যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্য প্রবেশের ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষিত অতিরিক্ত ৩৭ শতাংশ শুল্ক স্থগিতের ঘোষণায় স্বস্তি ফিরেছে দেশের রপ্তানি খাতে। কয়েক দিন ধরে রপ্তানি আদেশ স্থগিত হওয়ায় রপ্তানিকারকদের মধ্যে আতঙ্ক ছিল। সেই আতঙ্ক আপাতত কেটেছে। তবে তারা বলেছেন, আপাতত তিন মাসের জন্য একটা স্বস্তি পাওয়া গেলেও ট্রাম্প প্রশাসন যাতে বাংলাদেশের ওপর আবার বাড়তি শুল্ক আরোপ না করে, সে জন্য সরকারকে যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে।
এদিকে চীনা পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ১২৫ শতাংশ শুল্ক বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের জন্য রপ্তানি বাড়ানোর ক্ষেত্র তৈরি করেছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে চীনের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কেননা, চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো পণ্যের দাম আগের চেয়ে দ্বিগুণ। ফলে চীন থেকে রপ্তানি এখন আর লাভজনক হবে না। ভিয়েতনামে আগেই চীনা উদ্যোক্তারা বড় বিনিয়োগ করে ফেলেছেন। সেখানে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ কম। ফলে চীনের বিনিয়োগ টানার সুযোগ বাংলাদেশের সামনে।
রপ্তানিকারক উদ্যোক্তা এবং বাণিজ্য বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের শুল্কহার স্থায়ীভাবে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে তিন মাস সময়কে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে কাজে লাগাতে হবে। এ ছাড়া বর্তমানের বাড়তি ১০ শতাংশ শুল্ককে কীভাবে শূন্য শতাংশে নামিয়ে আনা যায়, তার কৌশল নির্ধারণ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। শুল্ক-অশুল্ক বাধার অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে এসব দূর করতে হবে।
জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মোটেক্স ফ্যাশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুদ কবির সমকালকে বলেন, গত ২ এপ্রিল ডোনাল্ড ট্রাম্প ৩৭ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণায় ক্রেতারা রপ্তানি আদেশ প্রত্যাহার, স্থগিত এবং চুক্তির দরের চেয়ে কম দর দেওয়ার কথা জানাচ্ছিলেন। ওই পরিস্থিতি তাদের আতঙ্কিত করে তুলেছিল। এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। অন্তত তিন মাসের জন্য একটা সুযোগ পাওয়া গেল। তিনি সুপারিশ করেন, তিন মাসের মধ্যে সরকারকে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে যাতে সবচেয়ে বড় বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের শুল্ক সহনীয় এবং বাণিজ্যিকভাবে লাভজনক হয়।
মাসুদ কবির মনে করেন, চীনা পণ্যে বাড়তি শুল্ক দুই দিক থেকে বাংলাদেশের জন্য সুবিধা তৈরি করেছে। প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চীনা পণ্যের চেয়ে বাংলাদেশের পণ্যের দর অনেক কম হবে।
যা প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের পণ্যকে সুবিধা দেবে। অন্যদিকে কম দামের সুবিধা নেওয়ার জন্য চীনা উদ্যোক্তারা কারখানা স্থানান্তর করে বাংলাদেশে আসবেন। আগামী মাসে ২০০ চীনা উদ্যোক্তা বিনিয়োগ সুযোগ খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশে আসছেন। কারণ চীনে পণ্য উৎপাদন এখন আর লাভজনক হবে না। ভিয়েতনাম আগেই চীনা উদ্যোক্তারা বড় বিনিয়োগ করে ফেলেছেন। সেখানে নতুন বিনিয়োগের সুযোগ কম।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আরেক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হান্নান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ বি এম শামসুদ্দিন সমকালকে বলেন, নিঃসন্দেহে ট্রাম্পের নতুন ঘোষণা বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের জন্য বড় স্বস্তি এনে দিয়েছে। অতিউচ্চ শুল্কহারের ওই ঘোষণা বিশ্ব বাণিজ্যকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। গত এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে উদ্যোক্তাদের নাভিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছিল। তবে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে একটি বিষয়ে দেশের রপ্তানিকারকদের মধ্যে ঐকমত্য প্রয়োজন যে, ন্যায্য দরের বাইরে কেউ কম পয়সায় কাজ নেওয়ার জন্য নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করবে না। নিজেদের অবস্থান মজবুত না হলে এ রকম যে কোনো ঝাঁকুনিতে নাজুক অবস্থা তৈরি হবে।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড.
গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশে প্রায় ৬০টি দেশের পণ্যে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশসহ বিভিন্ন হারে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এটি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল ৯ এপ্রিল। ডোনাল্ড ট্রাম্প কার্যকরের দিনে তিন মাসের জন্য দেশভিত্তিক বাড়তি শুল্ক আরোপ স্থগিত করেন। তবে ২ এপ্রিলের ঘোষণায় কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া সব পণ্যের ওপর সব দেশের জন্য ১০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপ করা হয়, যা ৫ এপ্রিল থেকে কার্যকর হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ যে ধরনের পণ্য বেশ রপ্তানি করে থাকে সেগুলোর গড় শুল্কহার ছিল গড়ে ১৫ শতাংশ। এর সঙ্গে ১০ শতাংশ যোগ হয়ে আপাতত শুল্কহার ২৫ শতাংশ হবে। দেশভিত্তিক ৩৭ শতাংশ শুল্ক যুক্ত হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যে মোট শুল্কভার ৫২ শতাংশে দাঁড়াত। ট্রাম্পের ওই সিদ্ধান্তে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। মার্কিন ভোক্তারাও প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভ করেন। এর মধ্যে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ বাড়তি শুল্ক স্থগিত রাখার অনুরোধ জানায়। বাংলাদেশ সময় চেয়েছিল তিন মাস।
যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির হালনাগাদ তথ্য
গত জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ। এ হার যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারলে–ওটেক্সার তথ্য বলছে, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাসে প্রধান রপ্তানিকারক দেশ চীনের রপ্তানি বেড়েছে ৯ শতাংশেরও কম। ভিয়েতনামের বেড়েছে ১১ শতাংশ। ভারতের বেড়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ। পাকিস্তানের পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে ২৩ শতাংশ হারে। তবে রপ্তানি আয়ের অঙ্কে চীন ও ভিয়েতনামের চেয়ে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। চীনের রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২৭৭ কোটি ডলার। ভিয়েতনামের ২৬৩ কোটি ডলারের মতো। বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ১৫০ কোটি ডলার। ভারত ও পাকিস্তানের রপ্তানির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৯৬ কোটি ডলার ও ৩৬ কোটি ডলার। গত কয়েক মাসের রপ্তানি প্রবণতা বলছে, চীন ও ভিয়েতনামের সঙ্গে রপ্তানি পরিমাণের ব্যবধান কমছে। এই পরিসংখ্যান ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন রপ্তানিকারকরা
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প ক র যকর র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে মামলা করল ওপেনএআই
ইলন মাস্কের বিরুদ্ধে অসৎ কৌশল অবলম্বনের অভিযোগে মামলা করেছে ওপেনএআই। এতে দাবি করা হয়, মাস্ক নিজের স্বার্থে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির (এআই) নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার জন্য ওপেনএআইয়ের ব্যবসাকে প্রভাবিত করছেন। খবর বিবিসির
গত বছর মাস্ক ওপেনএআই-এর প্রধান নির্বাহী (সিইও) স্যাম অল্টম্যানের বিরুদ্ধে কোম্পানির করপোরেট কাঠামো পরিবর্তন বন্ধ করার জন্য মামলা করেছিলেন। মাস্ক অল্টম্যানের সঙ্গে ওপেনএআই প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, কিন্তু ২০১৮ সালে মাস্ক প্রতিষ্ঠানটি ছেড়ে চলে যান।
এ মামলা সিলিকন ভ্যালির দুই প্রভাবশালী ব্যক্তির মধ্যকার একটি দ্বন্দ্বের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল।
বুধবার এক বিবৃতিতে ওপেনএআই বলে, ইলন মাস্ক ওপেনএআইকে তার ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য ব্যবহার করে এআই প্রযুক্তির নিয়ন্ত্রণ নেয়ার দুর্নীতিমূলক কৌশল অবলম্বন করছে। তাকে থামাতে আমরা পাল্টা মামলা করেছি।
গত সপ্তাহে ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডে একজন ফেডারেল বিচারক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২০২৬ এর মার্চে এ মামলার বিচার শুরুর তারিখ নির্ধারণ করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের জেলা বিচারক ইয়ভন গঞ্জালেজ রজার্স এর আগে মাস্কের একটি নিষেধাজ্ঞার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন। যেখানে তিনি অস্থায়ীভাবে ওপেনএআই-এর অলাভজনক থেকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর বন্ধ করতে আবেদন করেছিলেন।