রাজনৈতিক দল মধ্যস্বত্বভোগী হবে কেন
Published: 11th, April 2025 GMT
দেশে তখন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকার। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৪ দলের জোট সরকার পতনের আন্দোলন করছে। সঙ্গে জুটেছে জাতীয় পার্টিসহ আরও কয়েকটি দল। তৈরি হয়েছে ‘মহাজোট’। তাদের লাগাতার বর্জনে জাতীয় সংসদ অকার্যকর হয়ে পড়েছে। এই এক নাটক।
এক দল সরকারে গেলে অন্য দল তার পতন চায়, সংসদে যায় না। একটানা ৯০ কার্যদিবস সংসদ অধিবেশনে অনুপস্থিত থাকলে সদস্যপদ আপনা–আপনি বাতিল হয়ে যায়। তাঁদের তো অনেক বুদ্ধি! ৯০ দিন পার হওয়ার এক-দুই দিন আগে সংসদে এসে চাঁদমুখখানি দেখিয়ে আবার ওয়াকআউট। এতে শ্যাম-কুল দুই–ই থাকে। সদস্যপদ টিকে যায়, পকেটে-আঁচলে বেতন-ভাতাও আসে। দিনের পর দিন চলেছে এই মিউজিক্যাল চেয়ার।
ওই সময় আমরা কিছু নাগরিক উদ্যোগ লক্ষ করি। ফ্ল্যাশব্যাকে দেখা যাক, কে কী বলেছিলেন। আমরা বিস্মৃতপ্রবণ জাতি। তাই মাঝেমধ্যে মনে করিয়ে দিতে হয়।
২০০৬ সালের ২০ মার্চ। ঢাকায় সিপিডির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হলো ‘নাগরিক সংলাপ’। সভাপতি অধ্যাপক রেহমান সোবহান। বক্তাদের একজন গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি ‘যোগ্য প্রার্থী আন্দোলন’ শিরোনামে লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘সংসদে যদি দুর্নীতিবাজ এবং অগ্রহণযোগ্য প্রার্থীরা ঢুকে পড়ে, তবে আগামী মেয়াদে দুর্নীতির পরিমাণ এমন প্রচণ্ড মাত্রায় বেড়ে যাবে যে দেশে অস্থিরতা ও সহিংসতা তীব্র আকার ধারণ করবে। দুর্নীতিবাজ ও অযোগ্য প্রার্থীদের সংসদে প্রবেশ ঠেকাতে হলে এখনই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। সময় আমাদের হাতে খুব অল্প।
যোগ্য প্রার্থী আমরা কীভাবে পাব? রাজনীতিবিদেরা আমাদের কথামতো দলীয় মনোনয়ন দেবেন না। অতীতে যেভাবে টাকার জোরে, পেশির জোরে নির্বাচন হয়েছে, এবারও সে রকম হবে। তার থেকে বাঁচার উপায় কী?
নির্বাচন অর্থপূর্ণ হবে না যদি-না আমরা যোগ্য প্রার্থী দাঁড় করাতে পারি। দুর্নীতিবাজেরা প্রার্থী হবেন আর আমরা দলীয় আনুগত্যের কারণে তাঁদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করব, সেটা কোনো রকমেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’
২০০৭ সালের ৪ জানুয়ারি একটি গোলটেবিল সংলাপের আয়োজন করে প্রথম আলো। অংশগ্রহণকারীদের একজন ছিলেন অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। আলোচনা করতে গিয়ে একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘দুই প্রতিপক্ষ জোটকে ঘিরে ইদানীং যে ধরনের মেরুকরণ হচ্ছে, তাতে এটাকে কি আসলেই আদর্শের চূড়ান্ত সমাধানের লড়াই বলা যায়? নাকি আমাদের রাজনীতির যে দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে, বাণিজ্যিকায়ন হয়েছে এবং এর ফলে গোষ্ঠীস্বার্থের যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে, তারই বহিঃপ্রকাশ হলো বর্তমান রাজনৈতিক বিরোধ-সংঘাত। অবৈধ উপার্জনের ভাগ-বাঁটোয়ারাই যদি ক্ষমতার রাজনীতির মূল চালিকা শক্তি হয়, রাজনীতি যদি বিপুলসংখ্যক দলীয় কর্মী বাহিনীর জীবিকার উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়, তাহলে ক্ষমতায় যাওয়া বা ক্ষমতা হাতছাড়া না করার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলো মরণপণ যুদ্ধে নামবে, এটাই তো স্বাভাবিক।’
২০০৭ সালের ২০ জানুয়ারি প্রথম আলো আরেকটি গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে। এটি এক-এগারোর অভ্যুত্থানের ৯ দিন পরের কথা। আলোচকদের একজন ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.
