দেশের স্বাস্থ্য খাতের সমস্যা নিরসনে এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো দরকার। তাছাড়া খাতটি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্যও ব্যাপক সম্ভাবনাময়। কারণ, চিকিৎসাসামগ্রী ও যন্ত্রপাতির বাজার ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। আগামী ২০৩৩ সালের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কিত বাজার পৌঁছাতে পারে ২৩ বিলিয়ন ডলারে। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের বড় খাত হতে পারে স্বাস্থ্যসেবা। 
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীতে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিটের ‘বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা বিনিয়োগের নতুন দ্বার উন্মোচন’ শীর্ষক একটি অধিবেশনে বক্তারা এসব কথা বলেন। 
অনুষ্ঠানে দেশের স্বাস্থ্য খাতের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে বলে উল্লেখ করে স্বাস্থ্য সচিব মো.

সাইদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের চিকিৎসা খাতে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। চিকিৎসাসামগ্রী এবং উন্নত ডায়াগনস্টিক সরঞ্জামের ক্রমবর্ধমান চাহিদার কারণে ২০৩৩ সালের মধ্যে এ খাতের বাজারের পরিমাণ ২৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে।

প্রাভা হেলথের প্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সিলভানা কাদের সিনহা ‘বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা বিনিয়োগের সম্ভাবনা উন্মুক্তকরণ’ শীর্ষক মূল বক্তৃতা প্রদান করেন। তিনি বলেন, চিকিৎসাসামগ্রী ও যন্ত্রপাতি বাজার ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে এই যন্ত্রাংশের বাজার তিন বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। এই যন্ত্রাংশ মূলত আমদানিনির্ভর। এ খাতে বিনিয়োগ বাড়লে নিজস্ব ব্যবস্থাপনা এসব চিকিৎসাসামগ্রী দেশে উৎপাদন সম্ভব। এদের মধ্যে রয়েছে আইসিইউ সামগ্রী, পরীক্ষা-নিরীক্ষার কিট, রোগীসেবা ব্যবহৃত উপকরণ।
তিনি বলেন, দেশে নানা কারণে স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্ব বাড়ছে। জীবনযাত্রার মান পরিবর্তনের কারণে অসংক্রামক রোগ বেড়েছে। একইসঙ্গে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এসব সমস্যা নিরসনে এখনই এই খাতে বিনিয়োগ জরুরি। স্বাস্থ্য খাত পাঁচ স্তম্ভের ওপরে দাঁড়িয়ে। সেগুলো হলো– স্বাস্থ্য সেবা, ওষুধশিল্প, চিকিৎসাসামগ্রী ও যন্ত্র, ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা এবং মেডিকেল বায়োটেকনোলজি। 
তিনি আরও বলেন, সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো নিয়ে এ দেশের স্বাস্থ্যসেবা খাত এগিয়ে যাচ্ছে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) এবং সরকারি প্রণোদনা এই খাতে বিনিয়োগে উৎসাহ জোগাচ্ছে। এই খাতে করমুক্ত সুবিধার কারণে স্থানীয় এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করছে। রোগ ব্যবস্থাপনা এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রযুক্তির উন্নয়নে বিদেশি টেক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করলে এই খাত আরও সমৃদ্ধ হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘স্বাস্থ্য খাত বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম বৃহত্তম খাত হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে, যেখানে ২০১০ সাল থেকে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ বার্ষিক যৌগিক বৃদ্ধির হার (সিএজিআর) দেখা গেছে এবং সরাসরি প্রায় ৩ লাখ মানুষ কর্মসংস্থানে যুক্ত রয়েছেন।’

চারটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর
‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট-২০২৫’-এ গতকাল স্বাস্থ্য খাতে মোট চারটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমানের উপস্থিতিতে রাজধানীর একটি হোটেলে এক অনুষ্ঠানে এ সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। হাসান মহিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস, দ্য এন্টারপ্রেনারস গ্রুপ এবং বিকন ফার্মাসিউটিক্যালসের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। হাসান মহিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের ম্যানেজিং পার্টনার হাসান ইমাম সিদ্দিকি, বীকন ফার্মাসিউটিক্যালসের পরিচালক এহতিয়াজ করিম এবং দ্য এন্টারপ্রেনারস গ্রুপের মাইকেল জনাথন গেইল চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এ ছাড়া হাসান মহিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস এবং দ্য এন্টারপ্রেনারস গ্রুপের মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। হাসান মহিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস এবং জেপিজি ইনভেস্টমেন্টসের মধ্যে আরেকটি দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। 
হাসান মহিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস, ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল এবং এন্টারপ্রেনারস গ্রুপের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।

এ মাসেই সাইবার সেফটি অধ্যাদেশের গেজেট
প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ বলেছেন, সরকার চলতি মাসের শেষ নাগাদ ‘সাইবার সেফটি অধ্যাদেশ’ গেজেট আকারে প্রকাশ করবে। বিনিয়োগ সম্মেলনে ‘নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টিতে ডিজিটাল অর্থনীতি’ শীর্ষক উপস্থাপনায় তিনি একথা বলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন সিটিব্যাংক এনএর কান্ট্রি অফিসার মো. মইনুল হক।
ফয়েজ আহমদ বলেন, ‘আমরা সাইবার সেফটি অধ্যাদেশ নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে কাজ করছি। সমাজের বিভিন্ন স্তরের সঙ্গে পরামর্শ করে আমরা সব উদ্বেগের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েছি। তাই আশা করছি, চলতি মাসের শেষ নাগাদ আমরা একটি নতুন সাইবার সেফটি অধ্যাদেশ প্রণয়ন করতে পারব।’ 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এই খ ত সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সিটি ব্যাংকের নতুন সংযোজন ‘আমেরিকান এক্সপ্রেস মেটাল কার্ড’

বাংলাদেশের প্রথম আমেরিকান এক্সপ্রেস মেটাল কার্ড নিয়ে এলো দেশের বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক লিমিটেড পিএলসি। এর নাম সিটি ব্যাংক আমেরিকান এক্সপ্রেস প্ল্যাটিনাম রিজার্ভ ক্রেডিট কার্ড। আমন্ত্রণের মাধ্যমে প্রাপ্ত এ কার্ড ব্যক্তিগত সেবা, আন্তর্জাতিক ভ্রমণের সহায়তা, সাশ্রয় এবং আকর্ষণীয় সুবিধার সমন্বয়ে গঠিত, যা গ্রাহকের ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) ঢাকার একটি হোটেলে সিটি ব্যাংক আমেরিকান এক্সপ্রেস প্ল্যাটিনাম রিজার্ভ ক্রেডিট কার্ড উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক অরূপ হায়দার, হেড অব কার্ড তৌহিদুল আলমসহ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

এই কার্ডে মেম্বাররা তাদের জীবনধারার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ২০ হাজার টাকা মূল্যের এক্সক্লুসিভ ওয়েলকাম গিফট ভাউচার পাবেন। দুই বছরের জন্য বিনামূল্যে ট্যাবলেট প্লাসের মেম্বারশিপ উপভোগ করবেন। যা আন্তর্জাতিক বিলাসবহুল বুটিক হোটেল এবং ব্র্যান্ডসমূহে বিশেষ সুবিধা দেবে ব্যাংকটি।

কার্ড মেম্বাররা এই কার্ডের আওতায় বিনামূল্যে প্রায়োরিটি পাস মেম্বারশিপ পাবেন এবং দুজন অতিথিসহ বিশ্বের এক হাজার ৭০০-এরও বেশি বিমানবন্দর লাউঞ্জে অবারিত প্রবেশাধিকার উপভোগ করবেন। এছাড়াও ফাস্টট্র্যাক ভিআইপি মিট অ্যান্ড গ্রিট সার্ভিসে ১০ শতাংশ ছাড়ে তাদের বিমানবন্দরের অভিজ্ঞতা আরো উন্নত হবে।

