আবহাওয়ার ব্যাপারে সামু যা বলে, তাই ঠিক হয়।
সকালবেলা খটখটে রোদের ভেতর, সামু পাগলা আকাশের দিকে চিকনভাবে তাকিয়ে, হঠাৎই চিক্কুর দিয়ে উঠেছিল...বিষ্টি বিষ্টি! বিষ্টি হইব রে!
তুলাপট্টিতে তখন চলছে ক্যারামের মেলা। তিনটা ক্যারাম পড়ে আঁচলপুর বাজারে। সকাল হতেই। সেখানে ৩×৪=১২ জন খেলে সত্যি, কিন্তু ৪০ জনেরও বেশির থাকে আনাগোনা। কেউ খুব জরুরি কাজেও বাজারে এসে ক্যারামের দর্শক যেমন হয়, তেমনি কেউ কেউ ঘুম থেকে উঠে বাড়ি থেকে বের হয় এই তুলাপট্টির সাদা-কালো নিয়ে। শফিকুল গেমটা জিতছিল, এরই মধ্যে সামুর ভবিষ্যৎবাণী–বৃষ্টি!
তা এই এপ্রিলের চিল মারা আবহাওয়াতে বৃষ্টি কোথা থেকে হবে কে জানে! অথচ সামু যেহেতু বলেছে, হওয়ার সম্ভাবনাই অধিক। কিন্তু বাঙালির ক্ষেত্রে যা হয়, আঁচলপুরের ক্ষেত্রে তা আরেকটু বেশিই হয়–
ফলে পশ্চাদ্দেশের মতো তুলাপট্টিও হয়ে যায় দুইভাগে বিভক্ত। এক ভাগের কথা… সামুর কথা মানে খনার বচন। বলেছে যখন তখন বৃষ্টি হবেই। আরেকভাগ সংখ্যায় কম, তবে গলার জোরে পোক্ত… বৃষ্টি হবে না। চান্স নাই। গুগলে দেখায় নাই।
ফলে বাজিটা হয় এই বৃষ্টিকে ধরেই।
সামুর ভবিষ্যৎবাণী মিললে রাজহাঁস খাওয়াবে মুরাদের দল, আর না মিললে রাজহাঁসের দায় রফিক ও তার গোষ্ঠীর। এই বাজিতে সবচেয়ে বেজার যে, সে হয়তো কতল হতে চলা রাজহাঁস, কিন্তু সবচেয়ে খুশি নির্দ্বিধায় সামু পাগলা। কারণ, রাজহাঁস পড়লে উদরপূর্তি হবে তার ভরপুর।
সাড়ে তিনটা পর্যন্ত আকাশে কোনো মেঘের ইঙ্গিত মেলে না অবশ্য। রফিক ও তার গোষ্ঠী খুশিতে নেচেও ওঠে বলা যায়। তবে এর অল্প পরেই দক্ষিণ আকাশে ছাইরঙা মেঘ। তুলাপট্টি ছেড়ে সবাই ততক্ষণে পুনর্ভবার পারে। পুরোনো ঠাকুরবাড়িটা পেরোলে বিস্তর ফাঁকা এক জায়গা। সেখান থেকে আকাশ নদীর ওপর রং বদল করে। সাড়ে পাঁচটায় হায়েনার মতো লাফ দেয় মেঘটা। পুরো আকাশ অধিগ্রহণ করতে সময় নেয় মাত্রই কয়েক সেকেন্ড। শুরু হয় বৃষ্টির অপেক্ষা।
সারা তুলাপট্টি যখন বৃষ্টির অপেক্ষায়, তখন বৃষ্টিকে তুলোধুনো করছে রাবেয়া। আলটপকা এমন মেঘ, তার কাজের হিসাবে করে ফেলেছে ভীষণ গন্ডগোল। ছাগলটাকে সে গুজর ঘাটের ওইপাড়ে বেঁধে রাখে প্রতিদিন। গলার দড়িটা লম্বা হওয়ায় মাঠ চড়ে ঘাস খায়। শরীর-স্বাস্থ্য ফলে বেশ মজবুত। মাগরিবের আজানের সাথে সাথে ছাগলটাকে নিয়ে আসে রাবেয়া। এই যাওয়া-আসার মধ্যে সে রাতের রান্নার জোগাড়-যন্ত্র করে। নুরুন্নাহারের উঠানে আড্ডা দেয়। পিউয়ের তিন মাসের ছাকে কোলে দোলায়; এবং কখনও কখনও ফিরোজার দেওয়া পান মুখে