ওই সংলাপ বা আলোচনাগুলোতে আরও অনেকেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছিলেন। আমি বেছে বেছে এই তিনজনকে উদ্ধৃত করলাম। কারণ, তাঁরা এখন অন্তর্বর্তী সরকারে আছেন এবং তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন। আশা করি, তাঁরা তখন কী বলেছিলেন, সেটি ভুলে যাননি।
এবার দেখা যাক বড় দলের রাজনীতিবিদেরা কে কী ভেবেছিলেন। এক-এগারোর ঝাপটায় দলগুলো এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। ২০০৭ সালের ৩০ জুন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক তাঁর ধানমন্ডির বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে সংস্কার প্রস্তাব পাঠ করেন। প্রস্তাবে বলা হয়, একই ব্যক্তি পরপর দুবারের বেশি দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদক বা উভয় পদে থাকতে পারবেন না; গোপন ব্যালটের মাধ্যমে দলের সব স্তরে কমিটি গঠন; তৃণমূল থেকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় প্রার্থী বাছাইয়ের বিধান বাধ্যতামূলক করা; বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার পরিপন্থী খেলাফত মজলিসের সঙ্গে পাঁচ দফা চুক্তি বাতিল; দলের তহবিল কোষাধ্যক্ষের মাধ্যমে ব্যাংকে জমা রাখা ইত্যাদি।
পরে আলাদা সংবাদ সম্মেলনে রাজ্জাকের প্রস্তাবের অনুরূপ প্রস্তাব দেন আওয়ামী লীগের অপর তিন জ্যেষ্ঠ নেতা তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও আমির হোসেন আমু। সুরঞ্জিত বলেছিলেন, ‘কর্তৃত্ববাদী, আধিপত্যবাদী একক নেতৃত্ব গণতন্ত্রে অচল; প্রেসিডেনশিয়াল আদলের প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় ভেঙে দিতে হবে; সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত মন্ত্রিসভায় নিতে হবে।’
২০০৭ সালের ১২ জুলাই গুলশানের ন্যাম ভবনের গাড়িবারান্দায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া ১৪ দফা ‘পূর্ণাঙ্গ সংস্কার কর্মসূচি’ উত্থাপন করেছিলেন। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ, এম কে আনোয়ার, আশরাফ হোসেন, জেড এ খান, বিচারপতি মোজাম্মেল হক, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, মোফাজ্জল করিম, রেজাউর রহমান ডিনা, রেজাউল করিম, নাজিমউদ্দিন আলম, মনির হোসেন প্রমুখ। প্রস্তাবের মধ্যে ছিল রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য, হরতাল-অবরোধ বন্ধ, বিরোধী দল সংসদ বর্জন করতে পারবে না, দুজন ডেপুটি স্পিকারের একজন হবেন বিরোধী দল থেকে, ৩০ দিনের বেশি সংসদে না গেলে সদস্যপদ বাতিল, সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংশোধন ইত্যাদি।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বড় দল। বিশাল তাদের জনভিত্তি। কিন্তু দল চলে পারিবারিক মালিকানায়, এক ব্যক্তির কথায়। দলের অনেক নেতা এই জগদ্দল পাথর ভাঙতে চেয়েছিলেন। এক-এগারোর পরিবেশে তাঁরা মুখ খুলতে পেরেছিলেন, তবে সেটা ছিল সাময়িক।
২০০৮ সালের নির্বাচনের পর পুরোনো ব্যবস্থাই ফিরে আসে। দলের মালিকেরা সংস্কারের ধারেকাছেও যাননি। উল্টো ‘সংস্কারবাদীদের’ দল থেকে বহিষ্কার ও পদের অবনমন ঘটান। সংস্কারবাদীদের নামে রটানো হয়, তাঁরা মিলিটারির দালাল, ষড়যন্ত্রকারী। সেই থেকে দল দুটো এখনো এক-এগারোর ভূত দেখে। সুযোগ পেলেই এক-এগারো নিয়ে বিষোদ্গার করে। তাঁদের একটা কমন ডায়ালগ আছে—অনির্বাচিতরা কেন দেশ চালাবে?
