অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এখনই বন্ধ হোক
Published: 11th, April 2025 GMT
অবৈধ বালু উত্তোলন শুধু নদীভাঙন সৃষ্টি করে জনপদই তলিয়ে নিচ্ছে না, মানুষের প্রাণও কেড়ে নিচ্ছে। কক্সবাজার জেলার মাতামুহুরী নদীতে এ ঘটনা ঘটেছে। সেখানে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে তৈরি হওয়া গর্তে পড়ে একই পরিবারের দুই শিশু মারা গেছে। এমন মর্মান্তিক ঘটনা গোটা এলাকায় শোক তৈরি করেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, মাতামুহুরীতে অবৈধ বালু উত্তোলনকারী চক্রটি কি নিজেদের অপকর্ম চালিয়ে যাবে? দুই শিশুর মৃত্যুর দায় কি তাদের নিতে হবে না?
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের মাঝের ফাঁড়ি সেতুসংলগ্ন এলাকার মাতামুহুরী নদী থেকে বুধবার শিশু দুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, কাকারা ইউনিয়নের মাঝের ফাঁড়ি সেতুসংলগ্ন এলাকা থেকে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে একটি চক্র। বালু উত্তোলনের ফলে নদীতে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়। এসব গর্তের একটিতে পড়ে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলা থেকে উৎপত্তি হয়ে কক্সবাজার জেলা হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে মাতামুহুরী নদী। পাহাড়ি এলাকা ধরে সর্পিকালাকারে এগিয়ে চলা মাতামুহুরী দেশের অন্যতম সুন্দর নদী। এমন নদীর সর্বনাশ করে যাচ্ছে একটি চক্র। দিনের পর দিন অবৈধভাবে বালু তুলে যাচ্ছে চক্রটি, কিন্তু প্রশাসনের কোনো হেলদোল নেই। এতে চক্রটিও অবৈধভাবে বালু তোলার স্বাধীনতা পেয়ে গেছে। বিষয়টি কোনোভাবেই মানা যায় না।
মাতামুহুরী নদীর মাঝের ফাঁড়ি সেতুসংলগ্ন এলাকায় প্রায় দেড় শ ফুট প্রশস্ত চর জেগে উঠেছে। সেখানে ধান ও সবজি চাষ করা হয়েছে। সেই চর থেকেই চক্রটি অগভীর যন্ত্র বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে। এতে ছোট-বড় অনেক গর্ত তৈরি হয়েছে। এসব গর্তে আটকে প্রাণ যাচ্ছে শিশুদের। এতে ভুক্তভোগী হচ্ছে মূলত দরিদ্র বা নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো। বুধবার মারা যাওয়া এক শিশুর বাবা পেশায় অটোরিকশাচালক, আরেক শিশু তাঁর ভাগনি। সড়কে গাড়ি চালানোর সময়ই তিনি দুই শিশুর মৃত্যুর খবর পান। তাৎক্ষণিকভাবে শোকে সড়কের পাশেই ঢলে পড়েন তিনি।
বান্দরবান ও কক্সবাজারের লামা, আলীকদম, চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার প্রাণ বলা যায় মাতামুহুরীকে। এসব এলাকার বিশাল কৃষিব্যবস্থা গড়ে উঠেছে এ নদীকে ঘিরেই। পাশাপাশি মৎস্যসম্পদ তো আছেই। ফলে এ নদীর সুরক্ষায় স্থানীয় প্রশাসনকে সর্বদা তৎপর থাকতে হবে। অবৈধভাবে ও অবাধে বালু তোলার কোনো সুযোগ নেই। যেভাবেই হোক বালুখেকো চক্রটিকে থামান। আমরা আর কোনো শিশুর মৃত্যু চাই না। প্রশাসন সহায়তা নিয়ে দুই শিশুর পরিবারের পাশে দাঁড়াবে, সেটিও আমাদের কাম্য।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধে বিশ্বনেতাদের প্রতি তরুণদের আহ্বান
জলবায়ু সুরক্ষা ও জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়ন বন্ধ, নবায়নযোগ্য শক্তির সম্প্রসারণ ও টেকসই কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন তরুণ জলবায়ু কর্মী। শুক্রবার রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ সড়কে ‘গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইক’ শীর্ষক জলবায়ু ধর্মঘট কর্মসূচি থেকে বিশ্বনেতাদের কাছে এই আহ্বান জানান তারা। একশনএইড বাংলাদেশের যুব প্ল্যাটফর্ম ও এক্টিভিস্টা বাংলাদেশ এর সহযোগিতায় এ আয়োজন করা হয়। একইসঙ্গে ফিলিস্তিনে চলমান অমানবিক যুদ্ধ বন্ধে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়।