চিবায়। কিন্তু মেঘের এমন হঠকারিতায় উঠান আর টিনের চালার ওপর মেলতে দেওয়া কাপড়গুলোকে তার তুলতে হয় পাগলের মতো। সেসব না গুছিয়েই ছুটতে হয় গুজর ঘাটে। এপার থেকেই ছাগলটার ভ্যা ভ্যা আওয়াজ তাকে তাড়িত করে। জন্মের পর জন্তুটা এমন মেঘ দেখেনি। মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার অবস্থা তার। গুজর ঘাট পেরিয়ে যতক্ষণে ছাগলটার কাছে পৌঁছায় রাবেয়া, দেখে ছাগলটা স্বাধীন। উপড়ে ফেলেছে খুঁটি। স্বাধীনতা সর্বাংশেই ভালো কিছু, এমন জোরের মানসিকতা রাবেয়ার নেই। সে স্বাধীন ছাগলে পরাধীন করে তুলতে দিশা পায় না। ছুটতে শুরু করে ছাগলটার পেছনে। কিন্তু বেচারার বয়স পঁচিশ হলে কী হবে, অল্প বয়সের বিয়ে আর সারাদিনের হাড়ভাঙা খাটুনি শরীরকে ভেঙেচুরে রেখেছে। ছাগলের পেছনে দৌড়াতে রাবেয়ার কষ্ট হয়। অথচ অন্য কোনো উপায় যে আছে, সেও তো নয়.
ছাগল না রাবেয়া তাই দৌড়াচ্ছে তার আশার পেছনে।
আর আশাটা ততক্ষণে পুনর্ভবার পার ধরে, এক গম্ভীর থমকানো আকাশকে উপেক্ষা করে, লাফ দিয়ে ঢুকে যাচ্ছে কাচারি বাড়িতে।
কাচারি বাড়ির দুর্নাম আছে বিস্তর।
কাচারি বাড়িটা এককালে জমিদার বাড়িরই অংশ ছিল। এখন শুধুই আঁচলপুরের সীমান্তের শেষাংশ হয়ে ঝুলে আছে নদীপারের কিছু ঝুনা মাটি নিয়ে। লোকে বিশ্বাস করে, কাচারি বাড়িতে প্রেত থাকে। ছাগল অত্যন্ত ছাগল বলেই এসব বিশ্বাসের ধার ধারে না। কাচারি বাড়িকেই তার মনে হয় নিরাপদতম জায়গা। ঝুলন্ত বাড়িটার অন্ধকারের ভেতর সে লাফ দেয়– বৃষ্টি ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠিক তখনই।
অনেক দূরে মুরাদ বাহিনী লাফিয়ে ওঠে রাজহাঁস জেতায়। কিন্তু এদিকে ভয়ে বুকটা শুকিয়ে আসে রাবেয়ার। বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে সে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না কাচারি বাড়ির ভেতরে সে যাবে কিনা!
তখনই ভেতর থেকে আর্তি ভেসে আসে ছাগলটার। আর্তি ওঠে রাবেয়ার কণ্ঠেও। ভেজা মাটিতে রাবেয়ার প্রবন্ধের মতো পায়ের চিহ্ন পড়ে থাকে। ছুটতে থাকে রাবেয়া। পাগলের মতো। কাচারি বাড়ির দিকে… যেদিকে লোকগল্প আছে সত্য, প্রেত আছে সত্য; কিন্তু তার একটু ভালো থাকার আশাটিও তো আছে।
বজ্রপাত হয় কোথাও, সন্ধ্যার পুনর্ভবাকে তার আলো ফালি ফালি করে দিয়ে যায়। গুমগুম আওয়াজে ভরে যায় আঁচলপুর মফস্বল। আর এতসব আলো ও আওয়াজের ভেতর চাপা পড়ে যায় কাচারি বাড়ির অন্ধকার ও নৈঃশব্দ্যের প্রাচীন আতঙ্ক।
সে আতঙ্ক স্পষ্ট হয় ভোরের আলোয়। পরদিন সকালে।
২.
