পবিপ্রবিতে কৃষি গুচ্ছের ভর্তি পরীক্ষায় চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা
Published: 11th, April 2025 GMT
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে কৃষি গুচ্ছভুক্ত ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষ স্নাতক শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা আগামী শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকেল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) এ পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন ৪ হাজার পরীক্ষার্থী।
বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত নিরাপত্তা সভায় এসব তথ্য জানান ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড.
সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এসএম হেমায়েত জাহান, সভাপতিত্ব করেন প্রক্টর প্রফেসর আবুল বাশার।
এতে বক্তব্য রাখেন ভাষা ও যোগাযোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুলতানা জাহান, নিরাপত্তা কর্মকর্তা মুকিত মিয়াসহ অন্যান্যরা।
ভর্তি পরীক্ষা ঘিরে নিরাপত্তা ও অন্যান্য প্রস্তুতি ইতোমধ্যে সম্পন্ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে পাঁচটি হেল্প ডেস্ক, ওয়াশরুম, মেডিকেল টিম ও অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা হবে।
ভাইস চ্যান্সেলর জানান, পরীক্ষার দিন দুপুর ১২টার মধ্যেই ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে পুলিশ মোতায়েন করা হবে এবং আগের রাত থেকেই বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার থাকবে। চার স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আনসার, পুলিশ, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তাকর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা যৌথভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।
তিনি আরও বলেন, ভর্তি পরীক্ষা একটি বড় আয়োজন। এককভাবে এটি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিএনসিসি, রোভার স্কাউটস এবং বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল টিমের সমন্বয়ে আমরা কাজ করছি।
এদিকে ঢাকায় একই দিনে ‘মার্চ টু গাজা’ কর্মসূচির কারণে যানজটের আশঙ্কা থাকায় পরীক্ষার্থীদের কমপক্ষে এক ঘণ্টা আগে কেন্দ্রে পৌঁছাতে অনুরোধ করা হয়েছে। নিরাপত্তার অংশ হিসেবে সকাল ৮টার পর থেকে প্রশাসনিক ও একাডেমিক ভবনের অভিমুখী সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল ও অটোরিকশার চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে। শুধু পরীক্ষাসংক্রান্ত যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।
জালিয়াতি রোধে নেওয়া হয়েছে কঠোর পদক্ষেপ। প্রশ্নপত্র বিতরণে জিপিএস ট্র্যাকিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে, যাতে নির্ধারিত কেন্দ্র ও উপকেন্দ্রে প্রশ্ন সঠিকভাবে পৌঁছানো নিশ্চিত করা যায়। পরীক্ষার্থীদের প্রবেশের আগে সম্পূর্ণ দেহ তল্লাশি করা হবে এবং ইলেকট্রনিক ডিভাইস বহন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকবে।
এবার কৃষি গুচ্ছের ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট আসন সংখ্যা ৩ হাজার ৮৬৩টি, যার মধ্যে পবিপ্রবিতে রয়েছে ৪২৩টি। আবেদন করেছেন মোট ৯৪ হাজার ২০ জন শিক্ষার্থী—ছাত্র ৪৬ হাজার ৯৩২ এবং ছাত্রী ৪৭ হাজার ৮৮ জন। গড়ে প্রতিটি আসনের জন্য প্রতিযোগিতা করছেন প্রায় ২৫ জন। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ৯টি কেন্দ্রে ও ১৩টি উপকেন্দ্রে। সম্ভাব্য ফল প্রকাশের তারিখ ১৫ এপ্রিল।
উল্লেখ্য, কৃষি গুচ্ছের অন্তর্ভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো: বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (ময়মনসিংহ), শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা), গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ক ষ র থ
এছাড়াও পড়ুন:
‘প্রিয় ক্রিকেট, আমাকে আর একটা সুযোগ দাও’
যশপ্রীত বুমরার ডেলিভারিটি ছিল লেগ স্টাম্পে। খুব দ্রুতই অবস্থান তৈরি করে নিলেন করুন নায়ার, ফ্লিক শটে স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা!