অন্যান্য সুবিধার মধ্যে রয়েছে সিক্সট রেন্ট-এ-কার লয়্যালটি প্রোগ্রামে বিনামূল্যে সদস্য পদ, যেখানে কাউন্টারে প্রাধান্য সেবা, ছাড়, ফ্রি আপগ্রেড এবং আরো অনেক সুবিধা।

এই কার্ডে প্রত্যেক কার্ড মেম্বারের জন্য থাকছে একজন নির্ধারিত রিলেশনশিপ ম্যানেজার, যিনি তাদের অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত সব ধরনের সহায়তা দেবেন। এছাড়া থাকছে রিয়েল-টাইম অটো-ডেবিট সুবিধা, যা নির্বিঘ্নে তাদের সব কার্ড লেনদেন নিশ্চিত করবে। আর এই কার্ডে নির্বাচিত মার্চেন্টদের কাছে কার্ড ব্যবহার করে গ্রাহকেরা ১০ গুণ পর্যন্ত মেম্বারশিপ রিওয়ার্ডস পয়েন্ট উপার্জন করতে পারবেন।

এই পয়েন্ট ব্যবহার করে বার্ষিক ফি, বকেয়া বিল পরিশোধ, এমনকি খ্যাতনামা আউটলেটে কেনাকাটা ও ডাইনিং করতে পারবেন। এই কার্ডে আরো রয়েছে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অভিজ্ঞতা, যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন দেশের রেস্টুরেন্টে কিউরেটেড ডাইনিং এবং বাংলাদেশের শীর্ষ ফাইভ-স্টার হোটেলে ‘বাই ১ গেট ২’ ব্যুফে অফার।

ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার বলেন, “সিটি ব্যাংক আমেরিকান এক্সপ্রেস প্ল্যাটিনাম রিজার্ভ ক্রেডিট কার্ডে আমাদের গ্রাহকদের সর্বোচ্চ অভিজ্ঞতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত হয়েছে। যা বাংলাদেশে প্রিমিয়াম অভিজ্ঞতার সংজ্ঞা নতুনভাবে তৈরি করেছে এবং গ্রাহকদের জন্য ভ্রমণ ও জীবনধারার বিশেষ সুবিধা নিয়ে এসেছে। এটি ক্রেডিট কার্ড সেবায় একটি নতুন স্থাপন করবে, যা সিটি ব্যাংক ও আমেরিকান এক্সপ্রেসের সম্মিলিত উৎকর্ষকে তুলে ধরে।”

সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসরুর আরেফিন বলেন, “মেটাল কার্ড আমার কাছে খুব একটা বড় বিষয় নয়। যেটা সত্যিকার অর্থে এটিকে আলাদা করে তোলে তা হলো আমেরিকান এক্সপ্রেসের শতবর্ষের গ্রাহক প্রতিশ্রুতির ঐতিহ্য।”

আমেরিকান এক্সপ্রেসের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও জেনারেল ম্যানেজার, গ্লোবাল নেটওয়ার্ক সার্ভিসেস, এশিয়া এবং সাউথ প্যাসিফিক গ্রোথ মার্কেটস দিব্যা জৈন বলেন, “এই উদ্বোধন আমাদের সিটি ব্যাংকের সঙ্গে অংশীদারত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটি বাংলাদেশের প্রথম মেটাল কার্ড। কার্ডটি শুধুমাত্র একটি পেমেন্ট সল্যুশন নয়, বরং এটা তাদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে যারা প্রিমিয়াম অভিজ্ঞতা এবং সুবিধাকে মূল্য দেন।”

সিটি ব্যাংক আমেরিকান এক্সপ্রেস প্লাটিনাম রিজার্ভ ক্রেডিট কার্ড মেম্বারদের ক্রমবর্ধমান প্রত্যাশাকে পূরণ করে এবং শুধু আর্থিক সুবিধাই নয়, বরং একটি সত্যিকার অসাধারণ জীবনধারা উপহার দেয়।

ঢাকা/সুমন/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও ট্রাম্প বলছেন, শুল্কনীতি ‘সত্যিই ভালো করছে’
  • সিটি ব্যাংকের নতুন সংযোজন ‘আমেরিকান এক্সপ্রেস মেটাল কার্ড’