেওয়াজ রয়েছে, তাতে মনে হয়, আইনে বুঝি একধরনের অপরাধের ক্রমবিন্যাস বা হায়ার্কি রয়েছে!

এটা ঠিক যে আন্তর্জাতিক আইনে জেনোসাইড প্রমাণের মানদণ্ড খুব উঁচু, কোনো ঘটনাকে জেনোসাইড প্রমাণ করতে খুব কসরত করতে
হয়। এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যেকোনো হত্যাযজ্ঞকে ‘জেনোসাইড’–এর খোপে ঢোকানোর প্রয়াস খুব লক্ষণীয়।

সম্প্রতি গবেষকেরা (যেমন ডার্ক মোজেস) বলছেন, এই মনোভাব মানে এটাই সবচেয়ে বড় অপরাধ এবং সবকিছু এটাতে অন্তর্ভুক্ত করার যে প্রবণতা, তা আদতে ক্ষতিকর। এটা বিভিন্ন সহিংসতা ও অপরাধের বিবিধ মাত্রাকে কাটছাঁট করে, তার ধরন ও প্রকৃতিকে ঠিকঠাকমতো বুঝতে দেয় না।

ফলে হত্যাযজ্ঞমাত্রই ‘জেনোসাইড’ বা সে অর্থে গণহত্যা বলে দাবি করলে, একদিকে যেমন গণহত্যা/জেনোসাইড বর্গ হিসেবে অর্থহীন হয়ে উঠে, তেমনি যেসব ঘটনা আসলেই জেনোসাইড, সেগুলো লঘু হয়ে পড়ে। এ কারণে অনেকেই হরেদরে ঘটনাকে জেনোসাইড ব্যবহার করতে সতর্ক করেন।

চব্বিশের ঘটনাকে যদি জেনোসাইড অর্থে গণহত্যা না বলি, তাহলে অপরাধের কোন ব্যানারে আলোচনা করা যেতে পারে? আরিফ নিজেও তাঁর লেখায় যেসব প্রতিবেদনের কথা বলছেন, সেখানেও এর স্পষ্ট ইঙ্গিত দেওয়া আছে। যেমন জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, এই ঘটনাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ বলার যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ রয়েছে এবং পুরো প্রতিবেদনে নানা কায়দায় সেটাকেই প্রমাণ করা হয়েছে। চব্বিশের সহিংসতাকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করাই যৌক্তিক ও সঠিক। এটাকে জেনোসাইড অর্থে গণহত্যা বললে মারাত্মক আইনি বিভ্রান্তি তৈরি হবে।

তাই আমরা মনে করি যে আন্তর্জাতিক আইনে কোনোভাবেই চব্বিশের সহিংসতাকে ‘জেনোসাইড’ বলে প্রমাণ করা যাবে না। এটাকে জোর করে যদি ‘জেনোসাইড’ অর্থে গণহত্যা বলা হয়ে থাকে, তাহলে কিছুদিন পর মূল অপরাধীরাই বলতে শুরু করবেন যে এটাকে গণহত্যা হিসেবে প্রমাণ করা যাবে না; ফলে নৈতিকভাবে দায়মুক্তি ঘটেছে বলে প্রচারণার সুযোগ পাবেন।

এ রকম তৎপরতা থেকে এ ধরনের ‘ভুল’ চিহ্নায়ন দুই তরিকার বিপদ ঘটাবে। এক.

খোদ চব্বিশের সহিংসতাকে পুরোপুরি বুঝতে সহায়ক হবে না এবং অপরাধীদের প্রচারণার সুযোগ করে দেবে; দুই. যেগুলো আসলেই ‘জেনোসাইড’মূলক ঘটনা, সেগুলোকে লঘু করে তুলবে।

সহুল আহমদ লেখক ও গবেষক

উম্মে ওয়ারা সহযোগী অধ্যাপক, ক্রিমিনোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর আর ফ রহম ন র জন ত ক অপর ধ র গণহত য কর ছ ন আর ফ র ধরন র ঘটন ক

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাইব্যুনালে ৩৩৯ অভিযোগ, ২২ মামলায় গ্রেপ্তার ৫৪

