জুনেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিতে পারে ফ্রান্স: ম্যাখোঁ
Published: 11th, April 2025 GMT
ফ্রান্স আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা করছে এবং আগামী জুনে নিউইয়র্কে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিরসনে জাতিসংঘ আয়োজিত এক সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ।
বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সপ্তাহে মিসর সফর করা ম্যাখোঁ বুধবার ফ্রান্স ফাইভ টেলিভিশনে প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমাদের স্বীকৃতির দিকে এগোতে হবে এবং আমরা তা আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই করব।’
তিনি আরও জানান, ‘জুনে সৌদি আরবের সঙ্গে যৌথভাবে আমরা এই সম্মেলনের আয়োজন করতে চাই, যেখানে একাধিক পক্ষের পারস্পরিক স্বীকৃতি চূড়ান্ত হতে পারে।’
ম্যাখোঁ বলেন, ‘আমি এই স্বীকৃতি দেব। কারণ, আমি মনে করি, কোনো এক সময় এটা করা উচিত হবে, এবং আমি এমন এক সম্মিলিত উদ্যোগেও অংশ নিতে চাই, এর মাধ্যমে যারা ফিলিস্তিনকে সমর্থন করে, তাদের ইসরাইলকেও স্বীকৃতি দেওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।’
এই স্বীকৃতি ফ্রান্সকে ‘তাদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিতে সাহায্য করবে, যারা ইসরাইলের অস্তিত্বের অধিকার অস্বীকার করে—যেমন ইরান এবং একইসঙ্গে অঞ্চলজুড়ে সম্মিলিত নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে সহায়তা করবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের সমাধানে ফ্রান্স দীর্ঘদিন ধরেই দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আসছে, এমনকি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরাইল আক্রমণের পরও।
তবে প্যারিসের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া দেশটির নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন হবে এবং এটি ইসরাইলকে ক্ষুব্ধ করতে পারে। যারা বরাবরই বলে এসেছে—বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর এমন পদক্ষেপ হবে খুবই আগাম।
‘এক পয়সাও বিনিয়োগ করবে না কেউ’
ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া ফ্রান্সের পদক্ষেপ ‘ফিলিস্তিনি জনগণের অধিকার এবং দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে সঠিক দিকেই একটি পদক্ষেপ’ বলে মন্তব্য করেছেন ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্রবিষয়ক মন্ত্রী ভারসেন আঘাবেকিয়ান শাহিন।
প্রায় ১৫০টি দেশ ইতোমধ্যেই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ২০২৪ সালের মে মাসে আয়ারল্যান্ড, নরওয়ে ও স্পেন স্বীকৃতি দেয়, এরপর জুনে স্লোভেনিয়া। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামলার পর গাজায় ইসরাইলি বিমান হামলার নিন্দা থেকেই অনেকটা এই সিদ্ধান্তগুলো এসেছে।
তবে ফ্রান্স হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইউরোপীয় শক্তি, যারা ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেবে—এমন একটি সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরেই করে যার বিরোধিতা আসছে।
মিসর সফরে ম্যাখোঁ মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি ও জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ দ্বিতীয়ের সঙ্গে শীর্ষ বৈঠক করেছেন এবং গাজা কিংবা ইসরাইল-অধিকৃত পশ্চিম তীরে জনবসতিস্থাপন বা সংযুক্তিকরণের তীব্র বিরোধিতা করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজাকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভিয়েরা’তে পরিণত করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার ইঙ্গিত দেন, যা তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয়।
এ প্রসঙ্গে ম্যাখোঁ বলেন, ‘গাজা কোনো রিয়েল এস্টেট প্রকল্প নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘অতিরিক্ত সরল চিন্তাভাবনা কোনো কাজে আসে না।’ ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে ম্যাখোঁ বলেন, ‘হতে পারে একদিন এটা অসাধারণভাবে গড়ে উঠবে, তবে এখন আমাদের দায়িত্ব হলো জীবন রক্ষা করা, শান্তি ফিরিয়ে আনা ও একটি রাজনৈতিক কাঠামো নিয়ে আলোচনা করা।’
‘যদি এই মৌলিক বিষয়গুলো না থাকে, তাহলে কেউই বিনিয়োগ করবে না। আজ গাজায় এক পয়সাও কেউ বিনিয়োগ করবে না,’ বলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট।
