Samakal:
2025-04-13@03:22:43 GMT

টরন্টোর গো ট্রেনে কিছুক্ষণ

Published: 10th, April 2025 GMT

টরন্টোর গো ট্রেনে কিছুক্ষণ

গো ট্রেনে পিকারিং থেকে উঠি। ডাউনটাউনে যাব অসম বয়সের তিনজন। আমি একা বসলাম। অন্যপাশে তরুণ দম্পতি। পাশ্চাত্যে যে কোনো জায়গায় বা যে কোনো অবস্থায় যুগল দম্পতি বা প্রেমিকের নানাভাবে তাদের ভালোবাসা প্রকাশে কোনো সংকোচ বা দ্বিধা নেই। আমার কাছে কখনও অশ্লীলও মনে হয়নি। কারণ, ওদের একটা আর্ট আছে। আমি কিছুক্ষণ মুগ্ধ হয়ে দেখলাম। পরের স্টেশনে আরও একটি মাঝবয়সী দম্পতি উঠল। একটি মাঝবয়সী দম্পতির রোমান্টিকতা আমাকে আরও বিস্মিত করল। পরে জানলাম এ ধরনের দম্পতির নতুন রিলেশনশিপ। তবুও ভালো লাগল। আমাদের দেশে এমন করলে মানুষ বলত বুড়ো বয়সের ভীমরতি। জীবন যেন সব বয়সে উপভোগ্য, এটা উপলব্ধি করলাম।
দৃষ্টি সরিয়ে নিলাম ট্রেনের জানালায়। বাইরের দিকে তাকালাম। ঝরা পাতার ঋতু আমাকে বিমর্ষ করে তুলল। কিছুদিন আগেও এ পথে বর্ণিল প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য বিমুগ্ধ করেছে। কত সুন্দর হতে পারে প্রকৃতির যে ঋতুকে ওরা ফল বা পতিত বলে। অর্থাৎ মরার আগে জেগে ওঠার মতো। এত বর্ণ প্রকৃতির হতে পারে, আমার জানা ছিল না। লাল-হলুদ-সবুজের মাখামাখি প্রকৃতির গায়ে। নববধূও এতটা বর্ণময় হয় না। কেমন করে হারিয়ে গেল প্রকৃতির বর্ণিল সাজ একটু একটু করে। এখন যেন ‘মাঘের সন্ন্যাসী’। আমিও নস্টালজিক হয়ে পড়লাম।
শহরে আসা কলেজ জীবন, ইউনিভার্সিটি জীবন আরও এক ধরনের বোধসম্পন্ন মধুময় সময়। নতুন নতুন মুখের সাথে পরিচিত হওয়া, নতুন কিছু শেখা বোঝা। স্যারদের লেকচারের ভাষা অন্যরকম; আগে কথাগুলো অশ্লীল মনে হতো। কত সহজভাবেই-না আকরাম স্যার ‘যোগাযোগ’ উপন্যাস পড়ালেন। কুমুর গভীর উপলব্ধি নিজের মাঝে ধারণ করে ফেললাম। তবুও কোথায় যেন আশির দশকীয় একটি সংকোচ রয়েই গেল। হঠাৎ একদিন রেজিস্ট্রার বিল্ডিং থেকে আর্টস ফ্যাকাল্টিতে আসার পথে পেছন থেকে একটি ছেলে আওড়াতে লাগল ‘ঘোমটা মাথায় ছিল না তার মোটে/ মুক্ত বেণী পিঠের ’পরে লোটে/ কালো? তা সে যতই কালো হোক/ দেখেছি তার কালো হরিণ চোখ’। পেছনে তাকানোর সাহস পাইনি কিন্তু বুকের ভেতরে এক শিহরণ ধুকধুক করতে লাগল। অনেক দিন পর তার নাম জানলাম, যাকে দেখলে আমি ভূত দেখার মতো চমকাতাম। কারণ, আমি আশির দশকের দুর্বল চিত্তের এক কালো মেয়ে, যার অনেক লম্বা চুল। আর একজন পেছনে নয়, সামনেই আবৃত্তি করল– ‘চুল তার কবে কার অন্ধকার বিদিশার নিশা/ মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য’। আমি অভিভূত হই, শিহরিত হই, কিন্তু ভীতু মফস্বলের আদর্শ আমাকে বলে– পালা পালা। 