মতিন শেখের বাড়িতে দুইটা ল্যাট্রিন।
একটা কুয়া পায়খানা। মলপতনের ঝপাৎ আওয়াজ পাওয়া যায় বসে থাকলেই। ভরভর হয়ে উঠলে পতনের সাথে সাথে নিচ থেকে উঠে আসা থিকথিকে ঐতিহ্য ভরিয়ে তোলে আসনসমগ্রকে। অন্যটা আরেকটু আধুনিক। স্ল্যাবের। বেশ ছড়িয়ে আরাম করে বসা যায়। মতিনের বাড়ির সবাই দ্বিতীয়টিই ব্যবহার করে। কিন্তু ইট-টিন তোলা দুটো ল্যাট্রিনেই মতিনের অরুচি। বড় ছোট আর বদ্ধ সেসব ঘর। কাঁচা গন্ধও সেসবে সকালবেলা। ভোরটা মতিনের তাই খালাস হয় জমিরুদ্দিনের ধানি জমিতে। জমিরুদ্দিন অবশ্য এ নিয়ে কোনো অনুযোগ কখনও করেছে, তা জানা যায়নি। বরং জমিরুদ্দিনের বউ মাঝে মাঝেই বলে ওঠে– মতিন কাকা যে রোজই তুমার ভুঁইয়ে হাগতে যায়, তুমি কিছু ক্যহবার পারো না জি?
জমিরুদ্দিন বলে, প্রত্যেকি দিন আধা সের ক্যরা সাহার দিছে। হামি আর কী ক্যহতে যাব?
বউ মুখ ঝামটায়– দেখবা, একদিন চাইল থেকাও মতিন কাকার গুহের গন্ধ অ্যাসবে… তখন কহিও হামাকে!
জমিরুদ্দিন বিরসমুখে ভাত খায় তখন। ভাত তারই জমির। সে কোনো গন্ধ পায় না অবশ্য। কিন্তু কেমন যেন অস্বস্তি হয়। এই অস্বস্তি থেকেই মতিন শেখকে সে নিষেধ করেছিল, তার ভুঁইয়ে হাগনা মানা হে!
মতিন সে কথা শুনলে তো!
আজও মতিন একটু একটু ভোরে বেরিয়েছে। রাতভর বৃষ্টি হওয়ায় আলের ঘাসগুলোতে মুক্তোর মতো পানি জমে আছে। মতিনের স্যান্ডাক স্যান্ডেল ভিজে ভিজে যাচ্ছে। মতিন আগের দিন যেখানে বারুদ জমিয়ে রেখেছিল, সেটাকে পেছনে একটু এগিয়ে যায়। গতরাতে কাঁঠাল খেয়েছে… তার মন বলছে সব কাঁঠাল হজম হয়নি। অবশ্য হয়েছে কি হয়নি তা একটু পরেই টের পাবে। পেটে বাতাস যাচ্ছে… ছেড়ে দিতে হবে।
লুঙ্গিটা তুলে বসেই গিয়েছিল মতিন। কিন্তু তখনই একটা বুড়ো আঙুল দেখতে পায় সে। ধানের চারার ভেতর দিয়ে কাদামাখা আঙুলটা যেন তাকে ভেংচি দিচ্ছে। ওদিকে কাঁঠালের চাপও আছে। ফলে আঙুলের সাথে শরীরটা দেখার সঙ্গে সঙ্গেই মতিনের আটকে থাকা কাঁঠাল খালাস হতে থাকে। মতিনের চোখ যতক্ষণ পর্যন্ত শরীরটার মুখ পর্যন্ত যায়… ততক্ষণে মতিন এই সিদ্ধান্তে আসতে পারে যে, কাঁঠাল হজম হয়নি। না হলে না, কিন্তু এরকম খুবলে থাকা শরীরটা কার?
