আলোচিত সাবেক শিবির নেতাদের নতুন প্ল্যাটফর্ম ‘আপ বাংলাদেশ’, সাড়া পেলে হবে দল
Published: 10th, April 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আত্মপ্রকাশের আগে আলোচনায় এসেছিলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় থাকা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক দুই নেতা আলী আহসান জুনায়েদ ও রাফে সালমান রিফাত। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের উদ্যোগে গঠিত এনসিপিতে তাঁরা শীর্ষ পর্যায়ের পদে থাকতে পারেন, এমন আলোচনা চলছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁরা নতুন এই দলে যোগ দেননি। গত মাসে রোজার সময় তাঁরা নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
রোজা ও ঈদুল ফিতরের পর এখন তাঁরা জানাচ্ছেন, তাঁদের নতুন প্ল্যাটফর্মের নাম হবে ‘ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ’ (আপ বাংলাদেশ)। এই প্ল্যাটফর্মের প্রস্তাবনায় ফ্যাসিবাদ, আধিপত্যবাদ, ধর্মবিদ্বেষ ও দুর্নীতি—এই চার রাহুগ্রাস’ থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করার অঙ্গীকার থাকবে বলে জানিয়েছেন এর প্রধান উদ্যোক্তা আলী আহসান জুনায়েদ। চলতি এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে আপ বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক এই সভাপতি। এর আগে রোজার সময় গত ১৬ মার্চ জুনায়েদ ও রাফে সালমান ফেসবুকে নতুন এই প্ল্যাটফর্মের কথা জানিয়েছিলেন। এর কিছুদিন আগে ২৮ ফেব্রুয়ারি এনসিপির আত্মপ্রকাশ ঘটে, যেখানে যোগ দেওয়ার আলোচনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত যোগ দেননি সাবেক এই দুই শিবির নেতা।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে নতুন প্ল্যাটফর্মের বিষয়ে ‘ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের প্রধান উদ্যোক্তা’ পরিচয় দিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন আলী আহসান জুনায়েদ। এতে তিনি লিখেছেন, ‘জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নের অঙ্গীকার নিয়ে গঠিত হতে যাওয়া আসন্ন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মের নাম আমরা ঠিক করেছি ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশ (আপ বাংলাদেশ)। জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বলতে আমরা সুনির্দিষ্টভাবে কিছু লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি, যেটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশের আপামর ছাত্র–জনতাকে সঙ্গে নিয়ে প্ল্যাটফর্মটি এগিয়ে যাবে, ইনশা আল্লাহ। রাজনীতিতে পেশিশক্তির দাপট, দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের রাজনৈতিক অর্থনীতির যে বৃত্ত, দীর্ঘ মেয়াদে আমরা তা উপড়ে ফেলতে চাই। ফ্যাসিবাদ, আধিপত্যবাদ, ধর্মবিদ্বেষ এবং দুর্নীতি—এই চার রাহুগ্রাস থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত করার অঙ্গীকার থাকবে এই প্ল্যাটফর্মের প্রস্তাবনায়। থাকবে বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক আজাদি এবং বৈষম্যহীন ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রস্তাবনাও।’
পিলখানা, শাপলা ও জুলাই গণহত্যার মতো ভয়াবহ অপরাধের বিচার, ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণ এবং জুলাইয়ের আহত যোদ্ধা ও শহীদ পরিবারকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলার দাবিতে জনমত ও রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে তোলা নতুন এই প্ল্যাটফর্মের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে বিবেচিত হবে বলে পোস্টে উল্লেখ করেন আলী আহসান জুনায়েদ। তিনি আরও লেখেন, বাংলাদেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন, সমাজের সর্বস্তরে যোগ্য ও নৈতিক নেতৃত্বের প্রতিষ্ঠা, সামাজিক সুবিচার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, সামাজিক নিরাপত্তা বিধান এবং ধর্মীয় বিশ্বাস ও মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সামাজিক চুক্তির ভিত্তিতে বাংলাদেশ পুনর্গঠন এই প্ল্যাটফর্মের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যমাত্রা।
জুনায়েদের সহযোগী শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আরেক সাবেক সভাপতি রাফে সালমান রিফাতও আপ বাংলাদেশ প্ল্যাটফর্মের কথা উল্লেখ করে আজ সন্ধ্যায় ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন।
