নতুন করে মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে তিন মাসের মধ্যে মনোনয়নপ্রক্রিয়া শেষ করতে হবে
Published: 10th, April 2025 GMT
পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকার ১ হাজার ৮০টি পদে নতুন করে মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে আইন অনুযায়ী প্রশিক্ষণার্থী মনোনয়নপ্রক্রিয়া তিন মাসের মধ্যে শেষ করতে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন, তা বহাল রয়েছে। তাই এখন হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাধ্য বলে জানিয়েছেন রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী।
এর আগে পৃথক চারটি রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশসহ ওই রায় দেন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর তা স্থগিত চেয়ে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করা হয়। লিভ টু আপিলটি গত ২৫ মার্চ আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে শুনানির জন্য ওঠে। সেদিন শুনানি নিয়ে চেম্বার আদালত ‘নো অর্ডার’ দেন। ফলে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকে।
পাঁচ বছর আগে ২০২০ সালের ১০ মার্চ পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকার ১ হাজার ৮০টি পদে নিয়োগের জন্য ওই বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর।
হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, ২০২০ সালের ১০ মার্চের সার্কুলার (বিজ্ঞপ্তি) অনুসারে রিট আবেদনকারীসহ ইতিমধ্যে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের থেকে আইন অনুসারে নতুন করে মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে তিন মাসের মধ্যে মনোনয়নপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের (স্বাস্থ্যসচিব ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক) নির্দেশ দেওয়া হলো।
রিট আবেদনকারী পক্ষের তথ্য অনুসারে, ২০২৩ সালের ১১ মে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ৭ হাজার ৬২১ প্রার্থী ২০২৩ সালের ২৫ মে থেকে একই বছরের ১৮ জুন পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। নিয়োগের জন্য লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর নির্বাচিতদের ১৮ মাসের প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার পর ওই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। মৌখিক পরীক্ষা শেষে নিয়োগের চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য যখন প্রার্থীরা অপেক্ষা করছিলেন—এ অবস্থায় পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণার্থী নিয়োগে মনোনয়নপ্রক্রিয়া বাতিল করে গত বছরের ১৪ জানুয়ারি বিজ্ঞপ্তি দেয় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। এই বিজ্ঞপ্তির বৈধতা নিয়ে পৃথক চারটি রিট করেন কয়েকজন প্রার্থী। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিভিন্ন সময়ে হাইকোর্ট রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন। চূড়ান্ত শুনানি শেষে রুল নিষ্পত্তি করে পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশসহ ওই রায় দেন হাইকোর্ট।
পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকার ভূমিকা সমাজে গুরুত্বপূর্ণ
হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, ‘অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে ২০২০ সালের ১০ মার্চ থেকে রিট আবেদনকারীসহ অনেক প্রার্থীর সরকারি চাকরিতে নিয়োগের বয়সসীমা ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। অন্যদিকে যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা নির্দিষ্টভাবে শিশুর জন্মের সময় মা ও শিশুর মৃত্যু রোধ নিশ্চিতে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকার ভূমিকা সমাজে গুরুত্বপূর্ণ। তাই সংশ্লিষ্ট পদগুলোতে (পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা) যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আবশ্যিক দায়িত্ব। দেখা যাচ্ছে, ২০২০ সালের ১০ মার্চের সার্কুলার অনুসারে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা পদে নিয়োগপক্রিয়ার উদ্যোগ ছাড়া বর্তমানে আর কোনো নিয়োগপ্রক্রিয়া নেই। এ অবস্থায় পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকার ১ হাজার ৮০টি শূন্য পদের জন্য লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকে মনোনয়নপ্রক্রিয়া কেন শেষ করা হবে না—এর কারণ খুঁজে পাইনি।’
হাইকোর্টে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম, আইনজীবী মোহাম্মদ সিদ্দিক উল্লাহ মিয়া, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ও সৈয়দা নাসরিন শুনানিতে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আরশাদুর রউফ ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান।
রিট আবেদনকারীদের অন্যতম আইনজীবী সৈয়দা নাসরিন আজ বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, মৌখিক পরীক্ষা হলেও ফলাফল প্রকাশ না করে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা মনোনয়নপ্রক্রিয়া বাতিল করে বিজ্ঞপ্তি দেয় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, যে কারণে রিট করা হয়। হাইকোর্ট নতুন করে মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে তিন মাসের মধ্যে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা মনোনয়নপ্রক্রিয়া শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এর বিরুদ্ধে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়। আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত ‘নো অর্ডার’ দিয়েছেন। ফলে এখন নতুন করে মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে তিন মাসের মধ্যে মনোনয়নপ্রক্রিয়া শেষ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাধ্য। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তিন মাসের মধ্যে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে—এটিই প্রত্যাশা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল খ ত পর ক ষ ম খ ক পর ক ষ আপ ল ব ভ গ য় পর ব র শ ষ করত আইনজ ব শ ষ কর অন স র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রামে আইনজীবী হত্যা মামলায় ১১ আসামির জামিন নামঞ্জুর
চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ১১ আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ারের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।
আসামিরা হলেন– প্রেমনন্দন দাস বুজা, রনব দাস, বিধান দাস, বিকাশ দাস, নর্মিত দাস, রাজ কাপুর, সামির দাস, শিব কুমার দাস, ওম দাস, অজয় দাস এবং দেবীচরণ।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, তিনি আসামিদের জামিন চেয়েছিলেন। শুনানি শেষে আদালত আবেদন নামঞ্জুর করেন। কোতোয়ালি থানার ওসি আব্দুল করিম জানান, আইনজীবী আলিফ হত্যা মামলায় ১১ আসামির পক্ষে জামিন আবেদন করলেও তাদের কেউ জামিন পাননি। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন।
গত বছরের ২৬ নভেম্বর রাষ্ট্রদ্রোহের মামলায় জামিন নাকচ করে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন চট্টগ্রামের মহানগর হাকিম কাজী শরীফুল ইসলাম। ওই আদেশের পর আদালত প্রাঙ্গণে প্রিজনভ্যান ঘিরে বিক্ষোভ করেন তাঁর অনুসারীরা। পরে পুলিশের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভকারীরা আদালতপাড়াসহ আশপাশের এলাকায় ব্যাপক তাণ্ডব চালান। আদালত প্রাঙ্গণের পাশেই রঙ্গম কনভেনশন হল সড়কে আইনজীবী আলিফকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহতের বাবা জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে চট্টগ্রাম কোতোয়ালি থানায় ৩১ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১০-১৫ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। ওই মামলার এজাহার নামীয় ১১ আসামিকে পুলিশ পরে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছিল।