মালয়েশিয়ার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ওয়াইসি স্টাডি গ্রুপের চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ হামিদ আলবার বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকটকে আর কেবল মিয়ানমার ও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সমস্যা হিসেবে দেখা যাবে না। এটি এখন আসিয়ান অঞ্চলের একটি সম্মিলিত মানবিক ও নিরাপত্তা সংকট।

বুধবার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে একটি অভিজাত হোটেলে ‘জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেসের বাংলাদেশ সফর ২০২৫: রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বৈশ্বিক অঙ্গীকার’ শীর্ষক আঞ্চলিক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি।  এতে সভাপতিত্ব করেন মুসলিম ওয়ার্ল্ড রিসার্চ সেন্টারের প্রেসিডেন্ট এবং ওআইসি স্টাডি গ্রুপের সেক্রেটারি জেনারেল ড.

ইশারফ হোসেন।

ড. সৈয়দ হামিদ আলবার বলেন, বর্তমান বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনা কাঠামো অকার্যকর প্রমাণিত হয়েছে, ফলে এখন সময় এসেছে বিকল্প কৌশল ও আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে এর কার্যকর সমাধান অনুসন্ধানের। মালয়েশিয়া বর্তমানে আসিয়ানের চেয়ার হওয়ায়, এটি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। বিশেষ করে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ও বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মধ্যে বিদ্যমান সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক থাকা এই সংকটের টেকসই সমাধানে সহায়ক হতে পারে।

বিমসটেক সম্মেলনে মিয়ানমার কর্তৃক ১.৮ লাখ রোহিঙ্গা ফেরত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, শুধু চুক্তি যথেষ্ট নয়—বাস্তবায়নই মূল চাবিকাঠি। কেবল অ্যাডভোকেসি নয়, এখন প্রয়োজন বহুস্তরীয় কূটনৈতিক উদ্যোগ এবং সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের সক্রিয় অংশগ্রহণ। 

আলোচনায় অন্যান্যদের মধ্যে সিএনআইয়ের ভাইস চেয়ারম্যান আশফাক জামান বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের কার্যকর সমাধানে পারস্পরিক আস্থা, প্রত্যাশা এবং বাস্তবায়নযোগ্য দৃষ্টিভঙ্গির প্রয়োজন। চুক্তি কার্যকর করতে হবে—এই মানুষগুলোকে অবশ্যই আশার বার্তা দিতে হবে।

মালয়েশিয়ার ইসলামী এনজিও অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জামাল শামসুদ্দিন বলেন, মালয়েশিয়া দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা জনগণের পাশে রয়েছে—এখন সময় এসেছে আসিয়ান জোটের নেতৃত্বে এই সংকট সমাধানের জরুরী কার্যকর ভূমিকা নেওয়ার।

মালোশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা ও এবিআইএম-এর সভাপতি মো. ফাহমি সামসুদ্দিন বলেন, মুসলিম বিশ্বের নৈতিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব হলো রাষ্ট্রহীন ও নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানো। এই সংকট সমাধানে আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে কার্যকর সমন্বয় জরুরি।

পাকিস্তান হাইকমিশনের কূটনৈতিক আহাদ আসাদ আব্বাস খান বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত সমাধানে ওআইসি এবং ও আসিয়ানের যৌথ উদ্যোগে মুসলিম বিশ্বের একটি ঐক্যবদ্ধ অবস্থান গড়ে তুলতে হবে, যাতে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের ন্যায়বিচার, সুরক্ষা এবং স্বেচ্ছাপ্রসূত প্রত্যাবাসন নিশ্চিত হয়।

বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন ইউনিভারসিটি অব মালায়ার শিক্ষক ড. সাহাবুদ্দিন আহমেদ ও মালয়েশিয়া বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. বোরহান আহমেদ, আইপিজিএডির নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ আলাউদ্দিন প্রমুখ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ক র যকর ন বল ন

এছাড়াও পড়ুন:

‘মার্চ ফর প্যালেস্টাইন’ কর্মসূচি থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ দুই দূতাবাসে স্মারকলিপি প্রদান

ইসরায়েলের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ বন্ধের দাবির পাশাপাশি বিশ্ববাসীকে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ‘মার্চ ফর প্যালেস্টাইন’ কর্মসূচি পালন করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মার্কিন দূতাবাস ও সৌদি আরব দূতাবাসে বাংলা, ইংরেজি ও আরবি ভাষায় স্মারকলিপি জমা দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির উদ্যোগে আজ বৃহস্পতিবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক থেকে দুই দূতাবাস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশে পদযাত্রা বের হয়। পদযাত্রাটি তাঁতীবাজার মোড়ে গেলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুরোধে এবং দেশে চলমান এসএসসি পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে পদযাত্রাটি ক্যাপাসে ফিরে আসে।

পরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বিলাল হোসাইনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মার্কিন ও সৌদি আরবের দূতাবাসে স্মারকলিপি জমা দেয়।

বিলাল হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির নেতারা এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যা বন্ধ করা এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাসহ চারটি দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশি পাসপোর্টে ‘এক্সসেপ্ট ইসরায়েল’ শব্দ দুটি পুনরায় যুক্ত করাসহ সাতটি দাবিসংবলিত একটি স্মারকলিপি পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বরাবর জমা দেওয়া হয়েছে।

পদযাত্রায় অংশগ্রহণকারীরা ‘ফিলিস্তিনে গণহত্যা, বন্ধ করো বন্ধ করো’, ‘মুসলিম উম্মাহ এক করো, ওআইসি হাল ধরো’, ‘জাতিসংঘ জবাব চাই, ওআইসি জবাব চাই’, ‘ইসরায়েল নিপাত যাক, ফিলিস্তিন মুক্তি পাক’, ওয়ান টু থ্রি ফোর, ইসরায়েল নো মোর’ এমন বিভিন্ন স্লোগান দেন। এ ছাড়া তাঁরা ইসরায়েলি পণ্য বর্জন ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপের দাবি জানান।

পদযাত্রা শেষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদ্দীন তিন দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। দফাগুলো হলো ইসরায়েলি পণ্য আমৃত্যু বর্জনের আহ্বান, ফিলিস্তিনিদের জন্য দোয়া করা এবং স্মারকলিপির কোনো প্রতিফলন দেখা না গেলে জাতিসংঘের বাংলাদেশ অফিস ঘেরাও।

সমাবেশে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি এ কে এম রাকিব সরকারিভাবে ইসরায়েলি পণ্য বর্জন করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি দাবি জানান। একই সঙ্গে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে ইসরায়েলি পণ্যের বিকল্প উৎপাদন করতেও আহ্বান জানান।

সমাবেশে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম, ছাত্রদলের সভাপতি মেহেদী হাসান বক্তব্য দেন।

সমাবেশ শেষে গাজায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত ও ফিলিস্তিনিদের জন্য শান্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ড. ইউনূসকে ওআইসির দায়িত্ব নিতে জাবালে নূরের অনুরোধ
  • মুসলিম বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ হবে কবে?
  • ‘মার্চ ফর প্যালেস্টাইন’ কর্মসূচি থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ দুই দূতাবাসে স্মারকলিপি প্রদান