এদিকে জেরুজালেম থেকে এএফপি জানায়, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে জুনের মধ্যেই স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণার তীব্র সমালোচনা করেছেন ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদেওন সাআর। তিনি একে ‘সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত করার’ পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন।
বুধবার রাতে এক্স (সাবেক টুইটার)-এ দেওয়া এক পোস্টে গিদেওন সাআর বলেন, ‘আমরা সবাই যে বাস্তবতা জানি, সেই প্রেক্ষাপটে কোনো দেশ যদি কল্পিত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে একতরফাভাবে স্বীকৃতি দেয়, তা হবে সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কার দেওয়া এবং হামাসকে শক্তিশালী করার নামান্তর।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের পদক্ষেপ আমাদের অঞ্চলে শান্তি, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা এগিয়ে আনবে না—বরং আরও দূরে ঠেলে দেবে।’
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আসছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দুই কর্মকর্তা
সংস্কার, মানবাধিকার, গণতন্ত্রসহ নানা বিষয়ে আলোচনা করতে আগামীকাল মঙ্গলবার ঢাকায় আসছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নিকোল অ্যান চুলিক। এ ছাড়া মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে বুধবার আসছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের পূর্ব এশীয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল বিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অ্যান্ড্রু আর হেরাপ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর এটাই তাঁর প্রশাসনের কর্মকর্তাদের প্রথম বাংলাদেশ সফর। সফরে অ্যান্ড্রু আর হেরাপের সঙ্গে যোগ দেওয়ার কথা মিয়ানমারে ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত সুসান স্টিভেনসনের।
মার্কিন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক চুলিক তাঁর চার দিনের সফরে বাংলাদেশে সংস্কার কার্যক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা এবং গণতান্ত্রিক পথে ফেরার বিষয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তিনি বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও বৈঠক করবেন। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ করার কথা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম না প্রকাশের শর্তে সমকালকে বলেন, নিকোল অ্যান চুলিক বর্তমানে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি হলেও, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি না থাকায় এ দপ্তরের দায়িত্ব তিনি পালন করছেন। সফরকালে তিনি সংস্কারে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে সহযোগিতা করতে পারে, সে চাহিদাগুলো জানতে চাইবেন। পাশাপাশি গণমাধ্যমগুলোতে জঙ্গিবাদের মাথাচাড়া দেওয়ার খবর আসায় বৈঠকে সন্ত্রাসবাদ এবং মানবাধিকার বিষয়ও আসতে পারে। তিনি বলেন, ১/১১-এর সময় সংস্কারে জোর না দেওয়াটা এক প্রকার ভুল মনে করে মার্কিনিরা। সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের পথে নিয়ে যাওয়ায় সহযোগী হিসেবে থাকতে চায় দেশটি।
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের পূর্ব এশিয়া বিষয়ে অভিজ্ঞ কূটনীতিক অ্যান্ড্রু আর হেরারের বৈঠকে মিয়ানমার পরিস্থিতি প্রধান্য পাবে। সফরকালে তিনি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। এ ছাড়া প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেন্টেটিভসহ বিভিন্ন পর্যায়ে তাঁর বৈঠক করার কথা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা বলেন, মিয়ানমারের পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। এটিকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের ভারত প্রশান্ত মহাসাগরীয় কৌশল (আইপিএস) বাস্তবায়নে বাধা হিসেবে দেখছে। কারণ মিয়ানমারের কিছু এলাকা বাদে দেশটিতে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। বর্তমানে মিয়ানমার মাদক চোরাচালান, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবসা, বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের অপহরণ করে আটকে রাখা, নারী ও শিশুসহ মানব পাচারের অন্যমত কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এর সঙ্গে রোহিঙ্গা পরিস্থিতিও রয়েছে। এসব কর্মকাণ্ডে দেশটির সেনাবাহিনীসহ বিদ্রোহী সশস্ত্র সংগঠনগুলো জড়িত। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের অপরাধীরা অপরাধমূলক কার্যক্রম মিয়ানমারের মাটিতে বসে চালাচ্ছে। তাই পুরো পরিস্থিতি আলোচনায় আসবে।