লোকজন যতক্ষণে খুবলে খাওয়া শরীরটা উদ্ধার করতে পারে, ততক্ষণে বেলা এগারোটা।
রোদের তেজ তীব্র, ডেডবডিটা জমিতে আটকে আছে। পুলিশ এসে পুরোটা প্রেতের কাঁধে দেওয়ার আগেই আঁচলপুরে রাষ্ট্র হয়ে গেছে, মারা গেছে রাবেয়া। যার শরীরে তখনও প্রেতের কামড়ের দাগ অক্ষত।
রাবেয়ার স্বামী ইকবাল কাঁদতে ভুলে যায়। বউকে যে সে খুব ভালোবাসে তা না। কিন্তু এখন হঠাৎ করে পাশের মানুষটার নাই হয়ে যাওয়া সে মেনে নিতে পারে না। বাড়ির রান্নাবান্না কীভাবে কুলিয়ে উঠবে তাও সে বুঝতে পারে না। এরই মধ্যে কাচারি বাড়ির কাছ থেকে ছাগলটার খাল উদ্ধার হয়। ইকবাল এইবার এসে কাঁদতে পারে। বউ হারানোর কষ্ট, ছাগল হারানোর বেদনা এসবের ঊর্ধ্বে উঠে কান্নাটা তার নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ার কান্নাতে বদলে যেতে থাকে। সামু পাগলা হঠাৎ এসে ঘোষণা দেয়– মরবি! সব মরবি!
তা মরবে তো আসলে সবাই। কিন্তু সামু পাগলার এমন ঘোষণা হঠাৎই সবার ভেতর ত্রাসের সৃষ্টি করে। সামু পাগলা হাসে। তাকে ঘাঁটানোর সাহস আঁচলপুরের কারও হয় না।
৩.
রাবেয়ার মৃত্যুর চল্লিশ দিন পার হয়।
চল্লিশা উপলক্ষে একটা আয়োজন করে ইকবাল। বাড়িতে মুরুব্বিরা আসে। দোয়া হয়। ওলিমা বিতরণও হয়। আর সেদিনই ইকবাল ঘোষণা দেয়, রান্নাবান্নার যেহেতু খুব অসুবিধা… সে আরেকটা বিয়ে করতে চলেছে। সবাই প্রশংসা করে জাফরের। পুরুষ মানুষের শোক নিয়ে পড়ে থাকলে চলে না। ইকবাল একটা স্কুলে মাস্টারি করছে। স্কুল এমপিওভুক্ত হয়নি এখনও, কিন্তু হতে কতক্ষণ!
ফলে পাত্র হিসেবে ইকবাল ফেলে দেওয়ার মতোও না আসলে। সম্বন্ধ আসতে শুরু করে তার।
নয়ন সর্দারের ছোট মেয়ে কি বিলকিস বানুর বড় কন্যা… জাফরের জন্য কেউ না কেউ প্রতিদিনই পাত্রী হয়ে উঠছে। কিন্তু ইকবাল কোনো পাত্রীতেই সম্মতি জানাচ্ছে না। এমনকি পাত্রী দেখতে যাওয়ার প্রস্তাবও যাচ্ছে এড়িয়ে। এ নিয়ে গুজর ঘাটে কথা বেশ জমে। লুঙ্গির ভেতর সাবান আর হাত চালাতে চালাতে মইন ব্যাপারী বলে, মাগিমুখা তো ইকবাইল্লা… বউয়ের শোকই ভুলতে প্যারে নাই…
পাথরের ওপর কাপড় থুপথুপায় বিলকিস বানু। মোটাসোটা পুষ্ট শরীর। কাপড় কাচার আন্দোলনে শরীরও আন্দোলিত। মইন ব্যাপারী ওই দেখতে দেখতেই সাবান ঘষে চলেছে। অন্য সময় হলে বুকের কাপড়টা ঠিক করে নিত বিলকিস… কিন্তু মইন ব্যাপারী তার পক্ষেই যেহেতু দাঁড়িয়েছে, সিনা আরেকটু আলগাই করে দেয় বরং সে। বলে, জারুয়ার ঘরের জারুয়া! ভাগ্যিস হামার বেটি ওই ঘরে যায় নাই!
