চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগ শেষ হয়েছে। দুর্দান্ত ফুটবল খেলে বার্সেলোনা এবং পিএসজি এক প্রকার সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলেছে। যদিও দুই দলেরই অ্যাওয়ে ম্যাচ বাকি আছে।

বায়ার্ন মিউনিখ ও ইন্টার মিলানের মধ্যে হতে পারে শেষ চারে যাওয়ার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। রিয়াল মাদ্রিদকে প্রথম লেগে ঘরের মাঠে বড় ব্যবধানে হারিয়ে সেমির স্বপ্ন দেখছে মিকেল আর্তেতার আর্সেনালও। যদিও লস ব্লাঙ্কোস ফুটবলার এবং ভক্তরা রিয়ালের চিরচেনা কামব্যাকের আশায় বুক বাঁধছে।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগ শেষে ফুটবল বিষয়ক সংবাদ মাধ্যম গোল দলগুলোর শিরোপা জয়ের সম্ভাব্যতা বিশ্লেষণ করে পাওয়ার র‌্যাঙ্কিং প্রস্তুত করেছে। ওই র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে আছে বার্সেলোনা। কাতালানরা গ্রুপ পর্ব শুরু করেছিল হার দিয়ে। পরের প্রতিটি ম্যাচে দাপট দেখিয়েছে হানসি ফ্লিকের দল। গ্রুপ পর্বে তারা দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল। সেমিফাইনালে এক পা দিয়ে রাখা বার্সার সম্ভাব্য প্রতিপক্ষ ইন্টার মিলান নয়তো বায়ার্ন মিউনিখ।

চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জয়ের র‌্যাঙ্কিংয়ে দুইয়ে আছে পিএসজি। গ্রুপ পর্ব উৎরাতে কষ্ট হয়ে গেছে প্যারিসিয়ানদের। কিন্তু নক আউট পর্বে লুইস এনরিকের দল অসাধারণ খেলছে। দুর্দান্ত ছন্দে থাকা লিভারপুলকে তাদেরই মাঠে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে এসেছে তারা। অ্যাস্টন ভিলাকে ৩-১ গোলে হারিয়ে সেমিতে দিয়ে রেখেছে এক পা। শেষ চারে তাদের প্রতিপক্ষ হতে পারে আর্সেনাল। যদিও রিয়াল মাদ্রিদকে বাতিলের খাতায় ফেলার দুঃসাহস দেখানো কঠিন।

পাওয়ার র‌্যাঙ্কিংয়ে তিনে আছে ইন্টার মিলান। তারা বায়ার্নের মাঠ থেকে ২-১ গোলে জিতেছে। ইনজাগির রক্ষণ দেয়াল ভেদ করে সানসিরোয় জয় তুলে নেওয়া বায়ার্নের জন্য খুবই কঠিন হবে। যদিও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের বড় দল বায়ার্নকেও ছোট করার সুযোগ নেই। ইন্টার লিগ শিরোপার লড়াইয়েও শীর্ষে আছে।

র‌্যাঙ্কিংয়ে চারে আছে আর্সেনাল। প্রথম লেগের জয় বিবেচনায় ইন্টারের চেয়ে সেমিতে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি আর্সেনালের। কিন্তু গানারদের প্রতিপক্ষ রিয়াল মাদ্রিদ বলেই তাদের চারে রাখা হয়েছে। পাঁচে আছে বায়ার্ন মিউনিখ। ছয়ে অ্যাস্টন ভিলাকে রেখে সাতে রাখা হয়েছে রিয়াল মাদ্রিদকে। আট দলের মধ্যে আটে আছে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প এসস প রথম ল গ আর স ন ল ফ ইন ল ইন ট র

এছাড়াও পড়ুন:

সাহিত্যে রন্ধনশিল্পের প্রভাব

মুসলিম সভ্যতায় খাওয়ার সংস্কৃতি কথা তখনকার সাহিত্যকে প্রভাবিত করেছে। সাহিত্যিকদের অনেকে রান্নার স্বাদ, রস ও প্রকার বিভিন্ন উপমায় বর্ণনা করেছেন। অনেকে ভোজনশালার পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছেন চটুল ও রহস্যময় বর্ণনায়। কেউ কেউ বুদ্ধিবৃত্তিক সমালোচনাও করেছেন। তাঁদের বইয়ে রান্নার সঠিক নিয়ম কী হওয়া উচিত এবং সুস্বাদু খাবারের পূর্বশর্ত কী, তা অনুসন্ধান করেছেন। আবু বাকার আল-রাযির (৩১১ হিজরি, ৯২৩ খ্রিষ্টাব্দ) মুনাফি আল-গিজা ওয়াদাফিউল আযমারাহ এ বিষয়ে একটি অনন্য গ্রন্থ।

