ডিপিএলে বিতর্কিত আউট, সন্দেহের তীর টিম ম্যানেজমেন্টে
Published: 11th, April 2025 GMT
ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই মিনহাজুল আবেদিন সাব্বির ও মো. রহিম আহমেদের আউটের ভিডিও ভাইরাল। ফেসবুকে শেয়ার হতে হতে তা মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে দেশ-বিদেশে। ‘স্বেচ্ছা’ এই দুই আউটে শাইনপুকুর ৫ রানে ম্যাচ হারে গুলশান ক্রিকেট ক্লাবের কাছে। দুটি ক্লাবই বেক্সিমকো গ্রুপের। উভয় ক্লাব লিগে খেলার আর্থিক সংস্থান করেছে কাউন্সিলরশিপ বিক্রি করে।
গুলশান ও শাইনপুকুরের কোচিং স্টাফ ভিন্ন হলেও পেছন থেকে দল দুটির নিয়ন্ত্রক খালেদ মাহমুদ সুজন। এ কারণেই গুলশানকে সুপার লিগে কোয়ালিফাই করাতে শাইনপুকুরের বিরুদ্ধে ম্যাচ ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ক্রিকেট অঙ্গনে কানাঘুষা সুজনের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করার জন্যই মিনহাজুল ও রহিম স্বেচ্ছায় স্টাম্পিং আউট হয়েছেন।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে প্রথমবার খেলতে নামা দুই ক্রিকেটারের সন্দেহজনক আউটের ভিডিও ছড়িয়ে পড়া, ফিক্সিংয়ের অভিযোগ ওঠা এবং জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটারদের ফেসবুকে নিন্দনীয়ভাবে সমালোচনামূলক স্ট্যাটাস দেওয়ায় গতকাল সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে তদন্তের বিষয়টি নিশ্চিত করে বিসিবি। দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থার দুর্নীতি দমন বিভাগ (এসিইউ) মিনহাজুল ও রহিমকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। একাডেমি মাঠে প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষাও নেওয়া হয় দু’জনের। যদিও জিজ্ঞাসাবাদে উভয় ক্রিকেটার ফিক্সিংয়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বিসিবি এসিইউ প্রধান মেজর রায়ানের নেতৃত্বে পুরো দল দুই ক্রিকেটারের জিজ্ঞাসাবাদে অংশ নেয়। প্রত্যক্ষদর্শী বোর্ডের এক কর্মকর্তা জানান, প্রথমে দুই ঘণ্টা মৌখিক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় মিনহাজুল-রহিমকে। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় প্রতিপক্ষ বা নিজ দলের ম্যানেজমেন্টের দিক থেকে কোনো চাপ ছিল কিনা?
গুলশানের কোচ খালেদ মাহমুদের রাজশাহীর একাডেমি বাংলা ট্র্যাকের ক্রিকেটার রহিম। তিনি কোনো নির্দেশনা দিয়েছিলেন কিনা– এ নিয়েও জানতে চাওয়া হয়। আর্থিক লেনদেনের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে উভয় ক্রিকেটার আপত্তি তুলে বলেন, ‘ক্লাব তো চুক্তির টাকাই দেয়নি।’
মিনহাজুল তৃতীয় বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ, প্রথম বিভাগ হয়ে প্রিমিয়ার লিগ খেলছেন এই প্রথম। দরিদ্র কৃষকের ছেলে রহিম ক্রিকেট খেলা শিখেছেন ভাগ্য ফেরাতে। প্রিমিয়ার লিগে খেলার অভিজ্ঞতা না থাকায় এভাবে আউট হয়ে গেছেন বলে দাবি তাঁর। নিজেদের আউটকে অনিচ্ছাকৃত আউট দাবি করেন দু’জনই। বিসিবি সূত্রে জানা গেছে, গুলশান ক্রিকেট ক্লাবের উইকেটকিপার আলিফ হোসেন ইমনকেও শুনানিতে ডাকা হবে।