কারও বেটিই শেষ পর্যন্ত ইকবালের ঘরে যায় না। যে যায়, সে এই আঁচলপুরের বেটি না আসলে। সে রুনা। রাবেয়ার ছোট বোন। কেবল ম্যাট্রিক দিল। লম্বা পাতলা। চুলগুলো লালচে। লাল শাড়ি পরে ইকবালের সাথে ভ্যানে চলে যখন সে আঁচলপুরে ঢোকে… আস্ত আঁচলপুরের মুখ হাঁ হয়ে যায়। ইকব্যাল্লার মনে তাইলে এই ছিল?
রুনা দেখতে অসুন্দর না। স্বামীর ঘরে খাবার ও সোহাগ পেলে শরীরে যে লালিত্য আসতে সময় লাগবে না এ কথা সবাই বিশ্বাস করে। সে হিসাবে জাফরের অঙ্ক ঠিকই আছে। কিন্তু কেন কে জানে, জাফরের এই সিদ্ধান্তে পুরো আঁচলপুরে ফিসফিসানি শুরু হয়। শুরুটা অবশ্য গুজর ঘাটেই ঘটে। বিলকিস বানুর সেদিন কোনো কাপড় ছিল না, ব্যপারীর হাতেও ছিল না সাবান। তবু তারা অনেকক্ষণ কল্পিত সাবান মাখে, কাপড় থুপথুপায়। আর কাচারি বাড়ির ব্যাপারে এক চরম সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
আকাশে মেঘ। রাবেয়ার স্বাধীন ছাগলটা পাগলের মতো ছটফট করতে করতে ছুট দেয় কাচারির দিকে। আর সেটা দেখে রাবেয়াও পাগলের মতো দৌড় দেয় সেদিকেই। কাচারি বাড়ির কিছু দুর্নাম তো আছেই। মূর্খ ছাগল তা জানে না। আকাশে মেঘের তর্জন-গর্জন দেখে ছাগলটা লাফিয়ে ওঠে। ঢোকে একেবারে ভেতরে। ঢোকে রাবেয়াও। আর তারপর যা দেখে তাতেই তাকে মরতে হয়?
কী দেখে রাবেয়া?
এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলতে থাকে চায়ের টঙে, মাছবাজারে, তুলাপট্টিতে।
উমহু পিশাচ রাবেয়া দেখেনি। সেইদিন কি আর আছে যে পিশাচ এখন রাতদিন কাচারিতে থাকবে? থাকে না এখন ওখানে কিছু। কিছুই নেই আসলে আর সেখানে।
তাহলে রাবেয়া কী দেখেছিল?
অন্ধকার ঘরের ভেতর হঠাৎই একটা আলো এসে পড়েছিল, একটা বজ্রপাত কাছে কোথাও, আর সেই আলোতে রাবেয়া দেখেছিল ইকবালকে। রাবেয়ার ভাতার।
কিন্তু ইকবাল ওই পিশাচের ঘরে কী করছিল?
আরে পিশাচ থাকে না ওখানে আর!
কিন্তু ওই সন্ধ্যায় ইকবাল ওইখানে কী করছিল?
এবার সবার মুখের মধ্যে চাপা উত্তেজনা। কণ্ঠে ফিসফিসানি– ওইটাই তো! ইকবাল ওইখানে তখন ল্যাংটা রে! পুরা উদাম। গায়ে কুনো সুতাও ছিল না!
ক্যান?
ইকব্যাল্লা কি একলা ছিল মনে ক্যরেছিস?