বাগদাদি লেখক ‘মিসাল বাগদাদ’ বাগদাদের রন্ধনশিল্পের বিশালতা কাব্যিক ঢঙে বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যেখানে কালো সিসা রুটির ওপর ছড়িয়ে দেওয়া ছিল, সেটি দেখলে মনে হতো যেন পূর্ণ চাঁদ, এবং তার স্বাদ এত মিষ্টি ছিল যেন এক গ্রাসে খেয়ে ফেলা যেত।’

ইবন তাইফুর মারভেজি (২৮০ হিজরি, ৮৯৩ খ্রিষ্টাব্দ) তাঁর কিতাব বাগদাদ গ্রন্থে মাওমুন নামে এক বাগদাদি বিশেষজ্ঞের বাড়িতে খাবারের সময়ে উপস্থিত ছিলেন। তিনি সেখানে কী কী দেখেছেন, তার সরস বর্ণনা দিয়েছেন। সে সময় মাওমুনের অতিথিশালায় প্রায় তিন শ ধরনের খাবার পরিবেশন করা হয় এবং মাওমুন প্রতিটি খাবারের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে বোঝান।

আরও পড়ুনমন্দ প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণের উপায়০৬ এপ্রিল ২০২৫

বাদশাদের মতো অনেক মন্ত্রীদেরও খাবারের প্রতি আগ্রহ ছিল গভীর। জাহাজি (২১৬ হিজরি, ৮৩১ খ্রিষ্টাব্দ) একটি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন, পারস্যের গভর্নর আমর ইবন লাইস তার ব্যক্তিগত রন্ধনশালায় সাড়ে ছয় শ উট ব্যবহার করতেন। এগুলো ছিল মন্ত্রীর প্রাসাদে খাবার প্রস্তুত করার জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানের বিশাল নির্দেশ।

এ ছাড়া বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে খাবার প্রতিযোগিতার কথাও শোনা যায়। এই ধরনের প্রতিযোগিতা কেবল যে খাবার প্রস্তুতির জন্য ছিল তা নয়, এটি ছিল একটি আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক ধারণা ছিল, যেখানে রান্নার শৈলী ও খাবারের বৈচিত্র্য চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেওয়া হতো।

কঠোর নজরদারি ও মান নিয়ন্ত্রণ

ইসলামি সভ্যতায় রেস্তোরাঁয় ও খাদ্য উৎপাদনে কঠোর নজরদারি চালানো হতো। খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধ, তৈরির পাত্রের পরিচ্ছন্নতা, রাঁধুনির ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য, উপকরণের বিশুদ্ধতা—এসব ছিল বাধ্যতামূলক।

আলাদা চুলা: আলাদা খাবারের জন্য আলাদা চুলা বরাদ্দ থাকত। যেমন যেখানে মাছ ভাজা হয়, সেখানে রুটি বানানো নিষেধ ছিল। তেল বারবার ব্যবহার করাও নিষিদ্ধ ছিল।

অপ্রাপ্তবয়স্ক সরবরাহকারী: একটি মজার তথ্য হলো—যেসব রুটি বিক্রেতা ‘সরবরাহকারী’ রাখত, তাদের বলা হতো অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেদেরই নিয়োগ দিতে, যাতে তারা গৃহস্থালির নারীদের সামনে যাওয়া হলেও কোনো সামাজিক অস্বস্তি না হয়।

আরও পড়ুনসুরা সাফে মন্দ আচরণ নিয়ে আল্লাহর বক্তব্য৩১ জুলাই ২০২৩

ওজনে কারচুপি: তখন বেশির ভাগ খাবার বিক্রি হতো ওজনে। তাই ওজনে কারচুপি ঠেকাতে ‘মুহতাসিব’ বা বাজার তদারকি কর্মকর্তারা নজরদারি করতেন। যেমন, মাংস রান্নার আগে-পরে ওজন করে দেখা হতো, যেন অতিরিক্ত শুকিয়ে না যায় বা ভেতরে লোহা জাতীয় কিছু ঢুকিয়ে ওজন না বাড়ানো হয়।

