ওবামার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের গুঞ্জন নিয়ে মুখ খুললেন মিশেল
Published: 10th, April 2025 GMT
জনসমক্ষে ও রাজনৈতিক নানা অনুষ্ঠানে উপস্থিতি কমিয়ে দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা এবং বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে গুঞ্জন বন্ধ করতে মুখ খুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ফার্স্টলেডি মিশেল ওবামা।
মিশেল বলেছেন, তিনি নিজের ভালো–মন্দের দিকে মনোযোগ দিচ্ছেন এবং নিজের জীবনের ওপর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
সম্প্রতি মার্কিন অভিনেত্রী সোফিয়া বুশের পডকাস্ট দ্য ওয়ার্ক ইন প্রোগ্রেসে হাজির হয়েছিলেন মিশেল ওবামা। সেখানে কথা বলার সময় তিনি বারাক ওবামার সঙ্গে তাঁর বিবাহবিচ্ছেদের গুঞ্জন উড়িয়ে দেন।
আট বছর আগে হোয়াইট হাউস ছেড়ে যাওয়ার পর তাঁর জীবনে যেসব পরিবর্তন এসেছে, সেগুলো নিয়েও মিশেল ওবামা খোলাখুলি কথা বলেছেন।
ওবামা দম্পতির দুই মেয়ে এখন প্রাপ্তবয়স্ক। সাবেক এই ফার্স্টলেডি বলেছেন, এখন তিনি নিজের অগ্রাধিকার পুনর্মূল্যায়ন করার স্বাধীনতা পেয়েছেন এবং নিজের ভালো থাকার ওপর মনোযোগ দিতে পারছেন।
গত জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় অভিষেক অনুষ্ঠান এবং তার আগে একই মাসে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন না মিশেল ওবামা। এরপরই বারাক ওবামার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।
সবচেয়ে বেশি যে গুঞ্জন শোনা যায়, সেটি হলো ওবামা দম্পতির বিচ্ছেদ হতে চলেছে।
সোফিয়া বুশের পডকাস্টে মিশেল ওবামার আলাপচারিতা নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছে সিএনএন।
মিশেল বলেন, ‘বছর কয়েক আগেই আমার এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আমি নিজেকে সে সময় অতটা স্বাধীনতা দিতে পারিনি। আমি আমার সন্তানদের তাদের নিজেদের মতো জীবনযাপন করার সুযোগ দিয়েছি। তারপরও হয়তো কেন আমি কিছু করতে পারছি না, সেটার অজুহাত হিসেবে আমি তাদের জীবনের কথা বলেছি।’
আরও পড়ুনপ্রেসিডেন্ট থাকাকালে মিশেলের সঙ্গে দাম্পত্য জীবনে প্রভাব পড়েছিল: বারাক ওবামা০৫ এপ্রিল ২০২৫কেন তিনি বড় বড় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকছেন না, সেটার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে মিশেল বলেন, ‘নিজের যত্ন নিতে আমি ইচ্ছা করে এসব সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাকে আমার নিজস্ব দিনপঞ্জির দিকে তাকাতে হয়, এ বছরই আমি এটা তৈরি করেছি। আমার জন্য সত্যিই একটা বড় উদাহরণ ছিল, আমি এমন কিছু নিয়ে ভেবেছি, যেটা আমার হয়তো করা উচিত ছিল। আমি নাম বলছি না এবং আমার জন্য যেটা সবচেয়ে ভালো, আমি সেটা করব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
মিশেল স্বীকার করেন, অনেক নারী নিজেকে সবার আগে রাখতে অস্বস্তিতে ভোগেন।
সাবেক এই ফার্স্টলেডি বলেন, ‘একজন নারী হিসেবে আমরা এটাই করি। আমার মনে হয়, আমরা হতাশাগ্রস্ত মানুষের মতো সংগ্রাম করে যাই।’
মিশেল বলেন, জনসমক্ষে নানা অনুষ্ঠানে হাজির না হয়ে তিনি এখন সেই সব কাজ করছেন, যা তাঁর হৃদয়ের কাছাকাছি। তবে তিনি এখনো বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিচ্ছেন, অনেক প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত আছেন এবং মেয়েদের লেখাপড়া নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।
আরও পড়ুন৯ জানুয়ারি রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অনুষ্ঠিত হবে জিমি কার্টারের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া৩১ ডিসেম্বর ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন ম শ ল বল গ ঞ জন
এছাড়াও পড়ুন:
ডিসি হিলে বর্ষবরণে ছেদ, ৪৭ বছর আগে যেভাবে শুরু হয় এ আয়োজন
চট্টগ্রামে প্রথম বাংলা বর্ষবরণ উৎসব শুরু হয় ১৯৭৩ সালে নগরের সার্সন রোডের ইস্পাহানি পাহাড়ে। পল্লিকবি জসীমউদ্দীন প্রথম এই বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেছিলেন। তিন বছর এখানেই ছোট পরিসরে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হয়। ১৯৭৮ সাল থেকে নন্দনকাননের ডিসি হিলে বাংলা বর্ষবরণ উৎসব শুরু হয়।
