Prothomalo:
2025-04-14@15:57:49 GMT

নীলাভ সবুজে ধানের মাতৃভূমি

Published: 11th, April 2025 GMT

আগের রাতে কিছুটা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে গেছে। অনেক দিন পর এমন হাওয়া এসেছিল। কিছুটা সময় ধরে মেঘ ডেকেছে। সঙ্গে ছিল দু–চার ফোঁটা বৃষ্টিও। সেই বৃষ্টির দাগ তখনো থেকে গেছে চৈত্রদিনের ধুলায়, ঘাসে। গাছের শুকনা পাতারা ঝরে পড়েছে। নতুন পাতারা শরীরের ধুলাবালি মুছে যেন তখন স্নান সেরে নিয়েছে। পাতায় ফিরছে চকচকে শান্ত-সহজ ভাব। ওই ঝোড়ো হাওয়া, ওই বৃষ্টির আঁচ তখনো বাতাসকে ছেড়ে যায়নি। বাতাসে কিছুটা গরমের উত্তাপ আছে, তবে অতটা গায়ে লাগছে না। তখন (সোমবার, ৭ মার্চ) দুপুর গড়িয়ে বিকেলের দিকে সূর্য অনেকটাই কাত হয়ে গেছে। বিকেলটা এ রকমই তো হওয়ার কথা।

হাওরের বুকে তখন তিরতির করা হাওয়ারা পালক মেলেছে। বিস্তীর্ণ ফসলের খেতে ধানের ছড়া, ধানের পাতাকে সঙ্গী করে হাওয়ারা দুলছে। যেন শত শত কিশোরী খোঁপায় বুনো ফুল জড়িয়ে অংশ নিয়েছে নাচে। ওখানে (হাওরে) বাতাস আরও নরম, আরও শীতল। পুরো প্রান্তরে তখন আর কিছু নেই, শুধু চোখজুড়ানো বেতের ফলের মতো নীলাভ ধানের সবুজ। আর আছে এখানে-ওখানে চিহ্নের মতো কিছু মানুষের হাঁটাচলা, কাজ। কিছু খোলা স্থানে চরানো হয়েছে গরুর পাল। রাখাল রাজা দূরে কোথাও বসে পাহারা দিচ্ছেন। হয়তো এমন সময়কে একদিন কোনো এক মুহূর্তে জীবনানন্দ দাশ দেখেছিলেন, ‘এইখানে সময়কে যতদূর দেখা যায় চোখে/ নির্জন খেতের দিকে চেয়ে দেখি দাঁড়ায়েছে অভিভূত চাষা;.

..।’

হাওরের যতই গভীরে যাই, ওখানে এই ধানের সবুজে তখন ওরকম দু–চারজন অভিভূত কৃষকের সঙ্গেই দেখা হতে থাকে। তাঁরা খেতে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা ফসলের পাশাপাশি আলপথ ধরে হেঁটে ঘুরে ধানের লাবণ্য দেখেন। কোনো খেতে ধানে পাক ধরছে। শস্যের ভারে গাছের শরীর নুয়ে আসছে। আর অল্প কিছুদিন পর এই ধান সোনার রঙের মতো রূপ নিয়ে হেসে উঠবে সারা হাওরেই। চাষিরা কাস্তে নিয়ে মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। এ যেন ‘রয়েছি সবুজ মাঠে—ঘাসে/ আকাশ ছড়ায়ে আছে নীল হ’য়ে আকাশে-আকাশে;...।’

কোথাও সোনালি রং ধরছে ধানে। কিছু জমির ধান পেকে গেছে। পাকা ধান কেটে নিচ্ছেন কৃষক। তবে পাকা ধানের খেত খুব সামান্যই। কোথাও ধানের শিষ আস্তে আস্তে সোনালি হয়ে উঠছে।

অচেনা কারও পক্ষে এখন মনে করা কঠিন, আর কিছুদিন পর যখন আকাশ থেকে জল নামবে, ঢল নেমে আসবে হাওরের বুকে। তখন এই হাওর আর থাকবে না। সব সবুজ মুছে ওখানে ভেসে উঠবে জলের মরমি ঢেউ। মাঠ, ঘাট পার হয়ে গ্রামে ছুটবে জল, কারও ভিটেবাড়িকেও ছুঁয়ে দেখবে। আর জলের অমন প্রশস্ত বুকে ঘুরে বেড়াবে শাপলা-শালুক ফুল, শেওলা। মাঝে মাঝে দেখা মিলবে দু–একটি পালতোলা নৌকার। যে নৌকার জেলেরা মাছের খোঁজে ভেসে বেড়াবে জলের বুকে।

