বাংলা নববর্ষ উদযাপনকে কেন্দ্র করে যেকোনো ষড়যন্ত্র বা সহিংসতার শঙ্কা মোকাবিলায় সরকার এবং প্রশাসনের প্রতি সর্বোচ্চ সতর্কতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় কবিতা পরিষদ।

বৃহস্পতিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন নস্যাতের ষড়যন্ত্রে বিরুদ্ধে’ ডাকা সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানানো হয়। এতে লিখিত বক্তব্য রাখেন কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মোহন রায়হান।

তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে বের হওয়া শোভাযাত্রা আজ একটি ইউনেস্কো স্বীকৃত বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। কিন্তু কিছু কিছু গোষ্ঠী এটিকে মূর্তিপূজা আখ্যা দিয়ে কটূক্তি করছে। এটি প্রকৃত অর্থে একটি প্রতীকী প্রতিবাদ ও শুভবোধের বহিঃপ্রকাশ, যা বাঙালি সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে বিশ্বমঞ্চে আমাদের পরিচয় তুলে ধরছে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রেস ক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে পহেলা বৈশাখ আয়োজনে বাঙালিসহ উপজাতিদের তাদের জাতিসত্ত্বাকে ধারণ করে এই উৎসবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এটা প্রশংসার দাবিদার। 

কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রেজাউদ্দিন স্টালিন বলেন, গাজায় সংহিতার বিরুদ্ধে জাতীয় কবিতা পরিষদ পহেলা বৈশাখের উৎসব শোভাযাত্রায় প্ল্যাকার্ড বহন করবে। 

কবিতা পরিষদের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য মতিন বৈরাগী বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল নিজেদের অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য ধর্মের নামে ইচ্ছেমতো বাণী তৈরি করে প্রচার করে। সাধারণ মানুষ জাতির সঙ্গে এই ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে খুঁজে দেখে না কারণ, এ দেশের অধিকাংশ সাধারণ মানুষই ধর্ম ও সংস্কৃতির ব্যাপারে অজ্ঞ।

কবিতা পরিষদের সহসভাপতি শহিদুল্লাহ ফরায়জী বলেন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে পহেলা বৈশাখ উৎসবকে আমরা সর্বজনীন করে তুলতে পারি।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহিন রেজা বলেন, মঙ্গল শোভাযাত্রায় অমঙ্গলের যেন কিছু না হয়, সেদিকে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

নববর্ষ উপলক্ষে গুলশানে থাকছে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান

গুলশান সোসাইটির উদ্যোগে এবং ‘অলিগলি বর্ষবরণ বন্ধুগণ’–এর আয়োজনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় উদ্‌যাপিত হতে যাচ্ছে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উৎসব ‘অলিগলি হালখাতা’। এবার উৎসব হবে দুই দিনব্যাপী; এর মধ্যে ১৩ এপ্রিল হবে চৈত্রসংক্রান্তি এবং এর পরদিন অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল বাংলা বর্ষের প্রথম দিন হবে বর্ষবরণ উৎসব। এবারের আয়োজনে চারু কারু প্রদর্শনী, পালা গান, আলপনা, নৃত্য অনুষ্ঠান এবং গল্প–আলাপসহ নানা আয়োজন থাকবে।

আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্কে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন আয়োজকেরা। গুলশান সোসাইটির উদ্যোগে এবং ‘অলিগলি বর্ষবরণ বন্ধুগণ’ এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন গুলশান সোসাইটির সভাপতি ব্যারিস্টার ওমর সাদাত, মহাসচিব সৈয়দ আহসান হাবীব, সদস্য শ্রাবন্তী দত্তসহ কমিটির অন্য সদস্যরা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এবারের দুই দিনব্যাপী বর্ষবরণ ১৪৩২ ‘অলিগলি হালখাতা’ অনুষ্ঠিত হবে গুলশানের বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্কে। আয়োজনের প্রথম দিন থাকবে চৈত্রসংক্রান্তির আয়োজন। এদিন বিকেল ৪টা থেকে চারু কারু প্রদর্শনী, রাত ৮টায় ইসলাম উদ্দিন পালাকারের পালা গান, রাত ৯টায় আলপনা আলাপ, রাত ১০টায় পার্কের সামনে থেকে গুলশান–২ মোড় পর্যন্ত রাস্তাজুড়ে আলপনা অঙ্কন করা হবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ ও বিশিষ্ট নাগরিকেরা এতে অংশগ্রহণ করবেন।

