মঙ্গল শোভাযাত্রা থেকে মঙ্গল শব্দটি বাদ দিয়ে আনন্দ শব্দ ব্যবহারের দাবি করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। আজ বৃহস্পতিবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে হেফাজত নেতারা এ দাবি জানান। এতে মঙ্গল শোভাযাত্রা হিন্দুদের জন্মাষ্টমীর ধর্মাচার বলে উল্লেখ করেন হেফাজত আমির মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব সাজেদুর রহমান।

সংগঠনটির যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদীর পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, “বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় প্রতিবছরই তাদের দেবতা শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমীতে সাড়ম্বরে মঙ্গল শোভাযাত্রা পালন করে থাকে। সংখ্যালঘুর যে কোনো ধর্মীয় উৎসব পালনের স্বাধীনতা ও অধিকারের প্রতি আমরা প্রতিশ্রুতিশীল। কিন্তু পহেলা বৈশাখ উদযাপনে হিন্দু সম্প্রদায়ের এই ধর্মাচারকে তথাকথিত ‘সর্বজনীনতা’র নামে সবার ওপর চাপিয়ে দিয়েছে ফ্যাসিবাদী সেক্যুলার বাঙালি জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী। মূলত আমাদের জাতীয় চেতনা ও ঐতিহ্য থেকে মুসলিম সংস্কৃতি ও ভাবধারাকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে এই সেক্যুলার সাংস্কৃতিক ফ্যাসিবাদ কায়েম করা হয়েছে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগ সেক্যুলার ফ্যাসিবাদের আঁতুড়ঘর হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে বলে মন্তব্য করে তারা বলেন, “১৯৮৯ সালের পহেলা বৈশাখে প্রথম পালিত আনন্দ শোভাযাত্রাকে পরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় রূপ দেওয়াকে আমরা ভারতীয় ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখি। ঢাবির চারুকলা সবসময় মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করলেও পতিত ফ্যাসিস্ট হাসিনার শাসনামলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের আবেদনের ভিত্তিতে ২০১৬ সালে জাতিসংঘের ইউনেস্কো পহেলা বৈশাখের বানোয়াট মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ‘অধরা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।” ইউনেস্কোর স্বীকৃতির পুনর্বিবেচনা ও ভুল সংশোধনের জন্য সংস্থাটিকে চিঠি দেওয়ার জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রতি আহ্বান জানান হেফাজত নেতারা।

মঙ্গল শব্দ বাদ দেওয়ার দাবি জানিয়ে হেফাজত নেতারা বলেন, ‘প্রাথমিক সমাধান হিসেবে মঙ্গল শব্দ পরিবর্তন করে পহেলা বৈশাখের আদি ও আসল আনন্দ শোভাযাত্রা ফিরিয়ে আনতে ভূমিকা রাখতে পারে সরকার। আনন্দ শোভাযাত্রা অন্তত সাম্প্রদায়িক ছিল না। জাতীয় উৎসব উদযাপনে যে কোনো ধরনের মূর্তিবাদী সংস্কৃতির আমরা বিরোধিতা করি। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের দেশে জাতীয় কোনো উৎসবে ইসলামের তৌহিদি চেতনার সঙ্গে সাংঘর্ষিক এমন কোনো চিহ্ন রাখা যাবে না। সেক্যুলারদের বৈশাখী মঙ্গল শোভাযাত্রা হিন্দুদের বিভিন্ন দেবতা ও ধর্মীয় পশু-পাখির মূর্তি ও প্রতিকৃতিতে সয়লাব থাকে। অথচ সেক্যুলার হয়েও তাদের এতে কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু নানাভাবে ইসলামবিদ্বেষ প্রকাশে ঠিকই তারা তৎপর। হাজার বছরের সংস্কৃতির মিথ্যা দাবিতে তারা সবসময় মঙ্গল শোভাযাত্রার দালালি করেছে।’ 
বিজাতীয় সংস্কৃতির চর্চা ঠেকাতে ইসলামের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি ধারণের আহ্বান জানান হেফাজত নেতারা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আনন দ শ ভ য ত র ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