এখন সেই জলের দেখা পাওয়ার সুযোগ নেই, শুকনা হাওরের বুক এখন ধানের মাতৃভূমি হয়ে আছে। কাউয়াদীঘি হাওরের যেদিকে যত দূর তাকানো যায়, সেদিকেই শুধু ধান আর ধান। সবুজ-ধূসর চাদরের মতো দিগন্তজুড়ে বিছানো রয়েছে ধানের খেত।... ‘সোনার সিঁড়ির মতো ধানে আর ধানে/ তোমারে খুঁজেছি আমি নির্জন পেঁচার মতো প্রাণে।’ ওখানে তখন জল নয়, ধানের খোঁজেই আছে মানুষ, অভিভূত চাষারাই।

একটু ছায়ায় বিশ্রাম নিতে অস্থায়ী তাঁবু। ৭ এপ্রিল মৌলভীবাজারের কাউয়াদীঘি হাওরে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ ওর র

এছাড়াও পড়ুন:

নববর্ষকে রাঙাতে হাডুডু খেললেন মানিকগঞ্জের প্রবীণরা

শামসুল আলমের বয়স ৬৫। এই বয়সে তিনি খেলতে নামেন হাডুডু। তার উদ্দীপনা দেখে এলাকার কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে সবাই তাকে দিয়েছেন উৎসাহ। শুধু তিনি একা নন, তার মতো ষাটোর্ধ্ব দুই ডজন প্রবীণ নববর্ষের উৎসবকে রাঙাতে খেলেছেন বাংলাদেশের জাতীয় খেলা।  

সোমবার (১৪ এপ্রিল) বিকেলে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার জাগীর ইউনিয়নের বটতলা এলাকায় হাডুডু খেলার উদ্বোধন করেন কৃষক দলের সাধারন সম্পাদক আব্দুস সালাম বাদল। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা কৃষকদলের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া সাঈদ। খেলা শেষে অতিথিরা খেলোয়াড়দের মধ্যে পুরষ্কার বিতরণ করেন।

প্রবীণ খেলোয়ার শাসসুল আলম বলেন, “পহেলা বৈশাখ আমাগো উৎসব। এদিন হাডুডু খেলবার পাইরা খুব ভালো লাগতাছে। জোয়ান বয়সে কত দুরান্তপানা করছি। আজক্যা সব বুইড়াড়া একসঙ্গে হাডুডু খেললাম, খুব ভালো লাগতেছে।” 

আরো পড়ুন:

ড্রোন শোতে ঝলমলে ঢাকার আকাশ

ডিআরইউতে বর্ণিল আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপিত

পরিবার নিয়ে মানিকগঞ্জ শহরের দাশড়া এলাকা থেকে হাডুডু খেলা দেখতে আসা তৌফিক হোসেন বলেন, “পহেলা বৈশাখ আমাদের সংস্কৃতি। এই সংস্কৃতিকে ধারণ করে আছে গ্রাম বাংলার অসংখ্য খেলাধুলা। আমার চার বছরের ছেলে খেলা দেখে আনন্দ পেয়েছে। এ ধরনের গ্রামীন খেলাধুলার চর্চা আরো বেশি আয়োজন করা প্রয়োজন।” 

খেলা দেখতে আসা ইকবাল মাহমুদ বলেন, “যারা খেলতে নেমেছেন তাদের সবার বয়স ষাটের বেশি। এই বয়সেও তাদের খেলার প্রতি ঝোকই প্রমাণ করে হাডুডু আমাদের খেলা, পহেলা বৈশাখ আমাদের সংস্কৃতি। এই খেলা রক্ষায় আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।” 

প্রধান অতিথির বক্তব্য গোলাম কিবরিয়া সাঈদ বলেন, “সংস্কৃতি ও খেলাধুলার চর্চা সঠিকভাবে হলে মাদকসহ অসামাজিক কার্যকলাপ কমে যায়। নববর্ষের সঙ্গে গ্রামীন খেলাধুলার আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। হাডুডু খেলা পহেলা বৈশাখের আনন্দকে অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। আগামীতে এ ধরনের আয়োজন আরো বাড়াতে হবে।” 

ঢাকা/চন্দন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