শাইনপুকুর বা গুলশান ক্লাবের কোচ বা কর্মকর্তাদের শুনানিতে ডাকা হবে কিনা জানা যায়নি। খালেদ মাহমুদের দিকেও নানা মহল থেকে অভিযোগের আঙুল ওঠায় জিজ্ঞাসাবাদের দাবি রাখে কিনা জানতে চাওয়া হলে এসিইউ কর্মকর্তাদের কেউই মন্তব্য করতে রাজি হননি।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সাহিত্যে রন্ধনশিল্পের প্রভাব
মুসলিম সভ্যতায় খাওয়ার সংস্কৃতি কথা তখনকার সাহিত্যকে প্রভাবিত করেছে। সাহিত্যিকদের অনেকে রান্নার স্বাদ, রস ও প্রকার বিভিন্ন উপমায় বর্ণনা করেছেন। অনেকে ভোজনশালার পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছেন চটুল ও রহস্যময় বর্ণনায়। কেউ কেউ বুদ্ধিবৃত্তিক সমালোচনাও করেছেন। তাঁদের বইয়ে রান্নার সঠিক নিয়ম কী হওয়া উচিত এবং সুস্বাদু খাবারের পূর্বশর্ত কী, তা অনুসন্ধান করেছেন। আবু বাকার আল-রাযির (৩১১ হিজরি, ৯২৩ খ্রিষ্টাব্দ) মুনাফি আল-গিজা ওয়াদাফিউল আযমারাহ এ বিষয়ে একটি অনন্য গ্রন্থ।
বাগদাদি লেখক ‘মিসাল বাগদাদ’ বাগদাদের রন্ধনশিল্পের বিশালতা কাব্যিক ঢঙে বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যেখানে কালো সিসা রুটির ওপর ছড়িয়ে দেওয়া ছিল, সেটি দেখলে মনে হতো যেন পূর্ণ চাঁদ, এবং তার স্বাদ এত মিষ্টি ছিল যেন এক গ্রাসে খেয়ে ফেলা যেত।’
ইবন তাইফুর মারভেজি (২৮০ হিজরি, ৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দ) তাঁর কিতাব বাগদাদ গ্রন্থে মাওমুন নামে এক বাগদাদি বিশেষজ্ঞের বাড়িতে খাবারের সময়ে উপস্থিত ছিলেন। তিনি সেখানে কী কী দেখেছেন, তার সরস বর্ণনা দিয়েছেন। সে সময় মাওমুনের অতিথিশালায় প্রায় তিন শ ধরনের খাবার পরিবেশন করা হয় এবং মাওমুন প্রতিটি খাবারের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে বোঝান।
আরও পড়ুনমন্দ প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণের উপায়০৬ এপ্রিল ২০২৫বাদশাদের মতো অনেক মন্ত্রীদেরও খাবারের প্রতি আগ্রহ ছিল গভীর। জাহাজি (২১৬ হিজরি, ৮৩১ খ্রিষ্টাব্দ) একটি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন, পারস্যের গভর্নর আমর ইবন লাইস তার ব্যক্তিগত রন্ধনশালায় সাড়ে ছয় শ উট ব্যবহার করতেন। এগুলো ছিল মন্ত্রীর প্রাসাদে খাবার প্রস্তুত করার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানের বিশাল নির্দেশ।
এ ছাড়া বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে খাবার প্রতিযোগিতার কথাও শোনা যায়। এই ধরনের প্রতিযোগিতা কেবল যে খাবার প্রস্তুতির জন্য ছিল তা নয়, এটি ছিল একটি আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক ধারণা ছিল, যেখানে রান্নার শৈলী ও খাবারের বৈচিত্র্য চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেওয়া হতো।
কঠোর নজরদারি ও মান নিয়ন্ত্রণ
ইসলামি সভ্যতায় রেস্তোরাঁয় ও খাদ্য উৎপাদনে কঠোর নজরদারি চালানো হতো। খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ, তৈরির পাত্রের পরিচ্ছন্নতা, রাঁধুনির ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য, উপকরণের বিশুদ্ধতা—এসব ছিল বাধ্যতামূলক।
