চট্টগ্রামের ডিসি হিলে নববর্ষ উদযাপনের অনুমতি মিলেছে
Published: 10th, April 2025 GMT
অবশেষে চট্টগ্রাম নগরের ডিসি হিলে বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি মিলেছে। বৃহস্পতিবার পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের সঙ্গে সভা শেষে এ তথ্য জানান জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। তবে সকাল ৭টায় শুরু হয়ে বিকেল ৪টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করার শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এদিকে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) জানিয়েছে, পহেলা বৈশাখ উদযাপন ঘিরে কোনো হুমকি নেই।
চট্টগ্রাম নগরের ডিসি হিলে প্রায় অর্ধশতাব্দী ধরে বর্ষ বিদায় ও বর্ষবরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করে আসছে পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদ। করোনাকাল থেকে দু’দিনের অনুষ্ঠান এক দিনে নিয়ে আসে। ১৪৩২ বাংলা নববর্ষ উদযাপনের অনুমতি চেয়ে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করে উদযাপন পরিষদ। মঙ্গলবার সভা শেষে তাদের অনুমতি দেওয়া হবে না বলে জানানো হয়। এতে বর্ষবরণ আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হলে গতকাল পরিষদের নেতাদের সঙ্গে সভা শেষে অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি জানানো হয়।
পহেলা বৈশাখ উদযাপন পরিষদের সমন্বয়ক সুচরিত দাশ বলেন, ‘বর্ষবরণ উদযাপন অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি পেয়েছি। শুরুতে নিরাপত্তা প্রতিবেদন নেতিবাচক উল্লেখ করে অনুমতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ইস্যু নেই বলে জানানো হয়। ৪টার মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করার কথা বলা হয়েছে। আমরা এই সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠান শেষ করার চেষ্টা করব।’
আজ নগরের দামপাড়া সিএমপি সদরদপ্তরে নিরাপত্তা সমন্বয় সভায় সিএমপির উপকমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) রইছ উদ্দিন বলেন, ‘বর্ষবরণ অনুষ্ঠানকে ঘিরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। পাশাপাশি পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। বর্ষবরণ অনুষ্ঠান ঘিরে কোনো নিরাপত্তা হুমকি নেই। তবে বিভিন্ন ধর্মীয় বক্তা যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন, সেগুলো আমরা পর্যবেক্ষণে রেখেছি।’
নগরের সিআরবি শিরীষতলায় বর্ষ বিদায় ও বরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করে নববর্ষ উদযাপন পরিষদ। এবারও তারা দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে। পরিষদের উৎসব কমিটির আহ্বায়ক হাসান মারুফ রুমি বলেন, ‘নিরাপত্তা নিয়ে সমন্বয় বৈঠকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। আমরা জাঁকজমকপূর্ণভাবে অনুষ্ঠান আয়োজন করছি।’
সভায় সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হুমায়ুন কবিরের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন সিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) আসফিকুজ্জামান আকতার, উপপুলিশ কমিশনার (পশ্চিম) হোসাইন মোহাম্মদ কবির ভূঁইয়া ও উপপুলিশ কমিশনার (ডিবি-পশ্চিম) মাহবুব আলম খান।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স এমপ ন র অন স এমপ নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
নববর্ষ উপলক্ষে গুলশানে থাকছে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান
গুলশান সোসাইটির উদ্যোগে এবং ‘অলিগলি বর্ষবরণ বন্ধুগণ’–এর আয়োজনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় উদ্যাপিত হতে যাচ্ছে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উৎসব ‘অলিগলি হালখাতা’। এবার উৎসব হবে দুই দিনব্যাপী; এর মধ্যে ১৩ এপ্রিল হবে চৈত্রসংক্রান্তি এবং এর পরদিন অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল বাংলা বর্ষের প্রথম দিন হবে বর্ষবরণ উৎসব। এবারের আয়োজনে চারু কারু প্রদর্শনী, পালা গান, আলপনা, নৃত্য অনুষ্ঠান এবং গল্প–আলাপসহ নানা আয়োজন থাকবে।
আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্কে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন আয়োজকেরা। গুলশান সোসাইটির উদ্যোগে এবং ‘অলিগলি বর্ষবরণ বন্ধুগণ’ এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন গুলশান সোসাইটির সভাপতি ব্যারিস্টার ওমর সাদাত, মহাসচিব সৈয়দ আহসান হাবীব, সদস্য শ্রাবন্তী দত্তসহ কমিটির অন্য সদস্যরা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারের দুই দিনব্যাপী বর্ষবরণ ১৪৩২ ‘অলিগলি হালখাতা’ অনুষ্ঠিত হবে গুলশানের বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্কে। আয়োজনের প্রথম দিন থাকবে চৈত্রসংক্রান্তির আয়োজন। এদিন বিকেল ৪টা থেকে চারু কারু প্রদর্শনী, রাত ৮টায় ইসলাম উদ্দিন পালাকারের পালা গান, রাত ৯টায় আলপনা আলাপ, রাত ১০টায় পার্কের সামনে থেকে গুলশান–২ মোড় পর্যন্ত রাস্তাজুড়ে আলপনা অঙ্কন করা হবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ ও বিশিষ্ট নাগরিকেরা এতে অংশগ্রহণ করবেন।
বাংলা নতুন বছরের দিন, অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখের দিনব্যাপী উৎসব শুরু হবে সকাল থেকেই। এদিন সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে থাকবে রেচেল প্রিয়াঙ্কা ও তাঁর দলের বর্ষবরণ নৃত্য। এরপর অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাবেন অন্তর্বর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদ, অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ এবং গুলশান সোসাইটি ও অলিগলি-বর্ষবরণ বন্ধুরা। এরপর সকাল ১০টায় ব্যান্ডদল জলের গানের পরিবেশনায় থাকবে ‘গানালাপ’।
এবারের বর্ষবরণ উৎসবে আরও থাকবে চিত্রশিল্পীদের অংশগ্রহণে ‘আর্ট ক্যাম্প’। এতে থাকবেন চিত্রশিল্পী ফরিদা জামান, কনকচাঁপা চাকমা, শিশির ভট্টাচার্য, জামাল আহমেদ, মোহাম্মদ ইউনুস, আহম্মেদ শামসুদ্দোহা, শেখ আফজাল, মোহাম্মদ ইকবাল, বীরেন সোম, আনিসুজ্জামান, বিশ্বজিৎ গোস্বামী। এ আয়োজনও হবে সকাল ১০টায়। এরপর সকাল ১১টায় ‘সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ’ শীর্ষক ‘ভাবালাপ’–এর প্রথম পর্বে কথা বলবেন সাংবাদিক নূরুল কবীর, সংস্কৃতিজন সারা যাকের, নাট্য ব্যক্তিত্ব আফজাল হোসেন এবং অধ্যাপক প্রশান্ত ত্রিপুরা। এ পর্বে সঞ্চালনা করবেন সাঈদ ফিরদৌস।
এরপর বেলা ১২টায় শুরু হবে ‘ভরদুপুরের গল্পসল্প’। ‘ভাবালাপ’–এর দ্বিতীয় পর্বে ‘জনপরিসরে নারীর উপস্থিতি’ নিয়ে আলাপ করবেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ব্যারিস্টার শুক্লা সিরাজ, শিক্ষক মিথিলা মাহফুজ, আদিবাসী অ্যাকটিভিস্ট ডালিয়া চাকমা। বিকেল ৪টায় পাড়ার বাচ্চাদের সমবেত নৃত্যে অংশ নেবে গুলশান-বনানী-বারিধারা-উত্তরা অঞ্চলের শিশু–কিশোরেরা। ‘সব সখি মিলি গাই মঙ্গলগান’–শীর্ষক আয়োজনটি শুরু হবে বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে; এলকেজি স্টুডিওর পরিচালনায় এতে গাইবেন সভ্যতা, সুমেল, আনান, জয়িতা, নাভিন, লাবিক।
দিনব্যাপী আয়োজনে সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে সমগীত গানের দলের পরিবেশনা, সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে বাপ্পা মজুমদার ও দলছুটের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে পর্দা নামবে আয়োজনের।
আয়োজকেরা বলছেন, একটি প্রগতিশীল সমাজ গড়তে প্রয়োজন শিল্প-সংস্কৃতি-শিল্পীর নিরাপদ মর্যাদাপূর্ণ কদর, শুধু ভালোবাসা তার জন্য যথেষ্ট নয়। এমন একটা সংস্কৃতি গড়ে তোলা তাঁদের এই উদ্যোগের অন্যতম উদ্দেশ্য। যখন সমাজে নানামুখী বিদ্বেষ-ঘৃণা-ভয়-উগ্রতা, নারীর প্রতি সহিংসতা দেখা যায়, এ সময় সেই সংকট অতিক্রম করতে উদারনৈতিক মানবতাবাদী ধারার সংস্কৃতিই হতে পারে পাথেয়।