ভেজাল-নিরোধ: বিভিন্ন ভেজালের কৌশলও ধরা পড়েছে। কেউ কেউ কিমার ভেতরে ভুঁড়ি, পেঁয়াজ ও বুটলতাও ঢুকিয়ে দিত। কেউবা সমুচার ভেতরে মাছ ও মসলা দিয়ে মাংসের বিকল্প বানাত। এগুলো ধরা হতো ভাজনের আগেই কেটে দেখে।

রসায়ন ব্যবহার: এক ধরনের খাদ্যভিত্তিক ‘রাসায়নিক ভেজাল’ও ছিল। রঙিন মাংস বানানো হতো আসল মাংস ছাড়াই। কলিজা, ডিম, এমনকি মধু বা চিনি ছাড়া মিষ্টিও তৈরি হতো। একজন প্রাচীন চিকিৎসক—ইবন আল-কিন্দি—এমন প্রযুক্তির উল্লেখ করেন তাঁর কেমিস্ট্রি অব কুকিং বইতে। তবে এসব গোপন রাখা হতো, যাতে কেউ শিখে অনৈতিকভাবে না ব্যবহার করে।

ফাতেমি যুগে নারী রাঁধুনিরাও (দাসী) ছিলেন বিশিষ্ট। কেউ কেউ ৮০ রকম ভাজাভুজি বানাতে পারতেন। এমন দক্ষতা দেখে এক তুর্কি রাজা তাঁর রাঁধুনিদের কায়রোতে পাঠিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন।

আরও পড়ুনশয়তানের মন্দ প্ররোচনা থেকে বাঁচার দোয়া২৭ এপ্রিল ২০২৩

আধুনিক রান্নার আগমনী

বিখ্যাত ‘বিফ বোর্গুইনিয়ন’ ফরাসি রান্না, যা ধীরে ধীরে রান্না করা হয়, সেটি ৭০০ বছর আগেই আরব অঞ্চলে প্রচলিত ছিল ‘স্কবাজ’ নামে। এতে মাংস, মসলা, খেজুরের রস ও জাফরান দিয়ে ট্যানুরে সারা রাত রান্না হতো।

রমজান উপলক্ষে নানা খাবার, যেমন: কাতায়েফ, হরিরা, কুসকুস, সামোসা, লুকাইমাত (লালমোহন জাতীয় মিষ্টি) ও সোবিয়া (একধরনের মিষ্টি পানীয়)—এই সব খাবার বহু শতাব্দী ধরে প্রচলিত।

আন্দালুসীয়রা খাবার একসঙ্গে পরিবেশন করতেন না। একে একে পরিবেশন করতেন—প্রথমে ডাল, তারপর মিষ্টি, মাঝে মাঝে আচার, সবশেষে পুনরায় মিষ্টি। এ রেওয়াজ এখনো মরক্কোসহ কিছু অঞ্চলে প্রচলিত।

ইরাকের সংগীতজ্ঞ জেরিয়াব শুধু সুর নয়, খাবারের রুচিতেও বিপ্লব এনেছিলেন আন্দালুসিয়ায়। তিনি খাবারের পরিবেশনা, থালার সাজসজ্জা, গ্লাসের ব্যবহার (সোনা-রুপার বদলে কাচের), ও চামচ-কাঁটা ছুরি ব্যবহারে সৌন্দর্যবোধের পরিচয় দেন। তাঁর কৌশল পরবর্তীতে ইউরোপেও ছড়িয়ে পড়ে।

খাদ্য শুধু পেট ভরানোর বিষয় নয়, বরং তা সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, সৌন্দর্য ও নৈতিকতারও বহিঃপ্রকাশ। ইসলামি সভ্যতার রন্ধনশৈলী আমাদের শিখিয়ে দেয়—ভালো খাবার মানে বিশুদ্ধতা, রুচিশীলতা এবং সামাজিক সচেতনতার এক অনন্য মিশেল।

আলজাজিরা ডট নেট অবলম্বনে

আরও পড়ুনঅহংকারের পরিণতি মন্দ২৬ মার্চ ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