বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য আলাদা খরা তহবিল ও জাতীয় খরা নীতিমালা তৈরির দাবিতে রাজশাহীতে জলবায়ু ধর্মঘট অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈশ্বিক জলবায়ু ধর্মঘটের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় নগরের সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে পাঁচ মিনিটের জন্য প্রতীকী সড়ক অবরোধ করে খরা ধর্মঘট পালন করা হয়। উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজিনাস নলেজ’ (বারসিক) ও ‘বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরাম’ এ কর্মসূচির আয়োজন করে।

ধর্মঘটে রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলের বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন সংহতি জানায়। কর্মসূচি থেকে পাঁচ দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেসব ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে তা নিরূপণ করা; জাতীয়ভাবে বরেন্দ্র অঞ্চলের জনগোষ্ঠী ও পরিবেশ-প্রতিবেশকে বিবেচনায় নিয়ে ‘খরা নীতিমালা’ তৈরি করা; জাতীয়ভাবে খরাপীড়িতদের জন্য ‘খরা ভাতা’ চালু করা; বৈষম্যমূলক পানি নীতিমালা (জলমহাল ইজারা প্রথা নীতিমালা, বিএমডিএ সেচ নীতিমালা ইত্যাদি) পরিবর্তন করে জনবান্ধব করা এবং জলবায়ুর পরিবর্তনের জন্য দায়ী ধনী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে খরা তহবিল আদায় ও পদক্ষেপ নেওয়া।

কর্মসূচির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে কথা বলেন বারসিকের গবেষক ও আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো.

শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, বাংলাদেশ জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে উপকূলীয় এলাকার পাশাপাশি বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বরেন্দ্র অঞ্চলেও দিনে দিনে খরার কারণে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের এই খরা ও ঝুঁকি মোকাবিলায় জলবায়ুর বৈশ্বিক দরবারে তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ার মতো না। অন্যদিকে জাতীয়ভাবে খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য সরকারিভাবে খরা মোকাবিলায় স্থানীয়দের মতো করে সমন্বিত কোনো জাতীয় উদ্যোগ এখনো গ্রহণ করেনি।’

জুলাই ৩৬ পরিষদের আহ্বায়ক মাহমুদ জামাল কাদেরী বলেন, ‘আমাদের বরেন্দ্র অঞ্চলে পরিবেশ দিনে দিনে নষ্ট করা হচ্ছে, গাছ কাটা হচ্ছে, শহরে পুকুর ভরাট করছে। অন্যদিকে গ্রামে কৃষিজমিতে পুকুর খনন করছে। একদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিপাত কমে যাচ্ছে। অন্যদিকে আমরা নিজেরাও পরিবেশ নষ্ট করে ফেলছি। আমরা চাই সরকার এসব নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিক।’

রাজশাহীর যুব নেতৃত্ব ও সামাজিক কল্যাণ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক সম্রাট রায়হান বলেন, ‘আামাদের পদ্মা নদী শেষ করা হচ্ছে। ফারাক্কার কারণে এখন পদ্মায় পানি নেই। এর কারণেও আমাদের এলাকার জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। আমাদের এখন প্রয়োজন স্থানীয় প্রাকৃতিক সম্পদগুলো রক্ষা করা।’

আদিবাসী যুব পরিষদ রাজশাহী জেলার সভাপতি উপেন রবিদাস বলেন, ‘আমরা আদিবাসীরা পানির জন্য, খরার জন্য আর গ্রামে থাকতে পারছি না। আমাদের কাজ হারিয়েছে, খাদ্য সার্বভৌমত্ব সংকুচিত হচ্ছে। বরেন্দ্র অঞ্চলে খরা ও পানি সংকটের কারণে গ্রামের মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে স্থায়ীভাবে কার্যকর পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নিতে হবে।’

সেভ দ্য নেচার অ্যান্ড লাইফের যুব ইউনিটের আহ্বায়ক জুলফিকার আলী হায়দার বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন আর পানি–সংকট এখন আর কথার কথা না। এসব সমস্যা সমাধানে এখনই আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে।’

