রাতে বাবার লাশ দাফন করে সকালে দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে সাবরিয়ান ইসলাম সেতু। অন্যদিকে রিয়া তাসফিয়া এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে বাড়িতে এসে দেখে তার বাবা আর নেই। সেতুর বাড়ি ঝালকাঠির কাঁঠালিয়ায়, রিয়ার পটুয়াখালীর বাউফলে।  
গতকাল বৃহস্পতিবার কাঁঠালিয়া সদর সিনিয়র ফাযিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে আরবি প্রথম পত্র বিষয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয় সেতু। সেতুর বাবা সিরাজুল ইসলাম ইসমাইল (৫০) ছিলেন উপজেলার সদর ইউনিয়নের পশ্চিম আউরা গ্রামের বাসিন্দা। কাজ করতেন পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ায় জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিসে অফিস সহকারী পদে। গত বুধবার বিকেলে ঢাকার একটি বেসকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। 
সিরাজুলের স্ত্রী সাহিদা বেগম স্বামীকে হারিয়ে পাগলপ্রায়। কাঁদতে কাঁদতে স্বামীর লাশের পাশে বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন। 
স্থানীয় ইউপি সদস্য বাদল মাহমুদ বলেন, সিরাজুল ইসলাম পরিবারের একমাত্র উপাজর্নক্ষম ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর বৃদ্ধা মা, স্ত্রী, এক মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। তাঁকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে পরিবারটি। 
কাঁঠালিয়া সদর সিনিয়র ফাযিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবুল কালাম আজাদ বলেন, সাবরিয়ান ইসলাম সেতু তাঁর মাদ্রাসা থেকে এ বছর মানবিক শাখায় দাখিল পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। বাবার মৃত্যুর কষ্ট বুকে চেপে সে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এ ঘটনায় তারা শোকাহত। 
বুধবার রাতে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে সিরাজুলের লাশ দাফন করা হয়। 
এসএসসি পরীক্ষার্থী মেয়ে রিয়াকে কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান। তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়া হয় হাসপাতালে। আর রিয়াকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় পরীক্ষার হলে। রিয়া পরীক্ষা দিয়ে বাড়িতে এসে দেখে তার বাবা আর নেই। 
গতকাল সকাল ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। মাহবুবুর রহমান বাউফলের কালিশুরী এস.

এ. ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। রিয়া একই বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী।
মাহবুবুর মেয়েকে নিয়ে কেশবপুরের ভরিপাশা এলাকার বাড়ি থেকে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে মোটরসাইকেলে পরীক্ষা কেন্দ্র কালিশুরী যাওয়ার উদ্দেশে রওনা দেন। পথিমধ্যে গাজী মাঝি এলাকায় পৌঁছালে মোটরসাইকেল থেকে মাহবুবুর পড়ে যান। এ সময় রিয়া বাবাকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে চলে যায়। মাহবুবুরকে চিকিৎসার জন্য বরিশালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। 
কালিশুরী এস.এ. ইনস্টিটিউশন কেন্দ্রের পরীক্ষার হলে গিয়ে দায়িত্বরত শিক্ষকদের কাছে রিয়া জানতে চায়, তার বাবা কেমন আছেন। রিয়ার মন খারাপ হলে পরীক্ষায় ভালো ফল হবে না ভেবে দায়িত্বরত শিক্ষক তাকে বলেন, ‘তিনি সুস্থ আছেন। ভালো আছেন। তুমি ভালোভাবে পরীক্ষা দাও, বাকিটা আল্লাহ ভরসা।’ পরীক্ষা শেষে বাড়িতে ফিরে তাসফিয়া দেখতে পায় বাড়ির আঙিনায় খাটে বাবার নিষ্প্রাণ দেহ পড়ে আছে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ক ষ পর ক ষ য় অ শ ন ম হব ব র ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে কেন্দ্রে বিএনপি নেতার ঘোরাঘুরির ভিডিও

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি জাফতনগর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নুর উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের অভিযোগ উঠেছে। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটের দিকে উপজেলার জাহানপুর আমজাদ আলী আবদুল হাদি ইনস্টিটিউশন কেন্দ্র থেকে তিনি বের হচ্ছেন।

আজ বাংলা প্রথম পত্র দিয়ে এবারের এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের বাধ্যবাধকতার বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান ইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদ প্রথম আলোকে জানান, পরীক্ষা চলাকালে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি ছাড়া কেউই পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ম্যাজিস্ট্রেট, শিক্ষা বোর্ডের ভিজিল্যান্স দলের সদস্যরা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন।

পরীক্ষা চলাকালে কেন্দ্রে প্রবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে নুর উদ্দিন খান বলেন, ‘আমার ভাতিজি ওই কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে। তাকে পৌঁছে দিতে পরীক্ষা শুরুর আগে কেন্দ্রে গিয়েছিলাম। আমি সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গিয়েছিলাম।’

ভিডিওতে ১২টা ১৫ মিনিটের দিকে বের হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমি ১২টার দিকে কেন্দ্রের বাইরে ছিলাম। ভেতরে ঢুকিনি। বাইরে থেকে কুশল বিনিময় করেছি। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে।’

প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিএনপি নেতা নুর উদ্দিন খান পরীক্ষা শুরুর পর থেকে অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করেন। কেন্দ্র সচিবের কক্ষেও যান।

এ বিষয়ে কেন্দ্র সচিব মফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নুর উদ্দিন খান পরীক্ষা শুরুর আগে কেন্দ্রে ঢুকেছিলেন। পরে আমি বুঝিয়ে–শুনিয়ে বের করে দিয়েছি।’ কেন কেন্দ্রে প্রবেশ করেছেন—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কথা তো এইটাই…। আজকে প্রথম দিন তো এমনি গার্ডিয়ান (অভিভাবক) কিছু তো ঢুকছে। ওদের সঙ্গে তাঁকেও (নুর উদ্দিন খান) দেখলাম। পরে আমি বুঝিয়ে বের করে দিয়েছি।’ তাঁর কোনো আত্মীয় পরীক্ষা দিচ্ছেন কি না, এমন প্রশ্নে কেন্দ্র সচিব জানান, তাঁর জানামতে নুর উদ্দিন খানের কোনো ছেলে–মেয়ে, ভাতিজা, ভাতিজি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না।

তবে পরীক্ষা চলাকালে নুর উদ্দিন খান কেন্দ্রে ছিলেন বলে নিশ্চিত হয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে নুর উদ্দিন খানের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গেছে। পরীক্ষা চলাকালে তিনি কোনোভাবেই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেন না। এ জন্য তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসককেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বোরহানউদ্দিনে হত্যার ভয় দেখিয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগ
  • শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহ রোধ করতেই হবে
  • নাটোরের নিখোঁজ সেই এসএসসি পরীক্ষার্থীকে পাওয়া গেছে
  • এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল শহীদ আনাস-নাঈমা-সাফওয়ান, তাদের পরিবারে শুধুই হাহাকার
  • এসএসসি পরীক্ষার হল থেকে ফিরে বাবার লাশ কাঁধে নিল নাহিদ, এলাকায় শোক
  • নিখোঁজ এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলের সন্ধানে কেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন বাবা
  • ‘সবার ছেলেমেয়ে আজ পরীক্ষা দেয়, আর আমার মাহফুজ নেই’
  • ফরম পূরণ করেও প্রথম দিনে পরীক্ষা দেয়নি প্রায় ২৭ হাজার পরীক্ষার্থী
  • এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে কেন্দ্রে বিএনপি নেতার ঘোরাঘুরির ভিডিও