আলাদা চুলা: আলাদা খাবারের জন্য আলাদা চুলা বরাদ্দ থাকত। যেমন যেখানে মাছ ভাজা হয়, সেখানে রুটি বানানো নিষেধ ছিল। তেল বারবার ব্যবহার করাও নিষিদ্ধ ছিল।
অপ্রাপ্তবয়স্ক সরবরাহকারী: একটি মজার তথ্য হলো—যেসব রুটি বিক্রেতা ‘সরবরাহকারী’ রাখত, তাদের বলা হতো অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেদেরই নিয়োগ দিতে, যাতে তারা গৃহস্থালির নারীদের সামনে যাওয়া হলেও কোনো সামাজিক অস্বস্তি না হয়।
আরও পড়ুনসুরা সাফে মন্দ আচরণ নিয়ে আল্লাহর বক্তব্য৩১ জুলাই ২০২৩ওজনে কারচুপি: তখন বেশির ভাগ খাবার বিক্রি হতো ওজনে। তাই ওজনে কারচুপি ঠেকাতে ‘মুহতাসিব’ বা বাজার তদারকি কর্মকর্তারা নজরদারি করতেন। যেমন, মাংস রান্নার আগে-পরে ওজন করে দেখা হতো, যেন অতিরিক্ত শুকিয়ে না যায় বা ভেতরে লোহা জাতীয় কিছু ঢুকিয়ে ওজন না বাড়ানো হয়।
ভেজাল-নিরোধ: বিভিন্ন ভেজালের কৌশলও ধরা পড়েছে। কেউ কেউ কিমার ভেতরে ভুঁড়ি, পেঁয়াজ ও বুটলতাও ঢুকিয়ে দিত। কেউবা সমুচার ভেতরে মাছ ও মসলা দিয়ে মাংসের বিকল্প বানাত। এগুলো ধরা হতো ভাজনের আগেই কেটে দেখে।
রসায়ন ব্যবহার: এক ধরনের খাদ্যভিত্তিক ‘রাসায়নিক ভেজাল’ও ছিল। রঙিন মাংস বানানো হতো আসল মাংস ছাড়াই। কলিজা, ডিম, এমনকি মধু বা চিনি ছাড়া মিষ্টিও তৈরি হতো। একজন প্রাচীন চিকিৎসক—ইবন আল-কিন্দি—এমন প্রযুক্তির উল্লেখ করেন তাঁর কেমিস্ট্রি অব কুকিং বইতে। তবে এসব গোপন রাখা হতো, যাতে কেউ শিখে অনৈতিকভাবে না ব্যবহার করে।
ফাতেমি যুগে নারী রাঁধুনিরাও (দাসী) ছিলেন বিশিষ্ট। কেউ কেউ ৮০ রকম ভাজাভুজি বানাতে পারতেন। এমন দক্ষতা দেখে এক তুর্কি রাজা তাঁর রাঁধুনিদের কায়রোতে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।
আরও পড়ুনশয়তানের মন্দ প্ররোচনা থেকে বাঁচার দোয়া২৭ এপ্রিল ২০২৩আধুনিক রান্নার আগমনী
বিখ্যাত ‘বিফ বোর্গুইনিয়ন’ ফরাসি রান্না, যা ধীরে ধীরে রান্না করা হয়, সেটি ৭০০ বছর আগেই আরব অঞ্চলে প্রচলিত ছিল ‘স্কবাজ’ নামে। এতে মাংস, মসলা, খেজুরের রস ও জাফরান দিয়ে ট্যানুরে সারা রাত রান্না হতো।
রমজান উপলক্ষে নানা খাবার, যেমন: কাতায়েফ, হরিরা, কুসকুস, সামোসা, লুকাইমাত (লালমোহন জাতীয় মিষ্টি) ও সোবিয়া (একধরনের মিষ্টি পানীয়)—এই সব খাবার বহু শতাব্দী ধরে প্রচলিত।
আন্দালুসীয়রা খাবার একসঙ্গে পরিবেশন করতেন না। একে একে পরিবেশন করতেন—প্রথমে ডাল, তারপর মিষ্টি, মাঝে মাঝে আচার, সবশেষে পুনরায় মিষ্টি। এ রেওয়াজ এখনো মরক্কোসহ কিছু অঞ্চলে প্রচলিত।
ইরাকের সংগীতজ্ঞ জেরিয়াব শুধু সুর নয়, খাবারের রুচিতেও বিপ্লব এনেছিলেন আন্দালুসিয়ায়। তিনি খাবারের পরিবেশনা, থালার সাজসজ্জা, গ্লাসের ব্যবহার (সোনা-রুপার বদলে কাচের), ও চামচ-কাঁটা ছুরি ব্যবহারে সৌন্দর্যবোধের পরিচয় দেন। তাঁর কৌশল পরবর্তীতে ইউরোপেও ছড়িয়ে পড়ে।
খাদ্য শুধু পেট ভরানোর বিষয় নয়, বরং তা সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য ও নৈতিকতারও বহিঃপ্রকাশ। ইসলামি সভ্যতার রন্ধনশৈলী আমাদের শিখিয়ে দেয়—ভালো খাবার মানে বিশুদ্ধতা, রুচিশীলতা এবং সামাজিক সচেতনতার এক অনন্য মিশেল।
আলজাজিরা ডট নেট অবলম্বনে
আরও পড়ুনঅহংকারের পরিণতি মন্দ২৬ মার্চ ২০২৪