নদীতে পাশাপাশি দুটি নৌকা। হাতে লাঠিসোটা নিয়ে ১০-১২ যুবক নৌকার ওপর দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাদের মধ্যে একজন হঠাৎ অস্ত্র উঁচিয়ে নদীতীরে থাকা এক পক্ষের দিকে হুঙ্কার ছাড়েন। অস্ত্রধারীর পরনে টি-শার্ট, প্যান্ট ও হাতে ব্রেসলেট। হুঙ্কারের পর অশালীন শব্দ ব্যবহার করে ওপাশ থেকে পাল্টা উত্তর– ‘আয় গুলি কর।’ 

বুধবার বিকেলে ঢাকার অদূরে সাভারের কাতলাপুরে বংশী নদীর মিলনঘাট এলাকার দৃশ্য ছিল এটি। সশস্ত্র এ গ্রুপের ভিডিও ফুটেজ দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। শুধু অস্ত্র প্রদর্শন নয়, দুটি ট্রলার ছিনিয়ে নেয় তারা। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, খেয়াঘাটের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ ও ইজারা নিয়ে দু’পক্ষের দ্বন্দ্বের জেরে এ ঘটনা ঘটেছে। যাদের হুমকি দেওয়া হয়, তারা বর্তমানে ঘাটের ইজারাদার। এ ঘটনায় সাভার পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম সাভার মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। পরে সেটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, সাভারের কাতলাপুরের কর্ণপাড়া মিলনঘাট পরিচালনা করছেন কামরুল ইসলাম। কিছুদিন ধরে মানিকগঞ্জের সিংগাইর থানার ফুডনগর মোল্লাপাড়ার অন্তর খান (২৬), মোর্শেদ খান (২৫), মোশাররফ খান (২৮), হৃদয় (২৫), রনি খানসহ (৪২) অজ্ঞাতনামা ১০-১২ জন ঘাট পরিচালনায় বাধা দেন। ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করছিলেন তারা। গত বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে তাঁরা পিস্তল, ধারালো দেশি অস্ত্র, রামদা, চাকু ও রড নিয়ে মিলনঘাটে উপস্থিত হয়ে ফের চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে কামরুলকে মারধর করেন। এক পর্যায়ে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এলে অন্তর খান পিস্তলসদৃশ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি ছোড়েন। তারা খোকন ও আরমান মাঝিকে মারধর করেন। কামরুলের দুটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা (ট্রলার) ছিনিয়ে নিয়ে সেখান থেকে চলে যান। 

অস্ত্র হাতে যাঁকে দেখা গেছে, সেই অন্তর খানের ছবিসহ বিভিন্ন পোস্টার সাভারের দেয়ালে দেয়ালে সাঁটানো। সাভার পৌর ছাত্রদলের পরিচয় দিয়ে ওই পোস্টারে স্থানীয়দের ‘ঈদের শুভেচ্ছা’ জানিয়েছেন তিনি। অন্তরের গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের সিংগাইরে। 

কামরুল ইসলামের ছেলে হেদায়েতুল্লাহ সমকালকে বলেন, চাঁদা না দেওয়ায় তারা বাবাকে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছিলেন। সাভার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ জুয়েল মিঞা বলেন, মিলনঘাটে ট্রলার ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় এক যুবককে পিস্তল হাতে দেখা গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে গুলির ঘটনার তথ্য পাওয়া যায়নি। বৃহস্পতিবার মানিকগঞ্জের ভাটিরচরে অভিযান চালিয়ে ট্রলার উদ্ধার করা হয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

রূপনগরে শিশুদের জন্য ভ্রাম্যমাণ খেলার জায়গা উদ্বোধন

এলাকাভিত্তিক খেলাধুলা ও সামাজিকীকরণের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে শিশুদের জন্য রাজধানীর মিরপুরে রূপনগর আবাসিক এলাকায় ভ্রাম্যমাণ খেলার জায়গা (মোবাইল প্লে-গ্রাউন্ড) উদ্বোধন করা হয়েছে। শনিবার বিকেলে স্কুল অব লাইফ, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্ট ও হেলথ ব্রিজ ফাউন্ডেশন অব কানাডার সম্মিলিত উদ্যোগে এটির উদ্বোধন করা হয়। এই আয়োজনে সহযোগিতা করেন রূপনগর আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা।

আয়োজকেরা জানান, প্রতি শনিবার বেলা ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রূপনগর আবাসিক এলাকার ১৫ নম্বর সড়কে নিয়মিত মোবাইল প্লে-গ্রাউন্ডে খেলাধুলার আয়োজন করা হবে। খেলাধুলার মধ্য থাকবে দাবা, লুডু, ক্যারম, দড়ি লাফ ও ব্যাডমিন্টন। এ ছাড়াও থাকবে ছবি আঁকা, হস্তশিল্প ও সামাজিকীকরণের মতো বিভিন্ন কার্যক্রম।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, মাঠ ও পার্কের অপ্রতুলতা ঢাকা শহরের একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের ১২৯টি ওয়ার্ডের ৩৭টিতে কোনো খেলার মাঠ বা পার্ক নেই। শিশুদের খেলাধুলা ও সামাজিকীকরণের সুযোগ সৃষ্টির জন্য এলাকাভিত্তিক মোবাইল প্লে-গ্রাউন্ড তৈরি একটি কার্যকর সমাধান। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে সম্প্রীতি গড়ে উঠবে, শহর হবে প্রাণবন্ত ও বাসযোগ্য।  

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্কুল অব লাইফের চেয়ারম্যান চিকিৎসক অনুপম হোসেন বলেন, ঘরবন্দী জীবনে শিশুরা হাঁপিয়ে উঠেছে। করোনাকালে দীর্ঘদিন ঘরে থাকার ফলে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এলাকাভিত্তিক স্বল্প ব্যবহৃত বা অব্যবহৃত রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখে মোবাইল প্লে-গ্রাউন্ড তৈরি করে খেলাধুলা ও সামাজিকীকরণের সুযোগ তৈরি করা যায়। এতে শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের পাশাপাশি নেতৃত্বগুণ ও সামাজিক বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার মানসিকতা গড়ে উঠবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ-পার্ক নেই। অর্থ ও স্থান সংকুলান বিবেচনায় সিটি করপোরেশনের পক্ষে দ্রুত বড় আকারের মাঠ-পার্ক তৈরি সম্ভব নয়। তবে খুব কম খরচে ও স্বল্প জায়গায় শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে এলাকাভিত্তিক খেলাধুলা ও সামাজিকীকরণের স্থান গড়ে তোলা সম্ভব। নগরবাসীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি বিবেচনায় নেবেন বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্কুল অব লাইফের সদস্যসচিব সাবরিনা নওরিন লিমু, ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের কর্মকর্তা, মিরপুর সেকশন- ৭ এর রূপনগর আবাসিক এলাকার ১৫ নম্বর সড়কের এলাকাবাসী ও শিশু-কিশোরেরা।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের সহকারী প্রকল্প কর্মকর্তা মো. মিঠুন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