কিন্তু এবার ভিন্ন প্রেক্ষাপট। বর্ষবরণের আগের দিন গতকাল রোববার মিছিল নিয়ে এসে একদল লোক অনুষ্ঠান মঞ্চ ভাঙচুর করে চলে যায়। ফলে আয়োজকেরা অনুষ্ঠান না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অথচ ৪৭ বছরে চট্টগ্রামবাসীর প্রাণের মেলায় রূপ নিয়েছে ডিসি হিলের বাংলা বর্ষবরণ উৎসব।
চট্টগ্রামের আগে ষাটের দশক থেকে ঢাকায় নববর্ষ বরণ শুরু হয় আনুষ্ঠানিকভাবে। রাজধানীতে ১৯৬৭ সালে প্রথম রমনার বটমূলে পয়লা বৈশাখের সূর্যোদয়ের সময় সংগীতানুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল সংগীত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছায়ানট। সেই অনুষ্ঠানই মূলত নববর্ষ বরণের সাংস্কৃতিক উৎসবকে সারা দেশে বিস্তারিত হতে প্রেরণা সঞ্চার করেছে।
চট্টগ্রামের কবি–সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিকর্মীরাও উৎসব আয়োজনের তাগিদ অনুভব করতে থাকেন। তত দিনে রক্তস্নাত একাত্তর পার করে মুক্তির সুবাতাস বইছে। আলোচনা থেকে এভাবে একসময় ১৯৭৩ সালে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ইস্পাহানি পাহাড়ে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর নামে এই আয়োজনটি হয়েছিল। প্রথম ওই অনুষ্ঠানের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন ভাষাসৈনিক ও রাজনীতিক আতাউর রহমান খান কায়সার এবং তখনকার সাংস্কৃতিক সংগঠক সাংবাদিক সুভাষ দে।
পরে তা ডিসি হিলে স্থানান্তরিত হয়। চট্টগ্রামের ডিসি হিলে পয়লা বৈশাখ আয়োজন উদ্যোগের পেছনে প্রধান ভূমিকা ছিল শিল্পী, সংগীতজ্ঞ ওয়াহিদুল হকের। তিনি তখন চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত ইংরেজি দৈনিক ডেইলি লাইফে যোগদান করেন। সেই সুবাদে চট্টগ্রামে থাকতেন। তিনি চট্টগ্রামের গণমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে উদ্যোগ নেন সম্মিলিত পয়লা বৈশাখ উদ্যাপনের।
শুরুর সেই সময়ে এই আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কাজী হাসান ইমাম, কবি অরুণ দাশগুপ্ত, কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, নাট্যকর্মী মাহবুব হাসান, নির্মল মিত্র, সুভাষ দেসহ আরও কয়েকজন। শুরুর দিকে অনুষ্ঠানের ব্যাপ্তি ছিল সকালে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা। পয়লা বৈশাখ অনুষ্ঠানের আগে বিভিন্ন সভা হতো বর্তমান ফুলকি বিদ্যাপীঠে কিংবা এনায়েত বাজারে অরুণ দাশগুপ্তের বাসায়। ফুলকিতে তখন নিয়মিত একটা পাঠচক্র বসত। ওই পাঠচক্রের তরুণ কবি-সাহিত্যিক ও লেখকেরাও এই আয়োজনের তখন কর্মী।
আবুল মোমেন স্মৃতি হাতড়ে বললেন, ‘১৯৭৮ সালে ডিসি হিলে নববর্ষ বরণের উদ্যোগটা নিয়েছিলেন ওয়াহিদুল হক। আমরা সঙ্গে ছিলাম। এর আগে বিচ্ছিন্নভাবে ’৭৩ থেকে অনিয়মিত আয়োজন হতো। কখনো ইস্পাহানি পাহাড়ে, কখনো গ্রিনলেজ পাহাড়ে অনিয়মিত এই আয়োজন চলত। ডিসি হিলে অনুষ্ঠান আয়োজনে গানের দিক থেকে অন্যতম দায়িত্ব পালন করতেন মিহির নন্দী। তিনি শিল্পীদের নিয়ে অনুশীলন করাতেন। সম্মিলিত পয়লা বৈশাখ উদ্যাপন পরিষদ নামেই ডিসি হিলে নববর্ষ বরণের আয়োজনটি হয়ে আসছে। শুরুর দিকে উদীচী, আলাউদ্দিন ললিত কলা একাডেমি, অগ্রণী সংঘ, শিল্পী নিকেতনসহ নানা সংগঠন পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠানে অংশ নিত।’
সুভাষ দেও সেই দিনগুলোর স্মৃতিচারণা করলেন। তিনি বলেন, ‘ওয়াহিদুল হক ও কাজী হাসান ইমামের আবৃত্তির মধ্য দিয়ে প্রথম দিকে অনুষ্ঠান শুরু হতো। তখন ডিসি হিল ছিল উঁচু পাহাড়। গাছপালাঘেরা। গাছের ফাঁকে ফাঁকে মাটি কেটে মানুষের বসার ব্যবস্থা করেছিলাম আমরা। এরপর আস্তে আস্তে অনুষ্ঠানের ব্যাপ্তি বাড়তে থাকে।’
সামরিক সরকারের আমলে ডিসি হিলে পয়লা বৈশাখ আয়োজন শুরু হলেও তেমন কোনো সমস্যায় পড়তে হয়নি আয়োজকদের। ওয়াহিদুল হক চট্টগ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার পরও এই ধারা অব্যাহত ছিল। বরং ক্রমে বেড়েছে এর ব্যাপ্তি। আয়োজনকে ঘিরে ধীরে ধীরে কারুপণ্য এবং বইমেলা বসতে শুরু করে ডিসি হিল ঘিরে। আশির দশকের শেষ দিকে এটা দুদিনের অনুষ্ঠানে পরিণত হয়। বর্ষবিদায় ও বর্ষবরণ উৎসব। বের করা হতো শোভাযাত্রাও।
চট্টগ্রাম নগরের ডিসি হিলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের জন্য নির্মিত মঞ্চ ভাঙচুর করেছে একদল লোক। আজ সন্ধ্যা সাতটায়