২০০৭ সালে আওয়ামী লীগ আর বিএনপির ভেতরেই দল, রাজনীতি ও সংসদীয় সরকারব্যবস্থার সংস্কারের যে দাবি উঠেছিল, ঘুরেফিরে সেগুলোই এখন উচ্চারিত হচ্ছে। কিন্তু মালিকানাস্বত্ব ঝুঁকিতে পড়বে বা বরবাদ হয়ে যাবে, এই আশঙ্কায় শীর্ষ নেতারা সংস্কারের নাম শুনলেই আঁতকে ওঠেন।
২০০৭ সালে ছিল ‘সেনাসমর্থিত’ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সেটি এসেছিল একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। চালকের আসনে ছিল সামরিক বাহিনী। এখন দেশে একটি অন্তর্বর্তী সরকার। এটি এসেছে একটি গণবিদ্রোহের মধ্য দিয়ে। এটিও ‘সেনাসমর্থিত’। তবে চালকের আসনে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। দুবারই আমরা দেখেছি, রাজনীতিবিদেরা নিজেরাই অভ্যুত্থানের শর্ত তৈরি করে দিয়েছিলেন তাঁদের দুর্নীতি, অযোগ্যতা, ঈর্ষাপরায়ণতা আর কুৎসিত গোষ্ঠী শাসন দিয়ে।
দেশে এ পর্যন্ত ১২টি সংসদ নির্বাচন হয়েছে। আমরা নানা কিসিমের ‘নির্বাচিত’ সরকার দেখেছি। রাজনীতিবিদেরাই নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে দেশ চালিয়েছেন। আমরা এ-ও দেখেছি, রাজনৈতিক দলের লোকেরা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বদলান না। বাইরে থেকে ঝাঁকুনি দিলে তাঁরা একটু নড়েচড়ে বসেন। ঝাঁকুনি সরে গেলে আবারও আগের মতোই। বাংলাদেশের ৫৪ বছরের রাজনীতি হলো ওয়াদাভঙ্গের ইতিহাস। পাবলিক পারসেপশনে যিনি চোর, তাঁকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে উঁচু স্বরে কথা বলতে দেখি। জনগণের অধিকারের চিন্তায় রাতে যাঁর ঘুম হয় না, তাঁকেই দেখি কালো আইন বানিয়ে মানুষের টুঁটি চিপে ধরতে। তবে এটাও সত্য, নিজেরা না বদলালে বাইরে থেকে কেউ বদলে দিতে পারবে না। নাগরিকেরা শুধু চাপ দিয়ে যেতে পারেন। পরিস্থিতি এমনই।
একটা কথা প্রায়ই শুনি, রাজনৈতিক দলগুলো নাকি সমাজের প্রধান স্টেকহোল্ডার। এটা তাঁরা বলেন নিজেদের গোষ্ঠীশাসনের মনোপলি বজায় রাখতে। সমাজের মূল স্টেকহোল্ডার হচ্ছেন নাগরিকেরা। রাজনৈতিক দল মেধা আর ভিশন দিয়ে নাগরিকদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করবে, এটাই নাগরিকদের চাওয়া। তারা মধ্যস্বত্বভোগী হবে কেন?