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় ৩৩৯টি অভিযোগ জমা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, অভিযোগের ভিত্তিতে ২২ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মোট ১৪১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তাদের মধ্যে ৭০ বেসামরিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৬২ ও ৯ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আছেন। ইতোমধ্যে ৫৪ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাই অভ্যুত্থানে গণহত্যা, আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো, চানখাঁরপুলে হত্যাকাণ্ড ও রামপুরায় ভবনের কার্নিশে ঝুলে থাকা ব্যক্তিকে গুলি করা মামলায় তদন্ত শেষ পর্যায়ে। শিগগির এগুলোর তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হবে।

তাজুল ইসলাম বলেন, মামলা তদন্তের স্বার্থে এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট এক হাজারের বেশি মানুষের জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। পরোয়ানা জারির পরও ৮৭ আসামি পলাতক।

তিনি বলেন, জুলাই-আগস্ট গণহত্যার মাস্টারমাইন্ড, সুপিরিয়র কমান্ড, সরাসরি সম্পৃক্ত এবং যাদের কারণে রাষ্ট্র এমন হয়েছে, তাদের আগে বিচার করতে চাই। আমরা ভুক্তভোগীদের প্রতি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চাই।

এক প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, বিচার কার্যক্রমে গতি আনতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের বেশ কিছু ধারা সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে এটি হতে পারে। যাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হবে। কবে নাগাদ বিচার শুরু করা যাবে– প্রশ্নে তিনি বলেন, সময় বেঁধে দিয়ে বিচার করা যাবে না। সেটি যুক্তিযুক্তও নয়।

মতবিনিময়ের শুরুতে তাজুল ইসলাম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেড়-দুই হাজারের বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন। ২৫ হাজারের মতো ছাত্র-জনতা আহত হয়েছেন। সব ঘটনার জলজ্যান্ত প্রমাণ রয়েছে। ট্রাইব্যুনালে আমরা সেটি প্রমাণ করতে সক্ষম হবো এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা হবে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গোপন বন্দিশালা থেকে টাইম বোমা উদ্ধার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে চিফ প্রসিকিউটর বলেন, আমিসহ গুমের মামলার তদন্তে যাওয়া দলের সদস্যদের হত্যার উদ্দেশ্যে টাইমার বোমা রাখা হয়েছিল। তবে ট্রাইব্যুনালের বিচার নিয়ে কোনো তথ্য-উপাত্ত যেন ফাঁস না হয়, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কাজ করছি।

তিনি আরও বলেন, গুমের বিষয়ে আমরা উত্তরায় একটা বড় বন্দিশালায় তদন্ত করতে গিয়েছিলাম। সেখানে অনেক কিছু আমরা আবিষ্কার করেছি। টাইমার বোমা দেখেছি। হয়তো এ বোমা রাখা হয়েছিল তদন্তকারী দলকে হত্যার পরিকল্পনা থেকে। আমাদের পরিদর্শনের ঠিক দু’দিন পর সেখানে প্রধান উপদেষ্টার পরিদর্শন করার কথা ছিল। তিনি অন্য জায়গায় গোপন বন্দিশালা পরিদর্শন করেন।

মতবিনিময় সভায় প্রসিকিউটর আবদুস সোবহান তরফদার, মিজানুল ইসলাম, গাজী এম এইচ তামিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গণহত্যার প্রতিবাদ জানাতে রাজধানীতে জনতার ঢল
  • গণহত্যার প্রতিবাদে সরব বাংলাদেশ
  • গণহত্যা বন্ধ ও স্বাধীন ফিলিস্তিন দাবি
  • ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে বরিশালে বিক্ষোভ 
  • গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে বাংলাদেশ জাসদের বিক্ষোভ
  • ইসলামী আন্দোলনকে বাইপাস করে সংসদে যাওয়ার সুযোগ নেই: চরমোনাই পীর
  • গাজায় গণহত‌্যা: জিএম কা‌দে‌রের নেতৃ‌ত্বে রাজধানী‌তে বি‌ক্ষোভ
  • ‘ইসরায়েলের পণ্য বর্জনের জিহাদ শুরু করতে হবে’
  • ট্রাইব্যুনালে ৩৩৯ অভিযোগ, ২২ মামলায় গ্রেপ্তার ৫৪