নিখোঁজ এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলের সন্ধানে কেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন বাবা
Published: 10th, April 2025 GMT
ছেলের বড় একটি ছবি বুকের সঙ্গে ধরে নাটোর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রের ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন এজাজুল হক। তাঁর চোখ ফটকের দিকে। অপেক্ষা ছেলের জন্য। পরীক্ষা শুরু হওয়ার পরও তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন সেখানে।
এজাজুল হক জানান, তাঁর ছেলে মুনতাহা এহসান (মুগ্ধ) নাটোর সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের ছাত্র। আজ বৃহস্পতিবার বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত সোমবার বিকেলে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর থেকে সে নিখোঁজ। নানা চেষ্টার পরও তার খবর পায়নি পরিবার।
এজাজুল হক বলেন, তাঁর ধারণা ছিল, ছেলে অন্তত পরীক্ষা মিস করবে না। যেখানেই থাকুক আজ পরীক্ষায় অংশ নেবে সে। সেই আশায় তিনি কেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। কিন্তু ছেলে আসেনি। তিনি বলেন, ‘ছেলের পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আশা শেষ হয়েছে। কিন্তু ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আশা তো শেষ হয়নি। নানা রকমের দুশ্চিন্তায় আমি, ওর মা ও বড় বোন প্রতিটি মুহূর্ত পার করছি।’
মা মাহফুজা খাতুন বলেন, ‘মুগ্ধ আমার একমাত্র ছেলে। সে বিদ্যালয় ও মসজিদ ছাড়া বাড়ির বাইরে আর কোথাও যেত না। ভালো পরীক্ষা দেওয়ার পরও সে বিদ্যালয়ের টেস্ট পরীক্ষায় খারাপ করে। সে এটা মানতে পারছিল না। খুব মন খারাপ করেছিল। আমরা তাকে বুঝিয়েছি, বোর্ড পরীক্ষায় ভালো করতে হবে। বকঝকা করিনি। সে পরীক্ষার প্রস্তুতিও নিচ্ছিল। হঠাৎ এভাবে নিখোঁজ হয়ে যাবে, ভাবতেও পারছি না।’
নাটোর সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক আকরাম হোসেন বলেন, পরীক্ষার আগমুহূর্তে মুগ্ধ এভাবে নিখোঁজ হওয়ায় শিক্ষকদেরও মন খারাপ। তাঁরাও ভেবেছিলেন, হয়তো সে এসে পরীক্ষা দেবে। কিন্তু পরীক্ষার হলে তার আসন ফাঁকা ছিল।
নাটোর সদর থানার উপপরিদর্শক জামাল উদ্দিন মুগ্ধর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাটি তদন্ত করছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা গুরুত্বসহকারে বিষয়টি দেখছি। ওর ব্যাপারে পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছি। আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করছি। বিভিন্ন থানায় বেতার বার্তা দেওয়া হয়েছে। তার সন্ধানে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে কেন্দ্রে বিএনপি নেতার ঘোরাঘুরির ভিডিও
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি জাফতনগর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নুর উদ্দিন খানের বিরুদ্ধে এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের অভিযোগ উঠেছে। একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটের দিকে উপজেলার জাহানপুর আমজাদ আলী আবদুল হাদি ইনস্টিটিউশন কেন্দ্র থেকে তিনি বের হচ্ছেন।
আজ বাংলা প্রথম পত্র দিয়ে এবারের এসএসসি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশের বাধ্যবাধকতার বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান ইলিয়াছ উদ্দিন আহাম্মদ প্রথম আলোকে জানান, পরীক্ষা চলাকালে নির্দিষ্ট কিছু ব্যক্তি ছাড়া কেউই পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। এ ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ম্যাজিস্ট্রেট, শিক্ষা বোর্ডের ভিজিল্যান্স দলের সদস্যরা কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন।
পরীক্ষা চলাকালে কেন্দ্রে প্রবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে নুর উদ্দিন খান বলেন, ‘আমার ভাতিজি ওই কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে। তাকে পৌঁছে দিতে পরীক্ষা শুরুর আগে কেন্দ্রে গিয়েছিলাম। আমি সকাল সাড়ে ৯টার দিকে গিয়েছিলাম।’
ভিডিওতে ১২টা ১৫ মিনিটের দিকে বের হওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমি ১২টার দিকে কেন্দ্রের বাইরে ছিলাম। ভেতরে ঢুকিনি। বাইরে থেকে কুশল বিনিময় করেছি। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে।’
প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিএনপি নেতা নুর উদ্দিন খান পরীক্ষা শুরুর পর থেকে অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করেন। কেন্দ্র সচিবের কক্ষেও যান।
এ বিষয়ে কেন্দ্র সচিব মফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নুর উদ্দিন খান পরীক্ষা শুরুর আগে কেন্দ্রে ঢুকেছিলেন। পরে আমি বুঝিয়ে–শুনিয়ে বের করে দিয়েছি।’ কেন কেন্দ্রে প্রবেশ করেছেন—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কথা তো এইটাই…। আজকে প্রথম দিন তো এমনি গার্ডিয়ান (অভিভাবক) কিছু তো ঢুকছে। ওদের সঙ্গে তাঁকেও (নুর উদ্দিন খান) দেখলাম। পরে আমি বুঝিয়ে বের করে দিয়েছি।’ তাঁর কোনো আত্মীয় পরীক্ষা দিচ্ছেন কি না, এমন প্রশ্নে কেন্দ্র সচিব জানান, তাঁর জানামতে নুর উদ্দিন খানের কোনো ছেলে–মেয়ে, ভাতিজা, ভাতিজি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না।
তবে পরীক্ষা চলাকালে নুর উদ্দিন খান কেন্দ্রে ছিলেন বলে নিশ্চিত হয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে নুর উদ্দিন খানের উপস্থিতি নিশ্চিত হওয়া গেছে। পরীক্ষা চলাকালে তিনি কোনোভাবেই কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারেন না। এ জন্য তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসককেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।