নিজের বোলারকে ছক্কা হজম করতে দেখেও হাততালি দিয়ে উঠলেন মুম্বাই অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া। একই ওভারের পঞ্চম বলে আবার ছক্কা। এবার স্লোয়ার ডেলিভারি উড়ে গেল লং অফ দিয়ে। অবাক চোখে চেয়ে দেখলেন বুমরা। এই দুই ছক্কার মাঝে হয়েছে একটি চারও। সব মিলিয়ে ছয় বলেই ১৮ রান। সময়ের সেরা পেসার বুমরার বলে নায়ারের এই আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে স্মৃতিকাতর হয়ে ওঠার কথা অনেকেরই।
নায়ার সেই বিরল দুর্ভাগাদের একজন, যিনি ভারতের হয়ে অপরাজিত ট্রিপল সেঞ্চুরি করেও তিন ম্যাচ পর বাদ পড়ে আর কখনো জাতীয় দলে ফিরতে পারেননি। আইপিএলে ব্র্যাত্য হয়ে পড়েছিলেন ৩০ বছর বয়সেই। হারিয়ে গিয়েছিলেন শীর্ষ পর্যায়ের ক্রিকেট থেকেই। ২০২২ সালের ১০ ডিসেম্বর নায়ার টুইট করেছিলেন, ‘প্রিয় ক্রিকেট, আমাকে আর একটা সুযোগ দাও।’
গতকাল রাতে নায়ারের সেই টুইট দিয়ে একটি পোস্ট করেছে দিল্লি ক্যাপিটালস। ক্যাপশনে লেখা, ‘আমাদের হৃদয় ভরে গেছে।’ সঙ্গে চোখের কান্না লুকানোর ইমোজি, ভালোবাসারও। শনিবার রাতে আইপিএলের মুম্বাই–দিল্লি ম্যাচ সবচেয়ে বেশি তৃপ্ত হওয়ার কথা নায়ারেরই।
দিল্লি ক্যাপিটালসের ৩৩ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান আইপিএলে ম্যাচ খেলতে নেমেছেন প্রায় তিন বছর পর। ফাফ ডু প্লেসির ইমপ্যাক্ট বদলি হিসেবে নেমে করেছেন ৪০ বলে ৮৯ রান। ৫ ছক্কা আর ১২ চারে শুধু দিল্লির জন্য রানই তোলেননি, নিজের ভেতরে জমে থাকা খেদই যেন একের পর এক বের করে দিয়েছেন।
আইপিএলে নেমেছেন বছর তিনেক পর, তবে ফিফটিটি করেছেন প্রায় সাত বছর বিরতির পর। সুনির্দিষ্টভাবে বললে ২ হাজার ৫২০ দিন পর। আইপিএলে আর কোনো ব্যাটসম্যানের দুটি ফিফটির মধ্যে এত বড় ব্যবধান নেই।
নায়ার মাঝের দীর্ঘ সময়ে খেলার সুযোগই পেয়েছেন মাত্র তিন আসর। মাঠে নেমেছিলেন ৮ ম্যাচে। তাতে মাত্র ৩৭ রান তাঁর আইপিএল ক্যারিয়ারে বড় প্রশ্ন তুলে দেয়।
২০২২ সালের পর আর সুযোগই পাননি। ওই সময় বাদ পড়েছিলেন রাজ্য দল কর্নাটক থেকেও। অমন ঘোর অন্ধকার সময়েই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফুটে উঠেছিল নায়ারের সেই আর্তি—প্রিয় ক্রিকেট, আমাকে আর একটা সুযোগ দাও।
ক্রিকেট তাঁকে সেই সুযোগ দিয়েছে। অর নায়ার তা দুই হাত ভরে লুফে নিয়েছেন। সেটা কতটা, কিছু সংখ্যায় চোখ রাখলেই বোঝা যাবে। এক মৌসুম অপেক্ষা করে বিদর্ভে যাওয়া নায়ার সেই টুইটের পর থেকে গতকালের আগপর্যন্ত প্রথম শ্রেণি, লিস্ট ‘এ’ ও ঘরোয়া টি–টোয়েন্টি মিলিয়ে করেছেন ৩ হাজার ৩৫ রান, সেঞ্চুরি ১২টি। ভারতের আর কোনো ক্রিকেটার এই সময়ে এর চেয়ে বেশি রান বা সেঞ্চুরি করতে পারেননি।
ইংল্যান্ডের কাউন্টিতে নর্দাম্পটনশায়ারের হয়েও খেলেছেন দুই মৌসুম, রান করেছেন ৫৬ গড়ে। এ সময়ে দলগতভাবে জিতেছেন রঞ্জি ট্রফি, ফাইনালে উঠেছেন বিজয় হাজারে ট্রফির। ওয়ানডে সংস্করণের বিজয় হাজারেতে নায়ারই ছিলেন শীর্ষ ব্যাটসম্যান। ব্যাট করেছেন আট ইনিংসে, আউট হয়েছেন মাত্র দুবার। অপরাজিত ইনিংসগুলো ছিল এ রকম—১২২*, ৮৮*, ১৬৩*, ১১১*, ১২২*, ৮৮*। যে দুটিতে আউট হয়েছেন, তার একটিতে ১১২, আরেকটিতে ২৭।
প্রায় একা হাতে বিদর্ভকে ফাইনালে তোলার পর ট্রফি জিততে না পারলেও নায়ার আবার আইপিএলে জায়গা করে নিতে পেরেছেন। যদিও দিল্লি তাঁকে সস্তা দামেই কিনেছে (৫০ লাখ রুপি)।
নায়ারের দৃষ্টি ছিল অবশ্য মাঠে নামার সুযোগ পাওয়ার দিকেই। যদিও দিল্লির প্রথম চার ম্যাচে সেই সুযোগটা আসেনি। অবশেষে পঞ্চম ম্যাচে সুযোগ এসেছে ডু প্লেসিকে চোটের কারণে তুলে নেওয়ায়। আর আইপিএল প্রত্যাবর্তনের প্রথম সুযোগেই নায়ারের ব্যাটে ছুটল আগুনের ফুলকি, যে আগুনে পুড়লেন বুমরার মতো বোলারও।
ম্যাচটা অবশ্য নায়ারের দল শেষ পর্যন্ত জিততে পারেনি। মুম্বাইয়ের ২০৫ রান তাড়া করতে নেমে হেরেছে ১২ রানে। তবে নায়ার জিতেছেন ঠিকই। প্রিয় ক্রিকেট তাঁকে আরেকটা সুযোগ তাঁকে দিয়েছে। বয়স এখন ৩৩ বছর। কখনো আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে সুযোগ না পাওয়া নায়ার এখন সেদিকেও হয়তো একটা সুযোগ চাইতে পারেন।