আরও তিনটি মেয়ে পরের স্টেশনে গো ট্রেনে উঠল। ওদের চুটিয়ে আড্ডা আড়চোখে দেখলাম। জীবন তো বৃক্ষ নয়, জীবন জীবন্ত প্রাণবন্ত। আমার মতো জীবনের সাথে প্রতারণা করে না ওরা। এটাই পাশ্চাত্য জীবনের সবচেয়ে ভালো লাগা আমার। গো ট্রেনের এক ঘণ্টা আমার কাছে নস্টালজিক হলেও উপভোগ্য মনে হয়েছে। ছাত্রজীবনেই একজনের গলায় মালা পরালাম বলতে গেলে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবুও এই মেনে নেওয়ার স্বভাবের সনাতনী ভাবনায় মেনে নিলাম। কিন্তু গো ট্রেনের দম্পতিদের মতো রোমান্স প্রকাশ্যে করার সাহস হলো না। একটি চুম্বনের জন্য রিকশার হুড কত টানতে হয়েছে। তখন আমরা ছিলাম বিবাহিত। হঠাৎ কলকাকলিতে সম্বিত ফিরে এলো। দৃষ্টি ফেরালাম ট্রেনের কামড়ায়। নজর পড়লো একজন প্রেগন্যান্ট মহিলার ওপর। আমরা প্রেগন্যান্সি ঢাকবার জন্য শাড়ি ওড়না কতভাবে পেটের ওপর টেনেছি। ওরা প্রেগন্যান্সি দেখানোকে আনন্দ বা গর্ববোধ করে। ছোট টিশার্ট আর ট্রাউজার পরা মহিলা কি উল্লাস চোখেমুখে সাথে আরও একজন মেয়ে। আমার সহযাত্রীকে জিজ্ঞেস করলাম, ওদের লজ্জা করে না। সে বলল, এটাতে লজ্জার কী আছে। এটা তো ওদের আনন্দময় প্রাপ্তি বলে ভাবে। একজন বৃদ্ধ মহিলা উঠল। একটি ছেলে দ্রুত এগিয়ে গিয়ে ওনাকে এনে বসালেন। কুশল বিনিয়ম করলেন হাসি মুখে ওরা; কিন্তু শুধু সহযাত্রী। একটি কথা না বললেই নয়। পাশ্চাত্য শহরে রাস্তাঘাটে যার সাথেই দেখা হয় হাই বা হ্যালো বলে মৃদু হাসি হেসে সম্ভাষণ করে। আরও ভালো লাগলো ওদের ডিসিপ্লিন। প্রত্যেক যাত্রী সুন্দরভাবে সিটে বসে চোখাচুখি হলে মৃদু হাসি দেয়, যেন কত চেনা। ট্রেনের কামড়ায় ওরা বই নিয়ে ওঠে। বিশেষ করে একটু বয়স্ক মানুষদের দেখলাম নিবিষ্ট চিত্তে বইয়ের পাতায় ডুবে আছেন। ছাত্রছাত্রী বা কর্মজীবী টাইপের অনেকে ল্যাপটপ খুলে কাজ করছে ট্রেনের কামরায়। ওদের গতিময় জীবনে যেন স্থবিরতার ঠাঁই নেই। একেবারে অল্পবয়সীরা একটু হাসিঠাট্টায় মেতে যাচ্ছে। ওখানে একটি জিনিস আমার কাছে অবাক লেগেছে, ট্রেন জ্যামে পড়ে। সাথে সাথে অ্যানাউন্স করে যাত্রীদের জানিয়ে দেয়। আরও একটা ব্যাপার দেখলাম, ট্রেনে দু’একজন গাঁজাখোর উঠেছে। সবাই বেশ সহানুভূতির দৃষ্টি নিয়ে ওদের দিকে তাকায়। এসব গাঁজা আসক্ত লোকেরা শহরেও কিছু কিছু গর্হিত কাজ করে। কিন্তু ওদের প্রতি কেউ খারাপ ভঙ্গি পোষণ করে না। ট্রেনের কামড়ায় দেড় ঘণ্টা সময় বিচিত্র জীবন অবলোকন করলাম। বিশেষ করে ওরা কাউকে ন্যূনতম ডিস্টার্ব করে না। যার যার রুচিমতো সে আনন্দ করছে, কাজ করছে– আমাদের মতো সমালোচনায় কেউ লিপ্ত হয় না। যথা সময়ে ট্রেন স্টেশনে থামল। হুড়োহুড়ি নেই। ধীরে ধীরে সবাই নামল।
ভাবলাম একই বিশ্বগ্রামের মানুষ আমরা, জীবন যাপনে কত ভেদ। ওদের জীবনে প্রচণ্ড রকমের ডিসিপ্লিন আছে, আছে প্রচণ্ড মুক্তি। প্রত্যেকে প্রত্যকের রুচিশীলতা, আনন্দময়তা যেভাবে উপভোগ করলো ট্রেনের একটি কামরায়; কেউ কারোর বিনোদনের অন্তরায় হলো না। v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আরও এক আনন দ