জলবায়ু ধর্মঘটের মূল দাবি ও বরেন্দ্র অঞ্চলের খরা মোকাবিলায় খরা ঘোষণাপত্র তুলে ধরেন বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি শাইখ তাসনীম জামাল। তিনি বলেন, খরা, পানি, পানির অধিকারহীনতায় বরেন্দ্র অঞ্চলের সহিংসতা বাড়ছে। খরা কৃষক আদিবাসীসহ প্রান্তিক মানুষকে হত্যা করছে। পানির কারণে আদিবাসী কৃষকের হত্যাসহ সার্বিক যে অন্যায্যতা বেশি হচ্ছে, তা খরা ও পানির কারণেই বেশি হচ্ছে বলে তাঁরা মনে করেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আম দ র পর ব শ র জন য জলব য়

এছাড়াও পড়ুন:

পহেলা বৈশাখে আজ রাজধানীর যান চলাচলের নির্দেশনা

পহেলা বৈশাখ উদযাপন উপলক্ষ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও আশপাশের এলাকাগুলোর সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু রাস্তা বন্ধ বা রোড ডাইভারশন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

গত শনিবার ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর সই করা গণবিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা ও আনন্দ উচ্ছ্বাসে আগামী ১৪ এপ্রিল বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ উদযাপিত হবে। এ উপলক্ষ্যে নিম্নলিখিত ট্রাফিক নির্দেশনাগুলো মেনে চলার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হলো।

ডাইভারশন বা ব্যারিকেড পয়েন্টগুলো হলো

১৪ এপ্রিল (সোমবার) ভোর ৫টা থেকে রমনা পার্ক (রমনা বটমূল), সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা ও আশপাশের নিম্নলিখিত এলাকার সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে রাস্তা বন্ধ বা রোড ডাইভারশন দেওয়া হবে।

১. বাংলামোটর ক্রসিং/নেভি গ্যাপ।
২. পুলিশ ভবন ক্রসিং।
৩. সুগন্ধা ক্রসিং।
৪. কাকরাইল চার্চ ক্রসিং।
৫. কদমফোয়ারা ক্রসিং।
৬. হাইকোর্ট ক্রসিং (পূর্ব ও দক্ষিণ)।
৭. দোয়েল চত্বর ক্রসিং।
৮. রমনা ক্রসিং। 
৯. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টার।
১০. জগন্নাথ হল ক্রসিং।
১১. ভাস্কর্য ক্রসিং।
১২. নীলক্ষেত ক্রসিং।
১৩. কাটাবন ক্রসিং।

গাড়ি চলাচলের দিকনির্দেশনা

রমনা পার্ক (রমনা বটমূল), সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ডাইভারশন পয়েন্টগুলো ব্যতীত নিম্নলিখিত রাস্তাগুলোতে যানবাহন চলাচল করবে। রাস্তাগুলো হলো-

১. মিরপুর-ফার্মগেট থেকে শাহবাগ অভিমুখী যাত্রীবাহী যানবাহন বাংলামোটর ক্রসিংয়ে বামে মোড় নিয়ে মগবাজার ক্রসিং হয়ে গন্তব্যে পৌঁছাবে।

২. গোলাপশাহ মাজার ক্রসিং-হাইকোর্ট ক্রসিং থেকে শাহবাগ অভিমুখী যাত্রীবাহী যানবাহন কদমফোয়ারা ক্রসিং-ইউবিএল ক্রসিং-নাইটিংগেল ক্রসিং হয়ে গন্তব্যে পৌঁছাবে।

৩. সায়েন্সল্যাব ক্রসিং থেকে শাহবাগ অভিমুখী যাত্রীবাহী যানবাহন মিরপুর রোড দিয়ে আজিমপুর ক্রসিং-চানখাঁরপুল ক্রসিং-বকশীবাজার ক্রসিং হয়ে গন্তব্যে পৌঁছাবে।

গাড়ি পার্কিং স্থান

১. নেভি গ্যাপ থেকে হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল পর্যন্ত।
২. মৎস্যভবন ক্রসিং থেকে সেগুনবাগিচা পর্যন্ত (আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়িগুলো)।
৩. শিল্পকলা অ্যাকাডেমি গলি (আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাড়িগুলো)।
৪. কাঁটাবন ক্রসিং থেকে নীলক্ষেত ক্রসিং হয়ে পলাশী ক্রসিং পর্যন্ত।
৫. দোয়েল চত্বর ক্রসিং থেকে শহীদুল্লাহ হল ক্রসিং পর্যন্ত।
৬. আব্দুল গনি রোড।

সম্পর্কিত নিবন্ধ