আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, আশুলিয়া লাশ পোড়ানো, চানখারপুল হত্যাকাণ্ড, রামপুরা কার্নিশে ঝুলে থাকাকে গুলি ও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলার তদন্ত শেষ বা প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে এই চারটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করতে পারবো। 

আজ বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানান চিফ প্রসিকিউটর। এ সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ, মামলার তদন্ত ও আসামিদের গ্রেপ্তারের হালনাগাদ তথ্যের এক প্রতিবেদন তুলে ধরেন তিনি।

মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত ৩৩৯টি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে দায়ের করা ২২ মামলায় শেখ হাসিনাসহ সামরিক, বেসামরিক ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোট ১৪১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭০ জন বেসামরিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৬২ জন এবং ৯ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রয়েছেন। এসব মামলার তদন্তে এখন পর্যন্ত এক হাজারের অধিক ব্যক্তির জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়েছে। পরোয়ানা জারির পর ৫৪ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং বাকি ৮৭ জন আসামি পলাতক। ৩৯টি মামলার তদন্ত চলছে। 

মতবিনিময়ের শুরুতে তাজুল ইসলাম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে দেড়-দুই হাজারের বেশি মানুষ শহীদ হয়েছেন। ২৫ হাজারের মতো ছাত্র-জনতা আহত হয়েছেন। সব ঘটনার জলজ্যান্ত প্রমাণ রয়েছে। ট্রাইব্যুনালে আমরা সেটা প্রমাণ করতে সক্ষম হবো এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখেই ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। 

চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে যারা মাস্টারমাইন্ড, সুপিরিয়র কমান্ড, যাদের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে এবং যাদের কারণে রাষ্ট্র এমন হয়েছে, তাদের আগে বিচার করতে চাই। ভিকটিমদের প্রতি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। 

এক প্রশ্নের জবাবে তাজুল ইসলাম বলেন, বিচারকে দ্রুত করতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের বেশ কিছু সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহে হয়তো হয়ে যাবে। যাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের সংগে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে তাদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার করা হবে। 
কবে নাগাদ বিচার শুরু করা যাবে- এমন প্রশ্নর জবাবে তিনি বলেন, সময় বেধে দিয়ে বিচার করা যাবে না। সময় বেধে দেওয়া যুক্তিযুক্ত নয়।

টাইম বোমা উদ্ধার প্রসঙ্গে তাজুল ইসলাম বলেন, আমিসহ গুমের মামলার তদন্তে যাওয়া দলের সদস্যদের হত্যার উদ্দেশ্যে টাইমার বোমা পুঁতে রাখা হয়েছিল। ট্রাইব্যুনালের বিচার নিয়ে কোনো তথ্য উপাত্ত যেন ফাঁস না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কাজ করছি। 

তিনি বলেন, গুমের বিষয়ে আমরা উত্তরায় একটা বৃহৎ বন্দিশালায় তদন্ত করতে গিয়েছিলাম। সেখানে গিয়ে অনেক কিছু আমরা আবিস্কার করেছি। টাইমার বোমা দেখেছি। হয়তো এই টাইমবোমা সেট করা হয়েছিল তদন্তকারী দলকে হত্যার পরিকল্পনা করতে। আমরা আয়নাঘর পরিদর্শনের ঠিক দুইদিন পর প্রধান উপদেষ্টা ড.

মুহাম্মদ ইউনূস সেখানে পরিদর্শনে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি সেখানে আর যাননি। আয়নাঘরের অন্য জায়গায় পরিদর্শন করেছেন। 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গুমবিষয়ক তদন্ত কার্যক্রমে ঢাকা শহরের তিনটি এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও বগুড়া জেলায় গুমের তিনটি কেন্দ্র (আয়নাঘর, হাসপাতাল, এলআইসি ইত্যাদি বিভিন্ন কোনডেমে পরিচিত) পরিদর্শন ও সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকা, সিলেট, রংপুরসহ ১৫টি জেলায় তদন্ত কাজ চালানো হয়েছে। তদন্তকাজে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদরাসা পর্যায়ে চারটি গণশুনানি হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পতিত সরকারের আজ্ঞাবহ ব্যক্তিরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষ্য-প্রমাণ বিনষ্ট করার চেষ্টা করছে। থানা, হাসপাতালসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানের দলিলপত্র পুড়িয়ে বা লুকিয়ে নষ্ট করার চেষ্টা করা হয়েছে। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের পলাতক সুবিধাভোগীরা বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করে তদন্ত কার্যক্রম এবং বিচার প্রক্রিয়া বাঁধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে।