বাংলা নতুন বছরের দিন, অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল পয়লা বৈশাখের দিনব্যাপী উৎসব শুরু হবে সকাল থেকেই। এদিন সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে থাকবে রেচেল প্রিয়াঙ্কা ও তাঁর দলের বর্ষবরণ নৃত্য। এরপর অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাবেন অন্তর্বর্তী সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন মুরশিদ, অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ এবং গুলশান সোসাইটি ও অলিগলি-বর্ষবরণ বন্ধুরা। এরপর সকাল ১০টায় ব্যান্ডদল জলের গানের পরিবেশনায় থাকবে ‘গানালাপ’।

এবারের বর্ষবরণ উৎসবে আরও থাকবে চিত্রশিল্পীদের অংশগ্রহণে ‘আর্ট ক্যাম্প’। এতে থাকবেন চিত্রশিল্পী ফরিদা জামান, কনকচাঁপা চাকমা, শিশির ভট্টাচার্য, জামাল আহমেদ, মোহাম্মদ ইউনুস, আহম্মেদ শামসুদ্দোহা, শেখ আফজাল, মোহাম্মদ ইকবাল, বীরেন সোম, আনিসুজ্জামান, বিশ্বজিৎ গোস্বামী। এ আয়োজনও হবে সকাল ১০টায়। এরপর সকাল ১১টায় ‘সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ’ শীর্ষক ‘ভাবালাপ’–এর প্রথম পর্বে কথা বলবেন সাংবাদিক নূরুল কবীর, সংস্কৃতিজন সারা যাকের, নাট্য ব্যক্তিত্ব আফজাল হোসেন এবং অধ্যাপক প্রশান্ত ত্রিপুরা। এ পর্বে সঞ্চালনা করবেন সাঈদ ফিরদৌস।

এরপর বেলা ১২টায় শুরু হবে ‘ভরদুপুরের গল্পসল্প’। ‘ভাবালাপ’–এর দ্বিতীয় পর্বে ‘জনপরিসরে নারীর উপস্থিতি’ নিয়ে আলাপ করবেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ব্যারিস্টার শুক্লা সিরাজ, শিক্ষক মিথিলা মাহফুজ, আদিবাসী অ্যাকটিভিস্ট ডালিয়া চাকমা। বিকেল ৪টায় পাড়ার বাচ্চাদের সমবেত নৃত্যে অংশ নেবে গুলশান-বনানী-বারিধারা-উত্তরা অঞ্চলের শিশু–কিশোরেরা। ‘সব সখি মিলি গাই মঙ্গলগান’–শীর্ষক আয়োজনটি শুরু হবে বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে; এলকেজি স্টুডিওর পরিচালনায় এতে গাইবেন সভ্যতা, সুমেল, আনান, জয়িতা, নাভিন, লাবিক।

দিনব্যাপী আয়োজনে সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে সমগীত গানের দলের পরিবেশনা, সন্ধ্যা ৭টা ৪৫ মিনিটে বাপ্পা মজুমদার ও দলছুটের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে পর্দা নামবে আয়োজনের।

আয়োজকেরা বলছেন, একটি প্রগতিশীল সমাজ গড়তে প্রয়োজন শিল্প-সংস্কৃতি-শিল্পীর নিরাপদ মর্যাদাপূর্ণ কদর, শুধু ভালোবাসা তার জন্য যথেষ্ট নয়। এমন একটা সংস্কৃতি গড়ে তোলা তাঁদের এই উদ্যোগের অন্যতম উদ্দেশ্য। যখন সমাজে নানামুখী বিদ্বেষ-ঘৃণা-ভয়-উগ্রতা, নারীর প্রতি সহিংসতা দেখা যায়, এ সময় সেই সংকট অতিক্রম করতে উদারনৈতিক মানবতাবাদী ধারার সংস্কৃতিই হতে পারে পাথেয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মুছে যাক গ্লানি...
  • গুলশানে অনুষ্ঠিত হবে দুই দিনব্যাপী ‘অলিগলি হালখাতা’
  • পাহাড়ে বর্ষবরণ: উৎপত্তি, মিথ এবং বিভিন্ন দেশের উৎসবের সঙ্গে যোগসূত্র
  • চিরন্তন সাংগ্রাই
  • নববর্ষ উপলক্ষে গুলশানে থাকছে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠান
  • বৈসাবি উৎসব ঘিরে রঙিন পাহাড়
  • দুই দিনব্যাপী আইইউবি থিয়েটারের বৈশাখী নাট্যোৎসব
  • দুই দিনব্যাপী আইইউবি থিয়েটার বৈশাখী নাট্যোৎসব
  • নববর্ষের ঐতিহ্য রক্ষায় জাতীয় কবিতা পরিষদের পাঁচ দাবি