বাধা অপসারণ চান উদ্যোক্তারা, সমাধানের প্রতিশ্রুতি সরকারের
Published: 11th, April 2025 GMT
বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে সনদপত্র পেতে ভোগান্তি, আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ায় এনবিআরের অসহযোগিতা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, সম্পদের সীমাবদ্ধতা ও দুর্নীতি বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আরেকটি বড় বাধা হলো নীতির ধারাবাহিকতা না থাকা। এসব সমস্যার সমাধান হলে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের বড় সম্ভাবনা তৈরি হবে। ঢাকায় চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনের বিভিন্ন সেশনে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এমন মতামত তুলে ধরেন।
বিনিয়োগকারীদের এসব সমস্যা সমাধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো। তারা বলেছেন, বিনিয়োগ নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হবে। পাশাপাশি বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে নেওয়া বিভিন্ন সংস্কার অব্যাহত থাকবে। সরকার আশা করছে, বিনিয়োগ সম্মেলনের অভিজ্ঞতা ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারলে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
গত ৭ এপ্রিল ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে শুরু হয় চার দিনের বিনিয়োগ সম্মেলন। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এর আয়োজন করে। গতকাল বৃহস্পতিবার সম্মেলন শেষ হয়েছে। সম্মেলনে ৪৩টি দেশের চার শতাধিক বিদেশি বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগকারী এসেছেন চীন থেকে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে টেক্সটাইল, ওষুধ, ডিজিটাল ইকোনমি, লজিস্টিকসসহ নানা খাতের উদ্যোক্তারা অংশ নেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ ও সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
প্রথম দিন অতিথিরা চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কোরিয়ান ইপিজেড এবং মিরসরাইয়ে জাতীয় অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করেন। মঙ্গলবার তারা যান নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে। তারা এসব অঞ্চলে বিনিয়োগকারী উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে পরিবেশ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছেন। পরের দু’দিন বিভিন্ন প্যানেল আলোচনা, সেমিনার, বিটুবি ও বিটুজিতে অংশ নেন। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গেও তারা সরাসরি আলোচনা করেন।
গতকাল শেষ দিনে সংবাদ সম্মেলন করে বিডার ব্যবসা উন্নয়ন বিভাগের প্রধান নাহিয়ান রহমান রোচি বলেন, বিনিয়োগ সম্মেলনের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগের প্রস্তাব কিংবা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তাদের সঙ্গে ধারাবাহিক যোগাযোগ রাখা হবে। বিনিয়োগ বিষয়ে ভবিষ্যতে তাদের প্রতিক্রিয়া নেওয়া হবে। এ নিয়ে একটি পথরেখা তৈরির কাজ চলছে। সব মিলিয়ে সম্মেলন অনেকটা সফল। তিনি বলেন, বিনিয়োগ বাধা দূর করতে শুধু এনবিআর নয়, সরকারি সব সেবায় গতি আনা হচ্ছে। আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এনবিআরের গ্রিন চ্যানেল তৈরি করা হচ্ছে।
বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণের সংখ্যা কত ছিল– জানতে চাইলে সমকালকে তিনি বলেন, ৫৫০ জনের মতো রেজিস্ট্রেশন করেছেন। এর মধ্যে চার শতাধিক বিদেশি প্রতিনিধি এসেছেন। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের দু’জন প্রতিনিধিও এসেছেন। তিনি জানান, সম্মেলনের অর্জন সম্পর্কে পরে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে।
কোন কোন বাধা
বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে ব্যবসা করার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি বাধার কথা জানান। বিশেষ করে নীতি প্রণয়ন ও এর ধারাবাহিকতার ওপর জোর দেন বেশি। তাদের পর্যবেক্ষণ, ব্যবসা শুরু করতে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকে বেশ কয়েকটি সনদ নিতে হয়। এসব সনদ পেতে অনেক সময় ও অর্থ ব্যয় হয়। পণ্য বা কাঁচামাল আমদানি-রপ্তানিতে বেশ ভোগান্তির শিকার হতে হয়। ব্যবসা শুরু করার নথিপত্র আটকে থাকে বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়। দুর্নীতির শিকার হতে হয়। এসব কারণে ব্যবসার খরচ বেড়ে যায়। এ ছাড়া শিল্পে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি ও সরবরাহে অনিশ্চয়তা অন্যতম প্রতিবন্ধকতা। সরকার এসব সমস্যা কীভাবে সমাধান করবে, তার উত্তর চেয়েছেন তারা। এ ছাড়া বিনিয়োগ করলে সরকার তাদের আর কী সুবিধা দেবে, তাও জানতে চেয়েছেন।
চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করে চীনের প্রতিষ্ঠান মেগা রিচ ইন্ডাস্ট্রিয়াল লিমিটেডের ম্যানেজিং পার্টনার কেভিন উ সমকালকে বলেন, নতুন অন্তর্বর্তী সরকার বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করাসহ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে বিনিয়োগ আসবে। চীনের বিনিয়োগকারীদের অনেক বিনিয়োগ আছে বাংলাদেশে। আরও অনেকে বিনিয়োগ করতে চান। নেদারল্যান্ডসের এক বিনিয়োগকারী জানিয়েছেন, তাঁর কৃষি খাতে ব্যবসা রয়েছে। উপযুক্ত ব্যবসায়িক পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় সেবা নিশ্চিত হলে তারা বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী।
সুইডিশ কোম্পানি নিলর্ন বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল কাইয়ুম জানান, জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চল ঘুরে তাঁর মনে হয়েছে, ভালো সুযোগ আছে বিনিয়োগের। তবে সরকার যেন প্রতিশ্রুতি রক্ষা করে। কারণ, অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করলে সব ধরনের সুবিধা দেওয়া হবে– সরকারের এমন প্রতিশ্রুতিতেই বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হচ্ছেন।
এদিকে, ইন্টারকন্টিনেন্টালে বিভিন্ন খাত নিয়ে বেশ কয়েকটি সেমিনার ও প্যানেল আলোচনা হয়েছে। সেখানে এক সেমিনারে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম সহনীয় ও সরবরাহ নির্বিঘ্ন রাখার পরামর্শ এসেছে। স্থানীয় বিনিয়োগকারীরাও অনেক সেশনে অংশ নেন। তারাও বলেছেন, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার পাশাপাশি নীতির ধারাবাহিকতা রাখতে হবে। বিনিয়োগ আকর্ষণে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যেও সংস্কার প্রয়োজন। বিদেশি বিনিয়োগ আনতে হলে দক্ষ মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রয়োজন।
অংশীজনের এসব সমস্যা, পরামর্শ ও বিনিয়োগ প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে নানা আশ্বাস ও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো। চার দিনের সম্মেলনের প্রথম তিন দিন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তাঁর মতে, সব দেশেই বিনিয়োগে কিছু সমস্যা আছে; বাংলাদেশেও আছে। বিনিয়োগ-সংক্রান্ত ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়েছে। বিনিয়োগে যেসব বাধার কথা বিদেশিরা বলেছেন, তা সরকার কীভাবে সমাধান করবে, সে বিষয়ে প্রস্তুতি চলছে। যেসব বিষয়ে বেশি উদ্বেগ, তেমন ২০টি সুনির্দিষ্ট বিষয় বিডা আগেই চিহ্নিত করেছে। সেগুলো চলতি বছরের মধ্যে সমাধানের পরিকল্পনা নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের সেবা নিশ্চিত করতে ওএসএস সেবার পরিধি বাড়ছে।
আশিক চৌধুরী জানান, সম্মেলনে কত বিনিয়োগ এলো, তা মুখ্য বিষয় নয়। সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য, বাংলাদেশের যে নেতিবাচক প্রচার এতদিন ধরে হয়ে আসছে, তার বিপরীতে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরা। বাংলাদেশ কী ধরনের বিনিয়োগ পরিস্থিতি প্রত্যাশা করছে এবং কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে– তার বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে।
সম্মেলনে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ছাড়াও বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের আলোচনার পৃথক ব্যবস্থা ছিল। বিনিয়োগকারীরা এসব দলের কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয়ে তাদের অবস্থান তাৎক্ষণিকভাবে জানতে পেরেছেন। দলগুলো নীতির ধারাবাহিকতা রাখা ও বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
গতকাল এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, বিনিয়োগ সম্মেলনে আসা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে। সম্মেলনে বড় দেশগুলো বাংলাদেশকে ‘ইনভেস্টমেন্ট হাব’ হিসেবে বেছে নিয়েছে।
উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ প্রস্তাব
দুবাইভিত্তিক বৈশ্বিক লজিস্টিকস কোম্পানি ডিপি ওয়ার্ল্ড বন্দর ও লজিস্টিক অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। ডিপি ওয়ার্ল্ডের গ্রুপ চেয়ারম্যান ও সিইও সুলতান আহমেদ বিন সুলাইয়েম সম্মেলনে অংশগ্রহণের পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টা ড.
নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক চলতি বছরে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। টেক্সটাইল খাতে ১৫ কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে চীনভিত্তিক হান্দা ইন্ডাস্ট্রিজ। জাপানিজ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করে অ্যাকসেসরিজ কারখানা স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। শপআপ ১১ কোটি ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে। এ ছাড়া প্রাণ গ্রুপের সঙ্গে বিদেশি একটি কোম্পানির বিনিয়োগ চুক্তি হয়েছে। শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএলওর সঙ্গেও হয়েছে একটি এমওইউ। এ ছাড়া মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সঙ্গে বাংলাদেশের একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উদ য ক ত ন ত র ধ র ব হ কত এসব সমস য ন শ চ ত কর ব ন য় গ কর র জন ত ক সরক র র প রস ত পর ব শ ব যবস দলগ ল
এছাড়াও পড়ুন:
চৈত্রের শেষ দিনে জাবিতে ব্যাঙের পানচিনি ‘বিয়ে’
দিনভর প্রবল উত্তাপের শেষে বাংলা বছরের শেষ সূর্যের মেজাজ তখন কিছুটা হালকা হয়ে এসেছে। গাছের নতুন পাতায় সূর্যের আলোর প্রতিবিম্ব উৎসবের সাজ দিয়েছে৷ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চোখে মুখে ফুটে ওঠেছে উৎসবের আমেজ।
উৎসবের পালে নতুন হাওয়া দিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পুরাতন কলা ভবনের সামনে চলছে তখন পানচিনির আয়োজন। সবার মাঝে বিয়ের আমেজ। মঞ্চের একপাশে সেজেগুজে বসে আছে কনে। বরপক্ষের আগমনের অপেক্ষায় কনেপক্ষ। বিকেল ৫টার দিকে এক র্যালি নিয়ে হাজির বরপক্ষ। বরের মাথায় এক ঢাউস ছাতা।
হলুদ, ধান ও দূর্বা দিয়ে কনেপক্ষ বরপক্ষকে বরণ করে নিল। চলল আশীর্বাদ আদান-প্রদান। মন্ত্র পাঠের আগে অভিভাবকরা কথা দিলেন, আসছে আষাঢ়ে তাদের বিয়ে হবে। বরের বাবা হলেন কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক, অন্যদিকে কনের বাবার দায়িত্বে ছিলেন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক রশীদ হারুন৷
তবে এটি কোনো মানুষের বিয়ে নয়। ব্যাঙের বিয়ে। খরা মৌসুমে পর্যাপ্ত বৃষ্টির প্রত্যাশায় কলা ও মানবিকী অনুষদ চৈত্রসংক্রান্তি ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে এই ‘ব্যাঙের পানচিনি’র আয়োজন করেছিল। পানচিনি অনুষ্ঠান মূলত বিয়ের অঙ্গীকার প্রদান, আশীর্বাদ আদান-প্রদান এবং বর-কনের মধ্যে সম্প্রীতি বাড়ানোর আয়োজন।
ব্যাঙের এই পানচিনি সম্পর্কে নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী শরণ এহসান জানান, ময়মনসিংহ ও নেত্রকোনা অঞ্চলে প্রচণ্ড দাবদাহে যখন মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়, সেসময় বর্ষার আবাহন হিসেবে ব্যাঙের বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়৷ প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষ তাদের একটা কৃত্য হিসেবে চৈত্র সংক্রান্তির দিনে বৃষ্টির আকাঙ্ক্ষা করে ব্যাঙের বিয়ে সম্পন্ন হয়৷ বর্তমান সময়ে মানুষের সাথে প্রাণ-প্রকৃতির যে বিচ্ছিন্নতা তৈরি হয়েছে তা নিরসনের প্রত্যাশায় প্রতি বছর চৈত্রসংক্রান্তির দিনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ব্যাঙের পান-চিনি’ আয়োজন করা হয়।
ব্যাঙের পানচিনিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ভবনের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সেজেছিলেন বরপক্ষের সাজে। আর পুরাতন কলা ভবন কনেপক্ষ। বাঁশ আর রঙিন কাগজ দিয়ে বানানো হয়েছিল ব্যাঙ-যুগলের বিশাল দুটি প্রতিকৃতি। গতরাতেই কনেপক্ষ বরপক্ষের বাড়িতে মিষ্টি নিয়ে গিয়ে আলাপটা সেরে এসেছিলো।
সকাল থেকেই উভয়পক্ষের বাড়িতে চলছিল সেই প্রস্তুতি। বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে নেচে-গেয়ে বরপক্ষ হাজির হয় পুরাতন কলা ভবনের কনেপক্ষের বাড়িতে। কনেপক্ষ হুই-হুল্লোড় করে ‘গেট ধরলে’ চলে মধুর দর-কষাকষি। এরপর জমে ওঠে প্রীতি কথার লড়াই। কারও হার না মানা অবস্থায় মঞ্চে পাশাপাশি বসার সুযোগ হয় হবু বর-কনের।
বরপক্ষ ও কনপক্ষের এ মধুর লড়াই চলে বেশ সময় ধরে। কেউ কাউকে নাহি ছাড়৷ কারো মতে, বিয়ের দেনমোহর হওয়া উচিত কোটি টাকায়। কারো মতে, আরও কম৷ কেউবা বলছেন, ব্যাঙের বিয়ে হওয়া উচিত যে কোনো ধর্ম মেনে৷ তবে কনেপক্ষের মত, মানুষের ধর্ম নয়, ব্যাঙের ধর্ম মেনেই হবে ব্যাঙের বিয়ে৷ শেষ পর্যন্ত সমঝোতায় পৌঁছে দুই পক্ষ। আংটি বদলের মধ্য দিয়ে শেষ হয় চৈত্র সংক্রান্তির ব্যাঙের বিয়ে৷
ব্যাঙের পানিচিনি নিয়ে কলা ও মানবিকী অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘বৈশাখ থেকে প্রকৃতির পরিবর্তন হতে থাকে৷ ফলে প্রকৃতির এই পরিবর্তন আমাদের মানব মনে নাড়া দেয়৷’