জানতে চাইলে আলী আহসান জুনায়েদ প্রথম আলোকে বলেন, চলতি এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে তাঁরা এই প্ল্যাটফর্মের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন। তার আগে একটি সার্চ কমিটি প্রকাশ করা হবে। প্ল্যাটফর্ম ঘোষণার পর তাঁরা মানুষের রেসপন্স (সাড়া) বোঝার চেষ্টা করবেন। মানুষ চাইলে প্ল্যাটফর্মটি রাজনৈতিক দলে রূপ নিতে পারে।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর এই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা তরুণদের উদ্যোগে গত বছরের ৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় নাগরিক কমিটি গঠিত হয়। ২৬ নভেম্বর এই প্ল্যাটফর্মে কেন্দ্রীয় সদস্য হিসেবে যোগ দেন জুনায়েদ ও রাফে সালমান। এরপরই মূলত তাঁদের দুজনের অতীত রাজনৈতিক পরিচয় সামনে আসে। জুলাই অভ্যুত্থানে তাঁদের ভূমিকার কথাও আলোচিত হয়। এরপর ৯ ডিসেম্বর জাতীয় নাগরিক কমিটির সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠন করা হয়। সেখানে জুনায়েদকে যুগ্ম আহ্বায়ক ও রাফেকে যুগ্ম সদস্যসচিব করা হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে নতুন দল গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হলে ওই দলে জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক পদের জন্য জুনায়েদের নাম আলোচিত হয়। রাফে সালমান রিফাতও দলের গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে পারেন, এমন আলোচনাও তখন ছিল।
কিন্তু একপর্যায়ে নতুন দলের শীর্ষ একটি পদে জুনায়েদকে বসানোর দাবিকে কেন্দ্র করে জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোক্তাদের ভেতরে বিতর্ক তৈরি হয়। এ নিয়ে ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি পোস্ট দেন কমিটির দুটি পক্ষের সমর্থকেরা। আন্দোলনের কৃতিত্ব দাবি করে শুরু হয় কাদা–ছোড়াছুড়ি। এই বিতর্কে এক পক্ষে ছিলেন নাগরিক কমিটিতে থাকা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতারা, অন্য পক্ষে আখতার হোসেনের (বর্তমানে এনসিপির সদস্যসচিব) সমর্থকেরা।
এর মধ্যেই চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে বিএনপিসহ ৮টি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে ২৪ ফেব্রুয়ারি চীন সফরে যান আলী আহসান জুনায়েদ ও রাফে সালমান রিফাতসহ জাতীয় নাগরিক কমিটির চারজন নেতা। এ নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটিতে প্রশ্ন তৈরি হয়। সেদিন মধ্যরাতে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে নাগরিক কমিটি বলেছিল, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে তারা কোনো আমন্ত্রণ পায়নি। জুনায়েদ, রিফাতসহ চারজনের এই সফরের বিষয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটি অবগত নয়। এমন পরিস্থিতিতে ২৫ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে ফেসবুকে পৃথক পোস্ট দিয়ে জুনায়েদ ও রিফাত জানান, সমন্বয়কদের উদ্যোগে যে নতুন রাজনৈতিক দল হচ্ছে, তাতে তাঁরা থাকছেন না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আহস ন জ ন য় দ ন র জন ত ক কম ট র ফ সব ক এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
বর্ষবরণ ও চৈত্রসংক্রান্তির আয়োজন রবীন্দ্রসরোবরে
সংগীতশিক্ষার প্রতিষ্ঠান ‘সুরের ধারা’র চৈত্রসংক্রান্তি ও বর্ষবরণের দুটি অনুষ্ঠানই হবে এবার ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবরে। গতকাল শনিবার বিকেলে রবীন্দ্রসরোবরে গিয়ে দেখা যায়, শিল্পীদের জন্য কয়েক ধাপে মঞ্চ তৈরি করছেন শ্রমিকেরা। বাঁশ, কাঠ, কাপড়ে তৈরি হচ্ছে চৈত্রসংক্রান্তি ও বর্ষবরণের মঞ্চ। গত বছর এই আয়োজন হয়েছিল চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে।
এবার বর্ষবরণের অনুষ্ঠান হচ্ছে ‘ইস্পাহানি চ্যানেল আই-সুরের ধারার বর্ষবরণ ১৪৩২’ শিরোনামে। ২০১২ সাল থেকে এ আয়োজন ‘সুরের ধারা চ্যানেল আই হাজার কণ্ঠে বর্ষবরণ’ শিরোনামে আয়োজিত হয়ে আসছিল।
সুরের ধারার ভাইস চেয়ারম্যান ও শিক্ষক স্বাতী সরকার প্রথম আলোকে গতকাল জানিয়েছেন, এবারের বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে সুরের ধারার শিল্পীসহ সারা দেশের প্রায় সাড়ে তিন শ শিল্পী অংশ নেবেন। তিনি বলেন, ভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর শিল্পীরাও সংগীত পরিবেশন করবেন এবারের আয়োজনে। রাঙামাটির ১২ জন শিল্পী অংশ নেবেন পরিবেশনায়।
বর্ষবিদায় বা চৈত্রসংক্রান্তির আয়োজনে অংশগ্রহণ করবেন আড়াই শ শিল্পী। আয়োজনটি সার্বিকভাবে সুরের ধারার। সুরের ধারার এবারের বর্ষবিদায়ের প্রতিপাদ্য ‘স্বদেশ’।
সুরের ধারার শিক্ষক ও আয়োজনের সহকারী কেশব সরকার প্রথম আলোকে বলেন, এবারের আয়োজনে সহযোগিতা করছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। চৈত্রসংক্রান্তি ও বর্ষবরণ দুটো অনুষ্ঠানই আগের মতো সরাসরি সম্প্রচারের কথা রয়েছে চ্যানেল আইয়ের। বর্ষবরণের আয়োজনে থাকছে পঞ্চকবির গান।
বর্ষবরণ ও বর্ষবিদায়ের আয়োজনের মহড়া ঈদের আগে থেকেই শুরু হয়েছে। এখন শেষ সময়ের প্রস্তুতি চলছে বলে জানালেন সুরের ধারার শিক্ষকেরা। বাংলা নতুন বছর ১৪৩২-এর প্রথম দিন সকাল ছয়টা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত বর্ষবরণের অনুষ্ঠান চলবে। এর আগের দিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত চলবে চৈত্রসংক্রান্তি বা বাংলা বছরকে বিদায়ের অনুষ্ঠান। বরেণ্য রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার উদ্যোগে ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সংগীতচর্চা প্রতিষ্ঠান সুরের ধারা।