রাগ-ক্ষোভ ভুলে পড়াশোনায় ফিরেছেন, ৫১ বছর বয়সে দিচ্ছেন এসএসসি পরীক্ষা
Published: 11th, April 2025 GMT
রাগে-অভিমানে প্রায় ৩৫ বছর আগে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন দেলোয়ার হোসেন। দীর্ঘ সময় পর তাঁর সেই ভুল ভেঙেছে। আবার পড়ালেখায় ফিরেছেন, অংশ নিচ্ছেন চলতি বছরের এসএসসি (দাখিল) পরীক্ষায়। ৫১ বছর বয়সী এই ব্যক্তি জানান, ছোটবেলা থেকেই উচ্চশিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। অতীত ভুলে এবার সেই স্বপ্ন পূরণের পথেই হাঁটছেন তিনি।
দোলোয়ার হোসেন নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের করমদোশী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য। গতকাল দেশে একযোগে শুরু হওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় তিনি উমরগাড়ি দারুল খায়ের সুন্নাহ দ্বিমুখী মাদ্রাসা কেন্দ্রে অংশ নেন।
এলাকার কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তি জানান, দেলোয়ার ছোটবেলা থেকেই বেশ মেধাবী ছিলেন। পঞ্চম শ্রেণিতে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় তিনি মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ হন। পরে ভর্তি হন জামনগর দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে। সেখান থেকে অষ্টম শ্রেণিতেও তিনি সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পান। ১৯৯০ সালে একই বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে পরীক্ষা চলার সময় অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনার জেরে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। এতে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। রাগে–ক্ষোভে তিনি পড়ালেখা ছেড়ে দেন।
এ প্রসঙ্গে দোলোয়ার বলেন, ‘উচ্চশিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন আমার ছোটবেলা থেকেই। পড়ালেখাতেও ভালো ছিলাম। নবম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাসে প্রথম বা দ্বিতীয় হতাম। এসএসসি পরীক্ষা দিতে গিয়ে পাশের এক পরীক্ষার্থীর ষড়যন্ত্রে আমাকে বহিষ্কার করা হয়। আমি এই ঘটনা মেনে নিতে পারিনি। রাগে-ক্ষোভে আমি পড়ালেখা ছেড়ে দিই। কিন্তু আমার মেয়েদের পড়ালেখা করাতে গিয়ে এবং ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে উচ্চশিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তাই আবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। প্রস্তুতি মোটামুটি ভালো; সবার দোয়া চাই।’
দেলোয়ার হোসেনের সংসারে স্ত্রী ও তিনি। মেয়েদের সবাইকে তিনি পড়াশোনায় ব্যস্ত রেখেছেন। ২০২১ সালে জামনগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। এর কিছুদিন পর শিক্ষিত হওয়ার সুপ্ত বাসনা আবার তাঁর মধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সবার অগোচরে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার উমরগাড়ি দারুল খায়ের সুন্নাহ দ্বিমুখী মাদ্রাসায় নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ক্লাস করতে না পারলেও শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন এবং বাড়িতে বসেই পড়ালেখা করেছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ক ষ ত হওয় র স পর ক ষ য়
এছাড়াও পড়ুন:
নিখোঁজ এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলের সন্ধানে কেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন বাবা
ছেলের বড় একটি ছবি বুকের সঙ্গে ধরে নাটোর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রের ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন এজাজুল হক। তাঁর চোখ ফটকের দিকে। অপেক্ষা ছেলের জন্য। পরীক্ষা শুরু হওয়ার পরও তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন সেখানে।
এজাজুল হক জানান, তাঁর ছেলে মুনতাহা এহসান (মুগ্ধ) নাটোর সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র। আজ বৃহস্পতিবার বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত সোমবার বিকেলে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর থেকে সে নিখোঁজ। নানা চেষ্টার পরও তার খবর পায়নি পরিবার।
এজাজুল হক বলেন, তাঁর ধারণা ছিল, ছেলে অন্তত পরীক্ষা মিস করবে না। যেখানেই থাকুক আজ পরীক্ষায় অংশ নেবে সে। সেই আশায় তিনি কেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু ছেলে আসেনি। তিনি বলেন, ‘ছেলের পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আশা শেষ হয়েছে। কিন্তু ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আশা তো শেষ হয়নি। নানা রকমের দুশ্চিন্তায় আমি, ওর মা ও বড় বোন প্রতিটি মুহূর্ত পার করছি।’
মা মাহফুজা খাতুন বলেন, ‘মুগ্ধ আমার একমাত্র ছেলে। সে বিদ্যালয় ও মসজিদ ছাড়া বাড়ির বাইরে আর কোথাও যেত না। ভালো পরীক্ষা দেওয়ার পরও সে বিদ্যালয়ের টেস্ট পরীক্ষায় খারাপ করে। সে এটা মানতে পারছিল না। খুব মন খারাপ করেছিল। আমরা তাকে বুঝিয়েছি, বোর্ড পরীক্ষায় ভালো করতে হবে। বকঝকা করিনি। সে পরীক্ষার প্রস্তুতিও নিচ্ছিল। হঠাৎ এভাবে নিখোঁজ হয়ে যাবে, ভাবতেও পারছি না।’
নাটোর সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক আকরাম হোসেন বলেন, পরীক্ষার আগমুহূর্তে মুগ্ধ এভাবে নিখোঁজ হওয়ায় শিক্ষকদেরও মন খারাপ। তাঁরাও ভেবেছিলেন, হয়তো সে এসে পরীক্ষা দেবে। কিন্তু পরীক্ষার হলে তার আসন ফাঁকা ছিল।
নাটোর সদর থানার উপপরিদর্শক জামাল উদ্দিন মুগ্ধর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি তদন্ত করছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গুরুত্বসহকারে বিষয়টি দেখছি। ওর ব্যাপারে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করছি। বিভিন্ন থানায় বেতার বার্তা দেওয়া হয়েছে। তার সন্ধানে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’