একশনএইড বাংলাদেশ ও এক্টিভিস্টা বাংলাদেশসহ ১৮ জেলার ৩৩টি যুব সংগঠনের তিন হাজারের বেশি জলবায়ু কর্মী এতে অংশ নেন। একই সময় সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, নোয়াখালী, কুড়িগ্রাম, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ, সিলেট, কুষ্টিয়া, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, পটুয়াখালী, টেকনাফ, বান্দরবান, বরগুনা ও নারায়ণগঞ্জসহ লোকাল রাইটস প্রোগ্রাম (এলআরপি) এবং বেশ কিছু লোকাল ইয়ুথ হাবের তরুণ স্বেচ্ছাসেবকরাও এই কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করেন।
কর্মসূচির শুরুতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে একটি সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে জলবায়ু কর্মীরা বলেন, উন্নত দেশগুলো জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়নের মাধ্যমে জলবায়ু সংকট সৃষ্টি করছে। পুঁজিবাদী মানসিকতা নিয়ে সর্বোচ্চ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনকারীরা জীবাশ্ম জ্বালানিতে অর্থায়নের মাধ্যমে পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এটি পৃথিবীতে বাস্তুতন্ত্র ও জলবায়ুকে মারাত্মকভাবে ধ্বংস করছে। ফলে বিরূপ প্রভাব পড়ছে দক্ষিণের দেশগুলোর তরুণ, কৃষক, নারী এবং প্রান্তিক সম্প্রদায়গুলোতে। এটি অনুন্নত দেশগুলোর সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের কাছে তাদের পরিবেশগত ঋণ বহুগুণ বাড়িয়ে তুলছে। এই অবস্থায় জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে টেকসই প্রকল্প এবং নবায়নযোগ্য শক্তির ক্ষেত্রে বিনিয়োগের আহ্বান এসেছে গ্লোবাল ক্লাইমেট স্ট্রাইকে।
তরুণ জলবায়ু অধিকারকর্মী সাদিয়া আক্তার বলেন, আমরা যদি এখনই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সোচ্চার না হই, তাহলে একদিন এর ভয়াবহ পরিণতি মানবজাতির অস্তিত্ব পর্যন্ত মুছে দিতে পারে। তাই এখনই কাজ করার সময়- এখনই সময়, না হলে আর কখনও নয়।
ঢাকা থেকে আরেক অধিকারকর্মী রোকন আহমেদ জলবায়ু সুবিচার আন্দোলনের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, জলবায়ু সংকট এখন একটি মহামারিতে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে, বিপন্ন প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে, প্রকৃতি ধ্বংস হচ্ছে। সরকার ও কর্পোরেট নেতাদের অবশ্যই জীবাশ্ম জ্বালানিতে ভর্তুকি ও বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে মনোযোগ দিতে হবে।
একশনএইড বাংলাদেশের ইয়াং পিপল টিম লিড মো. নাজমুল আহসান বলেন, তরুণরা জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ন্যায্য জ্বালানি রূপান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ করতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নীতিনির্ধারকদের জবাবদিহি করতে সোচ্চার হয়েছে।
কর্মসূচিতে জলবায়ু কর্মীরা স্লোগান, প্ল্যাকার্ড, চিত্রকর্ম, গান, নাটক ও পোস্টার প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে জলবায়ু সুবিচারের দাবি জানান। জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ বন্ধে ‘ডোন্ট সেল আওয়ার ফিউচার’, ‘ফিক্স দ্য ফাইন্যান্স’, ‘নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করো’, ‘ক্ষতিকারক কৃষি চর্চায় বিনিয়োগ বন্ধ করো’, ‘ক্লাইমেট জাস্টিস নাউ’ এবং ‘জলবায়ু সহনশীল টেকসই কৃষি চর্চায় বিনিয়োগ করুন’ ইত্যাদি লেখা সম্বলিত ফেস্টুন ও প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন জলবায়ু কর্মীরা।
সমাবেশ শেষে তারা একটি র্যালি বের করেন। র্যালিটি মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ থেকে শুরু হয়ে আড়ং মোড় ঘুরে জাতীয় সংসদের সামনে দিয়ে প্রদক্ষিণ করে। সেখানে জলবায়ু সুবিচারের দাবি জানিয়ে কর্মসূচি সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।