মহিউদ্দিন আহমদ লেখক ও গবেষক
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ব দ র ২০০৭ স ল র র র জন ত প রস ত ব বল ছ ল ন ব যবস থ র একজন আম দ র সদস য ক ষমত আওয় ম সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
আইভিএফ পদ্ধতিতে সন্তান জন্মদানের পর মা-বাবা জানলেন ভ্রূণটি অন্যের ছিল
অস্ট্রেলিয়ায় আইভিএফ (ইন–ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন) পদ্ধতিতে সন্তান জন্মদানের আশায় এ–সংক্রান্ত একটি সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের শরণাপন্ন হয়েছিলেন এক দম্পতি। এ পদ্ধতিতে তাঁদের সন্তানও জন্মগ্রহণ করে। তবে পরে তাঁরা জানতে পারেন বড় ভুল হয়ে গেছে। যে ভ্রূণটি থেকে সন্তানের জন্ম হয়েছে সেটি তাঁদের নয়, অন্য কোনো দম্পতির।
অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম বৃহত্তম আইভিএফ সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান মোনাশ আইভিএফের একটি ক্লিনিকে ভুল ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের এমন ঘটনা ঘটেছে। প্রাথমিক তদন্ত শেষে প্রতিষ্ঠানটি একে মানুষের ভুল বলে উল্লেখ করেছেন।
আইভিএফ পদ্ধতিতে শরীরের বাইরে কৃত্রিম পরিবেশে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর নিষিক্তকরণের কাজ করা হয়। পরে এ ভ্রূণকে কোনো নারীর গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হয়। এ পদ্ধতিতে জন্মগ্রহণ করা সন্তানকে চলতি কথায় বলা হয় টেস্টটিউব বেবি।
মোনাশ আইভিএফ কোম্পানি বলেছে, তারা ফেব্রুয়ারিতে জানতে পারে যে তাদের ব্রিসবেন ক্লিনিকে একজন নারীর গর্ভে ভুল ভ্রূণ স্থানান্তর করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ওই নারী সন্তানও জন্ম দিয়েছেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, শিশুটির মা-বাবার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। তবে তাঁরা আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।অস্ট্রেলিয়ায় যত আইভিএফ চিকিৎসা হয়, তার প্রায় এক–চতুর্থাংশই মোনাশ আইভিএফ কোম্পানির তত্ত্বাবধানে হয়ে থাকে। প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ বলছে, জন্মদানকারী মা-বাবা তাঁদের অবশিষ্ট হিমায়িত ভ্রূণ অন্য সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে পাঠানোর অনুরোধ করার পর তারা জানতে পারে, এ দম্পতির অতিরিক্ত একটি ভ্রূণ সংরক্ষিত আছে। এতে প্রতিষ্ঠানটি নিশ্চিত হয়, ভুল ভ্রূণ প্রতিস্থাপনের ঘটনাটি ঘটেছে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাইকেল নাপ এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা যারা মোনাশ আইভিএফের সঙ্গে যুক্ত, তারা সবাই এ ঘটনায় মর্মাহত। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সবার কাছে আমরা ক্ষমা চাইছি।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি বাড়তি কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে। তাদের বিশ্বাস, এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, শিশুটির মা-বাবার পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। তবে তাঁরা আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এদিকে ভুল ভ্রূণ স্থানান্তরের ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর মোনাশ আইভিএফ কোম্পানির শেয়ারে ধস নেমেছে। মোনাশ আইভিএফের শেয়ারের দর ২৪ শতাংশ কমেছে। ২০১৯ সালের পর এত বড় দরপতনের ঘটনা তাদের ঘটেনি।
অস্ট্রেলিয়ার সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জকে পাঠানো এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি এ ঘটনাকে দুঃখজনক বলে আখ্যায়িত করেছে। তবে তারা মনে করে, এ ঘটনায় তাদের আর্থিক সক্ষমতার ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না।
মোনাশ আইভিএফ বলেছে, একটি স্বাধীন তদন্ত পরিচালনার জন্য তারা একজন আইনজীবীকে নিযুক্ত করেছে। তা ছাড়া রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ও রিপ্রোডাক্টিভ টেকনোলজি অ্যাক্রেডিটেশন কমিটিকে ঘটনাটি অবহিত করা হয়েছে। রিপ্রোডাক্টিভ টেকনোলজি অ্যাক্রেডিটেশন কমিটি হলো প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক অলাভজনক সংস্থা ফার্টিলিটি সোসাইটি অব অস্ট্রেলিয়ার অংশ।
ফার্টিলিটি সোসাইটি কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, এ ধরনের ঘটনা বিরল। এতে আরও বলা হয়, প্রজনন পরিষেবার প্রতি রোগীদের যথেষ্ট আস্থা আছে। নিরাপদে ভ্রূণ সামলানো ও ভ্রূণের পরিচয় শনাক্ত করাটা একটি মৌলিক দায়িত্ব।
মোনাশ আইভিএফ সরকারি কর্তৃপক্ষ কুইন্সল্যান্ড হেলথকে ঘটনাটি অবহিত করেছে। কুইন্সল্যান্ড হেলথ কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা সবে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাজ শুরু করেছে। কুইন্সল্যান্ড হেলথের এক মুখপাত্র বলেন, ‘কুইন্সল্যান্ডে মোনাশ আইভিএফের ক্লিনিকগুলোতে সুরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করতে এবং যেকোনো ঝুঁকি চিহ্নিত ও প্রশমিত করতে আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করব।’