পানিখেলা আর পাজনের আনন্দ পাহাড়জুড়ে

পাহাড়ে শুরু হয়েছে বৈশাখের প্রধান সামাজিক উৎসব। এতে আছে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, সাংক্রাই, পাতা উৎসব। গতকাল শনিবার থেকে তিন দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠান নিয়ে তিন পার্বত্য জেলা এখন উৎসবের জনপদ।
উৎসবের প্রথম দিন শনিবার ছিল ফুল বিজু। বাংলা বর্ষের শেষ দু’দিন ও নতুন বছরের প্রথম দিন এ উৎসব পালন করে থাকে পাহাড়ে বসবাসরত বিভিন্ন সম্প্রদায়। এদিকে উৎসব ঘিরে তিন পার্বত্য জেলায় বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নানা মেলার আয়োজন করেছে। উৎসব ঘিরে গ্রামাঞ্চলের চেয়ে শহরের বাজারগুলো সরগরম।
পার্বত্য চট্টগ্রামের (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) ১৩ ভাষাভাষী ১৪টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ঐতিহ্যবাহী প্রধান সামাজিক উৎসব হচ্ছে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষু, বিহু, সাংক্রাই ও পাতা। এসব উৎসবকে চাকমা সম্প্রদায় বিজু, মারমারা সাংগ্রাই, ত্রিপুরা বৈসু, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু, অহমিয়ারা বিহু, খুমিরা সাংক্রাই, সাঁওতালরা পাতা বলে থাকে। উৎসবটির উচ্চারণগতভাবে বিভিন্ন নামে পালন করলেও এর নিবেদন কিন্তু একই। তাই এ উৎসব পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর জন্য শুধু আনন্দের নয়, পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল সম্প্রদায়ের সামাজিক, রাজনৈতিক অর্থনৈতিক, ঐক্য ও মৈত্রী বন্ধনের প্রতীকও বটে।
আজ ফুল বিজু উপলক্ষে ভোরে পানিতে ফুল নিবেদনের  মধ্য দিয়ে উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হচ্ছে। এদিন শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা ভোরে ঘুম থেকে উঠে বনফুল সংগ্রহ করে বাড়ির আঙিনা সাজায়। তরুণ-তরুণীরা পাড়ায় পাহাড় বৃদ্ধদের শ্রদ্ধার সাথে স্নান করায়। আদিবাসী মেয়েরা বাড়ি-ঘর পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করে থাকে। সন্ধ্যায় বৌদ্ধ মন্দির, নদীর ঘাট ও বাড়িতে প্রদীপ প্রজ্জালন করে। নানা খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। উৎসবের প্রথম দিনে বিজু-সাংগ্রাই-বৈসুক-বিষু-বিহু-সাংক্রান উদযাপন কমিটি রাঙামাটির উদ্যোগে রাজবন বিহার পুর্ব ঘাট এলাকায় নদীতে ফুল নিবেদন করা হবে। 
আগামী কাল সোমবার উৎসবের দ্বিতীয় দিন মূল বিজু। এ দিন বাড়িতে বাড়িতে চলবে খাওয়া-দাওয়ার পর্ব ও আনন্দ-আয়োজন। ৩০ থেকে ৪০ প্রকার তরকারি নিয়ে রান্না করা পাজনসহ বিভিন্ন রকমের সুস্বাদু খাবার আগত অতিথিদের পরিবেশন করা হবে।
উৎসবের তৃতীয় দিনে অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল “গজ্যাপজ্যা বিজু”। এ দিনে পাহাড়িরা সারাদিন ঘরে বসে বিশ্রাম নিয়ে থাকে। এদিন বৌদ্ধ মন্দিরে প্রার্থনা ও বয়োজ্যেষ্ঠদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে এসে যত্ন সহকারে ভাত খাওয়ানোর পর আর্শীবাদ নেয়া হয়। পাহাড়িরা মনে করে থাকে সারাদিন আনন্দ আর হাসি-খুশিতে কাটাতে পারলে সারাবছর সুখে–শান্তিতে ও ধন-দৌলতে কেটে যাবে। এদিন তারা যেকোন প্রাণী হত্যা থেকে বিরত থাকে। তাছাড়া, মারমা সম্প্রদায়ের লোকজন এদিন ঐতিহ্যবাহী পানি খেলার আয়োজন করে। তারা পানি খেলার মাধ্যমে পুরনো বছরের সমস্ত গ্লানি ও দুঃখ কষ্টকে দূর করে নতুন বছরকে বরণ করে থাকে।