এছাড়াও পড়ুন:

জীবনে বহু কিছু করার পর ‘ধৈর্য-সহ্যে’ কপাল খুলছে গোলাম রসুলের

সবে সন্ধ্যা নেমেছে শহরের বুকে। খুলনা নগরের সেন্ট যোসেফ উচ্চবিদ্যালয়ের সামনের ফুটপাতে ছোট একটা দোকানের সামনে বেশ ভিড়। অর্ডার দিয়ে কেউ টুলে বসে আছেন, কেউ আবার প্রিয়জনকে সঙ্গে নিয়ে দাঁড়িয়ে গল্প করছেন। বিক্রেতা দুজনের চার হাত যেন চলছে সমানতালে। একজন ছোট ছোট ফুচকা বানাচ্ছেন, তো আরেকজন ভেলপুরির প্লেট সাজাচ্ছেন। আবার কখনো একজন পেঁয়াজ–শসা কুচি করে নিচ্ছেন আর আরেকজন বিল রাখা বা টিস্যু এগিয়ে দেওয়ায় ব্যস্ত।

নগরের আহসান আহমেদ রোডের সেন্ট যোসেফ উচ্চবিদ্যালয়ের সামনের একটি ছোট ফুচকা ও ভেলপুরির ভ্রাম্যমাণ দোকানের চিত্র এটি। দোকানের নামটাও বেশ অন্য রকম। ‘ধৈর্য-সহ্য ছোট ফুচকা ও ভেলপুরি স্টোর’। দোকানটি চালান গোলাম রসুল নামের একজন। বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা-১০টা পর্যন্ত চলে এই ভ্রাম্যমাণ দোকান। এই দোকানের ছোট ফুচকা বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

গোলাম রসুলের বাড়ি বাগেরহাটের মোল্লাহাট উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের পুরাতন ঘোষগাতী গ্রামে। সাত ভাই–বোনের সংসারে রসুলের বড় ভাই ভাজাপোড়া খাবারের ব্যবসা করতেন। বুঝতে শেখার পর থেকেই তাই এতেই হাতেখড়ি হয় রসুলের। তবে তাতে ঠিক পোষাচ্ছিল না। তাই বছর ৩০ আগে কিছু করার আশায় খুলনা শহরে আসেন গোলাম রসুল। তবে এই শহরে পুরোপুরি থিতু হতে পারেননি। নানা টানাপোড়েনে কখনো খুলনা, কখনো মোল্লাহাট, আবার কখনো ঢাকায় কেটেছে তাঁর সময়। ৪৮ বছরের এই জীবনে নানা রকম কাজ করেছেন। ব্যবসাও করেছেন অনেক কিছুর। তবে সেসব ব্যবসায় কেবল লোকসানই হয়েছে তাঁর। অবশেষে ‘ছোট ফুচকায়’ তাঁর কপাল খুলেছে।

কাজের ব্যস্ততার মধ্যেই কথা হয় গোলাম রসুলের সঙ্গে। রসুল বলেন, ‘আগে রিকশা চালাইছি। নানা রকম ব্যবসাও করছি। গ্রাম থেকে কিনে মাওয়া ফেরিঘাট আর ঢাকায় ডাব বেচছি। ওই ব্যবসায় অনেক মার খাইছি। মানুষ টাকা দেয় নাই। এখনো ৬০-৭০ হাজার টাকা পাব। ডাব ব্যবসায় মার খেয়ে দুই বছর আগে আবারও খুলনা শহরে আসি কিছু করা যায় কী না সেই জন্যি।’ খুলনা এসে আবারও রিকশার প্যাডেল ঘোরাতে থাকেন রসুল একই সঙ্গে মাথায় ঘুরতে থাকে চিন্তা। এরপর শীতের পিঠা বিক্রি শুরু করেন। শীত শেষ হতে আবারও অনিশ্চয়তা। এখন কী হবে!

গোলাম রসুল বলেন, ‘গরম চলে আসল, কী করব বুঝে পাচ্ছিলাম না। পরে খুলনার ৭ নম্বর ঘাট থেকে কিনে ভেলপুরি বেচছি। কিন্তু এতে হচ্ছিল না। এরপর চিন্তা করলাম আনকমন কিছু করা যায় কি না। গত বছরের কোরবানির ঈদের পর থেকে শুরু করি ছোট ফুচকা বিক্রি।’

দোকানটি চালান গোলাম রসুল নামের একজন। বিকেল ৪টা থেকে রাত ৯টা-১০টা পর্যন্ত চলে এই ভ্রাম্যমাণ দোকান

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজার জন্য সমব্যথী নারী
  • তৃণমূলের একজন কর্মীকেও হারাতে দেয়া যাবে না : রিয়াদ চৌধুরী
  • শেখ হাসিনার সন্ধান চেয়ে পাগলা মসজিদের দানবাক্সে চিঠি
  • কক্সবাজারের মেয়েটি
  • নড়াইলে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত
  • আত্মপ্রকাশ করল নতুন দল গণতান্ত্রিক নাগরিক শক্তি
  • ওল্ড ইজ গোল্ড, আবেগতাড়িত ভক্ত-অনুরাগীরা
  • আইভিএফ পদ্ধতিতে সন্তান জন্মদানের পর মা-বাবা জানলেন ভ্রূণটি অন্যের ছিল
  • বিলাসপুরে কারা–কীভাবে–কোথায় ককটেল বানান, কত টাকা পান
  • জীবনে বহু কিছু করার পর ‘ধৈর্য-সহ্যে’ কপাল খুলছে গোলাম রসুলের