ত্যাহলে?
ইকব্যাল্লার সঙ্গে ছিল রাবেয়ার বহিন… ওই রুনা… সেও ল্যাংটা! একটা সুতাও ছিল না গায়ে!
কী কহছিস?
রাবেয়ার বহিনের সঙ্গে ইকব্যাল্লার ইটিস-পিটিস ম্যালাদিনের… এইবার ধরা খ্যাছে দেখা রাবেয়াকে মাইরা ফেইলা পুঁইতা রাখছিল… শরীরের মাংস খুবলায়া দিছে য্যান তামাম দুনিয়ার মানুষ ভাবে এই পিশাচের কাম!
গল্প বাতাসে ডানা মেলে। ছড়াতে থাকে আগুনের মতো। এ গল্পে এত নাটকীয়তা, এত কামজ ছবি যে প্রত্যেক জটলায় মুখ্য এটাই হয়ে ওঠে। এবং ক্রমে জটলাগুলো একাট্টা হতে থাকে। আর তারা সিদ্ধান্ত নেয়, ইকবালের এমন নীচ কাজে বাধা না দিলে কার্যত তারা আর মানুষই থাকতে পারছে না! জটলা নড়ে ওঠে। জটলা এগিয়ে চলে। গভীর রাতে ইকবালের বাড়ির সামনে দাঁড়ায়। জটলা ফিসফিসায়। তারপর তারা বাড়িটাতে আগুন দেয়। ভেতর থেকে ইকবাল আর রুনা চেঁচায়। জটলা হিসহিসিয়ে বলে, এইগুলা পিশাচ! এইগুলারে মাইরা ফেলাই দরকার! মর শালারা মর!
জটলা হাসতে থাকে। জটলা খুশি হয়। অনেক দূর থেকে সামু পাগলা চেঁচায়– মরবি! মরবি! সবাই মরবি! মরবি! v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইকব য ল ল ইকব ল র ছ গলট র জ ফর র মত ন র অবশ য আওয় জ
এছাড়াও পড়ুন:
আবার বানানো হচ্ছে ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’, সকাল ৯টায় আনন্দ শোভাযাত্রা শুরু
বর্ণাঢ্য কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্যাপিত হতে যাচ্ছে বাংলা নববর্ষ-১৪৩২। নতুন বছরকে বরণ করে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। আগামীকাল সোমবার সকাল ৯টায় শুরু হবে আনন্দ শোভাযাত্রা। শোভাযাত্রার জন্য বানানো ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ পুড়ে যাওয়ার পর সেটি আবার নতুন করে বানাচ্ছেন চারুকলার প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।
গতকাল শনিবার রাতেই থার্মোকল বা শোলা দিয়ে নতুন করে ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি বানানোর কাজ শুরু হয়। আজ রোববার রাত সাড়ে ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বেশির ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। রাতের মধ্যেই পুরো কাজ শেষ হতে পারে। নতুন করে তৈরি করা এই ‘মোটিফের’ উচ্চতা হতে যাচ্ছে ১৬ ফুট।
আজ সন্ধ্যায় চারুকলা ঘুরে দেখা যায়, শোভাযাত্রার জন্য তরমুজের ফালি, বাঘ, ইলিশ, শান্তির পায়রা ও পালকির মোটিফ প্রস্তুত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুন্দর কাজ হচ্ছে। আশা করা যায়, আমরা মোটিফ তৈরির কাজ শেষ করতে পারব।’
এর আগে গতকাল শনিবার সকালে চারুকলা অনুষদে ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ ও ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফ দুটি পোড়া অবস্থায় দেখা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ধারণা, ভোরে সেগুলো আগুনে পুড়ে যায়। এদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেছিলেন, ‘আমরা একটি উদ্যোগ নিয়েছিলাম, সেখানে বাধা এসেছে। এ ধরনের কাজে কিছু বাধা আসেই, ষড়যন্ত্র থাকবেই।’
চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। বানানো হয়েছে বাঘ ও ৩৬ জুলাই মোটিফ