উৎসব ঘিরে ঐতিহ্যবাহী ঘিলে হ্রা,নাদেং হ্রা, বলি খেলা, বাশহরম, ফোর খেলার আয়োজন চলছে। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের উদোগে সপ্তাহব্যাপী বিজু মেলার আয়োজন  করা হয়েছে।। মেলায় পোশাক, হস্তশিল্প ও গৃহ সামগ্রী, খাবার-দাবার, আলংকারের ষ্টল  ছাড়াও প্রতিদিন সন্ধ্যায় ছিল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। 
হস্তশিল্পের স্টলে কথা হয় লাকী চাকমার সঙ্গে। তিনি জানান, মেলায় ১৫ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করতে পারলেও তেমন  লাভ হয়নি। মেলার চেয়ে অনলাইনে বিক্রি করে ভালো লাভ করতে পারতেন। বই বিক্রেতা মেগলো চাকমা বলেন, ‘৩০ থেকে ৪০ হাজার বই বিক্রি করে মোটামুটি লাভ হয়েছে।’
খাবারের স্টল দেওয়া সুশীল চাকমা জানান, এবারের মেলায় ষ্টলের সংখ্যা বেশি ছিল। শুধু খাবারের স্টল ছিল শতাধিক। প্রথম দিন ১৬ হাজার টাকা বিক্রি করতে পেরেছেন। পরের দিনগুলোতে তিন থেকে চার হাজার টাকার খাবার বিক্রি করতে পেরেছেন। তেমন একটা লাভ করতে পারেননি। তবে আগের বছরের মেলায় ৩০ থেকে ৩৫টি খাবারের স্টল ছিল। তখন বেচা-বিক্রিও ছিল বেশ ভালো।
উৎসব ঘিরে বিভিন্ন হাট-বাজারগুলো বেচা-বিক্রি সরগরম উঠেছে। বৃহস্পতিবার নানিয়ারচর উপজেলার ঘিলাছড়ির সাপ্তাহিক হাটে দেখা গেছে ক্রেতাদের ভিড়। কথা হয় বাজারে আসা ক্রেতা নব বিকাশ চাকমা, চন্দ্র সেন চাকমা, খোকন চাকমা, সূচনা চাকমার সঙ্গে। তারা জানান, আয় অনুযায়ী উৎসবের জন্য সদাই করেছেন। তবে জিনিসপত্রের দাম একটু বেশি।  
বনরুপা উত্তর বাজার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি বিজয়গিরি চাকমা বলেন, ‘বিজুকে কেন্দ্র করে আগে বনরুপা বাজারে জাকজমকভাবে বেচা-বিক্রি হতো কিন্তু এবার তা কম। তার কারণ হচ্ছে মানুষের মধ্যে ক্রয় ক্ষমতা কমেছে।’ উৎসব উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ইন্টুমনি তালুকদার বলেন, ‘তিন পার্বত্য জেলায় উৎসবমুখর পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে উৎসব চলছে।’  

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হারিয়ে যাওয়ার পথে খাতুনগঞ্জের হালখাতা
  • পানিখেলা আর পাজনের আনন্দ পাহাড়জুড়ে
  • জাতীয় জীবনে কবিতার একটা বিশেষ ভূমিকা রয়েছে : রেজাউদ্দিন স্টালিন
  • রমনা লেকে ফুল ভাসিয়ে ফুলবিঝু উৎসব
  • শ্রীমঙ্গলে ফাগুয়া উৎসবে উঠে এল চা জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা
  • রাবি শিক্ষার্থীদের বিজু উৎসব উদযাপন
  • কাপ্তাইয়ে কর্ণফুলী নদীতে তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের বিজু ফুল উৎসব
  • খাগড়াছড়িতে বৈসু’র বর্ণিল শোভাযাত্রা
  • বাবার নিথর দেহ ঘরে রেখে এসএসসি পরীক্ষা দিল মেয়ে