মতবিনিময় সভায় প্রসিকিউটর আব্দুস সোবহান তরফদার, মিজানুল ইসলাম, গাজী এম এইচ তামিম, আবদুল্লাহ আল নোমান, আব্দুস সাত্তার পালোয়ান, সাইমুম রেজা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: তদন ত ক

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতে আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত সন্দেহভাজন নীরব মোদির সহযোগী চোকসি বেলজিয়ামে গ্রেপ্তার

ভারতের পলাতক জুয়েলারি ব্যবসায়ী মেহুল চোকসি বেলজিয়ামে গ্রেপ্তার হয়েছেন। ভারতের অন্যতম বড় ব্যাংক জালিয়াতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার তথ্য প্রকাশ্যে আসার সাত বছর পর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলো। আজ সোমবার তাঁর আইনজীবী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, তিনি মুক্তি পেতে আদালতে আপিল করবেন।

ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, ভারত সরকার চোকসিকে গ্রেপ্তারের আগেই তাঁকে প্রত্যর্পণের জন্য বেলজিয়াম সরকারের কাছে অনুরোধ পাঠিয়েছিল।

সম্পদের দিক থেকে ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক হচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক (পিএনবি)। ২০১৮ সালে এই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, মুম্বাইয়ের একটি শাখা থেকে প্রতারণার মাধ্যমে চোকসি ১৮০ কোটি মার্কিন ডলার হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তথ্যপ্রমাণ পাওয়া গেছে।

ব্যাংকটি ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার কাছে একটি ফৌজদারি অভিযোগ জমা দিয়েছে। অভিযোগে ধনকুবের জুয়েলারি ব্যবসায়ী নীরব মোদি এবং তাঁর চাচা ও গীতাঞ্জলি জেমসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেহুল চোকসিসহ বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে বলা হয়, তাঁরা পিএনবির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।

ভারতের কেন্দ্রীয় পুলিশ চোকসি, নীরব মোদি এবং অন্যান্যের বিরুদ্ধে প্রতারণামূলক লেনদেনের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেছে। এসব লেনদেনে পিএনবির বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এই দুই হীরা কারবারি তাঁদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ২০১৮ সালে চোকসি এক চিঠিতে বলেন, আগাম একটি ধারণা নিয়ে সংস্থাগুলো তদন্ত করছে এবং এর মাধ্যমে তারা বিচারপ্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করছে।

চোকসির আইনজীবী বিজয় আগরওয়াল আজ সোমবার রয়টার্সকে বলেন, তাঁর মক্কেল ক্যানসারের চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁর পালিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি নেই—এই কারণ দেখিয়ে তাঁর মুক্তির জন্য আপিল করা হবে। তিনিও আরও বলেন, চোকসি বেলজিয়ামে কোনো অপরাধ করেননি।

নীরব মোদির বিরুদ্ধে পিএনবির মামলার বিস্তারিত প্রকাশ্যে আসার আগেই তিনি ২০১৮ সালের ভারত থেকে পালিয়ে যান। তিনিও ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যে গ্রেপ্তার হন এবং এখনো তিনি সেখানে আটক আছেন। যদিও এর মধ্যে তিনি একবার প্রত্যর্পণের আপিলে হেরেছেন।

মোদি বেলজিয়ামের হীরা প্রক্রিয়করণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত আন্তওয়ার্পেনে বড় হয়েছেন। অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রকাশ্যে আসার আগে থেকেই চোকসি নিয়মিত ওই শহরে যাতায়াত করতেন।

মুম্বাইয়ের হীরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, চোকসির আশ্রয় নেওয়ার আদর্শ জায়গা হতে পারত আন্তওয়ার্পেন। কারণ, তিনি সেখানে অনেককে চেনেন এবং সেখানে যাঁরা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, এমন অনেকের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